তিন বাহিনীর প্রধানদের জবানবন্দি-সেনা অভিযান হয়নি যে কারণে by কামরুল হাসান ও গোলাম মর্তুজা
বিডিআর বিদ্রোহের দিন পিলখানার ভেতরের অবস্থা বোঝা না যাওয়ায় সামরিক অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের বৈঠকে সমঝোতার পক্ষে মত দেন তিন বাহিনীর প্রধানেরা। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, সমঝোতা না হলে কঠোর হাতে বিদ্রোহ দমন করা হবে।
ওই সময়ের সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদের ধারণা ছিল, সেনাবাহিনীর প্রথম দলটি পৌঁছানোর আগেই অর্থাৎ ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটের আগেই বিদ্রোহীরা বেশির ভাগ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে ফেলে। বিডিআর বিদ্রোহ মামলায় সিআইডিকে ১৬১ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধানেরা এ কথা বলেছেন।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআরের বিদ্রোহী জওয়ানরা ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এ ঘটনায় ফৌজদারি অপরাধে করা মামলায় তিন বাহিনীর প্রধানেরাও জবানবন্দি দেন। মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের কৌঁসুলিদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
সেনাপ্রধানের জবানবন্দি: জবানবন্দিতে তৎকালীন সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ বলেছেন, ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল আটটা ৫৫ মিনিটে বিডিআরের মহাপরিচালক (ডিজি) শাকিল আহমেদের সঙ্গে তাঁর মর্টার নিয়ে কথা হয়। সকাল নয়টা ২৫ মিনিটে তাঁর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিস কর্নেল) তাঁকে জানান, বিডিআর দরবার হলে গন্ডগোল হচ্ছে। কিন্তু বিডিআরের গোয়েন্দা বা অন্য কোনো বিভাগ তাঁকে কিছু জানায়নি। সকাল নয়টা ৩৫ মিনিটে তিনি ৪৬ ইনফ্যান্ট্রি ব্রিগেডকে অভিযান পরিচালনার প্রস্তুতির সংকেত (ওয়ার্নিং অর্ডার) দেন। নয়টা ৪৭ মিনিটে ডিজি বিডিআরের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়। ডিজি বিডিআর তাঁকে বলেন, ‘দরবার হলে বিডিআর সদস্যরা গন্ডগোল করছে। সব বিডিআর সদস্য হল থেকে বের হয়ে গেছে। আমরা চেষ্টা করছি কন্ট্রোল (নিয়ন্ত্রণ) করার জন্য। আমি দরবার হলে আছি।’ ডিজি বিডিআরকে বিচলিত না হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। ১০টার কিছু পরে আবারও ডিজির সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পায়নি সেনাসদর।
নয়টা ৫১ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেন সেনাপ্রধান। প্রধানমন্ত্রীকে তিনি জানান, ৪৬ ব্রিগেডকে সতর্ক সংকেত দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞেস করেন, ‘কতক্ষণ সময় লাগবে তাদের পৌঁছাতে।’ সেনাপ্রধান বলেন, দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাহলে মুভ করান।’ ফোনে কথা শেষ করেই তিনি ৪৬ ব্রিগেডকে অভিযানের নির্দেশ দেন।
সকাল ১০টার দিকে তৎকালীন সেনাপ্রধান সারা দেশের সেনা স্থাপনাগুলোকে (ফরমেশন) বিডিআরের ব্যাটালিয়ন এলাকাগুলোতে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন। সকাল ১০টা ২০ মিনিটে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাকিমের নেতৃত্বে ৬৮৫ জনের ৪৬ ব্রিগেড পিলখানার দিকে রওনা দেয়। তাদের প্রতি নির্দেশ ছিল, তারা পিলখানার চারদিকে অবস্থান করবে। কিন্তু পিলখানার ভেতরে বিডিআর সদস্যরা মর্টার, রিকোয়েললেস রাইফেলের (আরআর) মতো ভারী অস্ত্র নিয়ে অবস্থান নেওয়ায় সেখানে সাঁজোয়া যান (আর্মার্ড পার্সোনাল ক্যারিয়ার—এপিসি) পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু এপিসির গান (বন্দুক) কেন্দ্রীয় অস্ত্রাগারে (সিওডি) এবং গোলাবারুদ রাজেন্দ্রপুরে থাকায় একটু দেরি হচ্ছিল।
বেলা ১১টায় ৪৬ ব্রিগেড বহরের সম্মুখভাগ পিলখানার প্রধান ফটকে পৌঁছালে বিডিআর সদস্যরা ভেতর থেকে গুলি করেন। এতে বাইরে অবস্থানরত দুই সেনাসদস্য গুলিবিদ্ধ হন। একজন পরে মারা যান।
সাড়ে ১১টার দিকে পিলখানার ভেতরের অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার মেজর ইমরানের নেতৃত্বে পাঠানো হয়। এর মধ্যে ব্রিগেড কমান্ডার আনোয়ারের নেতৃত্বে দুটি ব্যাটারি (উপদল) এয়ার ডিফেন্স আর্টিলারি ব্রিগেড পাঠানো হয়। সিলেটে অবস্থানরত প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়নের প্যারা কমান্ডোদেরও প্রস্তুত হতে বলা হয়।
জবানবন্দিতে তৎকালীন সেনাপ্রধান বলেন, ‘এর মধ্যেই সাড়ে ১১টার প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও), আর্মড ফোর্সেস ডিভিশন (এএফডি) থেকে আমাকে জানানো হয় গোলাগুলি না করার জন্য। বলা হয়, প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংসদ মির্জা আজম, ফজলে নূর তাপস বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যদের সঙ্গে বিদ্রোহ দমনের জন্য আলোচনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।’
দুপুর ১২টার দিকে এয়ার ডিফেন্স আর্টিলারি ব্রিগেডের দল দুটি নিউমার্কেট এলাকায় পৌঁছায়। তারা হেলিকপ্টার নিয়ে চক্কর দেওয়ার সময় বিদ্রোহী জওয়ানরা নিচ থেকে গুলি ছুড়লে তা হেলিকপ্টারে লাগে এবং কিছু ক্ষতি হয়। ১২টার দিকে ফরমেশন কমান্ডারদের (ঊর্ধ্বতন অধিনায়ক) সঙ্গে কথা বলেন সেনাপ্রধান।
সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের পিএসও দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সেনাপ্রধানকে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন যমুনায় যাওয়ার নির্দেশের কথা জানান। সেই অনুযায়ী বেলা একটা ৫০ মিনিটে যমুনায় যান সেনাপ্রধান। এর পরই বিমান ও নৌবাহিনীর প্রধানেরাও যমুনায় আসেন।
প্রধানমন্ত্রী তিন বাহিনীর প্রধানদের কাছ থেকে বিস্তারিত শোনেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমঝোতার চেষ্টা চলছে। এ সময় দুজন সেনাসদস্য গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর প্রধানমন্ত্রীকে জানান সেনাপ্রধান। সেনাপ্রধান কয়েকটি বিষয় বিদ্রোহীদের বলার জন্য অনুরোধ করেন। এগুলো হলো, সব অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে, সব জিম্মি সেনা কর্মকর্তাকে মুক্তি দিতে হবে, তারা কোনো সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে কি না, জানাতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বিদ্রোহীদের সঙ্গে বৈঠকের সময় তিন বাহিনীর প্রধানদের উপস্থিত থাকতে বলেন। কিন্তু বিদ্রোহীরা শুরুতেই তিন বাহিনীর প্রধানদের সামনে আলোচনা করতে আপত্তি জানান।
জবানবন্দিতে সেনাপ্রধান আরও বলেন, বেলা দুইটার দিকে নবাবগঞ্জ সুয়ারেজ লাইনে দুই কর্মকর্তার লাশ পাওয়া যায়। বেলা তিনটা ৪৮ মিনিটে ডিএডি তৌহিদের নেতৃত্বে ১২-১৪ জন যমুনায় আসেন, যাঁদের বেশির ভাগই ছিলেন অল্পবয়স্ক। তাঁদের আচরণ ছিল রূঢ় এবং উত্তেজিতভাবে কথা বলছিলেন। শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হিসেবে তাঁদের যে সম্মান দেখানোর কথা ছিল, তাঁরা তা দেখাননি। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে কথা বলে ১৫ মিনিট সময় দিয়ে বের হয়ে আসেন।
জবানবন্দিতে মইন উ আহমেদ বলেন, ব্যক্তিগত কর্মকর্তাকে দিয়ে তিনি ডিএডি তৌহিদকে ডেকে আনেন। তখন তিনি জিজ্ঞেস করেন, ‘আমাকে চেনেন। তৌহিদ বলেন, “আপনি সেনাপ্রধান।” জেনারেল মইন তখন জানতে চান, বিডিআরের ডিজি ও অন্য কর্মকর্তারা কোথায় এবং কী অবস্থায় আছেন? জবাবে তৌহিদ জানান, ‘সকাল নয়টা থেকে আমাকে (তৌহিদ) অফিসে তালা দিয়ে রাখে। এখন বের করে নিয়ে আসে। আমি কিছু জানি না।’ তৌহিদকে অন্যদের কাছ থেকে জেনে আসতে বলেন তিনি। এরপর তৌহিদ বৈঠক কক্ষে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। জেনারেল মইন জবানবন্দিতে এ সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন, ‘পরে আমি জানতে পারি, সে আমার সাথে মিথ্যা কথা বলেছে।’ জেনারেল মইন আবারও ব্যক্তিগত কর্মকর্তাকে দিয়ে তৌহিদকে ডেকে আনেন। তখন তৌহিদ বলেন, ‘বাকিরা সবাই জানে কিন্তু তারা কিছু বলছে না।’ সন্ধ্যা ছয়টা ৩৭ মিনিটে যমুনা থেকে বের হয়ে যান বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যরা।
রাত সাড়ে ১০টায় সেনাপ্রধান জানতে পারেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যদের আত্মসমর্পণের জন্য পিলখানার ভেতরে যাবেন। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তিন কর্মকর্তার পরিবার ও পাঁচ ডিএডির পরিবারকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।
জবানবন্দির প্রায় শেষ অংশে মইন উ আহমেদ বলেন, ‘আমার ধারণা, আমার ট্রুপস পৌঁছার আগেই অর্থাৎ সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটের মধ্যেই বিডিআররা বেশির ভাগ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে ফেলে।’
মইন উ আহমেদ জবানবন্দিতে বলেন, ২৫ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে বিডিআর সদস্যরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সামনে অল্প কিছু গোলাবারুদ জমা দিয়ে ২৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা পর্যন্ত বিদ্রোহ চালিয়ে যান। প্রধানমন্ত্রীর জাতির উদ্দেশে ভাষণ এবং সাভার থেকে ট্যাংক আসার খবর পেয়ে ২৬ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহীরা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন। রাতের আঁধারে বিডিআর সদস্যরা ৫ নম্বর ফটক দিয়ে ও পাশের অন্যান্য এলাকা দিয়ে পালিয়ে যান। ২৭ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় ঢুকে তিনি ‘এক অবর্ণনীয়, বীভৎস হত্যাযজ্ঞ, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ ও বিভিন্ন প্রকারের নির্যাতনের চিহ্ন’ দেখতে পান।
নৌবাহিনীর প্রধানের জবানবন্দি: নৌবাহিনীর প্রধান জহির উদ্দিন আহমেদ জবানবন্দিতে বলেন, সকাল ১০টায় পরিচালক ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে তিনি বিডিআরে গন্ডগোলের খবর পান। বেলা একটার দিকে প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন যমুনায় যেতে বলা হয়। তিনি তখনই সেখানে যান। ঘণ্টা খানেক পর প্রধানমন্ত্রী নিচে এসে তিন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন।
নৌবাহিনীর প্রধান বলেন, ‘তিনি (প্রধানমন্ত্রী) আমাদের মতামত জানতে চান। তিনি আমাদের বলেন, দুটি পথ খোলা আছে, সমঝোতা না হয় সামরিক অভিযান। কিন্তু ভেতরের অবস্থা বোঝা না যাওয়ায় সামরিক অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব ছিল না। পরে আমরা সমঝোতা করা ঠিক হবে বলে মত দিই। কিন্তু একই সঙ্গে সমঝোতা না হলে সামরিক অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে কঠোর হস্তে বিদ্রোহ দমনের মতামত দিই। পরে প্রধানমন্ত্রী বের হয়ে যান। কিছুক্ষণ পরে ফিরে এসে তিনি বলেন, বিডিআর সদস্যরা সমঝোতার জন্য আসবে।’
কিছুক্ষণ পর ১২-১৪ জন বিডিআর সদস্য আসেন। তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উচ্চ স্বরে এবং উত্তেজিত অবস্থায় কথা বলছিলেন। এ সময় বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যরা তাঁদের দাবিদাওয়ার মধ্যে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে লিখিতভাবে দিতে এবং সংসদে পাস করে দিতে বলেন। প্রধানমন্ত্রী নিজে তাঁদের কাছে বিডিআরের কর্মকর্তাদের কথা জিজ্ঞেস করলে তাঁরা বলেন, সবাই ভালো আছে। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের অস্ত্র সমর্পণ করার এবং কর্মকর্তা ও তাঁদের পরিবারদের তক্ষুনি ছেড়ে দিতে বলেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের বলেন, ‘এখনই পিলখানায় ফোন করে অস্ত্র সমর্পণের নির্দেশ দাও।’ এরপর তিনি তিন বাহিনীর প্রধানদের দেখিয়ে বলেন, তোমরা আত্মসমর্পণ না করলে তাঁরা কঠিন অ্যাকশনে যাবেন। আলোচনার সময় বিদ্রোহীরা সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার বিষয় সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন।
বিমানবাহিনী প্রধানের জবানবন্দি: বিমানবাহিনীর প্রধান শাহ মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান জবানবন্দিতে বলেন, সকাল সাড়ে নয়টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক তাঁকে ফোন করে বলেন, বিডিআরে কিছু সমস্যা হয়েছে। তারেক জানতে চান, হেলিকপ্টার প্রস্তুত রয়েছে কি না। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দুটি হেলিকপ্টার উড্ডয়ন করে। পাইলটরা গাছের ফাঁকে অসংখ্য বিডিআর সদস্যকে দেখা যাচ্ছে বলে খবর দেন।
বেলা সাড়ে ১১টা-১২টার দিকে সরকার থেকে নির্দেশনা আসে, পিলখানার ভেতরে বিডিআর সদস্যদের আত্মসমর্পণের উদ্দেশ্যে লিফলেট ছড়ানোর জন্য। সোয়া ১২টার দিকে আরেকটি হেলিকপ্টার লিফলেট ছড়াতে যায়। এ সময় বিডিআর সদস্যরা গুলি করলে হেলিকপ্টারের জ্বালানি ট্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বিমানবাহিনীর প্রধান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর নিরাপত্তা উপদেষ্টাসহ আমরা মিটিংয়ে বসি। প্রধানমন্ত্রী আমাদের যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে বলেন। আমি তাঁকে আশ্বস্ত করি, ২০-২৫ মিনিটের মধ্যেই বিমানবাহিনী কাজ করতে প্রস্তুত আছে। এ সময় মতিয়া চৌধুরী, শেখ সেলিম, জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ আরও কয়েকজন নেতা বিদ্রোহীদের আত্মসমর্পণ করার জন্য চাপ দিতে প্রধানমন্ত্রীকে বলেন।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআরের বিদ্রোহী জওয়ানরা ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এ ঘটনায় ফৌজদারি অপরাধে করা মামলায় তিন বাহিনীর প্রধানেরাও জবানবন্দি দেন। মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের কৌঁসুলিদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
সেনাপ্রধানের জবানবন্দি: জবানবন্দিতে তৎকালীন সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ বলেছেন, ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল আটটা ৫৫ মিনিটে বিডিআরের মহাপরিচালক (ডিজি) শাকিল আহমেদের সঙ্গে তাঁর মর্টার নিয়ে কথা হয়। সকাল নয়টা ২৫ মিনিটে তাঁর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিস কর্নেল) তাঁকে জানান, বিডিআর দরবার হলে গন্ডগোল হচ্ছে। কিন্তু বিডিআরের গোয়েন্দা বা অন্য কোনো বিভাগ তাঁকে কিছু জানায়নি। সকাল নয়টা ৩৫ মিনিটে তিনি ৪৬ ইনফ্যান্ট্রি ব্রিগেডকে অভিযান পরিচালনার প্রস্তুতির সংকেত (ওয়ার্নিং অর্ডার) দেন। নয়টা ৪৭ মিনিটে ডিজি বিডিআরের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়। ডিজি বিডিআর তাঁকে বলেন, ‘দরবার হলে বিডিআর সদস্যরা গন্ডগোল করছে। সব বিডিআর সদস্য হল থেকে বের হয়ে গেছে। আমরা চেষ্টা করছি কন্ট্রোল (নিয়ন্ত্রণ) করার জন্য। আমি দরবার হলে আছি।’ ডিজি বিডিআরকে বিচলিত না হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। ১০টার কিছু পরে আবারও ডিজির সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পায়নি সেনাসদর।
নয়টা ৫১ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেন সেনাপ্রধান। প্রধানমন্ত্রীকে তিনি জানান, ৪৬ ব্রিগেডকে সতর্ক সংকেত দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞেস করেন, ‘কতক্ষণ সময় লাগবে তাদের পৌঁছাতে।’ সেনাপ্রধান বলেন, দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাহলে মুভ করান।’ ফোনে কথা শেষ করেই তিনি ৪৬ ব্রিগেডকে অভিযানের নির্দেশ দেন।
সকাল ১০টার দিকে তৎকালীন সেনাপ্রধান সারা দেশের সেনা স্থাপনাগুলোকে (ফরমেশন) বিডিআরের ব্যাটালিয়ন এলাকাগুলোতে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন। সকাল ১০টা ২০ মিনিটে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাকিমের নেতৃত্বে ৬৮৫ জনের ৪৬ ব্রিগেড পিলখানার দিকে রওনা দেয়। তাদের প্রতি নির্দেশ ছিল, তারা পিলখানার চারদিকে অবস্থান করবে। কিন্তু পিলখানার ভেতরে বিডিআর সদস্যরা মর্টার, রিকোয়েললেস রাইফেলের (আরআর) মতো ভারী অস্ত্র নিয়ে অবস্থান নেওয়ায় সেখানে সাঁজোয়া যান (আর্মার্ড পার্সোনাল ক্যারিয়ার—এপিসি) পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু এপিসির গান (বন্দুক) কেন্দ্রীয় অস্ত্রাগারে (সিওডি) এবং গোলাবারুদ রাজেন্দ্রপুরে থাকায় একটু দেরি হচ্ছিল।
বেলা ১১টায় ৪৬ ব্রিগেড বহরের সম্মুখভাগ পিলখানার প্রধান ফটকে পৌঁছালে বিডিআর সদস্যরা ভেতর থেকে গুলি করেন। এতে বাইরে অবস্থানরত দুই সেনাসদস্য গুলিবিদ্ধ হন। একজন পরে মারা যান।
সাড়ে ১১টার দিকে পিলখানার ভেতরের অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার মেজর ইমরানের নেতৃত্বে পাঠানো হয়। এর মধ্যে ব্রিগেড কমান্ডার আনোয়ারের নেতৃত্বে দুটি ব্যাটারি (উপদল) এয়ার ডিফেন্স আর্টিলারি ব্রিগেড পাঠানো হয়। সিলেটে অবস্থানরত প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়নের প্যারা কমান্ডোদেরও প্রস্তুত হতে বলা হয়।
জবানবন্দিতে তৎকালীন সেনাপ্রধান বলেন, ‘এর মধ্যেই সাড়ে ১১টার প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও), আর্মড ফোর্সেস ডিভিশন (এএফডি) থেকে আমাকে জানানো হয় গোলাগুলি না করার জন্য। বলা হয়, প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংসদ মির্জা আজম, ফজলে নূর তাপস বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যদের সঙ্গে বিদ্রোহ দমনের জন্য আলোচনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।’
দুপুর ১২টার দিকে এয়ার ডিফেন্স আর্টিলারি ব্রিগেডের দল দুটি নিউমার্কেট এলাকায় পৌঁছায়। তারা হেলিকপ্টার নিয়ে চক্কর দেওয়ার সময় বিদ্রোহী জওয়ানরা নিচ থেকে গুলি ছুড়লে তা হেলিকপ্টারে লাগে এবং কিছু ক্ষতি হয়। ১২টার দিকে ফরমেশন কমান্ডারদের (ঊর্ধ্বতন অধিনায়ক) সঙ্গে কথা বলেন সেনাপ্রধান।
সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের পিএসও দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সেনাপ্রধানকে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন যমুনায় যাওয়ার নির্দেশের কথা জানান। সেই অনুযায়ী বেলা একটা ৫০ মিনিটে যমুনায় যান সেনাপ্রধান। এর পরই বিমান ও নৌবাহিনীর প্রধানেরাও যমুনায় আসেন।
প্রধানমন্ত্রী তিন বাহিনীর প্রধানদের কাছ থেকে বিস্তারিত শোনেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমঝোতার চেষ্টা চলছে। এ সময় দুজন সেনাসদস্য গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর প্রধানমন্ত্রীকে জানান সেনাপ্রধান। সেনাপ্রধান কয়েকটি বিষয় বিদ্রোহীদের বলার জন্য অনুরোধ করেন। এগুলো হলো, সব অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে, সব জিম্মি সেনা কর্মকর্তাকে মুক্তি দিতে হবে, তারা কোনো সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে কি না, জানাতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বিদ্রোহীদের সঙ্গে বৈঠকের সময় তিন বাহিনীর প্রধানদের উপস্থিত থাকতে বলেন। কিন্তু বিদ্রোহীরা শুরুতেই তিন বাহিনীর প্রধানদের সামনে আলোচনা করতে আপত্তি জানান।
জবানবন্দিতে সেনাপ্রধান আরও বলেন, বেলা দুইটার দিকে নবাবগঞ্জ সুয়ারেজ লাইনে দুই কর্মকর্তার লাশ পাওয়া যায়। বেলা তিনটা ৪৮ মিনিটে ডিএডি তৌহিদের নেতৃত্বে ১২-১৪ জন যমুনায় আসেন, যাঁদের বেশির ভাগই ছিলেন অল্পবয়স্ক। তাঁদের আচরণ ছিল রূঢ় এবং উত্তেজিতভাবে কথা বলছিলেন। শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হিসেবে তাঁদের যে সম্মান দেখানোর কথা ছিল, তাঁরা তা দেখাননি। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে কথা বলে ১৫ মিনিট সময় দিয়ে বের হয়ে আসেন।
জবানবন্দিতে মইন উ আহমেদ বলেন, ব্যক্তিগত কর্মকর্তাকে দিয়ে তিনি ডিএডি তৌহিদকে ডেকে আনেন। তখন তিনি জিজ্ঞেস করেন, ‘আমাকে চেনেন। তৌহিদ বলেন, “আপনি সেনাপ্রধান।” জেনারেল মইন তখন জানতে চান, বিডিআরের ডিজি ও অন্য কর্মকর্তারা কোথায় এবং কী অবস্থায় আছেন? জবাবে তৌহিদ জানান, ‘সকাল নয়টা থেকে আমাকে (তৌহিদ) অফিসে তালা দিয়ে রাখে। এখন বের করে নিয়ে আসে। আমি কিছু জানি না।’ তৌহিদকে অন্যদের কাছ থেকে জেনে আসতে বলেন তিনি। এরপর তৌহিদ বৈঠক কক্ষে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। জেনারেল মইন জবানবন্দিতে এ সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন, ‘পরে আমি জানতে পারি, সে আমার সাথে মিথ্যা কথা বলেছে।’ জেনারেল মইন আবারও ব্যক্তিগত কর্মকর্তাকে দিয়ে তৌহিদকে ডেকে আনেন। তখন তৌহিদ বলেন, ‘বাকিরা সবাই জানে কিন্তু তারা কিছু বলছে না।’ সন্ধ্যা ছয়টা ৩৭ মিনিটে যমুনা থেকে বের হয়ে যান বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যরা।
রাত সাড়ে ১০টায় সেনাপ্রধান জানতে পারেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যদের আত্মসমর্পণের জন্য পিলখানার ভেতরে যাবেন। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তিন কর্মকর্তার পরিবার ও পাঁচ ডিএডির পরিবারকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।
জবানবন্দির প্রায় শেষ অংশে মইন উ আহমেদ বলেন, ‘আমার ধারণা, আমার ট্রুপস পৌঁছার আগেই অর্থাৎ সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটের মধ্যেই বিডিআররা বেশির ভাগ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে ফেলে।’
মইন উ আহমেদ জবানবন্দিতে বলেন, ২৫ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে বিডিআর সদস্যরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সামনে অল্প কিছু গোলাবারুদ জমা দিয়ে ২৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা পর্যন্ত বিদ্রোহ চালিয়ে যান। প্রধানমন্ত্রীর জাতির উদ্দেশে ভাষণ এবং সাভার থেকে ট্যাংক আসার খবর পেয়ে ২৬ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহীরা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন। রাতের আঁধারে বিডিআর সদস্যরা ৫ নম্বর ফটক দিয়ে ও পাশের অন্যান্য এলাকা দিয়ে পালিয়ে যান। ২৭ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় ঢুকে তিনি ‘এক অবর্ণনীয়, বীভৎস হত্যাযজ্ঞ, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ ও বিভিন্ন প্রকারের নির্যাতনের চিহ্ন’ দেখতে পান।
নৌবাহিনীর প্রধানের জবানবন্দি: নৌবাহিনীর প্রধান জহির উদ্দিন আহমেদ জবানবন্দিতে বলেন, সকাল ১০টায় পরিচালক ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে তিনি বিডিআরে গন্ডগোলের খবর পান। বেলা একটার দিকে প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন যমুনায় যেতে বলা হয়। তিনি তখনই সেখানে যান। ঘণ্টা খানেক পর প্রধানমন্ত্রী নিচে এসে তিন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন।
নৌবাহিনীর প্রধান বলেন, ‘তিনি (প্রধানমন্ত্রী) আমাদের মতামত জানতে চান। তিনি আমাদের বলেন, দুটি পথ খোলা আছে, সমঝোতা না হয় সামরিক অভিযান। কিন্তু ভেতরের অবস্থা বোঝা না যাওয়ায় সামরিক অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব ছিল না। পরে আমরা সমঝোতা করা ঠিক হবে বলে মত দিই। কিন্তু একই সঙ্গে সমঝোতা না হলে সামরিক অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে কঠোর হস্তে বিদ্রোহ দমনের মতামত দিই। পরে প্রধানমন্ত্রী বের হয়ে যান। কিছুক্ষণ পরে ফিরে এসে তিনি বলেন, বিডিআর সদস্যরা সমঝোতার জন্য আসবে।’
কিছুক্ষণ পর ১২-১৪ জন বিডিআর সদস্য আসেন। তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উচ্চ স্বরে এবং উত্তেজিত অবস্থায় কথা বলছিলেন। এ সময় বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যরা তাঁদের দাবিদাওয়ার মধ্যে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে লিখিতভাবে দিতে এবং সংসদে পাস করে দিতে বলেন। প্রধানমন্ত্রী নিজে তাঁদের কাছে বিডিআরের কর্মকর্তাদের কথা জিজ্ঞেস করলে তাঁরা বলেন, সবাই ভালো আছে। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের অস্ত্র সমর্পণ করার এবং কর্মকর্তা ও তাঁদের পরিবারদের তক্ষুনি ছেড়ে দিতে বলেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের বলেন, ‘এখনই পিলখানায় ফোন করে অস্ত্র সমর্পণের নির্দেশ দাও।’ এরপর তিনি তিন বাহিনীর প্রধানদের দেখিয়ে বলেন, তোমরা আত্মসমর্পণ না করলে তাঁরা কঠিন অ্যাকশনে যাবেন। আলোচনার সময় বিদ্রোহীরা সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার বিষয় সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন।
বিমানবাহিনী প্রধানের জবানবন্দি: বিমানবাহিনীর প্রধান শাহ মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান জবানবন্দিতে বলেন, সকাল সাড়ে নয়টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক তাঁকে ফোন করে বলেন, বিডিআরে কিছু সমস্যা হয়েছে। তারেক জানতে চান, হেলিকপ্টার প্রস্তুত রয়েছে কি না। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দুটি হেলিকপ্টার উড্ডয়ন করে। পাইলটরা গাছের ফাঁকে অসংখ্য বিডিআর সদস্যকে দেখা যাচ্ছে বলে খবর দেন।
বেলা সাড়ে ১১টা-১২টার দিকে সরকার থেকে নির্দেশনা আসে, পিলখানার ভেতরে বিডিআর সদস্যদের আত্মসমর্পণের উদ্দেশ্যে লিফলেট ছড়ানোর জন্য। সোয়া ১২টার দিকে আরেকটি হেলিকপ্টার লিফলেট ছড়াতে যায়। এ সময় বিডিআর সদস্যরা গুলি করলে হেলিকপ্টারের জ্বালানি ট্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বিমানবাহিনীর প্রধান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর নিরাপত্তা উপদেষ্টাসহ আমরা মিটিংয়ে বসি। প্রধানমন্ত্রী আমাদের যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে বলেন। আমি তাঁকে আশ্বস্ত করি, ২০-২৫ মিনিটের মধ্যেই বিমানবাহিনী কাজ করতে প্রস্তুত আছে। এ সময় মতিয়া চৌধুরী, শেখ সেলিম, জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ আরও কয়েকজন নেতা বিদ্রোহীদের আত্মসমর্পণ করার জন্য চাপ দিতে প্রধানমন্ত্রীকে বলেন।
No comments