বানারীপাড়া-চাখার-স্বাস্থ্যসেবা পরিস্থিতির উন্নয়ন চাই
বিদ্বৎসমাজে 'বিন্দুতে সিন্ধু দর্শন' বলে একটি কথা প্রচলিত আছে। গ্রাম সমাজে বলা হয়, হাঁড়ির ভাতের কী অবস্থা তা একটি ভাত টিপলেই বোঝা যায়। সব ভাত এক এক করে পরখ করার দরকার নেই। দেশের মফস্বল শহরগুলো কিংবা থানা পর্যায়ে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবার কী হাল তা জানতে প্রতিটি থানা পরিদর্শনের প্রয়োজন বোধহয় নেই।
দায়িত্বশীল একজন মন্ত্রীর পক্ষে সকল থানা পরিদর্শন বাস্তবসম্মতও নয়। কিন্তু সম্প্রতি বানারীপাড়া ও চাখার সফরে গিয়ে স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে যে অভিজ্ঞতা লাভ করলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী তা এক কথায় বিন্দুতে সিন্ধু দর্শন। বানারীপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে মন্ত্রী দেখলেন, তিনজন ডাক্তার অনুপস্থিত। কারও অজুহাত ছুটির, কারও-বা ট্রেনিংয়ের। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে জানলেন, চিকিৎসা কেন্দ্রটিতে চিকিৎসাসেবা বলতে একটি ট্যাবলেট আর ক্যাপসুলই দেওয়া হয়। জরুরি সেবা নিয়ে আসা প্রসূতিদের প্রাইভেট ক্লিনিকের রাস্তা দেখিয়ে দেওয়া হয়। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা জানালেন, ৮ ইউনিয়নে পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোর কর্মীরা দায়িত্বে ফাঁকি দিয়ে চলেছেন দিনের পর দিন। চাখারের ১০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের ডাক্তারের বিরুদ্ধে অভিযোগ_ তিনি রোগীপ্রতি ১শ' টাকা নেন। আর জরুরি দরকারে তাকে পাওয়া যায় না। কেননা চাখারে বসবাস করার বদলে তিনি বিভাগীয় শহর বরিশালেই থাকতে পছন্দ করেন। বানারীপাড়া ও চাখারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী যে অভিজ্ঞতা লাভ করলেন তা ব্যতিক্রম নয়। সম্প্রতি জাতীয় সংসদের সদস্যরা তাদের এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর বেহাল দশার যে বর্ণনা দিয়েছেন তার সঙ্গে এর মিল ভীষণ। ডাক্তারদের অনুপস্থিতি, দায়িত্ব পালনে অনীহা, ওয়ার্কিং স্টেশনে থাকার অনিচ্ছা, অতিরিক্ত ফির বিনিময়ে সেবা দান এবং প্রাইভেট ক্লিনিকের দৌরাত্ম্য সারাদেশেরই সমস্যা। এর বাইরে আছে ডাক্তারদের স্বল্পতা। দিনের পর দিন চলছে এ অবস্থা। বিষয়গুলো নিয়ে মন্ত্রণালয়, সংসদ, সরকার সকলেই অবহিত। কিন্তু এ সমস্যাবলির যথাযথ প্রতিবিধান হচ্ছে না। শুধু নতুন ডাক্তার নিয়োগ দিয়ে যে এ সমস্যার সমাধান হবে না সেটি বোধগম্য। উপযুক্ত প্রশাসনিক পদক্ষেপই পারে পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে। দুর্নীতি, দায়িত্বে অবহেলা, অতিরিক্ত আয়ের অসুখ বন্ধ করতে না পারলে সাধারণের অসুখের সেবা দিতে কখনোই সক্ষম হবে না আমাদের সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো। কিন্তু ডাক্তারদের সঠিক পথে আনার ব্যবস্থা কি আসবে?
No comments