মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার-নিজের আইনজীবীদের যোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন সাকার
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার বিচার কার্যক্রম স্থগিত রাখার আবেদনের আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত ট্রাইব্যুনাল থেকে কোনো নথিপত্র গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন অভিযুক্ত সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী। তাঁর এ সিদ্ধান্তে নিজেরই ক্ষতি হবে বলে মন্তব্য করেছেন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক।এদিকে নিজের নিযুক্ত আইনজীবীদের শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে মামলার কার্যক্রম স্থগিত রাখার আবেদনের ওপর নিজেই শুনানি
শুরু করেছেন সাকা চৌধুরী। তাঁর পক্ষে দায়ের করা আবেদনে (ইংরেজিতে লেখা) শব্দ প্রয়োগে ভুল হয়েছে বলে উল্লেখ করে সাকা চৌধুরী ট্রাইব্যুনালের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, 'দেখুন কী লিখেছে! এই হলো আইনজীবীদের লেখাপড়ার মান। এ জন্যই তো আইনজীবী নিয়োগ করতে চাইনি।' বিচারপতি নিজামুল হকের সভাপতিত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে শুনানি চলছে। গতকাল মঙ্গলবার শুনানি শেষ না হওয়ায় আজ বুধবার আবার শুনানি হবে।
কাশিমপুর কারাগার থেকে গতকাল সকাল ১০টা ৫৭ মিনিটে সাকা চৌধুরীকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। সকাল ১১টা ১০ মিনিটে শুনানি শুরু হয়ে দুপুর ১টা ২০ মিনিট পর্যন্ত চলে। সাকা চৌধুরীর মামলার শুনানি থাকায় তাঁর স্ত্রী, দুই ছেলে, মেয়েসহ আত্মীয়স্বজন ও সমর্থকরা ট্রাইব্যুনালের সামনে হাজির হন। অতিরিক্ত লোক ঠেকাতে আগে থেকেই প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়। নির্দিষ্ট কয়েকজন ছাড়া অন্যদের ট্রাইব্যুনাল এলাকা থেকে সরিয়ে দেয় পুলিশ।
এদিকে সাকা চৌধুরীর পক্ষে গত ২৪ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন উপস্থিত থাকলেও গতকাল কোনো আইনজীবী ছিলেন না। যদিও ৫০ জনেরও বেশি আইনজীবীর একটি তালিকা ট্রাইব্যুনালে জমা দেন সাকা চৌধুরী। এতে ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, রফিকুল ইসলাম মিয়া, জয়নাল আবেদীনসহ অনেক সিনিয়র আইনজীবীর নাম রয়েছে। তবে গতকাল শুনানিতে তিনি আইনজীবী না রাখার সিদ্ধান্ত জানান। এরপর তিনি নিজেই শুনানি করেন।
এ কারণে সাকা চৌধুরীকে তাঁর আইনজীবীদের নাম প্রত্যাহার করে নিতে বলেন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক। একই সঙ্গে ট্রাইব্যুনাল থেকে ফরমাল চার্জের (আনুষ্ঠানিক অভিযোগনামা) কপি গ্রহণ করতে বলেন। কিন্তু সাকা চৌধুরী কোনো নথি গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, 'আমার দেওয়া আবেদনের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নথি গ্রহণ করব না।'
এ সময় ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বলেন, 'না নিলে আপনি নিজেই সমস্যায় পড়বেন।' জবাবে সাকা চৌধুরী বলেন, 'আমাকে আজরাইলের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমার ক্ষতি সম্পর্কে আমি সচেতন। বড়জোর ঝুলিয়ে দেবেন। এর বেশি কিছু তো না। আমি তো ঝুলেই গেছি।'
এর আগে শুনানিতে সাকা চৌধুরী বলেন, ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বা সরকার বলছে এটা অভ্যন্তরীণ (ডমেস্টিক) ট্রাইব্যুনাল। ডমেস্টিক ট্রাইব্যুনাল হলে অভ্যন্তরীণ সব আইন মেনে চলতে হবে। আর আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল হলে আন্তর্জাতিক আইন মানতে হবে। ডমেস্টিক ট্রাইব্যুনাল হলে সংবিধান, সাক্ষ্য আইন, ফৌজদারি কার্যবিধি মানতে হবে। সাকা বলেন, 'রাজাকার, সামরিক, আধা সামরিক বা সহযোগী কোনো বাহিনীতে আমার নাম পাবেন না। একটি জায়গায় ধরা খেয়েছি, আর তা হলো ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছেলে হওয়াটাই আমার অপরাধ। কিন্তু ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছেলে হিসেবে আমি গর্ববোধ করি। আমার পিতা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় শেখ মুজিবুর রহমানের আইনজীবী ছিলেন।' তিনি বলেন, '৩২ বছর ধরে আমি সংসদ সদস্য। আমার গায়ে হাত দেওয়ার দুঃসাহস কোথা থেকে পেল, তার বিচারের ভার জাতি, আদালত, দেশের সব বিচারক এবং আমার মুরবি্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর রইল।' তিনি আরো বলেন, 'মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দিনরা আমার চাচাতো বোনকে ক্ষমতায় বসালো। এর পরই আমাকে বলা হলো যুদ্ধাপরাধী।'
এ পর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল সাকা চৌধুরীকে রাজনৈতিক বক্তব্য না দেওয়ার পরামর্শ দেন। সাকা চৌধুরী বলেন, বিচারকরা সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়েছেন। তাই সংবিধানবিরোধী আইনে তাঁরা বিচারকাজ পরিচালনা করতে পারেন না। আইনজীবী না রাখা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমার এক আইনজীবীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দিয়েছেন, তাই অন্য আইনজীবীরা আসতে ভয় পেয়ে পালিয়ে গেছেন। তাঁদের ভয়, ট্রাইব্যুনালে এলে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আসামি হতে হয়। কারণ পঞ্চদশ সংশোধনীর পর সংবিধানে ৭ক অনুচ্ছেদ যুক্ত করা হয়েছে। এতে যেকোনো ব্যক্তি যেকোনো সময় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে পড়তে পারেন। আর তা হলে শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হতে পারে।'
সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে ২৫টি ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ১৪ নভেম্বর ফরমাল চার্জ দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। ৫৫ পৃষ্ঠার ফরমাল চার্জের সঙ্গে এক হাজার ২৭৫ পৃষ্ঠার আনুষঙ্গিক নথিপত্র এবং ১৮টি সিডি ট্রাইব্যুনালে জমা দেওয়া হয়। এ মামলায় ১৪৬ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাকা চৌধুরীকে গ্রেপ্তারের জন্য ১৫ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনালে আবেদন করে তদন্ত সংস্থা। এর কয়েক ঘণ্টা ব্যবধানেই ১৬ ডিসেম্বর ভোররাতে বনানীর একটি বাসা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় গাড়িতে অগি্নসংযোগের অভিযোগে। পরে তাঁকে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয় ১৯ ডিসেম্বর। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর আদালতের নির্দেশে প্রথমবারের মতো তাঁকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। তাঁকে ধানমণ্ডির সেফহোমে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্ত সংস্থা।
কাশিমপুর কারাগার থেকে গতকাল সকাল ১০টা ৫৭ মিনিটে সাকা চৌধুরীকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। সকাল ১১টা ১০ মিনিটে শুনানি শুরু হয়ে দুপুর ১টা ২০ মিনিট পর্যন্ত চলে। সাকা চৌধুরীর মামলার শুনানি থাকায় তাঁর স্ত্রী, দুই ছেলে, মেয়েসহ আত্মীয়স্বজন ও সমর্থকরা ট্রাইব্যুনালের সামনে হাজির হন। অতিরিক্ত লোক ঠেকাতে আগে থেকেই প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়। নির্দিষ্ট কয়েকজন ছাড়া অন্যদের ট্রাইব্যুনাল এলাকা থেকে সরিয়ে দেয় পুলিশ।
এদিকে সাকা চৌধুরীর পক্ষে গত ২৪ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন উপস্থিত থাকলেও গতকাল কোনো আইনজীবী ছিলেন না। যদিও ৫০ জনেরও বেশি আইনজীবীর একটি তালিকা ট্রাইব্যুনালে জমা দেন সাকা চৌধুরী। এতে ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, রফিকুল ইসলাম মিয়া, জয়নাল আবেদীনসহ অনেক সিনিয়র আইনজীবীর নাম রয়েছে। তবে গতকাল শুনানিতে তিনি আইনজীবী না রাখার সিদ্ধান্ত জানান। এরপর তিনি নিজেই শুনানি করেন।
এ কারণে সাকা চৌধুরীকে তাঁর আইনজীবীদের নাম প্রত্যাহার করে নিতে বলেন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক। একই সঙ্গে ট্রাইব্যুনাল থেকে ফরমাল চার্জের (আনুষ্ঠানিক অভিযোগনামা) কপি গ্রহণ করতে বলেন। কিন্তু সাকা চৌধুরী কোনো নথি গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, 'আমার দেওয়া আবেদনের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নথি গ্রহণ করব না।'
এ সময় ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বলেন, 'না নিলে আপনি নিজেই সমস্যায় পড়বেন।' জবাবে সাকা চৌধুরী বলেন, 'আমাকে আজরাইলের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমার ক্ষতি সম্পর্কে আমি সচেতন। বড়জোর ঝুলিয়ে দেবেন। এর বেশি কিছু তো না। আমি তো ঝুলেই গেছি।'
এর আগে শুনানিতে সাকা চৌধুরী বলেন, ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বা সরকার বলছে এটা অভ্যন্তরীণ (ডমেস্টিক) ট্রাইব্যুনাল। ডমেস্টিক ট্রাইব্যুনাল হলে অভ্যন্তরীণ সব আইন মেনে চলতে হবে। আর আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল হলে আন্তর্জাতিক আইন মানতে হবে। ডমেস্টিক ট্রাইব্যুনাল হলে সংবিধান, সাক্ষ্য আইন, ফৌজদারি কার্যবিধি মানতে হবে। সাকা বলেন, 'রাজাকার, সামরিক, আধা সামরিক বা সহযোগী কোনো বাহিনীতে আমার নাম পাবেন না। একটি জায়গায় ধরা খেয়েছি, আর তা হলো ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছেলে হওয়াটাই আমার অপরাধ। কিন্তু ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছেলে হিসেবে আমি গর্ববোধ করি। আমার পিতা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় শেখ মুজিবুর রহমানের আইনজীবী ছিলেন।' তিনি বলেন, '৩২ বছর ধরে আমি সংসদ সদস্য। আমার গায়ে হাত দেওয়ার দুঃসাহস কোথা থেকে পেল, তার বিচারের ভার জাতি, আদালত, দেশের সব বিচারক এবং আমার মুরবি্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর রইল।' তিনি আরো বলেন, 'মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দিনরা আমার চাচাতো বোনকে ক্ষমতায় বসালো। এর পরই আমাকে বলা হলো যুদ্ধাপরাধী।'
এ পর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল সাকা চৌধুরীকে রাজনৈতিক বক্তব্য না দেওয়ার পরামর্শ দেন। সাকা চৌধুরী বলেন, বিচারকরা সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়েছেন। তাই সংবিধানবিরোধী আইনে তাঁরা বিচারকাজ পরিচালনা করতে পারেন না। আইনজীবী না রাখা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমার এক আইনজীবীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দিয়েছেন, তাই অন্য আইনজীবীরা আসতে ভয় পেয়ে পালিয়ে গেছেন। তাঁদের ভয়, ট্রাইব্যুনালে এলে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আসামি হতে হয়। কারণ পঞ্চদশ সংশোধনীর পর সংবিধানে ৭ক অনুচ্ছেদ যুক্ত করা হয়েছে। এতে যেকোনো ব্যক্তি যেকোনো সময় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে পড়তে পারেন। আর তা হলে শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হতে পারে।'
সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে ২৫টি ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ১৪ নভেম্বর ফরমাল চার্জ দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। ৫৫ পৃষ্ঠার ফরমাল চার্জের সঙ্গে এক হাজার ২৭৫ পৃষ্ঠার আনুষঙ্গিক নথিপত্র এবং ১৮টি সিডি ট্রাইব্যুনালে জমা দেওয়া হয়। এ মামলায় ১৪৬ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাকা চৌধুরীকে গ্রেপ্তারের জন্য ১৫ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনালে আবেদন করে তদন্ত সংস্থা। এর কয়েক ঘণ্টা ব্যবধানেই ১৬ ডিসেম্বর ভোররাতে বনানীর একটি বাসা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় গাড়িতে অগি্নসংযোগের অভিযোগে। পরে তাঁকে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয় ১৯ ডিসেম্বর। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর আদালতের নির্দেশে প্রথমবারের মতো তাঁকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। তাঁকে ধানমণ্ডির সেফহোমে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্ত সংস্থা।
No comments