প্রেসিডেন্ট ওবামা কিভাবে লিবিয়াকে সাহায্য করতে পারেন by ডেভিড এম তাফুরি
লিবিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরোধীদলীয় নেতা মনে করেন, বিতর্কের সমাধান হওয়া উচিত নিজেদের মধ্যেই। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কূটনৈতিকভাবে যে সহযোগিতা দেওয়া প্রয়োজন, তার চেয়ে বেশি প্রত্যাশা তাঁদের। পরবর্তী সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করে নির্বাহী বিভাগের ওপর।
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যথারীতি লিবিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে স্বীকৃতি প্রদান করেছেন। তিনি মনে করেন, এই সরকারই লিবিয়ার জনগণের বৈধ সরকার। সফরকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এর আগে লিবিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি স্পষ্টতই বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সরকার যোগাযোগ রক্ষাসহ প্রয়োজনীয় সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারে। ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি, কানাডা, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্দান এবং অন্যরাও এই সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে। প্রেসিডেন্টের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক শীর্ষ কূটনীতিক এবং সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেফ ফেল্টম্যান চলতি মাসে যখন বেনগাজি সফর করেন, তখন তিনি সেখানে উৎফুল্ল জনতাকে দেখেছেন। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, এতই উৎফুল্ল ছিল তারা যা তিনি তাঁর দীর্ঘ কূটনৈতিক জীবনে কখনো দেখেননি। তিনি লিখেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার লিবিয়াকে গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য সত্যিই আন্তরিক এবং তারা চেষ্টা করছে জবাবদিহিতামূলক একটি সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার জন্য। কিন্তু স্টেট ডিপার্টমেন্টের সমর্থনটা কিন্তু ততটা স্পষ্ট নয়। স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলেছে, ওয়াশিংটনে তারা একটি দপ্তর খুলতে পারে। তবে এটা লিবীয় দূতাবাসের ওপর হস্তক্ষেপ করার মতো অবস্থায় পেঁৗছাবে না। যুক্তরাষ্ট্র সরকার বলেছে, ত্রিপোলিতে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস জ্বালিয়ে দিয়েছে গাদ্দাফির লোকজন। যদিও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে তারা সমর্থন দিয়ে আসছে।
এখনো অপেক্ষা কেন? গাদ্দাফি শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি প্রদানই প্রথম এবং প্রধান কাজ হতে পারে এই মুহূর্তে। যদি আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পাওয়া যায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে থাকা ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার তাদের হাতে চলে আসত। এতে বৈধতাও পাওয়া যেত। কারণ এই টাকার মালিক লিবিয়ার সাধারণ মানুষ। আর সে রকম কিছু হলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই লিবিয়ার প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার কিংবা বিক্রির অধিকার সংরক্ষণ করবে। সিনেটে উত্থাপিত হওয়ার পর লিবিয়ার সেই অর্থ মানবিক কারণে সেখানে ব্যবহারের জন্য ছাড় করার সুযোগ পাওয়া যেতে পারে। তবে যে আইন আছে, তা ১৯৭৩ সালের যুদ্ধ-পরবর্তীকালে পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিল। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চলছে বিনা অর্থে। কিন্তু গাদ্দাফির অর্থবিত্ত আছে। তিনি একটি পদ্ধতি ৩০ বছরে তৈরি করেছেন। জ্বালানি তেল সরবরাহ করার ব্যাপারে একটি কৌশল তাঁর জানা আছে। সেই সরবরাহব্যবস্থাটা হতে পারে চোরাই পথেও।
প্রেসিডেন্ট স্পষ্টতই বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নীতিগত সিদ্ধান্ত হচ্ছে_গাদ্দাফিকে সরে যেতে হবে। আর তিনি সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য সামরিক কৌশল অবলম্বন করতে চান। তবে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষে তাদের কাঙ্ক্ষিত জয় অর্জন করা সম্ভব হবে না। যদি তারা স্বীকৃতিপ্রাপ্তির পাশাপাশি সামরিক সহযোগিতা না পায়। সাধারণত একটি সরকার যখন তার নিজ এলাকায় শাসন পরিচালনা করে এবং তার সঙ্গে আরো কিছু বৈশিষ্ট্য যোগ হয়, তাহলে সেই সরকারকে ভিন্ন রাষ্ট্র স্বীকৃতি দিতে পারে। আর সেই সরকারও বৈধ বলে বিবেচিত হয়। অন্তর্বর্তীকালীন এই সরকারের কথা যদি বলা হয়, তাহলে দেখা যাবে এই সরকার লিবিয়ার অধিকাংশ এলাকায় শাসনব্যবস্থা কায়েম করতে সক্ষম হয়েছে। এই সরকার প্রশাসন চালাচ্ছে, জনগণের হয়ে কাজ করছে। জনগণকে বিভিন্ন সেবাও প্রদান করছে। এই সরকার ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনও করেছে। বিশেষ করে ইতালি, কুয়েত এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির কথা এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে স্বীকৃতি প্রদান করে খুবই বাস্তবভিত্তিক কাজ করেছে।
লেখক : যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা। ওয়াশিংটন পোস্ট থেকে ভাষান্তর করেছেন সজীব আহমেদ
No comments