চিরকুট-শোকের আয়ু by শাহাদুজ্জামান
এই শতাব্দীতে শোকের আয়ু কত দিন? বছর, মাস, সপ্তাহ? অবিরাম ঘটনা-দুর্ঘটনার তোড়ে প্রলেপ পড়ে আমাদের শোকের ওপর। প্রলেপ পড়ার আগেই তাই আরেকবার ফিরে যেতে চাই সাম্প্রতিক এক শোকের কাছে, যা আমার ব্যক্তিগত এবং দেশের অনেকেরও বটে। একটা অভিনব বিমানভ্রমণের শামিল হয়েছিলাম তখন।
চারজন মাত্র আরোহীর ছোট্ট এক যুদ্ধবিমান যেন। একটা যুদ্ধই চলছিল বস্তুত। শরীরে নানা নলের লতাগুল্ম জড়িয়ে শুয়ে আছে চিত্রশিল্পী ঢালী আল মামুন। তার পাশে ওর স্ত্রী দিলারা বেগম জলি। অন্য পাশে এক থাই ডাক্তার। আমরা ওই বিমানে ব্যাংকক চলেছি। কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে মামুনের। বিমানের পাইলটের ঘর হাট করে খোলা। সেখানে অগুনতি লাল, নীল হিজিবিজি আলোর বিন্দু দেখি। পাইলটের সঙ্গে মিলে দেখি ধু ধু আকাশ। আমার আমসটারডাম ডায়েরি বইটি উৎসর্গ করেছিলাম ঢালী আর জলি শিল্পী দম্পতিকে। লিখেছিলাম, বন্ধুত্ব এক অবোধ জোনাকি। কেন জোনাকি? জ্বলে উঠে নিভে যায় বলে? ওদের দুজনের সঙ্গে আমার বন্ধুত্বের জোনাকি অবিরাম জ্বলে আছে সেই আশির দশকের গোড়া থেকে। সেই বন্ধুত্ব আকাশে এক টুকরো হাসপাতালে গিয়ে ঠাঁই নেবে ভাবিনি কখনো। আমার চিকিৎসক পরিচয় আকস্মিক এমন প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবে মামুনের জন্য, তা-ও ভাবিনি। আমরা যখন আকাশে, নিচে তখন অগণিত উৎকণ্ঠিত মুখ। তারেক মাসুদ আর মিশুককে হারিয়ে শোকস্তব্ধ শুভানুধ্যায়ীরা উৎকণ্ঠিত মামুনকে নিয়ে। এদের সবার বন্ধুমহল প্রায় একই। আঁটসাঁট বিমানের জানালায় চোখ রেখে জলিকে আশির দশকে তারেকের সঙ্গে কাটানো চলচ্চিত্র নিয়ে আমার ঝোড়ো দিনগুলোর স্মৃতিচারণা করি। এই নিষ্ফলা জমিতে শ্রমে-ঘামে বেড়ে উঠতে দেখেছি তারেককে। তার কাজ নিয়ে লিখেছি, তর্ক করেছি। একটি ফলবান গাছের এমন উপড়ে পড়া দেখে অপ্রস্তুত হয়ে থাকি। জলি এ সময় আমাকে তারেকের সঙ্গে তার শেষ সংলাপের কথা শুনিয়ে স্তব্ধ করে দেয়। মানিকগঞ্জ থেকে যখন তারা ফিরছে, গাড়িতে উঠে তারেকের স্ত্রী ক্যাথরিন তার দীর্ঘদিনের পাশ্চাত্য অভ্যস্ততায় সবাইকে সিটবেল্ট বাঁধার তাগাদা দেয়। গাড়ির অন্য সহযাত্রীরা বেঁধেছিল কি না জলির স্মরণে নেই কিন্তু মামুন, তারেক আর মিশুক বাঁধে না। জলি কথামতো বেঁধে নেয় সিটবেল্ট। পাশ থেকে মামুন তখন ঠাট্টা করে বলে, ‘দেখলে তো মেয়েরা সব সময় নিজের নিরাপত্তার ব্যাপারে একটু বেশি সজাগ।’ তারেক বলে, ‘বিমানে কিন্তু নিয়ম—আকাশে অক্সিজেন কমে গেলে মা আগে অক্সিজেন মাস্ক পরে নেবে, তারপর পরাবে তার বাচ্চাকে।’ জলি ফোড়ন কাটে, ‘তোমরা তো সব বাচ্চাই। তোমাদের বাঁচানোর জন্যই আমাদের নিজেদের নিরাপদ রাখতে হয়।’ মিশুক বলে ওঠে, ‘কড়া কথা বলেছ, জলি। তারেকের কথাটা মাটিতেও পড়তে দিলে না।’ জলির কাছে এই সংলাপ শুনতে শুনতে আমি আঁতকে উঠি, কেমন অতিলৌকিক মনে হয়। এসব কথা হতে হতে মুহূর্তে পৃথিবীর মুখ থেকে অদৃশ্য হয়ে যায় তারেক, মিশুক। মুমূর্ষু হয়ে মুখ থুবড়ে থাকে মামুন। মামুনকে বাঁচানোর জন্য বেঁচে থাকে ক্যাথরিন আর জলি। দুমড়েমুচড়ে যাওয়া গাড়ির ভেতর থেকে মৃতদেহ ঠেলে বেরিয়ে ক্যাথরিন জলিকে বলে, ‘ওরা কেউ বেঁচে নেই, মামুনকে আমাদের বাঁচাতে হবে, জলি।’ বৃষ্টিমুখর মানিকগঞ্জ রোডে ভিন্ন জাতি-পরিচয়ের দুই নারী এক মুমূর্ষুকে বাঁচিয়ে তোলার আকুতি নিয়ে চলমান গাড়িগুলোর দিকে হাত বাড়ায়।
বিমানের ভেতর অচেতন মামুনের কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দেখি। থাই ডাক্তার নিবিষ্ট মনে মনিটরে পরীক্ষা করেন মামুনকে। জলির সঙ্গে বসে এলোমেলো কথা বলি। দুর্ঘটনায় মরণাপন্ন মামুনকে দেখতে এসে মন্ত্রীকে দেখেছি দুর্ঘটনার দায় কার—এ অভিযোগে তর্কে লিপ্ত হতে। আশ্চর্য হয়েছি তাঁর অবিশ্বাস্য কাণ্ডজ্ঞানহীনতায়। ঢাকার সীমাহীন যানজটে যখন আটকে আছে মামুনের অ্যাম্বুলেন্স, যখন ক্রমশ অ্যাম্বুলেন্সের অক্সিজেন ফুরিয়ে আসছে, উদ্ভ্রান্তের মতো জলি সাহায্যের আশায় আকুতি জানাচ্ছে, তখন সেখানে মওকা পেয়ে এক পত্রিকার সাংবাদিক জলির কাছে জানতে চায়, ‘এ মুহূর্তে আপনার অনুভূতি কী রকম, আমাদের বলবেন কি?’ বিমানের চেয়ারে মাথা রেখে জলি বলে সাংবাদিকের ন্যূনতম বিবেচনাবোধহীনতায় কী বিস্মিত হয়েছে সে। দেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল মামুনের। কিন্তু সেখানে দেখেছি চিকিৎসার সমন্বয়হীনতা। সর্বোচ্চ অর্থ ব্যয় করেও পূর্ণাঙ্গ আস্থা রাখা সম্ভব হয়ে উঠছিল না সেই হাসপাতালে। মামুনকে স্থানান্তর করতে হলো ব্যাংককে। তবে সেটা সম্ভব হলো অগণিত শুভানুধ্যায়ীর সমন্বিত আনুকূল্যেই। কেউ এগিয়ে এলেন অর্থ নিয়ে, কেউ শ্রম, কেউ পরামর্শ নিয়ে। মৃতের তালিকায় তারেক, মিশুকের মতো গুরুত্বপূর্ণ মানুষের নাম, গণমাধ্যমের বিপুল মনোযোগ ইত্যাদি মিলিয়ে সরকারের কাছেও এটি হয়ে উঠল একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ দুর্ঘটনা। মামুনের চিকিৎসার আর্থিক আনুকূল্য পাওয়া গেল সরকারের কাছ থেকেও। এই ঢেউয়ে খানিকটা আনুকূল্য পেলেন তাদের গাড়ির খ্যাতিহীন অপর মৃত সহযাত্রীরাও।
ব্যাংককের জেনারেল হাসপাতালে অচেতন মামুনকে নিয়ে ঢুকি। অবাক হয়ে দেখি, হাসপাতালের লবিতে বসে দুই যন্ত্রী পিয়ানো আর স্যাক্সোফোনে বাজাচ্ছেন ধ্যানের সংগীত। অসুস্থ মানুষের এই রাজ্যে সংগীতের এই মূর্ছনা অভিনব এক পরিবেশের জন্ম দেয়। অতি পরিপাটি সে হাসপাতাল, অতি বিনয়ী এর নার্স, ডাক্তার। আইসিইউতে ধ্যানস্থ হয়ে মামুনকে এসে পরীক্ষা করেন ডাক্তার। যেন এক একজন ছোটখাটো গৌতম বুদ্ধ। সন্দেহ নেই, অতি ব্যয়বহুল এই হাসপাতালের এই সুচারু ব্যবস্থাপনার পেছনে আছে বাজারের প্রণোদনা। তবু এ বাজার সুশৃঙ্খল, কেজো। আমাদের বাজারের মতো অকেজো, বর্বর নয়। জলিকে ঠাট্টা করে বলি, এ তো দেখি ক্যাপিটালিজম আর বৌদ্ধিজমের মেলবন্ধন! মামুনকে হাসপাতালের দায়িত্বে সমর্পণ করার পর বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে জলি। মনে ফিরে ফিরে আসে সহযাত্রী তারেক, মিশুকের থেঁতলে যাওয়া মুখ। অনামিক ক্ষোভে ঘুম ভেঙে যায়। জলিকে নিয়ে বসি হাসপাতালে কর্মরত বাংলাদেশি এক চিকিৎসকের কাছে, মনস্তত্ত্বে প্রশিক্ষণ আছে তাঁর। হাসপাতালের একমাত্র বিদেশি চিকিৎসক তিনি। দীর্ঘদিন আছেন থাইল্যান্ডে। মার্জিত, বিনয়ী এই চিকিৎসক নিজেও যেন পরিণত হয়েছেন প্রায় একজন বৌদ্ধ ভিক্ষুতে। জলিকে মন্ত্র দিলেন তিনি। বললেন, ‘দেখুন, ঘড়ির কাঁটা আর ঘোরানো যাবে না। যা গেছে তাকে ফেলে আসতে হবে পেছনে। ভাবতে হবে আপনি পেয়েছেন দ্বিতীয় জীবন। ফলে আপনার কাছে যা সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ, সামনের জীবনটা ব্যয় করতে হবে সে কাজের জন্য। আর আমাদের চারদিকে সমস্যা তো বিকট, বিরাট, কিন্তু শুরু করতে হবে ছোট ছোট সমস্যা মোকাবিলায়। কেনিয়ার মাসাইরা যেমন বলেন, হাতিকে একবারে মুখে পোরা যায় না কিন্তু ওকে দশ হাজার টুকরো করে মুখে পোরা যায়।’
মামুন ইতিমধ্যে সুপ্তি থেকে জেগে ওঠে। শরীরজুড়ে ভাঙা হাড়, তবু চোখে ফিরে পাওয়া প্রাণ। তাকায় আমার দিকে, জলির দিকে। প্রাথমিক বিস্মৃতি কাটিয়ে ধীরে ধীরে তার মনে পড়ছে দুর্বিষহ দুর্ঘটনার কথা। ভাঙা চোয়ালের অস্পষ্ট উচ্চারণে জানতে চায় তারেকের খবর, মিশুকের খবর। নিজেকে সামলে নেওয়ার জন্য চকিতে আইসিইউ থেকে বেরিয়ে যায় জলি। তারেক, মিশুকের ঘোর দুঃসংবাদ শোনার জন্য তখনো প্রস্তুত নয় মামুনের শরীর, মন। এবার আমি চিকিৎসক নয়, কথাসাহিত্যিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হই। গল্প বানিয়ে বাঁচিয়ে রাখি তারেক আর মিশুককে। মামুন এখনো ব্যাংককে চিকিৎসাধীন। আমার সে গল্পে মামুনের কাছে এখনো বেঁচে আছে তারেক, মিশুক। কিন্তু গল্পকারের আর কতটুকুই বা শক্তি যে সে মৃত মানুষকে বাঁচিয়ে রাখবে?
শাহাদুজ্জামান: কথাসাহিত্যিক।
zaman567@yahoo.com
বিমানের ভেতর অচেতন মামুনের কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দেখি। থাই ডাক্তার নিবিষ্ট মনে মনিটরে পরীক্ষা করেন মামুনকে। জলির সঙ্গে বসে এলোমেলো কথা বলি। দুর্ঘটনায় মরণাপন্ন মামুনকে দেখতে এসে মন্ত্রীকে দেখেছি দুর্ঘটনার দায় কার—এ অভিযোগে তর্কে লিপ্ত হতে। আশ্চর্য হয়েছি তাঁর অবিশ্বাস্য কাণ্ডজ্ঞানহীনতায়। ঢাকার সীমাহীন যানজটে যখন আটকে আছে মামুনের অ্যাম্বুলেন্স, যখন ক্রমশ অ্যাম্বুলেন্সের অক্সিজেন ফুরিয়ে আসছে, উদ্ভ্রান্তের মতো জলি সাহায্যের আশায় আকুতি জানাচ্ছে, তখন সেখানে মওকা পেয়ে এক পত্রিকার সাংবাদিক জলির কাছে জানতে চায়, ‘এ মুহূর্তে আপনার অনুভূতি কী রকম, আমাদের বলবেন কি?’ বিমানের চেয়ারে মাথা রেখে জলি বলে সাংবাদিকের ন্যূনতম বিবেচনাবোধহীনতায় কী বিস্মিত হয়েছে সে। দেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল মামুনের। কিন্তু সেখানে দেখেছি চিকিৎসার সমন্বয়হীনতা। সর্বোচ্চ অর্থ ব্যয় করেও পূর্ণাঙ্গ আস্থা রাখা সম্ভব হয়ে উঠছিল না সেই হাসপাতালে। মামুনকে স্থানান্তর করতে হলো ব্যাংককে। তবে সেটা সম্ভব হলো অগণিত শুভানুধ্যায়ীর সমন্বিত আনুকূল্যেই। কেউ এগিয়ে এলেন অর্থ নিয়ে, কেউ শ্রম, কেউ পরামর্শ নিয়ে। মৃতের তালিকায় তারেক, মিশুকের মতো গুরুত্বপূর্ণ মানুষের নাম, গণমাধ্যমের বিপুল মনোযোগ ইত্যাদি মিলিয়ে সরকারের কাছেও এটি হয়ে উঠল একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ দুর্ঘটনা। মামুনের চিকিৎসার আর্থিক আনুকূল্য পাওয়া গেল সরকারের কাছ থেকেও। এই ঢেউয়ে খানিকটা আনুকূল্য পেলেন তাদের গাড়ির খ্যাতিহীন অপর মৃত সহযাত্রীরাও।
ব্যাংককের জেনারেল হাসপাতালে অচেতন মামুনকে নিয়ে ঢুকি। অবাক হয়ে দেখি, হাসপাতালের লবিতে বসে দুই যন্ত্রী পিয়ানো আর স্যাক্সোফোনে বাজাচ্ছেন ধ্যানের সংগীত। অসুস্থ মানুষের এই রাজ্যে সংগীতের এই মূর্ছনা অভিনব এক পরিবেশের জন্ম দেয়। অতি পরিপাটি সে হাসপাতাল, অতি বিনয়ী এর নার্স, ডাক্তার। আইসিইউতে ধ্যানস্থ হয়ে মামুনকে এসে পরীক্ষা করেন ডাক্তার। যেন এক একজন ছোটখাটো গৌতম বুদ্ধ। সন্দেহ নেই, অতি ব্যয়বহুল এই হাসপাতালের এই সুচারু ব্যবস্থাপনার পেছনে আছে বাজারের প্রণোদনা। তবু এ বাজার সুশৃঙ্খল, কেজো। আমাদের বাজারের মতো অকেজো, বর্বর নয়। জলিকে ঠাট্টা করে বলি, এ তো দেখি ক্যাপিটালিজম আর বৌদ্ধিজমের মেলবন্ধন! মামুনকে হাসপাতালের দায়িত্বে সমর্পণ করার পর বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে জলি। মনে ফিরে ফিরে আসে সহযাত্রী তারেক, মিশুকের থেঁতলে যাওয়া মুখ। অনামিক ক্ষোভে ঘুম ভেঙে যায়। জলিকে নিয়ে বসি হাসপাতালে কর্মরত বাংলাদেশি এক চিকিৎসকের কাছে, মনস্তত্ত্বে প্রশিক্ষণ আছে তাঁর। হাসপাতালের একমাত্র বিদেশি চিকিৎসক তিনি। দীর্ঘদিন আছেন থাইল্যান্ডে। মার্জিত, বিনয়ী এই চিকিৎসক নিজেও যেন পরিণত হয়েছেন প্রায় একজন বৌদ্ধ ভিক্ষুতে। জলিকে মন্ত্র দিলেন তিনি। বললেন, ‘দেখুন, ঘড়ির কাঁটা আর ঘোরানো যাবে না। যা গেছে তাকে ফেলে আসতে হবে পেছনে। ভাবতে হবে আপনি পেয়েছেন দ্বিতীয় জীবন। ফলে আপনার কাছে যা সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ, সামনের জীবনটা ব্যয় করতে হবে সে কাজের জন্য। আর আমাদের চারদিকে সমস্যা তো বিকট, বিরাট, কিন্তু শুরু করতে হবে ছোট ছোট সমস্যা মোকাবিলায়। কেনিয়ার মাসাইরা যেমন বলেন, হাতিকে একবারে মুখে পোরা যায় না কিন্তু ওকে দশ হাজার টুকরো করে মুখে পোরা যায়।’
মামুন ইতিমধ্যে সুপ্তি থেকে জেগে ওঠে। শরীরজুড়ে ভাঙা হাড়, তবু চোখে ফিরে পাওয়া প্রাণ। তাকায় আমার দিকে, জলির দিকে। প্রাথমিক বিস্মৃতি কাটিয়ে ধীরে ধীরে তার মনে পড়ছে দুর্বিষহ দুর্ঘটনার কথা। ভাঙা চোয়ালের অস্পষ্ট উচ্চারণে জানতে চায় তারেকের খবর, মিশুকের খবর। নিজেকে সামলে নেওয়ার জন্য চকিতে আইসিইউ থেকে বেরিয়ে যায় জলি। তারেক, মিশুকের ঘোর দুঃসংবাদ শোনার জন্য তখনো প্রস্তুত নয় মামুনের শরীর, মন। এবার আমি চিকিৎসক নয়, কথাসাহিত্যিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হই। গল্প বানিয়ে বাঁচিয়ে রাখি তারেক আর মিশুককে। মামুন এখনো ব্যাংককে চিকিৎসাধীন। আমার সে গল্পে মামুনের কাছে এখনো বেঁচে আছে তারেক, মিশুক। কিন্তু গল্পকারের আর কতটুকুই বা শক্তি যে সে মৃত মানুষকে বাঁচিয়ে রাখবে?
শাহাদুজ্জামান: কথাসাহিত্যিক।
zaman567@yahoo.com
No comments