স্থবির হয়ে পড়েছে মহিলা ক্রীড়া সংস্থা by ইফতেখার রাজিব

সুলতানা কামাল মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেঙ্ েঢুকলেই একটা দৃশ্য সবার নজরে আসবে। মূল ফটকের সামনেই বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শেখ কামালের পত্নীর খোদাই করা বিশাল একটা ছবি। ছবিতে সুলতানা কামাল যতটা হাস্যোজ্জ্বল বাস্তবে মহিলা ক্রীড়া সংস্থার অবস্থা ততটাই মলিন। মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদিকাদ্বয়ের কাদা ছোড়াছুড়িতে কালিমালিপ্ত হচ্ছে মহিলা ক্রীড়াঙ্গন। মাহফুজা আক্তার কিরন ও কামরুন্নাহার ডানার রশি টানাটানিতে


স্থবির হয়ে পড়ছে মহিলা ক্রীড়াঙ্গনের মূল চালিকাক্ষেত্র মহিলা ক্রীড়া সংস্থা।ক্রীড়াঙ্গনের দুই প্রভাবশালী মহিলার ক্ষমতা নিয়ে এই দ্বন্দ্বে বিভক্তি সৃষ্টি হয়েছে ঢাকার পুরো ক্রীড়াঙ্গনে। দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে দুজনকে পেছন থেকে লড়াইয়ে পুঁজি জুগিয়ে চলছেন ক্রীড়া সংগঠকরা। মাহফুজা আক্তার কিরনের পক্ষের সংগঠকরা সরকারের উচ্চপর্যায়ে লবিং করছেন তাঁর হারানো দায়িত্ব ফিরেয়ে দেওয়ার জন্য। থেমে নেই সদ্য দায়িত্ব পাওয়া কামরুন্নাহার ডানার পক্ষও। সরকারের উচ্চ মহলে তাঁরাও লবিং করছেন ডানাকে নতুন দায়িত্বে টিকিয়ে রাখার জন্য। এ নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে বেশ কয়েকবার বৈঠকও করেছেন দুই পক্ষের সংগঠকরা। তাতে যা হচ্ছে তাকে মহিলা ক্রীড়াচর্চার বড় অন্তরায় বলেই মনে করছেন ক্রীড়াঙ্গন সংশ্লিষ্টরা।
সরকারের প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকেই থেমে গেছে মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সব কার্মক্রম। সরেজমিনে গিয়েও দেখা গেছে এই চিত্র। মহিলা হোস্টেলে ঘাঁটি গেড়েছে বিভিন্ন জেলার ফুটবল দল। তাদের সঙ্গে সেখানে আছেন ব্যাডমিন্টন ও টেবিল টেনিসের মহিলা দলও। কিন্তু মহিলা ক্রীড়া সংস্থার দায়িত্ব কার কাঁধে বর্তাবে এ নিয়ে সরকারের উচ্চ মহলের সিদ্ধান্তহীনতায় বন্ধ হয়ে গেছে সব কর্মকাণ্ড। যদিও সদ্য দায়িত্ব পাওয়া মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদিকা কামরুন্নাহার ডানার দাবি, 'দায়িত্ব পাওয়ার পর আমরা নিয়মিত অফিস করছি। সামনের মাস থেকে আমরা খেলাধুলার আয়োজন করব।' তবে ডানার দাবির সত্যতা মেলেনি বাস্তবে। মহিলা ক্রীড়া সংস্থার প্রশাসক আয়েশা বেগমের বক্তব্যেই তা স্পষ্ট, 'কেউই এখন অফিস করতে পারছেন না। মহিলা ক্রীড়া সংস্থায় তালা মেরে তার চাবি আমার কাছে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওপরের নির্দেশ থাকায় কারো হাতেই এখন চাবি দেওয়া যাচ্ছে না।' তবে একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, কামরুন্নাহার ডানা মাঝে মাঝে মহিলা ক্রীড়া সংস্থায় গেলেও এখনো তাঁর সৌভাগ্য হয়নি অফিসে নির্ধারিত আসন গ্রহণ করার। নিচতলায় কিছু সময় কাটিয়ে বেশ কয়েক দিন মহিলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে ফিরে এসেছেন সাবেক এ ব্যাডমিন্টন তারকা। তবে প্রথম দিন বাদে এডহক কমিটির অন্য সদস্যদের কাউকে সেখানে দেখা যায়নি। ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার ব্যাপারে এখনো যথেষ্ট আশাবাদী মনে হলো মাহফুজা আক্তার কিরনকে। হারানো স্থান ফিরে পেতে যা যা করণীয় তার সব কিছুই করছেন তিনি, 'আমাকে মহিলা ক্রীড়া সংস্থার চাবি নিয়ে আসতে বলা হয়েছিল। কিন্তু প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া না হলে আমি দায়িত্ব নেব না। আশা করছি কয়েক দিনের মধ্যেই সব কিছু চূড়ান্ত হয়ে যাবে।'
আশায় বুক বেঁধেছে দুই পক্ষই। কিরন স্বপ্ন দেখছেন নতুনভাবে দায়িত্ব ফিরে পাওয়ার। আর হারানো রাজত্ব ফিরে পেয়ে তা ধরে রাখতে মরিয়া ডানা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালের তিন ডিসেম্বর নির্বাচনের মাধ্যমে কামরুন্নাহার ডানার কাছ থেকেই দায়িত্ব বুঝে নিয়েছিল মাহফুজা আক্তার কিরনের নেতৃত্বাধীন কমিটি। ডানার নেতৃত্বাধীন কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন কিরন। অথচ ক্রীড়াঙ্গনের কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তিকে কাজে লাগিয়ে শেষ পর্যন্ত ডানাকেই অবাঞ্ছিত করে মহিলা ক্রীড়া সংস্থার দায়িত্ব করায়ত্ত করেন কিরন। নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এলেও মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই কিরন নেতৃত্বাধীন কমিটি বিশেষ ক্ষমতাবলে ভেঙে দিয়ে ডানা নেতৃত্বাধীন কমিটিতে ক্ষমতা নিয়ে আসে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। যদিও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ছাড়িয়ে ইস্যুটি সরকারের উচ্চ মহলে চলে যাওয়ায় সরকারি চিঠি হাতে পেয়েও দায়িত্বে আসতে পারছে না ডানা নেতৃত্বাধীন কমিটি।
কিন্তু এর সমাধান হবে কবে এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পেঁৗছাতে পারেনি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। বিষয়টি জানতে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব শফিক আনোয়ারকে বেশ কয়েকবার ফোন করলেও তাঁর সাড়া পাওয়া যায়নি।

No comments

Powered by Blogger.