পুলিশের উসকানিমূলক পদক্ষেপ নিন্দনীয়-সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা

গাড়ি ভাঙচুর ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমের ১৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে, যাঁরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীও। পুলিশের দায়ের করা এ মামলাটি উসকানিমূলক বললেও কম বলা হয়। আন্দোলন বা দাবি-দাওয়া আদায়ের নামে রাজপথে গাড়ি ভাঙচুর ও নৈরাজ্য সৃষ্টি আমরা সমর্থন করি না।


তাই বলে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোরও কোনো যুক্তি নেই। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই সাংবাদিকেরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক ঘটনায় উসকানি দিয়েছেন। কীভাবে, তার উত্তর নেই। একজন পুলিশ কর্মকর্তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ঊর্ধ্বতনের নির্দেশে এই মামলা করা হয়েছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থা নাকি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার জন্য সেখানে কর্মরত সাংবাদিক, ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীদের দায়ী করে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-সাংবাদিকেরা কেউ গাড়ি ভাঙচুরে জড়িত ছিলেন না। তাঁরা পত্রিকায় ঘটনার রিপোর্ট করেছেন কিংবা টিভি চ্যানেলে সংবাদ প্রচার করেছেন। সে জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে না।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক আন্দোলনের প্রেক্ষাপটটি সবারই জানা। ‘নিজস্ব আয় দিয়ে ব্যয় নির্বাহের’ খবর প্রকাশিত হওয়ার পর স্বভাবতই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হন এবং আন্দোলনের কর্মসূচি নেন। তাঁদের আশঙ্কা, সরকার ভর্তুকি তুলে নিলে অনেক বেশি বেতন-ভাতা দিয়ে তাঁদের পড়তে হবে। এ ঘটনার জন্য যদি কাউকে দায়ী করতে হয়, তাহলে তা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আন্দোলনে নামার আগে কেন তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসল না?
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে কর্তৃপক্ষ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে। এটি সমাধান নয়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত দাবি-দাওয়া মেনে যত দ্রুত সম্ভব বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ব্যবস্থা করতে হবে। যে আন্দোলনে সব শিক্ষার্থীর স্বার্থ জড়িত, সেই আন্দোলনে রাজনৈতিক রং চড়ানো ঠিক নয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আটক ছাত্রদের মুক্তির ব্যাপারে যে ভূমিকা নিয়েছে, তা প্রশংসনীয়। এখন ১৫ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে আনীত মামলা প্রত্যাহারেও তাদের কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে। তাঁরাও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সাংবাদিকদের অযথা হয়রানি এবং ক্যাম্পাসে সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠনের বেআইনি কর্মকাণ্ড বন্ধ না হলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হবে, যা কারও কাম্য নয়।

No comments

Powered by Blogger.