বাংলাদেশ-পাকিস্তান টি২০-এ কেমন পরাজয়! by সঞ্জয় সাহা পিয়াল
বুকে হাত রেখে সত্য কথাটি পরে অনেকেই লুকাতে পারেনি। পাকিস্তান ৭ উইকেটে ১৩৫ রান তোলার পর 'আজ কিছু হতে চলেছে' জাতীয় অনুমান করা লোকের সংখ্যা গত সন্ধ্যায় নেহায়েত কম ছিল না। তবে সেই হতে চলেছে যে ৫০ রানের হার দিয়ে শেষ হবে, তা কে জানত। একজন হয়তো জানতেন, তিনি তামিম ইকবাল, ম্যাচ শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগেই যিনি আত্মবিশ্বাসের কমতি অনুভব করে নিজের নামটি তুলে নিয়েছেন। আর সম্ভাবনার কুঁড়ি সেখানেই
ঝরে পড়ে। 'তামিম না খেলাতেই আমাদের টপ অর্ডার ওলট-পালট হয়ে যায়। এমনিতেই পাকিস্তানের বোলিং বিশ্বমানের। তার ওপর টপ অর্ডারে আমাদের কোনো পার্টনারশিপ হয়নি। আমি বলেছিলাম, পাকিস্তানকে হারতে হলে আমাদের শতকরা ১১০ ভাগ ভালো খেলতে হবে। সেটা আমরা পারিনি...।' ৯ উইকেটে ৮৫ রান তোলা দলের অধিনায়কের ম্যাচ শেষে এভাবে আত্মসমর্পণ করা ছাড়া কিছুই করার ছিল না।
আগের দিন অধিনায়কের মুখে প্রতিদ্বন্দ্বিতার গ্যারান্টি শুনে যারা ঘাম ঝরিয়ে টিকিট জোগাড় করেছিলেন, পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতি করে রাস্তায় বাসের কাচ ভেঙে গ্যালারিতে সিট বুঝে নিয়েছিলেন, রাত ৮টা নাগাদ তারা নিজেরাই ভাঙামন হাতে করে বাড়ি ফিরেছেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতার 'প'-টুকুও দেখতে পাননি তারা। দলের ৯ ব্যাটসম্যানই দুই অঙ্কের ঘর ছুঁতে পারেননি। চার-ছক্কার বিজ্ঞাপন দিয়ে যে টি২০ শুরু হয়, সেখানে পুরো বাংলাদেশ দলের বাউন্ডারির সংখ্যা তিনটি। যার দুটি এসেছে নাসির হোসেনের ব্যাট থেকে, একটি রাজ্জাকের। মুশফিক বলেছেন, মিরপুরের এ উইকেটে ব্যাট করাটা কঠিন ছিল। তাই বলে কি এতটাই কঠিন ছিল যে, টপ অর্ডারের চার ব্যাটসম্যান মিলে ১২ রানের বেশি করতে পারবেন না? ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ওমর গুলকে ফ্লিক করতে গিয়ে এলবিডবি্লউ হতে হয় নাঈম ইসলামকে। হাফিজকে মিড উইকেটে ঠেলতে গিয়ে শূন্য রানে ফিরতে হয় কাপালিকে। ইমরুলকে রান আউট হতে হয় নিজের ভুলে। সাকিবও কাট করতে গিয়ে উইকেট খুইয়ে বসেন। আর রিয়াদকে প্যাভিলিয়নে যেতে হয় জায়গায় দাঁড়িয়ে চিমাকে কাট করতে গিয়ে। মিরপুরের তিন নম্বর উইকেটটি এমনিতেই স্লো। সেখানে রান করতে গিয়ে পাকিস্তানিদেরও হিমশিম খেতে হয়েছে। তাই বলে বাংলাদেশি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা যেভাবে লক্ষ্যহীন শট খেলে আউট হয়েছেন, তা কিন্তু পাকিস্তানিদের বেলায় দেখা যায়নি। ২৩ রানের মধ্যে সাকিবসহ ৫ উইকেট পড়ে যাওয়ার পরই নিশ্চিত হয়ে যায় নভেম্বর মাসে ডিসেম্বরের জয়গাথা আর লেখা হবে না।
হয়ওনি তা, শেষ বেলায় শুধু নাসির হোসেনের কিছু সাহসী শট মিরপুুরের গ্যালারিকে পুরস্কার অনুষ্ঠান পর্যন্ত বসিয়ে রেখেছিল। শেষ ওভারে সাঈদ আজমলকে হাঁকানো তার মিড অফের ছক্কাটি নিয়েই দর্শকরা যা একটু তুলতুলে আওয়াজ তুলেছে। ছক্কাটির মতো ইনিংসের প্রথম বাউন্ডারিও ৮.৪ ওভারে আদায় করেছিলেন নাসির। বাকিদের মধ্যে রাজ্জাক সীমানার বাইরে বল পাঠানোর সাহস কিছুটা দেখিয়েছিলেন। তাও তাকে মিড অফের সীমানায় দাঁড়িয়ে তালুবন্দি করে আফ্রিদি দু'পা ছড়িয়ে গ্যালারিকে লজ্জা দিয়েছিলেন। নাসিরের অপরাজিত ৩৫ আর মুশফিকের সংগ্রামী ১০ রান নিয়ে আর যা-ই হোক ম্যাচ জেতা যায় না। রাতে এ সত্যটির সঙ্গে আরও একবার পরিচিত হয়েছিল মিরপুর।
কিন্তু দুপুরেই ম্যাচটি হারতে পারে ঘরের ছেলেরা, সেটি স্বীকার করে নিয়েছিল মিরপুর। যখন বাংলাদেশ টিমের ফটোকপি করা খেলোয়াড় তালিকা হাতে ধরিয়ে দেওয়া হলো মিরপুরের প্রেসবক্সে, তখনই একটা হতাশার শব্দ কানে আসে। এরপর মুশফিক যখন টস হেরে যান, তখন মিরপুরের জেঁকে ওঠা গ্যালারি থেকেও একই ধরনের হতাশার শব্দ শোনা যায়। তারপরও নতুন বলে দিনের প্রথম ওভারটায় শফিউলকে বাউন্ডারিছাড়া করে ইনিংস শুরু করেন ইমরান ফারহাত। টেলিভিশনে দেখা শ্রীলংকা সিরিজে পাকিস্তানি দুই ওপেনারের ভয়ঙ্কর মুখ দুটি ভেসে ওঠে সামনে। এমনই একটি ওভারে সাকিবকে পরপর দুটি বাউন্ডারি মেরে মুশফিকের গ্গ্নাভসে বন্দি হন ফারহাত। ৩০ রানে পাকিস্তানের প্রথম উইকেট পড়ার পর পুরো মাঠ প্রথমবারের মতো জেগে ওঠে 'বাংলাদেশ-বাংলাদেশ' চিৎকারে; কিন্তু ক্রিজে এসেই সাকিবকে প্রথম বলেই ফের বাউন্ডারি মারেন আসাদ শফিক। ৫ ওভারের মধ্যেই ৪১ রান তুলে বসা পাকিস্তানিদের লক্ষ্য বেশ স্পষ্ট হয়ে যায়। রাজ্জাককে ছক্কা পার করে হাফিজও বেশ তেতে উঠতে থাকেন; কিন্তু ৩১ বলে ২৫ রানে থাকা হাফিজকে বোল্ড করে দলকে ফের ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন সাকিব। ১০ ওভারে ২ উইকেটে ৬৭ রান। স্পিন দিয়ে কাজ হচ্ছে দেখে এ সময় কাপালিকে নিয়ে আসেন মুশফিক। অফ স্ট্যাম্পের বাইরে শর্ট বল দিয়ে উমর আকমলকে ধোঁকা দেন কাপালি। ছন্দে ওঠার আগেই ২০ রানের মধ্যে স্টাম্পিং হয়ে ফিরে যান উমর। এরপর আসাদ শফিককেও লং অফে রাজ্জাকের ক্যাচ বানিয়ে উইকেট শিকারের উৎসব করেন নাসির। পরের ওভারে শোয়েব মালিককেও রিটার্ন ক্যাচ নিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরিয়ে দেন রাজ্জাক। ৯৮ রানে ৫ উইকেট পড়ে যাওয়া দেখে মিসবাহ যখন হতবাক, তখনই ক্রিজে এসে দ্বিতীয় বলে লং অফ দিয়ে বিশাল এক ছক্কা হাঁকিয়ে বসেন আফ্রিদি। কাপালিকেও একইভাবে লং অফে তুলে মেরেছিলেন পরে; কিন্তু দড়ি না ছুঁয়েও দারুণ নিয়ন্ত্রণে সীমানার মধ্যে থেকে আফ্রিদিকে তালুবন্দি করেন নাসির। শেষ পাঁচ ওভারে খুব বেশি নয়, মাত্র ৩০ রান নিতে পেরেছিল পাকিস্তানিরা। যা দেখেই কিছু একটা হতে চলেছে ভেবে রেখেছিল মিরপুর; কিন্তু কে জানত, সেই হওয়াটাই হবে মিরপুরের প্রেসবক্সে দাঁড়িয়ে পিটিসি দেওয়া এক টেলিভিশন সাংবাদিকের কণ্ঠে ভরা স্ক্রিপ্টের মতো। 'মাত্র এক মাস আগে এ মাঠেই উইন্ডিজের দেওয়া ১৩২ রান তাড়া করে মুশফিকরা আনন্দ উৎসব করেছিলেন। আজ সে মাঠেই পাকিস্তানিরা ৫০ রানে জিতে টি২০ ট্রফি নিয়ে বিজয়ের ছবি তুললেন...। সিরিজের বাকিটা সময় মুশফিকরা পারবেন কী পাকিস্তানিদের এই হাসি কেড়ে নিতে?'
আগের দিন অধিনায়কের মুখে প্রতিদ্বন্দ্বিতার গ্যারান্টি শুনে যারা ঘাম ঝরিয়ে টিকিট জোগাড় করেছিলেন, পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতি করে রাস্তায় বাসের কাচ ভেঙে গ্যালারিতে সিট বুঝে নিয়েছিলেন, রাত ৮টা নাগাদ তারা নিজেরাই ভাঙামন হাতে করে বাড়ি ফিরেছেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতার 'প'-টুকুও দেখতে পাননি তারা। দলের ৯ ব্যাটসম্যানই দুই অঙ্কের ঘর ছুঁতে পারেননি। চার-ছক্কার বিজ্ঞাপন দিয়ে যে টি২০ শুরু হয়, সেখানে পুরো বাংলাদেশ দলের বাউন্ডারির সংখ্যা তিনটি। যার দুটি এসেছে নাসির হোসেনের ব্যাট থেকে, একটি রাজ্জাকের। মুশফিক বলেছেন, মিরপুরের এ উইকেটে ব্যাট করাটা কঠিন ছিল। তাই বলে কি এতটাই কঠিন ছিল যে, টপ অর্ডারের চার ব্যাটসম্যান মিলে ১২ রানের বেশি করতে পারবেন না? ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ওমর গুলকে ফ্লিক করতে গিয়ে এলবিডবি্লউ হতে হয় নাঈম ইসলামকে। হাফিজকে মিড উইকেটে ঠেলতে গিয়ে শূন্য রানে ফিরতে হয় কাপালিকে। ইমরুলকে রান আউট হতে হয় নিজের ভুলে। সাকিবও কাট করতে গিয়ে উইকেট খুইয়ে বসেন। আর রিয়াদকে প্যাভিলিয়নে যেতে হয় জায়গায় দাঁড়িয়ে চিমাকে কাট করতে গিয়ে। মিরপুরের তিন নম্বর উইকেটটি এমনিতেই স্লো। সেখানে রান করতে গিয়ে পাকিস্তানিদেরও হিমশিম খেতে হয়েছে। তাই বলে বাংলাদেশি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা যেভাবে লক্ষ্যহীন শট খেলে আউট হয়েছেন, তা কিন্তু পাকিস্তানিদের বেলায় দেখা যায়নি। ২৩ রানের মধ্যে সাকিবসহ ৫ উইকেট পড়ে যাওয়ার পরই নিশ্চিত হয়ে যায় নভেম্বর মাসে ডিসেম্বরের জয়গাথা আর লেখা হবে না।
হয়ওনি তা, শেষ বেলায় শুধু নাসির হোসেনের কিছু সাহসী শট মিরপুুরের গ্যালারিকে পুরস্কার অনুষ্ঠান পর্যন্ত বসিয়ে রেখেছিল। শেষ ওভারে সাঈদ আজমলকে হাঁকানো তার মিড অফের ছক্কাটি নিয়েই দর্শকরা যা একটু তুলতুলে আওয়াজ তুলেছে। ছক্কাটির মতো ইনিংসের প্রথম বাউন্ডারিও ৮.৪ ওভারে আদায় করেছিলেন নাসির। বাকিদের মধ্যে রাজ্জাক সীমানার বাইরে বল পাঠানোর সাহস কিছুটা দেখিয়েছিলেন। তাও তাকে মিড অফের সীমানায় দাঁড়িয়ে তালুবন্দি করে আফ্রিদি দু'পা ছড়িয়ে গ্যালারিকে লজ্জা দিয়েছিলেন। নাসিরের অপরাজিত ৩৫ আর মুশফিকের সংগ্রামী ১০ রান নিয়ে আর যা-ই হোক ম্যাচ জেতা যায় না। রাতে এ সত্যটির সঙ্গে আরও একবার পরিচিত হয়েছিল মিরপুর।
কিন্তু দুপুরেই ম্যাচটি হারতে পারে ঘরের ছেলেরা, সেটি স্বীকার করে নিয়েছিল মিরপুর। যখন বাংলাদেশ টিমের ফটোকপি করা খেলোয়াড় তালিকা হাতে ধরিয়ে দেওয়া হলো মিরপুরের প্রেসবক্সে, তখনই একটা হতাশার শব্দ কানে আসে। এরপর মুশফিক যখন টস হেরে যান, তখন মিরপুরের জেঁকে ওঠা গ্যালারি থেকেও একই ধরনের হতাশার শব্দ শোনা যায়। তারপরও নতুন বলে দিনের প্রথম ওভারটায় শফিউলকে বাউন্ডারিছাড়া করে ইনিংস শুরু করেন ইমরান ফারহাত। টেলিভিশনে দেখা শ্রীলংকা সিরিজে পাকিস্তানি দুই ওপেনারের ভয়ঙ্কর মুখ দুটি ভেসে ওঠে সামনে। এমনই একটি ওভারে সাকিবকে পরপর দুটি বাউন্ডারি মেরে মুশফিকের গ্গ্নাভসে বন্দি হন ফারহাত। ৩০ রানে পাকিস্তানের প্রথম উইকেট পড়ার পর পুরো মাঠ প্রথমবারের মতো জেগে ওঠে 'বাংলাদেশ-বাংলাদেশ' চিৎকারে; কিন্তু ক্রিজে এসেই সাকিবকে প্রথম বলেই ফের বাউন্ডারি মারেন আসাদ শফিক। ৫ ওভারের মধ্যেই ৪১ রান তুলে বসা পাকিস্তানিদের লক্ষ্য বেশ স্পষ্ট হয়ে যায়। রাজ্জাককে ছক্কা পার করে হাফিজও বেশ তেতে উঠতে থাকেন; কিন্তু ৩১ বলে ২৫ রানে থাকা হাফিজকে বোল্ড করে দলকে ফের ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন সাকিব। ১০ ওভারে ২ উইকেটে ৬৭ রান। স্পিন দিয়ে কাজ হচ্ছে দেখে এ সময় কাপালিকে নিয়ে আসেন মুশফিক। অফ স্ট্যাম্পের বাইরে শর্ট বল দিয়ে উমর আকমলকে ধোঁকা দেন কাপালি। ছন্দে ওঠার আগেই ২০ রানের মধ্যে স্টাম্পিং হয়ে ফিরে যান উমর। এরপর আসাদ শফিককেও লং অফে রাজ্জাকের ক্যাচ বানিয়ে উইকেট শিকারের উৎসব করেন নাসির। পরের ওভারে শোয়েব মালিককেও রিটার্ন ক্যাচ নিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরিয়ে দেন রাজ্জাক। ৯৮ রানে ৫ উইকেট পড়ে যাওয়া দেখে মিসবাহ যখন হতবাক, তখনই ক্রিজে এসে দ্বিতীয় বলে লং অফ দিয়ে বিশাল এক ছক্কা হাঁকিয়ে বসেন আফ্রিদি। কাপালিকেও একইভাবে লং অফে তুলে মেরেছিলেন পরে; কিন্তু দড়ি না ছুঁয়েও দারুণ নিয়ন্ত্রণে সীমানার মধ্যে থেকে আফ্রিদিকে তালুবন্দি করেন নাসির। শেষ পাঁচ ওভারে খুব বেশি নয়, মাত্র ৩০ রান নিতে পেরেছিল পাকিস্তানিরা। যা দেখেই কিছু একটা হতে চলেছে ভেবে রেখেছিল মিরপুর; কিন্তু কে জানত, সেই হওয়াটাই হবে মিরপুরের প্রেসবক্সে দাঁড়িয়ে পিটিসি দেওয়া এক টেলিভিশন সাংবাদিকের কণ্ঠে ভরা স্ক্রিপ্টের মতো। 'মাত্র এক মাস আগে এ মাঠেই উইন্ডিজের দেওয়া ১৩২ রান তাড়া করে মুশফিকরা আনন্দ উৎসব করেছিলেন। আজ সে মাঠেই পাকিস্তানিরা ৫০ রানে জিতে টি২০ ট্রফি নিয়ে বিজয়ের ছবি তুললেন...। সিরিজের বাকিটা সময় মুশফিকরা পারবেন কী পাকিস্তানিদের এই হাসি কেড়ে নিতে?'
No comments