সীমান্ত হত্যা বন্ধের বিষয়ে জোরালো ভূমিকা রাখুন by নাজমুল হক
মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আপনি এখন ভারত সফর করছেন। সেখানে থাকবেন। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে আপনার আলোচনা হবে। কিন্তু জানি না আপনার আলোচ্য সূচিতে কোন কোন বিষয় আছে। তবে এটা জানি দেশের ৩০টি সীমান্তবর্তি জেলার মানুষের আলোচ্যসূচিতে আপনি আছেন।
তাদের একটাই দাবী সীমান্ত হত্যা নিয়ে ভারতের নেক্কারজনক ভূমিকা তুলে ধরে প্রতিবাদ চানা। সম্প্রতি বাংলাদেশী সামান্তে ভারতীয় সামান্ত রক্ষি রাহিনী বিএসএফের হিংস্র হয়ে উঠেছে। কোন বিধি নিষেধ বা প্রতিবাদকে তোয়াক্কা না করে সীমান্ত বর্তী মানুষের উপর হিংস্র পশুর মত আচরণ করছে। বাংলাদেশীদের আটক করে চোখ তুলে নিচ্ছে। ভারতীয় রক্ষি বাহিনী বিএসএফ একের পর এক সীমান্তে পাখির মত গুলি করে হত্যা করছে মানুষদের। জিরো পয়েন্ট থেকে মানুষ অপহরণ করে নিচ্ছে। কিন্তু আপনাদের কথায় এসব নিয়ে আপনারা নাকি চিন্তিত নয়। তাহলে কি নিয়ে আপনারা ভাবেন। আপনাদের ভাবনার মধ্যে সীমান্তের মানুষকে নিয়ে আসেন। তারাও বাঙ্গালী। ৫২র ভাষা আন্দোলন করে মানুষ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করেছিল। আর আপনি সেই মাসে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষা করন। সীমান্ত বাসীকে রক্ষা করুন। কারণ আপনি বাঙ্গালীদের পক্ষে কথা বলছেন। এতে ভয়ের কিছু নেই। সমস্ত জাতি আপনার পাশে আছে।
ভারত বাংলাদেশের বন্ধু ও প্রতিবেশি রাষ্ট্র। বাংলাদেশের ৩০টি সীমান্তবর্তী জেলা ভারতের সাথে রয়েছে। প্রতিবেশি এই রাষ্ট্রের সীমান্তরক্ষি বাহিনী বিএসএফ ১৪ ফেব্র“য়ারি দিনাজপুর সীমান্তে মিজানুর রহমানের চোখ উপড়ে হত্যা করে। যা পৃথিবীর জঘন্য ও ঘৃন্য হত্যার একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। তাদের মাত্রা এতটাই বেড়ে গেছে যে সীমান্তে মানুষ পরিবার নিয়ে নিরাপদ মনে করছে না। গত ৪ ফেব্র“য়ারি সাতক্ষীরা সীমান্তে ৩ জন বাংলাদেশীকে ধরে নিয়ে যায়। ব্যাটলিয়ন পর্যায়ে পতাকা বৈঠকে আটককৃতদের হাজির করা হয়্। কিন্তু তারপরও আটককৃতদের ফেরত না দিয়ে ভারতীয় থানায় হস্তান্তর করে। আখাউড়া সীমান্তে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সীমান্ত পিলার নির্মান করতে চেষ্টা করে। ৩ ফেব্র“য়ারি দিনাজপুরের বিরামপুর সীমান্তে এক ব্যক্তিকে নির্যাতন করে হত্যা করে বিএসএফ। এ আগে বাংলাদেশের কুমিল্লার একটি সীমান্তে বিনা উষ্কানিতে এক বাংলাদেশীকে যে ভাবে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করে তাদের দেশীয় টেলিভিশনের ভিডিও ফুটেজ হতবাক হয়েছে সারা বিশ্ব। সভ্য সমাজের মানবতা যেন ভূলুণ্ঠিত হয়। সভ্যতার পিঠে চরম ছুরিকাঘাত করে বিএসএফ যে উল্লম্ফন করে। বাংলাদেশের নিরীহ নাগরিককে বিবস্ত্র করে যে ভাবে পিঠিয়েছে, সেই ঘটনা গত ৯ ডিসেম্বর ২০১১ ঘটনা, অথচ আমাদের সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কিংবা কোন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে কখনো এর কোন ইঙ্গিত দেওয়া হয় নি। ঐ ঘটনায় ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ হলে যতটা ভারতে তোড়পাড় হয়েছে বাংলাদেশে তা হয় নি। বাংলাদেশ সরকারের দুই প্রভাবশালী মন্ত্রী এটা নিয়ে সরকার ভাবছে না বলে দায় এড়িয়ে যায়। উন্টো চুরি, চোরাচালানের অভিযোগ করা হয়। তাহলে প্রশ্ন হল দায়টা আসলে কার? সরকারের না জণহণের। সরকারের দায়িত্ব দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে বিদেশে দেশের ভাবমুর্তি রক্ষা করা। কিন্তু আপনারা কেন বার বার দায় এড়িয়ে যাচ্ছেন। এতে আপনাদের লাভই বা কি?
সীমান্ত চোরাচালান হয় এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। দুই দেশের মানুষ চেরাচালানের সাথে জাড়িত। তবে এর সাথে বাংলাদেশ ও ভারতের বড় বড় মাপের মানুষ জড়িত। তাদের কিছু হয় না। বাংলাদেশী সীমান্তেতবে বাংলাদেশের নীরিহ মানুষ যারা দুবেলা দুমুঠো খাবারের জন্য গরু আনতে ভারতে যায়। এ যাবৎকাল গরুর রাখাল ছাড়া বিএসএফ আর কারোর উপর নির্যাতন করতে পারি নি। কারণ বিএসএফের দাবীকৃত টাকা গরু রাখালরা দিতে পারে না। বাংলাদেশকে মাদকের আখড়ায় পরিণত করতে বাংলাদেশী সীমান্তে ১৫০ এর অধিক ফেন্সিডিনসহ কারখানা, দুই শতাধিক মদের কারখানা স্থাপন করেছে। যেখান দিয়ে বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় বড় বড় চালানের মাধ্যমে ভারতীয় মাদক ব্যবসায়ীরা ঠেলে দিচ্ছে। আমাদের দেশের মন্ত্রীরদের বক্তব্য অনুযায়ি যদি চোরাকারবারি জড়িতদের নির্যাতন করা হয় তবে শুধু গরু রাখালদের কেন? মাদক চোরাকারবারিরা কেন পার পেয়ে যাচ্ছে? অসল কথা হল ভারতের ঘুষখোর বিএসএফরা ঘুষের টাকা হাতে না পেলে মরিয়া হয়ে উঠেন। যখন পায় না তখন হত্যায় মেতে উঠে।
ভারতীয় সরকার বিভিন্ন সময় বাংলাদেশীদের হত্যা করবে না বলে প্রতিশ্র“তি দিয়েছে। কিন্তু বিএসএফ বার বার সরকারের প্রতিশ্র“তি ভঙ্গ করে নির্মম ভাবে হত্যা করছে নিরহী বাংলাদেশীদের। বার-বার প্রতিবেশী দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিনা উস্কানীতে নিরীহ জনগণকে এই রকম নির্মমভাবে হত্যা করবে, নির্যাতন করবে, ধরে নিয়ে যাবে, যা ইচ্ছে তাই করবে তবে আমাদের পররাষ্ঠ্র মন্ত্রণালয় আছে কি জন্য? চোরাচালানের জন্য আইন আছে, আদালত আছে। আদালত আছে সেখানে তাদের বিচার করা হয়। ভারতীয় আইনে তো চোরাচালানের শাস্তি মৃত্যুদন্ড নয়। আদালত তাদের বিচার করবে। বিএসএফ তো আদালত নয়। তাহলে তারা কিভাবে মানুষ হত্যা করছে? তারা নিজেরা আইন তুলে নিয়ে ভারতীয় আইন ভঙ্গ করছে। সরকার তাদের তো মানুষ হত্যা করার দায়িত্ব দেয় নি? এটা মানবধিকার লঙ্ঘন। আমাদের মাননীয় মানবধিকারের চেয়াম্যান জাতিসংঘের সহযোগিতা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হল কবে, যখন সীমান্তে আর কেই থাকবে না তখন ব্যবস্থা নিবেন? সীমান্তে হত্যা বন্ধের জন্য রাষ্ট্র এখনও কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেন নি? শুধু মিডিয়ায় বক্তব্য দেওয়া পর্যন্তই। মাননীয় মন্ত্রী আমাদের সীমান্ত বাসীরা অত্যন্ত গরিব। এ সব পরিবারের হত্যা করা হলে তাদের পরিবÍ পঙ্গু হয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের একমাত্র উপাজনক্ষম ব্যক্তি কে হত্যা করা হলে সে পরিবার দাড়াতে পারে না। এমন পরিবারের অনেক সদস্য ভিক্ষাবৃত্তি করে। তাদের কথা ভাবতে হবে। সীমান্তে হত্যা বন্ধ না হলে তারা প্রতিবাদী হয়ে উঠতে পারে। তখন দেশের আইন-শৃঙ্খলা বিপর্যয় ঘটতে পারে। সঙ্গত কারণেই দায় আপনার কাধে আসবে। এখনই সময় তীব্র প্রতিবাদ করার।
লেখকঃ নাজমুল হক, রোভার স্কাউট, সাংবাদিক ও কলাম লেখক, ই-মেইলঃ nazmulrover@gmail.com
No comments