চিদাম্বরমের সফর-বন্ধুত্বের স্বার্থে চাই শান্ত সীমান্ত
ভারতের উপরাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ হামিদ আনসারি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসএম কৃষ্ণা এবং ক্ষমতাসীন কংগ্রেস দলের সভাপতি সোনিয়া গান্ধীর পর এবার ঢাকা সফর করে গেলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পালানিয়াপ্পান চিদাম্বরম। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ও ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্ব দু'দেশের সম্পর্কোন্নয়নের ব্যাপারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
শুধু সুপ্রতিবেশীর সাধারণ সম্পর্কই নয়, আশা করা হচ্ছে, পরস্পরের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতেও অংশীদারিত্বের সম্পর্ক স্থাপিত হবে। গত বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিলি্ল সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশের সহযোগিতামূলক মনোভাবের কথা জানিয়ে দিয়েছেন। ভারতের দিক থেকেও ইতিবাচক সাড়া মিলছে। উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের ঢাকা সফরের মধ্য দিয়ে ভারত সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বের পথ উন্মুক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের মধ্য দিয়ে দু'দেশের সামনে সহযোগিতার পথ খুলে যাবে। এমন একটি প্রেক্ষাপটে পি. চিদাম্বরমের ঢাকা সফরের গুরুত্ব অনেক। বিশেষত ভারত ও বাংলাদেশের অমীমাংসীত বেশ কিছু ইস্যু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট। অচিহ্নিত সীমান্ত, ছিটমহল সমস্যা, বাংলাদেশের ছিটমহলগুলোতে যাতায়াত একান্তভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারে। চিদাম্বরমের সফরে বিষয়গুলো নিয়ে দু'দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। জানা গেছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগেই অচিহ্নিত ও অপদখলীয় সীমান্ত সমস্যার সমাধান করা হবে। দু'দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে স্থির হবে ছিটমহলগুলোর ভবিষ্যৎ। বাংলাদেশ যাতে তিন বিঘা ছিটমহলে ২৪ ঘণ্টা অবাধ যাতায়াত করতে পারে সে ব্যবস্থাও হবে। সীমান্তের এ সমস্যাগুলোর সঙ্গে গোলাগুলির ঘটনাও আলোচিত হয়েছে। বিএসএফের গুলিতে নিরস্ত্র বাংলাদেশিদের হত্যার ঘটনা দু'দেশের সম্পর্কোন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ঘটনা জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে প্রশ্নবিদ্ধ করে। ফলে সকলেই আশা করেন, গুলি চালনা সম্পূর্ণ বন্ধ হওয়া উচিত। প্রয়োজনে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমকারী ব্যক্তিদের গ্রেফতার করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সোপর্দ করা যায়। দু'দেশের সীমান্ত রক্ষীদের পারস্পরিক যোগাযোগের ভিত্তিতেও অনেক সমস্যার সমাধান করা যায়। তা না করে, নির্বিচার গুলি সমস্যার সমাধান না করে বরং একে জটিল করে তুলছে। ভারতের নানা পর্যায়ের পদস্থ ব্যক্তিরা বহুবার হত্যা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে তা বন্ধ হয়নি। এবার চিদাম্বরমও প্রতিশ্রুতি দিলেন। আমরা আশা করি, তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সদস্যরা। বাংলাদেশ-ভারত ভবিষ্যতে যে গভীর ও অর্থপূর্ণ সম্পর্ক রচনা করতে আগ্রহী তাতে সীমান্তে রক্তপাত একটি বড় বাধা। স্বস্তিকর সম্পর্কের স্বার্থেই তা বন্ধ হওয়া উচিত। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনুরোধ জানিয়েছেন যাতে বঙ্গবন্ধুর পলাতক দুই খুনিকে ফেরত দেওয়া হয়। ধারণা করা হয়, এ দু'জন ভারতে আছেন। ইতিপূর্বে বাংলাদেশ বহু ভারতীয় জঙ্গি, অপরাধী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীকে সে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে। ভারতেরও উচিত একই ধরনের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে কোনো দেশই তার ভূমি অপর কোনো দেশে সন্ত্রাস সৃষ্টিতে ব্যবহৃত হতে দিতে পারে না। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আদর্শ উদাহরণ। বাংলাদেশ যেভাবে অভ্যন্তরীণ জঙ্গিবাদের মূলোৎপাটন করেছে তাও এ অঞ্চলে আদর্শ বলে গণ্য হতে পারে। আমরা মনে করি, দক্ষিণ এশিয়ায় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ ঠেকাতে এ অঞ্চলের দেশগুলোর আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা উচিত। বাংলাদেশ ও ভারতের পারস্পরিক বোঝাপড়া, আন্তরিক সম্পর্ক এ অঞ্চলে উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে নতুন মাত্রা দেবে। কিন্তু সবার আগে বিবদমান সমস্যাগুলো মোকাবেলা করেই এগোতে হবে। চিদাম্বরমের সফর সমস্যা মোকাবেলার ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়ক হবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।
No comments