দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে আগ্রহী জার্মান ব্যবসায়ীরা

বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ ও ব্যবসা করতে চান জার্মান ব্যবসায়ীরা। ইউরোপের অর্থনৈতিক শক্তিধর এ দেশটির ব্যবসায়ীরা মনে করেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের অনেক সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে দেশটির ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখছেন। সেক্ষেত্রে তারা ইতিবাচক সম্ভাব্যতা দেখছেন বলে জানিয়েছেন বর্তমানে বাংলাদেশ সফররত জার্মান ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের নেতা ড. কার্ল-আর্নস্ট ব্রাউনার।


গতকাল মঙ্গলবার সফররত জার্মান ব্যবসায়ীদের সম্মানে দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর দেওয়া এক মধ্যাহ্নভোজ সভায় ড. ব্রাউনার এসব কথা বলেন। এফবিসিসিআই সভাপতি এ. কে. আজাদ ভোজসভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন। সংগঠনের প্রথম সহ-সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন ধন্যবাদ জানান। এ ছাড়া এফবিসিসিআইর সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন ড. রালফ রিউচ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। জার্মান প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সে দেশের ৪৫ সদস্যবিশিষ্ট ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল বর্তমানে বাংলাদেশ সফর করছে।
জার্মান ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের প্রধান ড. কার্ল আর্নস্ট ব্রাউনার বলেন, 'আমরা বাংলাদেশে দ্রুত ও সহজ ব্যবসা করতে চাই না। দীর্ঘমেয়াদে ব্যবসা ও বিনিয়োগ করতে চাই।' তিনি বলেন, জার্মানির সঙ্গে ব্যবসায় বাংলাদেশের বিশাল উদ্বৃত্ত রয়েছে। ব্যবসা বাড়ানোর মাধ্যমে আমরা এ উদ্বৃত্ত কমিয়ে আনতে চাই। যাতে উভয়ের জন্য সমান অবস্থা (উইন-উইন সিচুয়েশন) বজায় থাকে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যৌথভাবে ব্যবসা করতে চাই। কারণ এখানকার ব্যবসায়ীদের পরামর্শ সরকার গ্রহণ করে। যেটা ব্যবসা উন্নয়নের জন্য সহায়ক। সৌরবিদ্যুৎ, জাহাজ নির্মাণ ও অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
এফবিসিসিআইর সভাপতি এ. কে. আজাদ বলেন, বাংলাদেশে জার্মানির বিনিয়োগকারীদের কিছু নেতিবাচক বিষয় ছিল, সেগুলো দূর করার বিষয়ে দু'দেশ ঐকমত্যে পেঁৗছেছে। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো সুবিধা নিশ্চিত করতে পারলে জার্মানির বিনিয়োগকারীরা এখনই ১০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে বলে তিনি জানান। তিনি জার্মানির ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের আহ্বান জানান। কারণ হিসেবে বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে উৎপাদন খরচ ২০-২৫ শতাংশ কম। এ. কে. আজাদ বলেন, গত মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জার্মানি সফর করেছেন। সে সময় দু'দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও বাণিজ্য উন্নয়নে বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় জার্মান প্রেসিডেন্ট ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল বর্তমানে বাংলাদেশ সফর করছেন। এ সময় তিনি বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচকের বর্তমান অবস্থা বর্ণনার মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, বিনিয়োগ পরিবেশ ও সুবিধা তুলে ধরেন।
জার্মান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, গত ছয় মাসে দু'দেশের সম্পর্কের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। উভয় দেশের বাণিজ্য বেড়েছে ৫০ শতাংশ। এ সময়ে বাংলাদেশের বাণিজ্য বেড়েছে ৫২ শতাংশ এবং জার্মানির ৩৬ শতাংশ।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও জার্মানির বাণিজ্যের চিত্র তুলে ধরা হয়। এতে দেখা গেছে, ২০১০-১১ অর্থবছরে বাংলাদেশ জার্মানিতে প্রায় ৩৪৪ কোটি মার্কিন ডলারের বিভিন্ন পণ্য রফতানি করেছে। অন্যদিকে এ সময়ে জার্মানি থেকে বাংলাদেশ আমদানি করেছে ৬৯ কোটি ২২ লাখ ডলারের পণ্য। বাংলাদেশ জার্মানিতে নিটওয়্যার, ওভেন গার্মেন্ট, হোম টেক্সটাইল, হিমায়িত মাছ, কৃষি পণ্য, পাটপণ্য, চামড়াজাত পণ্য এবং ওষুধ রফতানি করে। বাংলাদেশের রফতানি আয়ের অর্ধেকের বেশি আসে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে। ২০১০-১১ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৮০ মিলিয়ন ডলারের জার্মানি বিনিয়োগ এসেছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য জার্মানির ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি। বিশেষ করে উচ্চমূল্যের পণ্য খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক :এদিকে সকালে জার্মান ব্যবসায়ীদের ১৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। এ সময় তারা বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুৎ, জাহাজ নির্মাণ ও অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেন। ড. কার্ল আর্নস্ট ব্রাউনারের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ফ্রাঙ্কফুর্ট কমার্স ব্যাংকের বোর্ড মেম্বার মার্কাস বার্নার, আম্মান গ্রুপের চেয়ারম্যান বুডো বাজল, ওয়েলহেম জি. ক্লাসেন কোম্পানির স্বত্বাধিকারী পিটার ক্লাসেন উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বাণিজ্য সচিব মোঃ গোলাম হোসেনসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জার্মানির প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে তাদের বিনিয়োগ বাড়ানোর আগ্রহ প্রকাশ করে বিনিয়োগের পরিবেশ বিশেষ করে বিনিয়োগ সহায়ক উপকরণ, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চায়।
জার্মানির প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে পাকিস্তানকে জিএসপি সুবিধা দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান বলেন, পাকিস্তান বন্যাদুর্গত হওয়ায় তাদের প্রতি আমাদের সহানুভূতি রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে মানবিক সহায়তা ও বাণিজ্যকে মিলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না।

No comments

Powered by Blogger.