ঢাবি ছাত্রের ওপর নির্যাতন-পুলিশ কবে মানবিক হবে?

থায় বলে বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা, কিন্তু পুলিশে ছুঁলে ছত্রিশ ঘা। প্রবাদসম এ বাক্যে পুলিশের প্রতি আমজনতার বিরূপ মনোভাবের প্রকাশ স্পষ্ট। কিন্তু তাতে পুলিশের কি কিছু আসে-যায়? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবদুল কাদেরকে নির্যাতন ও অসত্য গল্প সাজিয়ে দুটি ফৌজদারি মামলা করার দায়ে খিলগাঁও থানার সাবেক ওসি হেলালউদ্দিন ও উপ-পরিদর্শক আলম বাদশাকে চাকরিচ্যুত করার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের গঠিত একটি তদন্ত কমিটির


সুপারিশের ঘটনার প্রেক্ষাপট বিচার করলে আবারও বলতে হয়, পুলিশ যেন কানে তুলা আর চোখে ঠুলি দিয়ে চলতেই অভ্যস্ত। তারা মানবিক আচরণ করবে, এটাই সবার কামনা থাকে, কিন্তু বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় এর বিপরীত। সোমবার হাইকোর্ট বেঞ্চে কমিটির প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, কাদেরের পায়ে আঘাত করার জন্য ওসির বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ৩২৪ ধারায় অভিযোগ আনা যায়। মানসিক ও সামাজিক হয়রানির জন্যও মামলা করা যায়। ঘটনাটি ১৫ জুলাইয়ের। পুলিশ বলেছিল, অপরাধের ঘটনাস্থল খিলগাঁও থানার কাছে। কিন্তু তদন্তে দেখা যায়, ঘটনা ঘটেছে সেগুনবাগিচা এলাকায়। কাদেরের বিরুদ্ধে ডাকাতির প্রস্তুতি ও বেআইনি অস্ত্র রাখার অভিযোগ আনা হয়। এই ঘটনা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা মানববন্ধন করেন। কিন্তু পুলিশ ছিল নিজেদের অবস্থানে অনড়_ তাদের কাছে কাদেরই দোষী। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এ ঘটনা প্রকাশিত হলে হাইকোর্ট ২৮ জুলাই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন। পাশাপাশি আবদুল কাদেরকে গ্রেফতার ও নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠনের জন্য আইন সচিবকে দেওয়া হয় নির্দেশ। আইন মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্মসচিবের নেতৃত্বে এক সদস্যবিশিষ্ট কমিটির প্রতিবেদন তারই ধারাবাহিকতা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আইন মন্ত্রণালয়ের কমিটির তদন্তে যে সত্য ধরা পড়ল, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তা জানতে পারল না কেন? একজন ওসি কেবল সন্দেহবশত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে চাপাতি দিয়ে আঘাত করে জখম করেছিল। এটা বলা হয়ে থাকে যে, অপরাধী নিজের অপরাধের প্রমাণ রেখে যায়। খিলগাঁও থানার পুলিশ যে অপরাধ করেছে তারও তো প্রমাণ ছিল। কিন্তু কেন পুলিশি তদন্তে তা বের করা গেল না? আইন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনে চার বিষয়ে আশু পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছে। এক. গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি আদৌ অপরাধে সম্পৃক্ত কি-না সে বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য নির্দেশনা প্রদান; দুই. পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন করা সম্পর্কিত উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসরণ; তিন. কারও বিরুদ্ধে মামলা করার আগে সে আদৌ ঘটনায় জড়িত কি-না সে বিষয়ে প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হওয়া; চার. সত্য আড়াল করে সাজানো মামলা দায়ের করা বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন। এ ধরনের সুপারিশ-পরামর্শে বিভিন্ন সময়ে আরও অনেক তদন্ত কমিটি হয়েছে। নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে চাঞ্চল্যকর রুবেল হত্যা মামলার পর বিচারপতি হাবিবুর রহমান খানের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ ছিল দ্ব্যর্থহীন ও দিকনির্দেশনাপূর্ণ। কিন্তু পুলিশ কি নিজের সংশোধন-সংস্কারের জন্য আদৌ প্রস্তুত? তারা মানবিক না হওয়ার কারণেই রুবেলকে প্রাণ দিতে হয়, কাদের-লিমনদের পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়। কবে এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে, কে জানে। যাদের ওপরে অপরাধ দমন এবং সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বিধানের দায়িত্ব তারা নিজেরাই এভাবে অপরাধে জড়িত হয়ে পড়লে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে যে বড় শঙ্কা জাগে।

No comments

Powered by Blogger.