বিশেষ সাক্ষাৎকার : ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিঞা-তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে বিদ্যমান অবস্থার জন্য প্রধানমন্ত্রী দায়ী
সংবিধান সংশোধন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কে কালের কণ্ঠের সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার মো. রফিকুল ইসলাম মিঞা। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন মোস্তফা হোসেইন কালের কণ্ঠ : সংবিধান সংশোধনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উত্থাপিত হয়েছে চলতি বাজেট অধিবেশনে।
অথচ আপনারা অধিবেশনে যোগ দিচ্ছেন না। কেন?
রফিকুল ইসলাম মিঞা : টিআইবির সাবেক চেয়ারম্যান এবং বিশিষ্ট ব্যক্তি ড. মোজাফ্ফর আহমদের কথা দিয়েই শুরু করি। তিনি বলেছেন, সংসদে যেভাবে গালিগালাজ করা হয়, আক্রমণাত্মক কথাবার্তা বলা হয়, তাতে সংসদে যাওয়ার মতো অবস্থা কোথায়? আমার ধারণা, মোজাফ্ফর সাহেবের কথাটা বাস্তবতার মূর্ত প্রতীক। সংসদে বিএনপি যখনই গেছে, তখনই ব্যক্তিগত চরিত্র হননসহ এমন ভাষায় তাদের আক্রমণ করা হয়েছে যে, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন কোনো ব্যক্তির পক্ষে সেখানে আলোচনায় অংশ নেওয়া সম্ভব নয়। রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন হওয়া দরকার। তা না হলে জনগণ যে কারণে ভোট দিয়ে সংসদে পাঠায়, তা পূর্ণ হবে না।
কালের কণ্ঠ : তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে সরকার ও বিএনপির অবস্থান পরস্পরবিরোধী। এ সমস্যা সমাধানের পথ কী?
রফিকুল ইসলাম মিঞা : ত্রয়োদশ সংশোধনী সম্পর্কে আদালত যে রায় দিয়েছেন, তার মূল রায় এখনো প্রকাশ পায়নি। এমন অবস্থায় রায় সম্পর্কে মন্তব্য করা কঠিন। রায়ের তিনটি ভাগ রয়েছে। প্রথম ভাগে বলা হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিধানকে ভবিষ্যতের জন্য অবৈধ করা হয়েছে। এখানে ভবিষ্যতের জন্য কথাটা বাদ দিয়ে বলা হচ্ছে, এখনই অবৈধ হয়ে গেছে। অথচ আদালতের বক্তব্য হচ্ছে_প্রসপেক্টিভ ভয়েড। এখনই যদি এটা অবৈধ হতো, তাহলে প্রসপেক্টিভ ভয়েড বলা হতো না। অথচ মূল জাজমেন্ট বের হওয়ার আগেই প্রধানমন্ত্রী বললেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা রাখার কোনো সুযোগ নেই; এবং তা নাকি আদালতের রায়ের সূত্র ধরেই হচ্ছে। দ্বিতীয় অংশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ডকট্রিন অব নেসেসিটিতে রাষ্ট্রীয় স্বার্থে ১০ম ও ১১তম পার্লামেন্টের নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা রাখার কথা বলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি বলে দিলেন, সংসদে বিল উত্থাপন করা হবে। তিনি পুরো জাজমেন্ট না দেখেই বিরোধী দলকে মুখোমুখি করে দিলেন। এই যে অবস্থা, এর জন্য প্রধানমন্ত্রীই উদ্যোক্তা হিসেবে দায়ী। এককভাবে তিনিই দায়ী।
কালের কণ্ঠ : এ বিষয়ে সংবিধান সংশোধনসংক্রান্ত বিশেষ সংসদীয় কমিটি কিংবা অন্য নেতারা কি বক্তব্য দেননি?
রফিকুল ইসলাম মিঞা : প্রধানমন্ত্রী এই বক্তব্য দেওয়ার আগ পর্যন্ত বারবার বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা থাকবে। তাঁর উপদেষ্টা, সিনিয়র মন্ত্রীরা, আইনমন্ত্রী_সবাই বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা থাকবে। এই যে খসড়া সংবিধান, সেখানেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারবিষয়ক সব ধারা ছাপা হয়েছে। সুতরাং তাঁদেরও আগে সিদ্ধান্ত ছিল_কেয়ারটেকার সরকারব্যবস্থা থাকতে পারে। তবে প্রয়োজনে কেয়ারটেকার সরকারের প্রধান কে হবেন, সেই বিষয়ে হয়তো আলোচনার প্রসঙ্গ আসতে পারে। এ ব্যাপারে আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া সেদিন স্পষ্ট করে বলেছেন, কেয়ারটেকার সরকারের প্রধান কে হবেন, সেই বিষয়ে আলোচনার অবকাশ রয়েছে। এখন সেই আলোচনা কোথায় হবে, তা দেখতে হবে। সংসদে হতে পারে কিংবা সংসদের বাইরেও হতে পারে। অথচ পূর্ণাঙ্গ রায় বের হওয়ার আগেই প্রধানমন্ত্রী ভুলভাবে উপস্থাপন করেছেন এবং মারাত্মক অবস্থায় ফেলে দিয়েছেন। যেখানে অ্যাপিলেট ডিভিশন বলে দিলেন, ১০ম ও ১১তম পার্লামেন্ট নির্বাচন হবে কেয়ারটেকার গভর্নমেন্টের অধীনে, সেখানে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) যা করলেন, তাতে দেশ চরম অস্থিরতার দিকে ঠেলে দিয়েছেন। আসলে প্রধানমন্ত্রী হয়তো ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, তাঁদের জনপ্রিয়তায় ব্যাপক ধস নেমেছে। তাঁরা বুঝতে পেরেছেন, আগামীতে তাঁদের পক্ষে নির্বাচনে জয়ী হওয়া সম্ভব নয়। যেনতেনভাবে নির্বাচনে জিতে আসার জন্যই তাঁরা এই পথ বেছে নিতে চাইছেন।
কালের কণ্ঠ : আপনারাও রায় সম্পূর্ণ বের হওয়ার আগেই হরতাল দিয়েছিলেন কেন?
রফিকুল ইসলাম মিঞা : না, আমরা হরতাল দিয়েছি প্রতিবাদস্বরূপ। প্রতিবাদ হলো, যেখানে রায় হচ্ছে_ভবিষ্যতের জন্য অবৈধ, সেখানে প্রধানমন্ত্রী এখনই কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতিকে অবৈধ বলে দিচ্ছেন। আমরা এই বিভ্রান্তিকর অবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গিয়েই হরতাল ডেকেছি।
কালের কণ্ঠ : সংবিধান সংশোধনের বিষয়টি সরকার অনেক আগে থেকেই বলে আসছে। কমিটিতে আপনাদেরও ডেকেছিল।
রফিকুল ইসলাম মিঞা : আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোতে কোথাও এ কথা উল্লেখ ছিল না। তারা গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎ সংকট, কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক দুর্বলতা কাটিয়ে তোলার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তাদের কিন্তু সংবিধান সংশোধনের কোনো প্রতিশ্রুতি ছিল না। তারা সেই কাজগুলো না করে যে কথা ম্যানিফেস্টোতে ছিল না, তা নিয়ে উঠেপড়ে লেগেছে। জাতীয় সমস্যাগুলো হজম করার জন্য সংশোধনীর বিষয়টিকে এগিয়ে নিয়ে এসেছে। আগের কাজ আগে না করে, অর্থাৎ জাতীয় সমস্যাগুলোর সমাধান না করে সংবিধান সংশোধন নিয়ে উঠেপড়ে লেগেছে। তারা অস্থির অবস্থা সৃষ্টি করেছে।
কালের কণ্ঠ : ১৯৯৬ সালে যেমন বিরোধীদলবিহীন সংসদে ত্রয়োদশ সংশোধনী হয়েছিল, এবারও কি বিরোধীদলবিহীন সংসদে আরেকটি সংশোধনী আমরা দেখতে পাচ্ছি?
রফিকুল ইসলাম মিঞা : বিরোধীদলীয় নেত্রী কয়েকদিন আগে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, কেয়ারটেকার সরকারপ্রধান সম্পর্কে আলোচনা হতে পারে। যেকোনো জায়গায় হতে পারে। আমরা মনে করি, বিরোধীদলীয় নেত্রীর এই বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রীর চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন হবে। তিনি আর একক সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছু করবেন না। তিনি অন্তত দেশকে সংকটে ফেলবেন না। আমাদের যে সহযোগিতার মানসিকতা আছে, সেটাকে তিনি কাজে লাগিয়ে মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করবেন_এটাই আশা করি।
কালের কণ্ঠ : সংবিধান সংশোধনসংক্রান্ত বিশেষ সংসদীয় কমিটি যে প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে, সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম এবং বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম থাকছে, আবার ধর্মনিরপেক্ষতাও থাকছে। এ বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন?
রফিকুল ইসলাম মিঞা : পরস্পরবিরোধী কার্যক্রম। তবে তাঁরা যদি ভোটের রাজনীতির জন্য বিসমিল্লাহ আর রাষ্ট্রধর্ম রাখতে চান, সেটা তাঁদের ব্যাপার। কেন করছেন, এটা তারাই ভালো বলতে পারবেন।
কালের কণ্ঠ : কমিটির ৫১ দফা সুপারিশ সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কী?
রফিকুল ইসলাম মিঞা : পঞ্চম সংশোধনীর রায়ের আলোকে তাঁরা সংবিধান সংশোধন করছেন বলে যে ঘোষণা দিয়েছেন, এটা তার পরিপন্থী। সেখানে মোট আটটি এলিমেন্ট এবং তিনটি প্রস্তাবনার কথা বলা হয়েছে। অথচ তাঁরা সেখানে ৫১টি সুপারিশ দিয়েছেন। এই ম্যান্ডেট তাঁদের ছিল না। সুতরাং তাঁরা যা করছেন, তা ঠিক করছেন না।
কালের কণ্ঠ : সংবিধান সংশোধনের জন্য আপনারা গণভোট নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। এ জন্য কি গণভোট অপরিহার্য?
রফিকুল ইসলাম মিঞা : আমরা সপ্তম অনুচ্ছেদের পরিপ্রেক্ষিতে বলছি, সর্বময় ক্ষমতার মালিক জনগণ। যেকোনো মৌলিক পরিবর্তন করতে হলে জনগণের রায় ছাড়া কোনো পথ নেই। এর বিকল্প কিছু নেই। এই যে সংবিধান সংশোধনের কথা বলা হচ্ছে, দেখুন, তাঁরা বলছেন_'আল্লাহর প্রতি আস্থা' অংশটুকু থাকবে না। এই অংশটা থাকলে ক্ষতিটা কী? দেখুন, প্রায় ৫০ লাখ শ্রমিক মুসলিম দেশগুলোতে কর্মরত। এখন তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে অসুবিধা কোথায়? আপনি রাষ্ট্রধর্ম রাখবেন, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম রাখবেন, অথচ 'আল্লাহর প্রতি আস্থা' অংশটুকু রাখবেন না। বিষয়গুলো কেমন সাংঘর্ষিক নয় কি? আপনারা বলছেন, সমাজতন্ত্র রাখবেন। পৃথিবীর কোথাও তো সমাজতন্ত্র নেই। সমাজতন্ত্র পরিবর্তন হয়েছে। এমনকি কমিউনিস্ট কান্ট্রিগুলো পর্যন্ত প্রাইভেটাইজেশনের দিকে যাচ্ছে। অথচ আপনি সেই পেছনে ফিরে যেতে চাইছেন। বরং শোষণমুক্ত সমাজব্যবস্থার দিকে যাওয়া উচিত। এগুলো নিয়ে বেশি মাতামাতি না করে জনগণের স্বার্থের দিকে তাকানো উচিত। সারা বিশ্বে যে পরিবর্তন আসছে, সেদিকে তাকাচ্ছেন না।
কালের কণ্ঠ : আপনাকে ধন্যবাদ।
রফিকুল ইসলাম মিঞা : আপনাকেও ধন্যবাদ।
রফিকুল ইসলাম মিঞা : টিআইবির সাবেক চেয়ারম্যান এবং বিশিষ্ট ব্যক্তি ড. মোজাফ্ফর আহমদের কথা দিয়েই শুরু করি। তিনি বলেছেন, সংসদে যেভাবে গালিগালাজ করা হয়, আক্রমণাত্মক কথাবার্তা বলা হয়, তাতে সংসদে যাওয়ার মতো অবস্থা কোথায়? আমার ধারণা, মোজাফ্ফর সাহেবের কথাটা বাস্তবতার মূর্ত প্রতীক। সংসদে বিএনপি যখনই গেছে, তখনই ব্যক্তিগত চরিত্র হননসহ এমন ভাষায় তাদের আক্রমণ করা হয়েছে যে, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন কোনো ব্যক্তির পক্ষে সেখানে আলোচনায় অংশ নেওয়া সম্ভব নয়। রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন হওয়া দরকার। তা না হলে জনগণ যে কারণে ভোট দিয়ে সংসদে পাঠায়, তা পূর্ণ হবে না।
কালের কণ্ঠ : তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে সরকার ও বিএনপির অবস্থান পরস্পরবিরোধী। এ সমস্যা সমাধানের পথ কী?
রফিকুল ইসলাম মিঞা : ত্রয়োদশ সংশোধনী সম্পর্কে আদালত যে রায় দিয়েছেন, তার মূল রায় এখনো প্রকাশ পায়নি। এমন অবস্থায় রায় সম্পর্কে মন্তব্য করা কঠিন। রায়ের তিনটি ভাগ রয়েছে। প্রথম ভাগে বলা হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিধানকে ভবিষ্যতের জন্য অবৈধ করা হয়েছে। এখানে ভবিষ্যতের জন্য কথাটা বাদ দিয়ে বলা হচ্ছে, এখনই অবৈধ হয়ে গেছে। অথচ আদালতের বক্তব্য হচ্ছে_প্রসপেক্টিভ ভয়েড। এখনই যদি এটা অবৈধ হতো, তাহলে প্রসপেক্টিভ ভয়েড বলা হতো না। অথচ মূল জাজমেন্ট বের হওয়ার আগেই প্রধানমন্ত্রী বললেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা রাখার কোনো সুযোগ নেই; এবং তা নাকি আদালতের রায়ের সূত্র ধরেই হচ্ছে। দ্বিতীয় অংশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ডকট্রিন অব নেসেসিটিতে রাষ্ট্রীয় স্বার্থে ১০ম ও ১১তম পার্লামেন্টের নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা রাখার কথা বলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি বলে দিলেন, সংসদে বিল উত্থাপন করা হবে। তিনি পুরো জাজমেন্ট না দেখেই বিরোধী দলকে মুখোমুখি করে দিলেন। এই যে অবস্থা, এর জন্য প্রধানমন্ত্রীই উদ্যোক্তা হিসেবে দায়ী। এককভাবে তিনিই দায়ী।
কালের কণ্ঠ : এ বিষয়ে সংবিধান সংশোধনসংক্রান্ত বিশেষ সংসদীয় কমিটি কিংবা অন্য নেতারা কি বক্তব্য দেননি?
রফিকুল ইসলাম মিঞা : প্রধানমন্ত্রী এই বক্তব্য দেওয়ার আগ পর্যন্ত বারবার বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা থাকবে। তাঁর উপদেষ্টা, সিনিয়র মন্ত্রীরা, আইনমন্ত্রী_সবাই বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা থাকবে। এই যে খসড়া সংবিধান, সেখানেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারবিষয়ক সব ধারা ছাপা হয়েছে। সুতরাং তাঁদেরও আগে সিদ্ধান্ত ছিল_কেয়ারটেকার সরকারব্যবস্থা থাকতে পারে। তবে প্রয়োজনে কেয়ারটেকার সরকারের প্রধান কে হবেন, সেই বিষয়ে হয়তো আলোচনার প্রসঙ্গ আসতে পারে। এ ব্যাপারে আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া সেদিন স্পষ্ট করে বলেছেন, কেয়ারটেকার সরকারের প্রধান কে হবেন, সেই বিষয়ে আলোচনার অবকাশ রয়েছে। এখন সেই আলোচনা কোথায় হবে, তা দেখতে হবে। সংসদে হতে পারে কিংবা সংসদের বাইরেও হতে পারে। অথচ পূর্ণাঙ্গ রায় বের হওয়ার আগেই প্রধানমন্ত্রী ভুলভাবে উপস্থাপন করেছেন এবং মারাত্মক অবস্থায় ফেলে দিয়েছেন। যেখানে অ্যাপিলেট ডিভিশন বলে দিলেন, ১০ম ও ১১তম পার্লামেন্ট নির্বাচন হবে কেয়ারটেকার গভর্নমেন্টের অধীনে, সেখানে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) যা করলেন, তাতে দেশ চরম অস্থিরতার দিকে ঠেলে দিয়েছেন। আসলে প্রধানমন্ত্রী হয়তো ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, তাঁদের জনপ্রিয়তায় ব্যাপক ধস নেমেছে। তাঁরা বুঝতে পেরেছেন, আগামীতে তাঁদের পক্ষে নির্বাচনে জয়ী হওয়া সম্ভব নয়। যেনতেনভাবে নির্বাচনে জিতে আসার জন্যই তাঁরা এই পথ বেছে নিতে চাইছেন।
কালের কণ্ঠ : আপনারাও রায় সম্পূর্ণ বের হওয়ার আগেই হরতাল দিয়েছিলেন কেন?
রফিকুল ইসলাম মিঞা : না, আমরা হরতাল দিয়েছি প্রতিবাদস্বরূপ। প্রতিবাদ হলো, যেখানে রায় হচ্ছে_ভবিষ্যতের জন্য অবৈধ, সেখানে প্রধানমন্ত্রী এখনই কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতিকে অবৈধ বলে দিচ্ছেন। আমরা এই বিভ্রান্তিকর অবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গিয়েই হরতাল ডেকেছি।
কালের কণ্ঠ : সংবিধান সংশোধনের বিষয়টি সরকার অনেক আগে থেকেই বলে আসছে। কমিটিতে আপনাদেরও ডেকেছিল।
রফিকুল ইসলাম মিঞা : আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোতে কোথাও এ কথা উল্লেখ ছিল না। তারা গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎ সংকট, কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক দুর্বলতা কাটিয়ে তোলার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তাদের কিন্তু সংবিধান সংশোধনের কোনো প্রতিশ্রুতি ছিল না। তারা সেই কাজগুলো না করে যে কথা ম্যানিফেস্টোতে ছিল না, তা নিয়ে উঠেপড়ে লেগেছে। জাতীয় সমস্যাগুলো হজম করার জন্য সংশোধনীর বিষয়টিকে এগিয়ে নিয়ে এসেছে। আগের কাজ আগে না করে, অর্থাৎ জাতীয় সমস্যাগুলোর সমাধান না করে সংবিধান সংশোধন নিয়ে উঠেপড়ে লেগেছে। তারা অস্থির অবস্থা সৃষ্টি করেছে।
কালের কণ্ঠ : ১৯৯৬ সালে যেমন বিরোধীদলবিহীন সংসদে ত্রয়োদশ সংশোধনী হয়েছিল, এবারও কি বিরোধীদলবিহীন সংসদে আরেকটি সংশোধনী আমরা দেখতে পাচ্ছি?
রফিকুল ইসলাম মিঞা : বিরোধীদলীয় নেত্রী কয়েকদিন আগে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, কেয়ারটেকার সরকারপ্রধান সম্পর্কে আলোচনা হতে পারে। যেকোনো জায়গায় হতে পারে। আমরা মনে করি, বিরোধীদলীয় নেত্রীর এই বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রীর চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন হবে। তিনি আর একক সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছু করবেন না। তিনি অন্তত দেশকে সংকটে ফেলবেন না। আমাদের যে সহযোগিতার মানসিকতা আছে, সেটাকে তিনি কাজে লাগিয়ে মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করবেন_এটাই আশা করি।
কালের কণ্ঠ : সংবিধান সংশোধনসংক্রান্ত বিশেষ সংসদীয় কমিটি যে প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে, সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম এবং বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম থাকছে, আবার ধর্মনিরপেক্ষতাও থাকছে। এ বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন?
রফিকুল ইসলাম মিঞা : পরস্পরবিরোধী কার্যক্রম। তবে তাঁরা যদি ভোটের রাজনীতির জন্য বিসমিল্লাহ আর রাষ্ট্রধর্ম রাখতে চান, সেটা তাঁদের ব্যাপার। কেন করছেন, এটা তারাই ভালো বলতে পারবেন।
কালের কণ্ঠ : কমিটির ৫১ দফা সুপারিশ সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কী?
রফিকুল ইসলাম মিঞা : পঞ্চম সংশোধনীর রায়ের আলোকে তাঁরা সংবিধান সংশোধন করছেন বলে যে ঘোষণা দিয়েছেন, এটা তার পরিপন্থী। সেখানে মোট আটটি এলিমেন্ট এবং তিনটি প্রস্তাবনার কথা বলা হয়েছে। অথচ তাঁরা সেখানে ৫১টি সুপারিশ দিয়েছেন। এই ম্যান্ডেট তাঁদের ছিল না। সুতরাং তাঁরা যা করছেন, তা ঠিক করছেন না।
কালের কণ্ঠ : সংবিধান সংশোধনের জন্য আপনারা গণভোট নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। এ জন্য কি গণভোট অপরিহার্য?
রফিকুল ইসলাম মিঞা : আমরা সপ্তম অনুচ্ছেদের পরিপ্রেক্ষিতে বলছি, সর্বময় ক্ষমতার মালিক জনগণ। যেকোনো মৌলিক পরিবর্তন করতে হলে জনগণের রায় ছাড়া কোনো পথ নেই। এর বিকল্প কিছু নেই। এই যে সংবিধান সংশোধনের কথা বলা হচ্ছে, দেখুন, তাঁরা বলছেন_'আল্লাহর প্রতি আস্থা' অংশটুকু থাকবে না। এই অংশটা থাকলে ক্ষতিটা কী? দেখুন, প্রায় ৫০ লাখ শ্রমিক মুসলিম দেশগুলোতে কর্মরত। এখন তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে অসুবিধা কোথায়? আপনি রাষ্ট্রধর্ম রাখবেন, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম রাখবেন, অথচ 'আল্লাহর প্রতি আস্থা' অংশটুকু রাখবেন না। বিষয়গুলো কেমন সাংঘর্ষিক নয় কি? আপনারা বলছেন, সমাজতন্ত্র রাখবেন। পৃথিবীর কোথাও তো সমাজতন্ত্র নেই। সমাজতন্ত্র পরিবর্তন হয়েছে। এমনকি কমিউনিস্ট কান্ট্রিগুলো পর্যন্ত প্রাইভেটাইজেশনের দিকে যাচ্ছে। অথচ আপনি সেই পেছনে ফিরে যেতে চাইছেন। বরং শোষণমুক্ত সমাজব্যবস্থার দিকে যাওয়া উচিত। এগুলো নিয়ে বেশি মাতামাতি না করে জনগণের স্বার্থের দিকে তাকানো উচিত। সারা বিশ্বে যে পরিবর্তন আসছে, সেদিকে তাকাচ্ছেন না।
কালের কণ্ঠ : আপনাকে ধন্যবাদ।
রফিকুল ইসলাম মিঞা : আপনাকেও ধন্যবাদ।
No comments