আরব বসন্তের হাওয়া লেগেছে রাজপ্রাসাদেও-সৌদি নারীদের ভোটাধিকার

রাজতান্ত্রিক সৌদি আরবের নারীসমাজের জন্য একটি বড় সুসংবাদের ঘোষণা দিয়েছেন বাদশা আবদুল্লাহ, ‘সৌদি সমাজে নারীর ভূমিকা সংকীর্ণ করে রাখতে আমরা অস্বীকৃতি জানাই।’ গত রোববার দেশটির সর্বোচ্চ পরামর্শ পরিষদ বা মজলিসে শুরায় বক্তব্যকালে তিনি এ কথা বলেছেন।


সৌদি নারীসমাজ বাদশার এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে। গোটা বিশ্বের নারীসমাজের জন্যই এটি একটি আনন্দের সংবাদ।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, আরব বসন্তের হাওয়া সৌদি আরবেও লেগেছে। নয় মাস ধরে আরব জাহানজুড়ে যে গণ-আন্দোলনের জোয়ার বইছে, তার ঢেউ এসে লেগেছে সৌদি রাজপ্রাসাদের প্রাচীরেও। তা ছাড়া ইন্টারনেট প্রযুক্তির কল্যাণে ওই আবদ্ধ দেশটিতেও গড়ে উঠেছে ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। তা ছাড়া সৌদি নারীদের একাংশ এখন প্রকাশ্যেই তাদের অধিকারের কথা বলা শুরু করেছে। যেমন—দেশটিতে নারীদের যানবাহন চালানো নিষিদ্ধ বলে বাদশার এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই কিছু নারী প্রশ্ন তুলেছেন, ‘আমরা যদি গাড়ি চালাতে না পারি, তাহলে নির্বাচনের সময় প্রচারকাজে অংশ নেব কীভাবে?’
বাদশা আরও ঘোষণা দিয়েছেন, ১৫০ সদস্যবিশিষ্ট যে পরামর্শ পরিষদ বা মজলিসে শুরা রয়েছে, এখন থেকে তাতে নারীদেরও নিয়োগ দেওয়া হবে। এই মজলিসে শুরার কাজ বাদশাকে পরামর্শ দেওয়া। বাদশাই নিজের পছন্দমতো এর সদস্যদের মনোনীত করেন। সৌদি নারীসমাজের একটি অংশ এখন বলছে, মজলিসে শুরার সদস্যদের নিয়োগ দেওয়া উচিত নির্বাচনের মাধ্যমে, মনোনয়নের মাধ্যমে নয়।
কিন্তু নারীসমাজের দাবি উচ্চারণে সৌদি আরব এখন আরব বিশ্বের অন্যান্য দেশের চেয়ে অনেক অনেক নিম্নকণ্ঠ। কায়রোর তাহরির স্কয়ারে মোবারকের বিরুদ্ধে জনবিক্ষোভে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল ব্যাপক। সৌদি আরবে এখনো তেমন দৃশ্য কেউ কল্পনা করছে না। ১৯৬০ সালে সৌদি আরবে নারীদের জন্য সরকারি শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা হলেও নারীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসা শুরু করতে দীর্ঘ সময় লেগেছে প্রধানত পরিবারের পুরুষ সদস্যদের বাধার কারণে।
তবে আশাবাদীরা আগের চেয়ে অনেক বেশি আশাবাদী: আরব বসন্তের বাতাস আরও সুদূরপ্রসারী হবে, আধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আরও প্রসার ঘটবে এবং সৌদি নারীসমাজের অধিকারসচেতন অংশটি আরও সোচ্চার ও সক্রিয় হবে। ধীরে হলেও সৌদি আরবে পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে নারীর মর্যাদা ও অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠা পাবে।

No comments

Powered by Blogger.