বাম্পার ফলনেও কৃষকের হাসি নেই by নৃপেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
ধান পাট সবজির বাম্পার ফলন হলেও কৃষকের মুখে হাসি ফুটছে না। সেচ খরচ, সার বীজ, কীটনাশক ও কৃষি শ্রমিকের দাম বেড়ে যাওয়ায় একদিকে উৎপাদন খরচ বেড়েছে, অন্যদিকে গত বছরজুড়ে ইরি-বোরো, আমন, পাট, আলু, আদা, পেঁয়াজ, রসুন ও শীতকালীন সবজির দাম না পাওয়ায় লোকসান গুনতে হয়েছে তাদের।
এমনকি অনেক চাষি লাভ তো দূরের কথা, ফসলের উৎপাদন খরচ তুলতে পারেননি। কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের দাম কম পেলে চূড়ান্ত ভোক্তারা কম দামে সেই পণ্যটি কিনবে তার নিশ্চয়তা নেই । ক্ষেত থেকে একের পর এক হাত ঘুরে চূড়ান্ত ভোক্তার কাছে কয়েকগুণ দামে গিয়ে পেঁৗছে পণ্যসামগ্রী। মাঝখানে সব চলে যায় মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে। অথচ কৃষকের সার, কীটনাশক থেকে উৎপাদনের সব উপাদান কিনতে হচ্ছে চড়া দামে। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৭৫ শতাংশের বেশি মানুষ গ্রামীণ এলাকায় বাস করে । তাদের একটি বড় অংশ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা মৌসুমি ও স্থায়ী। আবার খাদ্য উৎপাদন বাড়লেও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে না। বাম্পার ফলন হলেও আরেকটি ফসল আসার আগে বর্গাচাষি, প্রান্তিক কৃষক এবং গ্রামীণ কৃষি শ্রমিকের ঘরে ঠিকই খাবার ফুরিয়ে যায়। তখন খাবার কিনে খাওয়া ছাড়া তাদের উপায় থাকে না। এ সময় খাদ্যপণ্যের দামও থাকে চড়া।
সব খাতের চেয়ে কৃষি খাতে ফসল, মাছ, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি উৎপাদনের ঝুঁকি বেড়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জলবায়ু পরিবর্তন, রোগবালাই, ভেজাল বীজ, ভেজাল সার, ফসল না হওয়া, সেচের অভাব, কৃষিপণ্যের দাম কম, উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় কৃষকরা এখন চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আলু উৎপাদনকারী কৃষক এখন দারুণ বিপাকে। গত মৌসুমের উৎপাদিত আলুর ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় আলু চাষে কৃষকের উৎসাহ থেমে গেছে। উৎপাদন ও হিমাগার খরচ না ওঠায় বিপর্যয়ের মুখে তারা। দু'মাস আগেও হিমাগারের ৮৪ কেজি ওজনের আলুর বস্তা ৭০০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়। এক বস্তা আলুর হিমাগার ভাড়া ৩৫০ টাকা। আলু বিক্রির প্রায় টাকাটাই হিমাগারে ও মালিকদের দিতে হয়েছে কৃষককে।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাটচাষিদের এবার মাথায় হাত। গত বছর প্রতিমণ পাটের দাম ছিল তিন হাজার টাকা। এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পাটের ফলন এবং আবাদ বেশি হয়েছে। সেই পাট বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকায়। সদ্য গোলায় ওঠা আমনের বাম্পার ফলনেও কৃষকের মুখে হাসি ম্লান হয়ে গেছে। প্রতিমণ আমনের উৎপাদন খরচ ৬০০ টাকা, কিন্তু কৃষক বিক্রি করছেন ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায়। প্রতি কেজি আমন চাষ করতে গিয়ে কৃষককে ২০ টাকা বিনিয়োগ করতে হয়েছে। ধান থেকে চাল করতে গিয়ে খরচ হয় ২৫ থেকে ২৬ টাকা। বর্তমানে এক কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে দুই টাকায়। কিন্তু কিছুদিন আগে এক কেজি পেঁয়াজ ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা। সব কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রেই একদিকে কৃষক এবং অন্যদিকে চূড়ান্ত পর্যায়ে ভোক্তা মার খাচ্ছে। কৃষক মার খায় তার ফসলের উৎসাহজনক দাম না পেয়ে, আর ভোক্তারা মার খাচ্ছে সেই পণ্যের দু'তিনগুণ বেশি দামে কিনে। খাদ্য উৎপাদন বাড়লেও গ্রামাঞ্চলের গরিব মানুষ স্থায়ী উপার্জনের বর্ধিত সুযোগ সৃষ্টি করা না গেলে মানুষের খাদ্য কিনে খাবার সাধ্য থাকবে না। নীরব দুর্ভিক্ষ হানা দিতে থাকবে লাখ লাখ মানুষের দরজায়। তাই জনগণের পূর্ণ খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন যেমন জরুরি, তেমনি জরুরি কৃষকের সত্যিকারের দিনবদল।
য় রাজৈর, মাদারীপুর
সব খাতের চেয়ে কৃষি খাতে ফসল, মাছ, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি উৎপাদনের ঝুঁকি বেড়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জলবায়ু পরিবর্তন, রোগবালাই, ভেজাল বীজ, ভেজাল সার, ফসল না হওয়া, সেচের অভাব, কৃষিপণ্যের দাম কম, উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় কৃষকরা এখন চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আলু উৎপাদনকারী কৃষক এখন দারুণ বিপাকে। গত মৌসুমের উৎপাদিত আলুর ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় আলু চাষে কৃষকের উৎসাহ থেমে গেছে। উৎপাদন ও হিমাগার খরচ না ওঠায় বিপর্যয়ের মুখে তারা। দু'মাস আগেও হিমাগারের ৮৪ কেজি ওজনের আলুর বস্তা ৭০০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়। এক বস্তা আলুর হিমাগার ভাড়া ৩৫০ টাকা। আলু বিক্রির প্রায় টাকাটাই হিমাগারে ও মালিকদের দিতে হয়েছে কৃষককে।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাটচাষিদের এবার মাথায় হাত। গত বছর প্রতিমণ পাটের দাম ছিল তিন হাজার টাকা। এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পাটের ফলন এবং আবাদ বেশি হয়েছে। সেই পাট বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকায়। সদ্য গোলায় ওঠা আমনের বাম্পার ফলনেও কৃষকের মুখে হাসি ম্লান হয়ে গেছে। প্রতিমণ আমনের উৎপাদন খরচ ৬০০ টাকা, কিন্তু কৃষক বিক্রি করছেন ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায়। প্রতি কেজি আমন চাষ করতে গিয়ে কৃষককে ২০ টাকা বিনিয়োগ করতে হয়েছে। ধান থেকে চাল করতে গিয়ে খরচ হয় ২৫ থেকে ২৬ টাকা। বর্তমানে এক কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে দুই টাকায়। কিন্তু কিছুদিন আগে এক কেজি পেঁয়াজ ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা। সব কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রেই একদিকে কৃষক এবং অন্যদিকে চূড়ান্ত পর্যায়ে ভোক্তা মার খাচ্ছে। কৃষক মার খায় তার ফসলের উৎসাহজনক দাম না পেয়ে, আর ভোক্তারা মার খাচ্ছে সেই পণ্যের দু'তিনগুণ বেশি দামে কিনে। খাদ্য উৎপাদন বাড়লেও গ্রামাঞ্চলের গরিব মানুষ স্থায়ী উপার্জনের বর্ধিত সুযোগ সৃষ্টি করা না গেলে মানুষের খাদ্য কিনে খাবার সাধ্য থাকবে না। নীরব দুর্ভিক্ষ হানা দিতে থাকবে লাখ লাখ মানুষের দরজায়। তাই জনগণের পূর্ণ খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন যেমন জরুরি, তেমনি জরুরি কৃষকের সত্যিকারের দিনবদল।
য় রাজৈর, মাদারীপুর
No comments