শুঁটকিতে মেশানো হচ্ছে কীটনাশক! by এম জসীম উদ্দীন ও খায়রুল বাশার
বরগুনা, পটুয়াখালী ও সুন্দরবনের দুবলারচরে উৎপাদিত শুঁটকিতে ক্ষতিকর কীটনাশক প্রয়োগের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পোকামাকড় থেকে শুঁটকি রক্ষা করতে এ কীটনাশক মেশানো হচ্ছে। চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কীটনাশক মেশানো শুঁটকি মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর।
কীটনাশকযুক্ত শুঁটকি খেলে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব হিসেবে ক্যানসারও হতে পারে। বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের হিসাব অনুযায়ী, ২০১০-১১ অর্থবছরে দেশে প্রায় ৩১ লাখ মেট্রিক টন মাছ আহরিত হয়। এর ১০ শতাংশ মাছ শুঁটকি করা হয়। সে হিসাবে গত অর্থবছরে তিন লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন কাঁচা মাছ শুকিয়ে এক লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদিত হয়েছে।
দেশে সিংহভাগ শুঁটকি উৎপাদিত হয় বরগুনা, পটুয়াখালী ও সুন্দরবনের দুবলারচরে। বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী বরগুনার তালতলী উপজেলার আশারচর, সোনারচর, নিদ্রা-সখিনা; পাথরঘাটার পদ্মা, রুহিতা, লালদিয়া, ছোট পাথরঘাটা, চরদুয়ানি; পটুয়াখালীর মহিপুর, কুয়াকাটা; পূর্ব সুন্দরবনের দুবলারচর, মেহের আলীরচর, শেলারচর, নারিকেলবাড়িয়া, আলোরকোল, পক্ষিদিয়ারচর, অফিসকিল্লা, মাঝেরকিল্লা, আমবাড়িয়া, মানিকখালী, ছাপড়াখালী, কবরখালী, কোকিলমনি ও হলদেখালীরচর এলাকায় প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক শুঁটকি উৎপাদন-প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত। অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত শুঁটকি উৎপাদিত হয়।
যেভাবে কীটনাশক মেশানো হয়: আশারচর ও সোনারচর এলাকায় গিয়ে জানা যায়, সেখানে প্রায় পাঁচ হাজার জেলে ও শ্রমিক শুঁটকি তৈরির কাজে নিয়োজিত। দেখা যায়, চরে খোলা জায়গায় মাদুর বিছিয়ে ও মাচার ওপর মাছ শুকিয়ে শুঁটকি করা হচ্ছে। কাঁচা মাছে ছোট ছোট সাদা দানা ছড়িয়ে আছে। মাচার আশপাশে পোকামাকড় ও মাছি নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শ্রমিক জানান, সাদা দানাগুলো কীটনাশকের গুঁড়া। পোকামাকড়ের আক্রমণ রোধে ও রঙ ঠিক রাখতে এসব মেশানো হচ্ছে। কীটনাশকের মধ্যে রয়েছে নগস, ডিডিটি পাউডার, বাসুডিন, ফরমালিন, ডায়াজনিন। তাঁরা আরও জানান, প্রতি ১০ লিটার পানিতে তিন মিলিগ্রাম কীটনাশক মেশিয়ে দেড় থেকে দুই মণ কাঁচা মাছ ভিজিয়ে শুঁটকি করা যায়।
কুয়াকাটার শুঁটকিপল্লিতে দেখা গেছে, মাছি ও বিভিন্ন পোকার আক্রমণ ঠেকাতে পানির বোতলে করে রিপকর্ড ও সবিক্রন নামের কীটনাশক কাঁচা মাছে ছিটানো হচ্ছে। পানিমিশ্রিত এসব কীটনাশকের রঙ সাদা।
কুয়াকাটার শুঁটকি ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন, ফারুক হাওলাদার, আবু খলিফা ও শাহজাহান মিয়া জানান, পোকামাকড় থেকে রক্ষা করতে শুঁটকি তৈরিতে কেউ কেউ রিপকর্ড, সুবিক্রন কীটনাশক ব্যবহার করছেন। তাঁরা দাবি করেন, রোদে ভালো করে শুকালে বা রান্নার পর শুঁটকিতে এ কীটনাশকের অস্তিত্ব থাকে না।
কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিরুত্তম কুমার সরকার বলেন, ‘রিপকর্ড ও সবিক্রন অন্তর্বাহী বিষ, যার কার্যক্ষমতা থাকে কয়েক মাস। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক হওয়ায় আমরা কৃষকদের এ দুটি কীটনাশক ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করি।’
সুন্দরবনের অভ্যন্তরে ১৩টি চর নিয়ে দুবলার জেলেপল্লিতেও শুঁটকি উৎপাদন ও সংরক্ষণে কীটনাশক ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এখানে প্রায় ২০ হাজার জেলে-শ্রমিক বছরে প্রায় ৫০ হাজার মণ শুঁটকি উৎপাদন করেন।
দুবলারচরের শুঁটকি ব্যবসায়ী ও দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দীন আহম্মেদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমরা শুঁটকিতে ক্ষতিকর কিছু ব্যবহার করি না। আমরা সম্পূর্ণ রোদে শুকিয়ে শুঁটকি করি।’
গবেষণার তথ্য: ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম নওশাদ আলম বলেন, তাঁরা গবেষণায় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে নিয়মিত শুঁটকি খাওয়া কয়েকটি পরিবার এবং দিনাজপুর ও গাইবান্ধায় শুঁটকি খায় না এমন কয়েকটি পরিবারের সদস্যের রক্তে ডিটিটি পরীক্ষা করেছেন। তাতে দেখা গেছে, যাঁরা শুঁটকি খান না তাঁদের চেয়ে যাঁরা খান, তাঁদের রক্তে ডিটিটির পরিমাণ ২৭৩ গুণ বেশি।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মত: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, শুঁটকি করার সময় যেসব কীটনাশক ব্যবহার করা হয়, রান্নার পরও তার বিষক্রিয়া থেকে যায়, যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর।
বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কীটনাশক ব্যবহার করায় এর প্রতিক্রিয়া শুঁটকিতেও অক্ষুণ্ন থাকে। এসব শুঁটকি খেলে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া না হলেও পরে কিডনি ও যকৃতে ক্যানসার দেখা দিতে পারে।
দেশে সিংহভাগ শুঁটকি উৎপাদিত হয় বরগুনা, পটুয়াখালী ও সুন্দরবনের দুবলারচরে। বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী বরগুনার তালতলী উপজেলার আশারচর, সোনারচর, নিদ্রা-সখিনা; পাথরঘাটার পদ্মা, রুহিতা, লালদিয়া, ছোট পাথরঘাটা, চরদুয়ানি; পটুয়াখালীর মহিপুর, কুয়াকাটা; পূর্ব সুন্দরবনের দুবলারচর, মেহের আলীরচর, শেলারচর, নারিকেলবাড়িয়া, আলোরকোল, পক্ষিদিয়ারচর, অফিসকিল্লা, মাঝেরকিল্লা, আমবাড়িয়া, মানিকখালী, ছাপড়াখালী, কবরখালী, কোকিলমনি ও হলদেখালীরচর এলাকায় প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক শুঁটকি উৎপাদন-প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত। অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত শুঁটকি উৎপাদিত হয়।
যেভাবে কীটনাশক মেশানো হয়: আশারচর ও সোনারচর এলাকায় গিয়ে জানা যায়, সেখানে প্রায় পাঁচ হাজার জেলে ও শ্রমিক শুঁটকি তৈরির কাজে নিয়োজিত। দেখা যায়, চরে খোলা জায়গায় মাদুর বিছিয়ে ও মাচার ওপর মাছ শুকিয়ে শুঁটকি করা হচ্ছে। কাঁচা মাছে ছোট ছোট সাদা দানা ছড়িয়ে আছে। মাচার আশপাশে পোকামাকড় ও মাছি নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শ্রমিক জানান, সাদা দানাগুলো কীটনাশকের গুঁড়া। পোকামাকড়ের আক্রমণ রোধে ও রঙ ঠিক রাখতে এসব মেশানো হচ্ছে। কীটনাশকের মধ্যে রয়েছে নগস, ডিডিটি পাউডার, বাসুডিন, ফরমালিন, ডায়াজনিন। তাঁরা আরও জানান, প্রতি ১০ লিটার পানিতে তিন মিলিগ্রাম কীটনাশক মেশিয়ে দেড় থেকে দুই মণ কাঁচা মাছ ভিজিয়ে শুঁটকি করা যায়।
কুয়াকাটার শুঁটকিপল্লিতে দেখা গেছে, মাছি ও বিভিন্ন পোকার আক্রমণ ঠেকাতে পানির বোতলে করে রিপকর্ড ও সবিক্রন নামের কীটনাশক কাঁচা মাছে ছিটানো হচ্ছে। পানিমিশ্রিত এসব কীটনাশকের রঙ সাদা।
কুয়াকাটার শুঁটকি ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন, ফারুক হাওলাদার, আবু খলিফা ও শাহজাহান মিয়া জানান, পোকামাকড় থেকে রক্ষা করতে শুঁটকি তৈরিতে কেউ কেউ রিপকর্ড, সুবিক্রন কীটনাশক ব্যবহার করছেন। তাঁরা দাবি করেন, রোদে ভালো করে শুকালে বা রান্নার পর শুঁটকিতে এ কীটনাশকের অস্তিত্ব থাকে না।
কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিরুত্তম কুমার সরকার বলেন, ‘রিপকর্ড ও সবিক্রন অন্তর্বাহী বিষ, যার কার্যক্ষমতা থাকে কয়েক মাস। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক হওয়ায় আমরা কৃষকদের এ দুটি কীটনাশক ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করি।’
সুন্দরবনের অভ্যন্তরে ১৩টি চর নিয়ে দুবলার জেলেপল্লিতেও শুঁটকি উৎপাদন ও সংরক্ষণে কীটনাশক ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এখানে প্রায় ২০ হাজার জেলে-শ্রমিক বছরে প্রায় ৫০ হাজার মণ শুঁটকি উৎপাদন করেন।
দুবলারচরের শুঁটকি ব্যবসায়ী ও দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দীন আহম্মেদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমরা শুঁটকিতে ক্ষতিকর কিছু ব্যবহার করি না। আমরা সম্পূর্ণ রোদে শুকিয়ে শুঁটকি করি।’
গবেষণার তথ্য: ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম নওশাদ আলম বলেন, তাঁরা গবেষণায় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে নিয়মিত শুঁটকি খাওয়া কয়েকটি পরিবার এবং দিনাজপুর ও গাইবান্ধায় শুঁটকি খায় না এমন কয়েকটি পরিবারের সদস্যের রক্তে ডিটিটি পরীক্ষা করেছেন। তাতে দেখা গেছে, যাঁরা শুঁটকি খান না তাঁদের চেয়ে যাঁরা খান, তাঁদের রক্তে ডিটিটির পরিমাণ ২৭৩ গুণ বেশি।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মত: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, শুঁটকি করার সময় যেসব কীটনাশক ব্যবহার করা হয়, রান্নার পরও তার বিষক্রিয়া থেকে যায়, যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর।
বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কীটনাশক ব্যবহার করায় এর প্রতিক্রিয়া শুঁটকিতেও অক্ষুণ্ন থাকে। এসব শুঁটকি খেলে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া না হলেও পরে কিডনি ও যকৃতে ক্যানসার দেখা দিতে পারে।
No comments