যে খবর নাড়া দেয়-ইনানীর দুঃখগাথা

১৯৯২ সাল। ফেব্রুয়ারি মাস। রাশিয়ার মস্কো থেকে পরিবেশবিদ দ্বিজেন শর্মা এসেছেন একেবারে দক্ষিণের শহর ক্রাসনাদারে। তখনও ধবল তুষারে ঢেকে আছে প্রকৃতি। মেঘের আড়াল থেকে বের হবে না বের হবে না করতে করতে একসময় দেখা দিয়েছে সূর্য। মধ্যাহ্নভোজের পর আমরা সবাই বেরিয়েছি হোস্টেলের চারদিকে ঘুরে বেড়ানোর জন্য।


একসময় দ্বিজেন শর্মা জড়িয়ে ধরলেন একটি বিশাল গাছকে। বিড়বিড় করে বললেন, ‘এই গাছের সঙ্গে আমাদের প্রাণের সম্পর্ক, সেটা কি বুঝতে পার? ওরা কথা বলতে পারে না, পারলে ওরা বলত, মানুষের হাতে কী দুর্দশাতেই না পড়তে হয় ওদের!’
কথাগুলো মনে পড়ল ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোর শেষ পাতায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন দেখে। ‘উজাড় হচ্ছে ইনানী সৈকত’—শিরোনামটিই বলে দিচ্ছে ইনানীর গাছগুলো আর নিরাপদ নয়। নিরাপদ নয় উপকূল। ভাবা যায়, কেবল কক্সবাজারের ইনানীতেই গত তিন দিনে কেটে ফেলা হয়েছে দুই হাজার গাছ! কেউ গাছ কেটে বিক্রি করছেন, কেউ বখরার বিনিময়ে এই কাজে বাধা না দিয়ে চুপ থাকছেন। যেখানে ছিল ঝাউবন, সেখানে এখন গড়ে উঠছে অবৈধ স্থাপনা আর ঝুপড়ি ঘর।
প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক কি একেবারেই শেষ হয়ে গেছে? প্রকৃতিকে তার মতো থাকতে না দিলে যে মানুষই বিপদে পড়ে—এ কথা তো কর্তাব্যক্তিরা জানেন, তার পরও প্রকৃতির চেয়ে ‘অর্থ’ই কি বড় হয়ে গেল? এভাবে বৃক্ষনিধন চলতে থাকলে জীবনের ‘অর্থ’ই যে পাল্টে যাবে, প্রকৃতিও নেবে প্রতিশোধ, সে কথা কি তাঁরা জানেন না? আগামী প্রজন্মকে বড় রকমের সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন এই গাছ-কাটনেওয়ালারা। তাঁরা কি জানেন, তাঁদের সন্তানেরাই ভুগবে তাঁদের এই অপকর্মের জন্য? এতে হয়তো তাঁদের কিছু আসবে-যাবে না, কারণ গাছেরা যেমন কথা বলতে পারে না, তেমনি উত্তর প্রজন্মের কথা শোনার জন্য তাঁরা নিজেরাই তখন থাকবেন না এই পৃথিবীতে। শুধু পরবর্তী প্রজন্মকে একটি বাসের অযোগ্য দেশ উপহার দিয়ে যাচ্ছেন—সেটুকুই তাঁদের সাফল্য। এই সাফল্যের কালো-অন্ধকার ছাড়া আর কোনো রং নেই। জা.রে.নূ.

No comments

Powered by Blogger.