৫০ রানে গুটিয়ে যাওয়ার ভয়ে ছিলেন মুশফিক

বিশ ওভারের ম্যাচে একটা দলের অধিনায়ক মাত্র ৫০ রানে গুটিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ছিলেন। তবে সেটি ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার কারণে না। কারণ ম্যাচ-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে মুশফিকুর রহিম স্পষ্ট করে বলেছেন, খুব বাজে শট খেলে শুরুর দিকের কোনো ব্যাটসম্যানই আউট হননি। তাহলে? বাজে শট না খেলেও ৫০ রানে অল আউট হয়ে যাওয়ার শঙ্কার অর্থ একটাই। কাঠগড়ায় উইকেট!


ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের শুরুর দিকে উইকেট নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল বিস্তর। ওই ২২ গজকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে ময়নাতদন্ত করা হচ্ছিল স্বাগতিক দলের ব্যর্থতার। মুশফিকুর রহিম তখন উইকেট ছাপিয়ে দলের পারফরম্যান্সের গুরুত্ব দিচ্ছিলেন বেশি করে। কিন্তু কাল পাকিস্তানের কাছে ৫০ রানে হারের পর নানা প্রশ্নে ওই উইকেটের প্রসঙ্গ নিয়ে এলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ঠারেঠোরে হয়তো নিজের উষ্মার কথা বুঝিয়ে দিতেই।
'উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য অনেক কঠিন ছিল। আর আমাদের তুলনায় ওদের বোলিং আক্রমণ অনেক ভালো। আমরা ভালোই বোলিং করেছি, তবে খুব ভালো না। আরেকটু ভালো বোলিং করলে ওদের ১২০-১২৫ রানের মধ্যে আটকে রাখতে পারতাম'_বলেছেন মুশফিক। পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত ১৩৫ রান করায় ম্যাচ আসলেই চলে যায় বাংলাদেশের ধরাছোঁয়ারা বাইরে। যদিও সেটি স্বীকার করেননি অধিনায়ক, 'এই উইকেটে ওই রান তাড়া করে জেতা খুব কঠিন, তবে অসম্ভব না। আমাদের টার্গেট ছিল, ওপেনিং বা শুরুতে যদি বড় জুটি দিতে পারি, তাহলে শেষে ৭-৮ করে হলেও সেটি কাভার করা যাবে। কিন্তু আমরা জুটি গড়তে পারিনি।' সেই না পারার পেছনে পাকিস্তানি বোলিংকেই বড় করে দেখছেন তিনি, 'ওরা নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী দারুণ বোলিং করেছে। এ জন্য আমাদের টপ অর্ডারের কেউ উইকেট গিয়ে সেট হতে পারিনি। তবে পাকিস্তানি বোলারদের বিপক্ষে এমন উইকেটে এমনকি সিঙ্গেলস-ডাবলস নেওয়াও কঠিন। সেখানে আমরা যদি আরো মারতে যাই, তাহলে ৫০ রানে অল আউট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও যে ছিল।'
উইকেটের এই জুজুতে শেষ পর্যন্ত লাভ হয়েছে পাকিস্তানের। স্বচ্ছন্দ জয়ই পেয়েছে তারা। কিন্তু অধিনায়ক মিসবাহ-উল হক তার পরও উইকেট নিয়ে ঠিক সন্তুষ্ট নন, 'আসলে টোয়েন্টি টোয়েন্টি হচ্ছে রানের খেলা। এখানে দর্শকরা আসে অনেক রান দেখতে। তবে এখানে তো আর ক্রিকেটারদের হাত নেই। আমাদের যেমন উইকেট দেওয়া হবে, আমরা তাতেই খেলব।' ব্যাটিংয়ে ৩১ বলে ২৫ রানের পাশাপাশি ৪ ওভারে ১১ রান দিয়ে দুই উইকেট নেওয়ার জন্য ম্যাচসেরা হয়েছেন মোহাম্মদ হাফিজ। নতুন বলে তাঁর অফস্পিনে সাফল্যের কারণ হিসেবেও উইকেটের কথা বলেছেন তিনি, 'আমি বুঝেছিলাম, এখানে স্পিনারদের খেলা কঠিন হবে। আর আমি নতুন বলে আগেও বোলিং করেছি। এ কারণেই নিজের শতভাগ দিয়ে চেষ্টা করেছি।'
হাফিজের পাশাপাশি আফ্রিদি-শোয়েব মালিক-সাঈদ আজমলদের ঘূর্ণিতে বাংলাদেশের ইনিংস থেমে যায় ৮৫ রানে। ১৩৬ রানের লক্ষ্যকে এখন কী পাহাড়সমই না মনে হচ্ছে! কিন্তু তামিম ইকবালের একটি সাইক্লোন ইনিংস হয়তো পাল্টে দিতে পারত সমীকরণ। জয়ের বাতিঘর দেখাতে পারত বাংলাদেশকে। ইনজুরির কারণে এই ওপেনারের না খেলার আক্ষেপটা তাই পোড়াচ্ছিল মুশফিককে, 'তামিম গতকাল প্র্যাকটিসে ভালো ছিল। কিন্তু আজ সকালে ও হাঁটুতে ব্যথা অনুভব করে। টসের আগ পর্যন্ত ওর জন্য অপেক্ষা করা হয়। কিন্তু ফিটনেস টেস্টে ও উৎরাতে পারেনি। তামিম ছিল না বলে ব্যাটিং অর্ডারে অদল-বদল করতে হয়েছে। সেটিও বেশ সমস্যা হয়েছে। তামিম খেলে ভালো একটা শুরু দিলে হয়তো ম্যাচের ফল অন্য রকম হতে পারত।' স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে একজন ব্যাটসম্যান কিন্তু ঠিকই পালন করে গেছেন নিজের দায়িত্ব। নাসির হোসেন। দলের ৮৫ রানের মধ্যে অপরাজিত ৩৫-ই তাঁর। ৩৮ বলের ইনিংসে দুটো চারের সঙ্গে আলো করে আছে ইনিংসের একমাত্র ছক্কাও। অভিষেকের পর থেকেই পরিণত এক ক্রিকেটারের প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে যাঁর মধ্যে, সেই নাসিরে মুগ্ধ মুশফিকও, 'এই উইকেটে গিয়েই রান করা যায় না। নাসির উইকেটে গিয়ে সেটল হয়ে এরপর হাত খুলেছে। আসলে জাতীয় দলে ঢোকার পর থেকেই নাসির ভালো খেলছে। এর ধারাবাহিকতায় আজও দারুণ খেলল।'
ওয়ানডে ও টেস্ট সিরিজে উইকেট কেমন হবে, কে জানে! তবে সেদিকে তাকিয়ে না থেকে অধিনায়ক মুশফিক সেই ভালো খেলার তাগাদা দিচ্ছেন সতীর্থদেরই, 'আজ আমরা এত খারাপ খেলার পরও ৮৫ করেছি। টপ অর্ডারে একটা জুটি হলে শেষ দিকে হয়তো আমাদের জয়ের সম্ভাবনা তৈরি হতো। অবশ্যই পাকিস্তান বিশ্বের অন্যতম সেরা দল। আগেও বলেছি, ওদের হারাতে হলে আমাদের সামর্থ্যের শতভাগের চেয়েও বেশি দিয়ে খেলতে হবে।'
সে জন্য বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা চাইলে অনুপ্রেরণা নিতে পারে তাদের এক সতীর্থের কাছ থেকে। ম্যাচের পর ম্যাচ যে সেটিই করে দেখাচ্ছেন নাসির হোসেন নামের এক তরুণ!

No comments

Powered by Blogger.