উপদেষ্টা থাকলেন সাংসদরা ইউএনওর কর্তৃত্ব বহাল

নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের দাবি বিবেচনায় না নিয়েই এক বছর আগে সংসদে উত্থাপিত উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) বিল পাস হলো। বহুল আলোচিত বিলটিতে স্থানীয় সাংসদদের আগের মতোই উপদেষ্টা রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যানের এখতিয়ার কিছুটা বাড়লেও নির্বাহী ক্ষমতায় আগের মতোই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কর্তৃত্ব বহাল রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল


ইসলাম বিলটি উত্থাপন করলে কোনো সংশোধনী ছাড়াই সরকার দলীয় সাংসদদের কণ্ঠভোটে তা পাস হয়। বিলটিতে কয়েকটি বিষয়ে সংশোধনী এবং জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন বিরোধী দলসহ মহাজোটের কয়েকজন সদস্য। কিন্তু বিরোধী দলের ধারাবাহিক সংসদ বর্জন এবং সময় মতো মহাজোটের অন্য সদস্যরা সংসদে না থাকায় সংশোধনীগুলো উত্থাপিত হয়নি। তবে মহাজোটের কয়েকজন সদস্য অভিযোগ করেছেন, তড়িঘড়ি করে পাস করার লক্ষ্যেই তাদের ছাড়া বিলটি পাস করা হয়েছে।
এদিকে পাস হওয়া বিলে দেখা যায়, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের অনাস্থা আনতে বিলে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের সম্মতির প্রস্তাব সংশোধন করে চার-পঞ্চমাংশ সদস্যের সম্মতির বিধান রাখা হয়েছে। মামলা হলেই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অপসারণের বিধান পরিবর্তন করে আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করার পর অপসারণের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। তাছাড়া ইস্যুভিত্তিক ১২টি কমিটি বাড়িয়ে ১৭টি করা হয়েছে। বিলে আরও বলা হয়, ইউএনও উপজেলা পরিষদকে সাচিবিক সহায়তা দেবেন। তিনি হবেন উপজেলা পরিষদের মুখ্য কর্মকর্তা। তাছাড়া নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানকে পরিষদের নির্বাহী প্রধান রাখা
হয়েছে।
তবে ইউএনওরাই সব আর্থিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবেন। উপজেলা চেয়ারম্যানরা তাদের এসিআর (অ্যানুয়াল সিক্রেট রিপোর্ট) প্রদানের ক্ষমতা চাইলেও তা দেওয়া হয়নি। জেলা প্রশাসকরা তাদের এসিআর লিখবেন। অন্যদিকে চেয়ারম্যানরা লিখবেন এপিআর (অ্যানুয়াল পারফরম্যান্স রিপোর্ট)। ফলে পরিষদে আমলাদেরই কর্তৃত্ব থাকবে। সংসদ সদস্যদের উপজেলা পরিষদের উপদেষ্টা রাখার বিধানও বহাল থাকছে। ফলে বিল পাস হলেও উপজেলা পরিষদ কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।
এর আগে উপজেলা পরিষদ আইন-১৯৯৮ অধিকতর সংশোধনের জন্য গত বছরের ৬ ডিসেম্বর সংসদে উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) বিল-২০১০ উত্থাপিত হয়। সংসদে এ বিল উত্থাপনকালে আপত্তি জানান মহাজোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তাদের আপত্তি সত্ত্বেও বিলটি উত্থাপন হলে বেশ কিছু ধারা নিয়ে আপত্তি জানান উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানরা। ৩ মার্চ কমিটির বৈঠকে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যানদের মত নেওয়া হলেও তাদের খুব কম দাবিই আমলে নেওয়া হয়েছে। বেশ কিছু সংশোধনী আনা হলেও উপজেলা পরিষদে আমলাদের কর্তৃত্ব বহাল থাকছে বলে সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন।
এদিকে গতকাল বিলটি পাস হওয়ার পর স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেছেন, যে পরিবর্তন করা হয়েছে, তা যথেষ্ট নয়। তবে সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই বিলে আরও পরিবর্তন করা হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.