রফতানিমুখী জাহাজ শিল্প-২০ কোটি ডলারের তহবিল গঠনের প্রস্তাব by কিসমত খোন্দকার

ফতানিমুখী সমুদ্রগামী জাহাজ নির্মাণ শিল্পের বিকাশে ২০ কোটি ডলারের রফতানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) গঠনের প্রস্তাব বিবেচনা করছে সরকার। শিল্পটির জন্য দেশে বিভিন্ন স্থানে তিনটি বিশেষ জোন গড়ে তোলাসহ এ শিল্পের বিকাশে সহায়তা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে রফতানিমুখী সমুদ্রগামী জাহাজ শিল্পের সমস্যা ও সমাধানের উপায় নিয়ে একটি বৈঠক হয়। এ সময় জাহাজ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন।


রফতানিমুখী সমুদ্রগামী জাহাজ নির্মাণ শিল্প অত্যন্ত পুঁজি ও শ্রমঘন শিল্প হওয়ায় বাংলাদেশে এর প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশে সস্তায় শ্রম পাওয়া যায় বলে আন্তর্জাতিক বাজারে এ শিল্পের ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। এ শিল্পের সম্ভাবনা থাকলেও পুঁজির অভাব এবং সরকারি কিছু বিধানের কারণে এ শিল্পের বিকাশ ঘটছে না। খুব শিগগির এ শিল্পের বিকাশ নিয়ে একটি জাতীয় কর্মশালার আয়োজন করা হবে বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া সিঙ্গাপুর, চীন, জার্মানিসহ বিশ্বের যেসব দেশে সমুদ্রগামী জাহাজ শিল্প গড়ে উঠেছে সেসব দেশে বর্তমানে জাহাজ নির্মাণ ব্যয় কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। সে তুলনায় এখন বাংলাদেশেই অনেক কম খরচে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন জাহাজ নির্মাণ হচ্ছে। এ কারণে জার্মানি, নেদারলান্ডসসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সমুদ্র্রগামী জাহাজ ব্যবসায়ীরা এখন বাংলাদেশের দিকে ঝুঁকে পড়লেও মূলধন সমস্যাসহ বিভিন্ন জটিলতায় শ্রমঘন এবং বিকাশমান এ শিল্পটি আশানুরূপ এগোতে পারছে না।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে দুটি প্রতিষ্ঠান সমুদ্রগামী জাহাজ রফতানি করছে। এ দুটি প্রতিষ্ঠানের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, আনন্দ শিপইয়ার্ড এ পর্যন্ত ১০টি জাহাজ রফতানি করছে। নির্মাণাধীন রয়েছে ছয়টি এবং আরও ১০টি জাহাজ রফতানির আদেশ পেয়েছে তারা। ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড সাতটি জাহাজ রফতানি করেছে, নির্মাণাধীন রয়েছে আটটি। প্রতিষ্ঠানটি আরও ২৩টি জাহাজ নির্মাণের আদেশ পেয়েছে। এছাড়া খান ব্রাদার্স লিমিটেড বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেছে। মেসার্স হাই-স্পিড শিপবিল্ডিং অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড এবং ঢাকা ডকইয়ার্ড ইঞ্জিনিয়রিং ওয়ার্কস রফতানির উদ্যোগ নিলেও এ পর্যন্ত সক্ষম হয়নি। এর আগে জাহাজ নির্মাণ শিল্প খাতের জন্য ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমানো, পুনর্অর্থায়ন সুবিধা, পুঁজিবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহের নিয়ম-কানুন শিথিলসহ বেশকিছু প্রস্তাব দিয়েছিলেন জাহাজ নির্মাণ শিল্প মালিকরা। এ খাতে বিদেশি বিণিয়োগকারীদের জন্যও বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার বিষয় বিবেচনা করার সুপারিশ করা হয়েছিল।
জানা গেছে, এসব বিষয়ে একটি সুপারিশ তৈরি করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরের নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সরকার জাহাজ নির্মাণ শিল্প বিকাশে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার উদ্যোগ নেয়। এরই অংশ হিসেবে ২০০৯-১২ সালের জন্য তিন বছরমেয়াদি রফতানি নীতিতে এ খাতকে অগ্রাধিকার প্রাপ্ত হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। জাহাজ রফতানির ক্ষেত্রে প্রাপ্ত অ্যাডভান্সের বিপরীতে গ্যারান্টির ক্ষেত্রে উচ্চ হারে কমিশন দিতে হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তারা অ্যাডভান্স পেমেন্টের বিপরীতে বিদেশি ব্যাংক থেকে থার্ড পার্টি গ্যারান্টি গ্রহণের পরিবর্তে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক একটি রেজিস্টারে বাংলাদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে দেওয়া গ্যারান্টি সংক্রান্ত তথ্যাদি সংরক্ষণ এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংক পারস্পরিক ক্রস রেফোরেন্স হিসেবে ব্যবহারের সুপারিশ করেছে। বর্তমানে এ শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে এলসি মার্জিন ৫ থেকে ১০, ব্যাংক গ্যারান্টি মার্জিন ৫ থেকে ১০ শতাংশ এবং এলসি কমিশন চার্জ বিদ্যমান রয়েছে। তা অন্যান্য প্রতিযোগী দেশের তুলনায় বেশি। এক্ষেত্রে আমদানি এলসি মার্জিন এবং ব্যাংক গ্যারান্টি মার্জিন শূন্য নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া এ শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল সৃষ্টি ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে আধুনিকায়ন করার সুুপারিশ করা হয়। মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া, কর্ণফুলী নদী ও পশুর নদীতীরে জাহাজ নির্মাণ শিল্পের জন্য তিনটি জোন গড়ে তোলার প্রস্তাব করেছে রফতানিমুখী জাহাজ নির্মাণ সংস্থাগুলো।

No comments

Powered by Blogger.