বীর মুক্তিযোদ্ধা-তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না
৩২৪ স্বাধীনতার চার দশক উপলক্ষে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ধারাবাহিক এই আয়োজন। মোহাম্মদ আবদুর রশীদ
বীর প্রতীক সাহসী এক প্রতিরোধযোদ্ধা পাকিস্তানি সেনারা শহরের দিকে আসছে—খবর পেয়ে মোহাম্মদ আবদুর রশীদ এক দল মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে অবস্থান নিলেন পথে। অগ্রগামী পাকিস্তানি সেনাদের বাধা দেওয়া মাত্র শুরু হয়ে গেল তুমুল যুদ্ধ।
বীর প্রতীক সাহসী এক প্রতিরোধযোদ্ধা পাকিস্তানি সেনারা শহরের দিকে আসছে—খবর পেয়ে মোহাম্মদ আবদুর রশীদ এক দল মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে অবস্থান নিলেন পথে। অগ্রগামী পাকিস্তানি সেনাদের বাধা দেওয়া মাত্র শুরু হয়ে গেল তুমুল যুদ্ধ।
মুক্তিযোদ্ধারা মোহাম্মদ আবদুর রশীদের নেতৃত্বে সাহসের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাদের মোকাবিলা করতে থাকলেন। থেমে গেল পাকিস্তানি সেনাদের অগ্রযাত্রা। এ ঘটনা রাজশাহী শহরের উপকণ্ঠে, ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে।
মোহাম্মদ আবদুর রশীদ চাকরি করতেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে। ১৯৭১ সালে প্রেষণে অ্যাডজুটেন্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন রাজশাহী ক্যাডেট কলেজে। তখন তাঁর পদবি ছিল ক্যাপ্টেন। ২৫ মার্চের পর তিনি রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমির প্রশিক্ষণরত পুলিশ কর্মকর্তা ও কাছের ইপিআর (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস, পরে বিডিআর, এখন বিজিবি) বিওপির বাঙালি সেনাদের সংগঠিত করে নিজেই একটি দল গঠন করেন। পাকিস্তানি সেনাদের মোকাবিলায় তিনি তাঁর দলের মুক্তিযোদ্ধাদের মোতায়েন করেন ঈশ্বরদী-রাজশাহী রেললাইনে।
এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরাট একটি দল ঢাকা থেকে রাজশাহী অভিমুখে আসতে থাকে। আরিচা ঘাট দিয়ে যমুনা নদী অতিক্রম করে তারা নগরবাড়ী আসার পর মুক্তিযোদ্ধাদের অপর একটি দল তাদের বাধা দেয়। তখন দুই পক্ষের মধ্যে সামান্য গোলাগুলি হয়। এরপর পাকিস্তানি সেনারা ঈশ্বরদী ও নাটোর হয়ে আবার রাজশাহীর দিকে অগ্রসর হয়। তখন মোহাম্মদ আবদুর রশীদ তাঁর দল নিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিরোধ করেন। তাঁর অধীন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধে অনেক পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়।
সেই সময় এই যুদ্ধ ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, মোহাম্মদ আবদুর রশীদের দলের তখন প্রস্তুতি এবং অস্ত্র-গোলাবারুদ যে পরিমাণ থাকা দরকার, তা ছিল না। তার পরও তিনি দুর্দম আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর আক্রমণ চালান। তাঁর এই প্রত্যয় অব্যাহত থাকে মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিন পর্যন্ত।
মোহাম্মদ আবদুর রশীদ পরে মুক্তিবাহিনীর ৭ নম্বর সেক্টরের শেখপাড়া সাব-সেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই সাব-সেক্টরে বেশ কটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। তাঁর দায়িত্বপূর্ণ এলাকা ছিল রাজশাহী জেলার দুর্গাপুর, পুঠিয়া, চারঘাট ও বাঘা উপজেলা। এই এলাকা ছিল পাকিস্তানিদের অত্যন্ত সুরক্ষিত এলাকা।
বিশাল পদ্মা নদীর নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহ রাজশাহী ও এই এলাকার জন্য বিরাট প্রতিবন্ধক ছিল। শেখপাড়া সাবসেক্টরের অধীন এলাকায় অপারেশন করার জন্য পদ্মা নদী পার হতে হতো। মুক্তিযোদ্ধারা তাঁর নেতৃত্বে বাঘা, বাজুবাঘা, বেসপুকুরিয়া, চারঘাট ও দুর্গাপুর এলাকায় বেশ কয়েকটি সফল অপারেশন চালান।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য মোহাম্মদ আবদুর রশীদকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ০৯।
মোহাম্মদ আবদুর রশীদ স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন। ২৩ সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
আবদুর রশীদের পৈতৃক বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার গাউটিয়া গ্রামে। বর্তমান ঠিকানা ২০/৫ পশ্চিম পান্থপথ, ঢাকা। বাবার নাম আবদুল খালেক, মা আনোয়ারা খাতুন, স্ত্রী আনোয়ারা রশীদ। তাঁর দুই ছেলে এক মেয়ে।
সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস সেক্টর ৭
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com
মোহাম্মদ আবদুর রশীদ চাকরি করতেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে। ১৯৭১ সালে প্রেষণে অ্যাডজুটেন্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন রাজশাহী ক্যাডেট কলেজে। তখন তাঁর পদবি ছিল ক্যাপ্টেন। ২৫ মার্চের পর তিনি রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমির প্রশিক্ষণরত পুলিশ কর্মকর্তা ও কাছের ইপিআর (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস, পরে বিডিআর, এখন বিজিবি) বিওপির বাঙালি সেনাদের সংগঠিত করে নিজেই একটি দল গঠন করেন। পাকিস্তানি সেনাদের মোকাবিলায় তিনি তাঁর দলের মুক্তিযোদ্ধাদের মোতায়েন করেন ঈশ্বরদী-রাজশাহী রেললাইনে।
এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরাট একটি দল ঢাকা থেকে রাজশাহী অভিমুখে আসতে থাকে। আরিচা ঘাট দিয়ে যমুনা নদী অতিক্রম করে তারা নগরবাড়ী আসার পর মুক্তিযোদ্ধাদের অপর একটি দল তাদের বাধা দেয়। তখন দুই পক্ষের মধ্যে সামান্য গোলাগুলি হয়। এরপর পাকিস্তানি সেনারা ঈশ্বরদী ও নাটোর হয়ে আবার রাজশাহীর দিকে অগ্রসর হয়। তখন মোহাম্মদ আবদুর রশীদ তাঁর দল নিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিরোধ করেন। তাঁর অধীন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধে অনেক পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়।
সেই সময় এই যুদ্ধ ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, মোহাম্মদ আবদুর রশীদের দলের তখন প্রস্তুতি এবং অস্ত্র-গোলাবারুদ যে পরিমাণ থাকা দরকার, তা ছিল না। তার পরও তিনি দুর্দম আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর আক্রমণ চালান। তাঁর এই প্রত্যয় অব্যাহত থাকে মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিন পর্যন্ত।
মোহাম্মদ আবদুর রশীদ পরে মুক্তিবাহিনীর ৭ নম্বর সেক্টরের শেখপাড়া সাব-সেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই সাব-সেক্টরে বেশ কটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। তাঁর দায়িত্বপূর্ণ এলাকা ছিল রাজশাহী জেলার দুর্গাপুর, পুঠিয়া, চারঘাট ও বাঘা উপজেলা। এই এলাকা ছিল পাকিস্তানিদের অত্যন্ত সুরক্ষিত এলাকা।
বিশাল পদ্মা নদীর নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহ রাজশাহী ও এই এলাকার জন্য বিরাট প্রতিবন্ধক ছিল। শেখপাড়া সাবসেক্টরের অধীন এলাকায় অপারেশন করার জন্য পদ্মা নদী পার হতে হতো। মুক্তিযোদ্ধারা তাঁর নেতৃত্বে বাঘা, বাজুবাঘা, বেসপুকুরিয়া, চারঘাট ও দুর্গাপুর এলাকায় বেশ কয়েকটি সফল অপারেশন চালান।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য মোহাম্মদ আবদুর রশীদকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ০৯।
মোহাম্মদ আবদুর রশীদ স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন। ২৩ সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
আবদুর রশীদের পৈতৃক বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার গাউটিয়া গ্রামে। বর্তমান ঠিকানা ২০/৫ পশ্চিম পান্থপথ, ঢাকা। বাবার নাম আবদুল খালেক, মা আনোয়ারা খাতুন, স্ত্রী আনোয়ারা রশীদ। তাঁর দুই ছেলে এক মেয়ে।
সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস সেক্টর ৭
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com
No comments