অল্পে তুষ্টি ইসলামের শিক্ষা by জহির উদ্দিন বাবর
আমাদের জীবনে চাহিদার কোনো শেষ নেই। যার যত বেশি আছে, তার চাহিদা তত বেশি। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, মানুষের মুখে মাটি পড়া পর্যন্ত চাহিদা বাড়তেই থাকে। মরার আগ পর্যন্ত মানুষ চাইতেই থাকে। যেহেতু মানুষের এই চাহিদা কখনও পূরণ হয় না এ জন্য তা সীমিত রাখার মধ্যেই মানবজীবনে শান্তি।
ইসলামও মানুষকে চাহিদা সীমিত রাখার কথাই বলেছে। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় যদি কারও চাহিদা মিটে যায় তাহলে ভালো। অন্যথায় চাওয়ার মাত্রা বাড়িয়ে অহেতুক জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলতে মানা করেছে মানুষের প্রকৃতিগত ধর্ম ইসলাম।
নীতিগতভাবে যেমন ইসলাম অতিরিক্ত জাঁকজমক ও আড়ম্বরতাকে সমর্থন করে না, তেমনি প্রায়োগিক ক্ষেত্রেও ইসলামে এর বাস্তব উদাহরণ ভূরি ভূরি রয়েছে। রাসূলের (সা.) জীবনযাত্রা দেখলে এ সত্যটি আরও ধ্রুব হয়ে ওঠে। আল্লাহর প্রিয় বন্ধু ও উভয় জগতের বাদশা হওয়া সত্ত্বেও তার জীবনধারা ছিল অতি সাধারণ। প্রাচুর্যের খনিতে পরিপুষ্ট হওয়ার সুযোগ থাকার পরও সাদাসিধে ও আড়ম্বরহীন জীবনকে নিজের জন্য বেছে নিয়েছিলেন তিনি। জাগতিক উচ্চাভিলাষ ও প্রতিষ্ঠার ভাবনা তার মধ্যে ছিলই না। নবীর শিক্ষায় শিক্ষিত সাহাবায়ে কেরামও ছিলেন ইসলামের এ প্রেরণা বাস্তবায়নের উত্তম নমুনা। তাদের জীবনধারাও ছিল নবীজির আদলে সাবলীল ও অনাড়ম্বর। অল্পতেই তারা অনেক তুষ্ট হতেন। এ জন্য তাদের জীবন ছিল স্বস্তি ও শান্তিতে প্রাচুর্যময়।
ইসলামের প্রথম খলিফা আবু বকরের (রা.) স্ত্রীর একবার ইচ্ছা হলো কিছু মিষ্টিজাতীয় খাবার রান্না করে পরিবারের সবাইকে খাওয়াবেন। স্বামীকে এ ইচ্ছার কথা জানালেন। খলিফা সাফ জবাব দিলেন, মিষ্টির জন্য যে অর্থের প্রয়োজন তা আমার কাছে নেই। তিনি খলিফার সঙ্গে কথা আর না বাড়িয়ে সংসারের দৈনন্দিন খরচ থেকে অল্প অল্প করে রেখে মিষ্টি কেনার মতো পয়সা জমালেন। একদিন খলিফাকে তিনি আনন্দের সঙ্গে সংবাদটি দিলেন। কিন্তু এবার খলিফা গম্ভীর হয়ে গেলেন। সঙ্গে সঙ্গে রাজকোষে খবর পাঠালেন। রাজকোষের কর্মচারী খলিফার বাড়িতে এসে হাজির হলেন। খলিফাপত্নী দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলেন, খলিফা তার সঞ্চিত অর্থ রাজকোষের লোকদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। স্ত্রীর সঞ্চিত অর্থ রাজকোষে জমা দিয়ে খলিফা আবু বকর সিদ্দিক (রা.) বললেন, এই সঞ্চয়ের ঘটনায় প্রমাণ হলো যে, এ পরিমাণ অর্থ বায়তুল মাল থেকে না তুললেও আমার সংসারের খরচ চলে যাবে। অতিরিক্ত সম্পদ আমি কিছুতেই রাজকোষ থেকে গ্রহণ করতে পারি না।
খেলাফতে রাশেদার পরবর্তী যুগের কথা। মুসলিম জাহানে খলিফা নির্বাচিত হলেন ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.)। ঘোড়াপাল থেকে শ্রেষ্ঠ ঘোড়াটি এনে সামনে দাঁড়াল প্রধান সহিস। নবনির্বাচিত খলিফা সহজ হাসি হেসে বললেন, আমার এমন সুসজ্জিত ঘোড়ার প্রয়োজন নেই, পুরনো খচ্চরটিতেই আমি চড়ে বেড়াব। ওটি ফেরত নিয়ে যাও তোমরা। রাজকীয় ঘোড়াদের খাবার-দাবার, পরিচর্যা ও সহিসদের বেতন-ভাতা ইত্যাদির বিরাট খরচ দেখে খলিফা ঘোষণা করে দিলেন, এসব অপচয়ের কোনো প্রয়োজন নেই। সব ঘোড়া বাজারে বিক্রি করে সে টাকা জনগণের কল্যাণে ব্যয় করো।
সময়ের স্রোতধারায় আবিলতাযুক্ত জীবনবোধে বর্তমানে ইসলামের সেই আদর্শিক শিক্ষাটা আর অবশিষ্ট নেই। মুসলমানরা আজ ভোগবিলাসের সম্ভারে ডুবে আছে। সাদাসিধে অল্পে তুষ্টির জীবনের কাহিনী আজ অলীক ও অকল্পনীয় মনে হবে। বৈষয়িকতার প্রাবল্যের কারণে জীবনের সুখ-শান্তি আজ অনুপস্থিত। শান্তির সন্ধানে মানুষ আজ ব্যাকুল হয়ে ফিরছে। সবকিছুতেই একটা অপূর্ণতা ও খাই খাই ভাব অনুভব করা যাচ্ছে। চারদিকে বিরাজ করছে হাহাকার। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় ইসলামের প্রেরণা অনুযায়ী জীবনধারায় সাদাসিধে ভাব নিয়ে আসা। অল্পতেই তুষ্ট থাকা। অল্পে তুষ্ট থাকলে জীবনটুকু হবে আরও উপভোগ্য। কারণ ক্ষণস্থায়ী এই দুনিয়ায় চাওয়ার মাত্রাটা
বাড়িয়ে লাভ নেই। যাওয়ার সময় খালি হাতেই যেতে হবে।
zahirbabor@yahoo.com
নীতিগতভাবে যেমন ইসলাম অতিরিক্ত জাঁকজমক ও আড়ম্বরতাকে সমর্থন করে না, তেমনি প্রায়োগিক ক্ষেত্রেও ইসলামে এর বাস্তব উদাহরণ ভূরি ভূরি রয়েছে। রাসূলের (সা.) জীবনযাত্রা দেখলে এ সত্যটি আরও ধ্রুব হয়ে ওঠে। আল্লাহর প্রিয় বন্ধু ও উভয় জগতের বাদশা হওয়া সত্ত্বেও তার জীবনধারা ছিল অতি সাধারণ। প্রাচুর্যের খনিতে পরিপুষ্ট হওয়ার সুযোগ থাকার পরও সাদাসিধে ও আড়ম্বরহীন জীবনকে নিজের জন্য বেছে নিয়েছিলেন তিনি। জাগতিক উচ্চাভিলাষ ও প্রতিষ্ঠার ভাবনা তার মধ্যে ছিলই না। নবীর শিক্ষায় শিক্ষিত সাহাবায়ে কেরামও ছিলেন ইসলামের এ প্রেরণা বাস্তবায়নের উত্তম নমুনা। তাদের জীবনধারাও ছিল নবীজির আদলে সাবলীল ও অনাড়ম্বর। অল্পতেই তারা অনেক তুষ্ট হতেন। এ জন্য তাদের জীবন ছিল স্বস্তি ও শান্তিতে প্রাচুর্যময়।
ইসলামের প্রথম খলিফা আবু বকরের (রা.) স্ত্রীর একবার ইচ্ছা হলো কিছু মিষ্টিজাতীয় খাবার রান্না করে পরিবারের সবাইকে খাওয়াবেন। স্বামীকে এ ইচ্ছার কথা জানালেন। খলিফা সাফ জবাব দিলেন, মিষ্টির জন্য যে অর্থের প্রয়োজন তা আমার কাছে নেই। তিনি খলিফার সঙ্গে কথা আর না বাড়িয়ে সংসারের দৈনন্দিন খরচ থেকে অল্প অল্প করে রেখে মিষ্টি কেনার মতো পয়সা জমালেন। একদিন খলিফাকে তিনি আনন্দের সঙ্গে সংবাদটি দিলেন। কিন্তু এবার খলিফা গম্ভীর হয়ে গেলেন। সঙ্গে সঙ্গে রাজকোষে খবর পাঠালেন। রাজকোষের কর্মচারী খলিফার বাড়িতে এসে হাজির হলেন। খলিফাপত্নী দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলেন, খলিফা তার সঞ্চিত অর্থ রাজকোষের লোকদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। স্ত্রীর সঞ্চিত অর্থ রাজকোষে জমা দিয়ে খলিফা আবু বকর সিদ্দিক (রা.) বললেন, এই সঞ্চয়ের ঘটনায় প্রমাণ হলো যে, এ পরিমাণ অর্থ বায়তুল মাল থেকে না তুললেও আমার সংসারের খরচ চলে যাবে। অতিরিক্ত সম্পদ আমি কিছুতেই রাজকোষ থেকে গ্রহণ করতে পারি না।
খেলাফতে রাশেদার পরবর্তী যুগের কথা। মুসলিম জাহানে খলিফা নির্বাচিত হলেন ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.)। ঘোড়াপাল থেকে শ্রেষ্ঠ ঘোড়াটি এনে সামনে দাঁড়াল প্রধান সহিস। নবনির্বাচিত খলিফা সহজ হাসি হেসে বললেন, আমার এমন সুসজ্জিত ঘোড়ার প্রয়োজন নেই, পুরনো খচ্চরটিতেই আমি চড়ে বেড়াব। ওটি ফেরত নিয়ে যাও তোমরা। রাজকীয় ঘোড়াদের খাবার-দাবার, পরিচর্যা ও সহিসদের বেতন-ভাতা ইত্যাদির বিরাট খরচ দেখে খলিফা ঘোষণা করে দিলেন, এসব অপচয়ের কোনো প্রয়োজন নেই। সব ঘোড়া বাজারে বিক্রি করে সে টাকা জনগণের কল্যাণে ব্যয় করো।
সময়ের স্রোতধারায় আবিলতাযুক্ত জীবনবোধে বর্তমানে ইসলামের সেই আদর্শিক শিক্ষাটা আর অবশিষ্ট নেই। মুসলমানরা আজ ভোগবিলাসের সম্ভারে ডুবে আছে। সাদাসিধে অল্পে তুষ্টির জীবনের কাহিনী আজ অলীক ও অকল্পনীয় মনে হবে। বৈষয়িকতার প্রাবল্যের কারণে জীবনের সুখ-শান্তি আজ অনুপস্থিত। শান্তির সন্ধানে মানুষ আজ ব্যাকুল হয়ে ফিরছে। সবকিছুতেই একটা অপূর্ণতা ও খাই খাই ভাব অনুভব করা যাচ্ছে। চারদিকে বিরাজ করছে হাহাকার। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় ইসলামের প্রেরণা অনুযায়ী জীবনধারায় সাদাসিধে ভাব নিয়ে আসা। অল্পতেই তুষ্ট থাকা। অল্পে তুষ্ট থাকলে জীবনটুকু হবে আরও উপভোগ্য। কারণ ক্ষণস্থায়ী এই দুনিয়ায় চাওয়ার মাত্রাটা
বাড়িয়ে লাভ নেই। যাওয়ার সময় খালি হাতেই যেতে হবে।
zahirbabor@yahoo.com
No comments