কৃষিঋণ বিতরণ-বেসরকারি ব্যাংক আরও উদ্যোগী হোক
বাংলাদেশের দেশজ উৎপাদনে কৃষি খাতের অবদান সেবা ও শিল্প-বাণিজ্য খাতের তুলনায় যথেষ্ট কম হলেও এ খাতই গ্রামীণ অর্থনীতির ভিত। কর্মসংস্থানের প্রধান খাতও এখন পর্যন্ত কৃষি। সর্বোপরি রয়েছে খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টির গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। কিন্তু বহু বছর রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য ও ব্যাংক ঋণ বরাদ্দে এ খাত চরম উপেক্ষার শিকার হয়েছে।
ব্যাংকগুলো তাদের মোট ঋণের ছিটেফোঁটা বরাদ্দ রাখত কৃষকদের জন্য। অর্থনীতির জন্য তা কল্যাণকর হয়নি। আশার কথা, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কৃষকদের প্রতি সরকারের মনোযোগ বেড়েছে। বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায় কৃষিঋণ বিতরণের প্রসঙ্গ। চলতি বছরে বাংলাদেশ ব্যাংক ১৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে, যা সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে পূরণ করতে হবে। গত বছর এর পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা এবং তার ৯৭ শতাংশই অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। আমরা আশা করব, অর্থনীতির এ গুরুত্বপূর্ণ খাতে ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলো এগিয়ে আসবে। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোকে অধিকতর মনোযোগী হতে হবে। কারণ ব্যাংকিং খাতের মোট আমানতের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি রয়েছে তাদের হাতে। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন পর্যন্ত বেসরকারি ব্যাংকগুলোর জন্য তুলনামূলক স্বল্প লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিচ্ছে। এর পরিবর্তন ধীরে ধীরে করতে হবে এবং এ জন্য তাদের গ্রামাঞ্চলে শাখা বাড়ানো জরুরি। ঋণ বিতরণ কাজে তারা সরকারি ব্যাংক এবং বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বা এনজিওর সহায়তা নিতে পারে। কিন্তু কোনোভাবেই কৃষি খাতকে গৌণ করে দেখলে চলবে না। এটা সবাইকেই বুঝতে হবে যে, অর্থনীতির ভিত মজবুত করার জন্য কৃষি খাতের ব্যাপক ও নিবিড় উন্নয়নের বিকল্প নেই। এ খাতের শক্তি যত বাড়বে, ব্যাংকের জন্য ব্যবসার সুযোগও কিন্তু বাড়তে থাকবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের আন্তরিক আগ্রহে ইতিমধ্যে প্রায় এক কোটি কৃষকের জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে এবং সেগুলো ভালোভাবেই পরিচালিত হচ্ছে। বেসরকারি ব্যাংকিং খাত এ সুবিধাকেও কাজে লাগাতে পারে। এ জন্য তাদের সঙ্গে সরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর সমঝোতায় আসতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে মধ্যস্থতা করবে বলে আমরা আশা করব।
No comments