দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা-বিচার যেন দ্রুত শেষ হয়

ঘটনাটি ঘটেছিল ২০০৪ সালে, জোট সরকারের আমলে। চট্টগ্রাম বন্দরে আটক হয় দশ ট্রাক অস্ত্র। চোরাচালানের সেই দশ ট্রাক অস্ত্রের ঘটনায় কেঁপে উঠেছিল সারা দেশ। এমনকি সেই সময়ের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরও সাংবাদিকদের সামনে কৃত্রিম বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন বিপুল পরিমাণ অস্ত্র দেখে।


দশ ট্রাক অস্ত্র আটকের পর এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে চালানটি ধরা পড়েছে ঘটনাক্রমে। তখন থেকেই মামলা ভিন্ন খাতে ঘুরিয়ে দেওয়ার নানা চেষ্টা হয়েছে। অনেক দেরিতে হলেও সেই মামলার সম্পূরক চার্জশিটে জোট আমলের অনেক কর্তাব্যক্তির নাম এসেছে। জোট সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ নতুন আসামি করা হয়েছে ১১ জনকে।
চট্টগ্রামের সিইউএফএলের জেটি থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল দশ ট্রাক অত্যাধুনিক অস্ত্র। অস্ত্র উদ্ধারের পর নিয়ম অনুযায়ী থানায় মামলা হয়েছিল। কিন্তু শুরু থেকেই এ মামলা নিয়ে নানা টালবাহানা শুরু করে বিগত জোট সরকার। অস্ত্র উদ্ধার মামলার যে তদন্ত হয়েছিল, সেটা ছিল নিতান্তই লোকদেখানো। সাজানো চার্জশিট দিয়ে এই ঘটনার মূল আসামিদের আড়াল করা হয়েছিল। মামলার আসামি করা হয়েছিল স্থানীয় মুখচেনা কিছু চোরাকারবারি ও শ্রমিককে। মামলাটি এমনভাবে সাজানো হয় যে প্রথম যাঁরা এই অস্ত্র উদ্ধারে ভূমিকা রেখেছিলেন সেই দুই সার্জেন্টকেও মামলার সাক্ষী তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। ছিঁড়ে ফেলা হয়েছিল এক সার্জেন্টের করা সাধারণ ডায়েরি। আদালতে মামলা চলার সময় জোট সরকারের আমলে করা মামলার তদন্তের বিষয়ে কিছু দুর্বলতার বিষয় উল্লেখ করা হয়। দেখা যায়, কিছু মৌলিক বিষয় তদন্ত প্রতিবেদনে নেই। জোট সরকারের আমলে করা তদন্তে আটক অস্ত্রগুলো কোন দেশের তৈরি, কোথায় যাচ্ছিল, কারা সরবরাহ করেছিল, কোন জাহাজে বাংলাদেশে এসেছিল, কাদের নির্দেশে ওই ঘাটে অস্ত্র খালাস করা হয়েছিল_এসব বিষয়ে কোনো উল্লেখ ছিল না। আদালত নতুন তদন্তের মাধ্যমে এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজতে বললে কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে আসার মতো এই অস্ত্র চোরাচালানের নেপথ্যের হোতাদের নাম চলে আসে। দেখা যায়, জোট সরকারের আমলের তদন্ত প্রতিবেদন ছিল নিতান্তই লোকদেখানো ও দুর্বল।
আদালতের নির্দেশে নতুন তদন্তে নেপথ্যের অপনায়কদের কথা যেমন জানা গেছে, তেমনি জানা গেছে এই দশ ট্রাক অস্ত্র কারা এনেছিল, কাদের জন্য এনেছিল। এই অস্ত্রের গন্তব্য কোথায় ছিল সেটাও জানা গেছে নতুন তদন্তে। কেবল জানা যায়নি জাহাজটি সম্পর্কে। এর পরও মামলাটি পুনঃতদন্তের পর নতুন মোড় নিয়েছে এটা বলতেই হবে। সেদিন যাঁরা ক্ষমতায় ছিলেন, বিপুল পরিমাণ অস্ত্র দেখে কৃত্রিম বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন, নতুন তদন্ত প্রতিবেদনে তাঁদের নাম উঠে এসেছে আসামি হিসেবে। তাঁদের আসামি করে দেওয়া হয়েছে সম্পূরক চার্জশিট। এখন বিচারের পালা। এখন আর সময়ক্ষেপণ করা চলবে না। এমনিতেই অনেক সময় চলে গেছে। পেরিয়ে গেছে সাতটি বছর। কথায় আছে, 'জাস্টিস ডিলেইড, জাস্টিস ডিনায়েড।' কাজেই নতুন করে শুরু হোক বিচারকাজ। মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির ভেতর দিয়ে এই অস্ত্র চোরাচালান মামলার হোতাদের বিচার হোক।

No comments

Powered by Blogger.