একুশের দিনে... by সুমী নাসরীন
প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাস এলে অন্যরকম এক ধরনের ভালোলাগায় মনটা ভরে যায়। সেই ভালোলাগার অনুভূতি হয়তো আমার মতো অনেককেই আচ্ছন্ন করে। রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম আর জীবনদানের গৌরবে প্রমাণিত যে, বাঙালি তার মাতৃভাষাকে অপেক্ষাকৃত বেশি ভালোবাসে। ভালোবাসে বলেই বাংলা ভাষাকে আগ্রাসনের হাত থেকে রক্ষা করতে বুকের তাজা রক্ত
ঢেলে দিতেও দ্বিধা করেনি। পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র বাঙালি জাতিই ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে। তাই অপরাপর সব ভাষা থেকে বাংলা ভাষা স্বতন্ত্র মর্যাদা লাভ করেছে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোর ৩০তম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে ২৭টি দেশের সমর্থনে এদিনকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে বিশ্বের ১৮৮টি দেশে সর্বপ্রথম আমাদের ভাষা শহীদ দিবস আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসরূপে পালিত হয়ে আসছে।
ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে আমরা নানা রকম আয়োজন করে থাকি। অধিকার প্রতিষ্ঠা, শোষণমুক্ত সমাজ গঠন, অর্থনৈতিক মুক্তি, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদবিরোধী আন্দোলন, এমনকি রাজনৈতিক উত্থান-পতনের শক্তি সঞ্চয় করতেও আমরা স্মরণ করি ভাষা শহীদদের। বিশ্বের দরবারে বাংলা ভাষার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে চলে নানা প্রচেষ্টা। তার মধ্যে বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে মাসব্যাপী একুশের গ্রন্থমেলা শুধু বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সেতুবন্ধই নয়, জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে উলেল্গখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। কিছুদিন ধরে ২১ ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যতিক্রমী কিছু কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মাত্র কয়েকদিন আগে নিজ মফস্বল শহরে দেখা গেল, ৪-৫ জন কিশোর দল বেঁধে দোকানে দোকানে ঘুরছে। তারা রাস্তায়ও অনেকের সঙ্গে কী যেন বলাবলি করছিল। কাছে গিয়ে দেখলাম, কিশোর ছেলেদের হাতে শহীদ মিনারের ছবি আঁকা ছোট আকৃতির অনেকগুলো লিফলেট। মনে মনে খুশিই হলাম। ভাবলাম ওই সব শিশু-কিশোর নিশ্চয়ই ২১ ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন। তাদের গৃহীত কর্মসূচির আমন্ত্রণপত্র বিলি করছে হয়তোবা। আবেগ ধরে রাখতে পারলাম না। জিজ্ঞেস করলাম, কী বিষয়? কিসের চিঠি। বলল, চিঠি নয়, ২১ ফেব্রুয়ারি। এগুলো দিয়ে তোমরা কী করছ? ওরা নিদ্বর্িধায় আমাকে জানাল, এই কাগজগুলো দিয়ে তারা যে চাঁদা তুলবে তা দিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে ফুর্তি করবে, বনভোজন করবে। অনেকে আবার কলাগাছ দিয়ে, কাগজ দিয়ে, কাদা-মাটি দিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করে রাতভর সাউন্ড বক্স লাগিয়ে ধুমধাড়াক্কা গানে প্রতিবেশীদের ঘুম হারাম করে দেবে।
উলিল্গখিত শিশু-কিশোরদের কাছে ২১ ফেব্রুয়ারি কী? জানতে চাইলে তারা কোনো উত্তর দিতে পারেনি। মহান শহীদ দিবস উপলক্ষে তারা কেবল তাদের ভাষায় পিকনিকের টাকা জোগাড় করতে এসেছে। কেন এই চেতনার অবক্ষয়! পরাধীন দেশের ছাত্রসমাজ আর আজকের ছাত্রসমাজের শিশু-কিশোর-যুবকদের মধ্যে গৌরবে অহঙ্কার কেন বিপরীতমুখী? আমাদের এমন ঐতিহ্যবাহী অতীত আমরা কোন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের হাতে তুলে দিয়ে যাচ্ছি? এত সব প্রশ্নের উত্তর দিতে আমরা সবাই দায়বদ্ধ। জাতীয় মর্যাদা রক্ষায় সবাইকে আরও বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে। ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন এবং ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি নতুন প্রজন্মকে শ্রদ্ধাশীল করে গড়ে তুলতে হবে।
য় মধুখালী, ফরিদপুর
ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে আমরা নানা রকম আয়োজন করে থাকি। অধিকার প্রতিষ্ঠা, শোষণমুক্ত সমাজ গঠন, অর্থনৈতিক মুক্তি, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদবিরোধী আন্দোলন, এমনকি রাজনৈতিক উত্থান-পতনের শক্তি সঞ্চয় করতেও আমরা স্মরণ করি ভাষা শহীদদের। বিশ্বের দরবারে বাংলা ভাষার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে চলে নানা প্রচেষ্টা। তার মধ্যে বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে মাসব্যাপী একুশের গ্রন্থমেলা শুধু বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সেতুবন্ধই নয়, জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে উলেল্গখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। কিছুদিন ধরে ২১ ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যতিক্রমী কিছু কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মাত্র কয়েকদিন আগে নিজ মফস্বল শহরে দেখা গেল, ৪-৫ জন কিশোর দল বেঁধে দোকানে দোকানে ঘুরছে। তারা রাস্তায়ও অনেকের সঙ্গে কী যেন বলাবলি করছিল। কাছে গিয়ে দেখলাম, কিশোর ছেলেদের হাতে শহীদ মিনারের ছবি আঁকা ছোট আকৃতির অনেকগুলো লিফলেট। মনে মনে খুশিই হলাম। ভাবলাম ওই সব শিশু-কিশোর নিশ্চয়ই ২১ ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন। তাদের গৃহীত কর্মসূচির আমন্ত্রণপত্র বিলি করছে হয়তোবা। আবেগ ধরে রাখতে পারলাম না। জিজ্ঞেস করলাম, কী বিষয়? কিসের চিঠি। বলল, চিঠি নয়, ২১ ফেব্রুয়ারি। এগুলো দিয়ে তোমরা কী করছ? ওরা নিদ্বর্িধায় আমাকে জানাল, এই কাগজগুলো দিয়ে তারা যে চাঁদা তুলবে তা দিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে ফুর্তি করবে, বনভোজন করবে। অনেকে আবার কলাগাছ দিয়ে, কাগজ দিয়ে, কাদা-মাটি দিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করে রাতভর সাউন্ড বক্স লাগিয়ে ধুমধাড়াক্কা গানে প্রতিবেশীদের ঘুম হারাম করে দেবে।
উলিল্গখিত শিশু-কিশোরদের কাছে ২১ ফেব্রুয়ারি কী? জানতে চাইলে তারা কোনো উত্তর দিতে পারেনি। মহান শহীদ দিবস উপলক্ষে তারা কেবল তাদের ভাষায় পিকনিকের টাকা জোগাড় করতে এসেছে। কেন এই চেতনার অবক্ষয়! পরাধীন দেশের ছাত্রসমাজ আর আজকের ছাত্রসমাজের শিশু-কিশোর-যুবকদের মধ্যে গৌরবে অহঙ্কার কেন বিপরীতমুখী? আমাদের এমন ঐতিহ্যবাহী অতীত আমরা কোন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের হাতে তুলে দিয়ে যাচ্ছি? এত সব প্রশ্নের উত্তর দিতে আমরা সবাই দায়বদ্ধ। জাতীয় মর্যাদা রক্ষায় সবাইকে আরও বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে। ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন এবং ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি নতুন প্রজন্মকে শ্রদ্ধাশীল করে গড়ে তুলতে হবে।
য় মধুখালী, ফরিদপুর
No comments