ঢাকা সিটি করপোরেশন দু’ভাগ : মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত দুরভিসন্ধিমূলক : মেয়র খোকা by কাদের গনি চৌধুরী
ঢাকা সিটি করপোরেশনকে ভেঙে উত্তর ও দক্ষিণ নামে দুটি ভাগ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।বৈঠকে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য এবং সচিবরাও উপস্থিত ছিলেন।বৈঠকে জানানো হয়, পৃথক দুটি সিটি করপোরেশনের জন্য আলাদা করে ওয়ার্ড বিন্যাস করা হবে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়কে এ সংক্রান্ত নির্দেশ দেয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা মহানগরীর ৫৬ ওয়ার্ড নিয়ে দক্ষিণ এবং ৩৬ ওয়ার্ড নিয়ে উত্তরে আলাদা সিটি করপোরেশন করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ঢাকা উত্তরের ৩৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে থাকবে ১ থেকে ২৩ নম্বর ওয়ার্ড, ৩৭ থেকে ৪৫ নম্বর ওয়ার্ড এবং ৫৪ ও ৫৫ নম্বর ওয়ার্ড। আর দক্ষিণের ৫৬ ওয়ার্ডের মধ্যে আছে ২৪ থেকে ৩৬, ৪৮ থেকে ৫৩, ৫৬ থেকে ৬৬ নম্বর ওয়ার্ড এবং ৬, ৭, ৬৮ ও ৯২ নম্বর ওয়ার্ড। বর্তমানে ঢাকা সিটি করপোরেশনে (ডিসিসি) মোট ৯২টি ওয়ার্ড রয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে বলা হয়, ঢাকার মতো এত বড় একটি নগরীর নিয়ন্ত্রণ একটিমাত্র সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে সম্ভব নয় বলেই একে দুটি ভাগ করা হবে। বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের এ বিষয়ে ব্রিফ করেন।
এদিকে ডিসিসিকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ না নিয়ে হঠাত্ দু’ভাগ করার সরকারি সিদ্ধান্তকে দুরভিসন্ধিমূলক বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকা। তিনি এ প্রসঙ্গে আমার দেশকে বলেন, সরকারের এ ধরনের অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের ফলে নাগরিক সেবা নিশ্চিত তো হবেই না; বরং নানা সমস্যার সৃষ্টি হবে। তিনি বলেন, বিভক্তির মাধ্যমে নয়—সিটি করপোরেশন ও বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে ডিসিসিকে শক্তিশালী করা সম্ভব।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সাবেক কেবিনেট সেক্রেটারি ড. আকবর আলি খান ডিসিসিকে দু’ভাগ করার সমালোচনা করে বলেন, আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য কমিশন গঠন উচিত ছিল। তিনি বলেন, ডিসিসিকে উত্তর ও দক্ষিণে ভাগ করার ফলে অভিজাত এবং দরিদ্র সিটি করপোরেশন তৈরি হবে। কারণ উত্তর সিটি করপোরেশনে পড়বে সব অভিজাত এলাকা। আর দক্ষিণে তুলনামূলক গরিব এলাকা। উত্তর থেকে যে পরিমাণ কর আসবে, সেটি দক্ষিণ থেকে সম্ভব নয়। আবার ভাগ হয়ে যাওয়ার কারণে উত্তরের করের টাকা দক্ষিণে ব্যয় করাও যাবে না।
ডিসিসিকে দু’ভাগ করলে প্রশাসনিক ব্যয় প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে যাবে উল্লেখ করে ড. খান বলেন, এখন নগর ভবন একটি, তখন দুটি করতে হবে। উপরের সব পদও বেড়ে যাবে। গাড়ি-বাড়ি সব বাড়াতে হবে। ডিসিসি ভাগ হলে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হবে—এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ডিসিসি ভৌগোলিকভাবে বিভক্ত নয়। ডিসিসির মধ্য দিয়ে কোনো নদী বয়ে গেলে ভাগের বিষয়টি যুক্তিযুক্ত হতো। এখন যদি ডিসিসি ভাগ হয়, তবে অনেক রাস্তাঘাট ভাগ হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে রাস্তাঘাটের সীমানা অংশের উন্নয়ন ব্যাহত হবে।
ডিসিসির কাজের গতি বাড়ানোর জন্য একে দুই ভাগ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে সরকারি ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কাজের গতি বাড়ানোর জন্য ডিসিসি বিভক্ত করার কোনো দরকার নেই। তিনি বলেন, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নির্বাচিত মেয়ররা শক্তিশালী সিটি করপোরেশনের প্রস্তাব দিয়েছেন। কিন্তু কোনো উদ্যোগই নেয়া হয়নি। সিটি করপোরেশন, ওয়াসা, বিদ্যুত্ বিভাগ—তিন কর্তৃপক্ষ আলাদাভাবে কাজ করায় সমন্বয় নেই। এভাবে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষে ভাগ থাকলে মিউনিসিপ্যালিটিকে শক্তিশালী করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, এখনও সময় আছে সরকারের উচিত হবে সংসদে প্রস্তাব যাওয়ার আগে এ ব্যাপারে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেয়া।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৪ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এক বৈঠকে ঢাকার সরকারদলীয় সংসদ সদস্যরা বর্তমান সিটি মেয়র সাদেক হোসেন খোকা ও ওয়ার্ড কমিশনারদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আনেন। তারা জানান, পুরো সিটি করপোরেশন বিএনপিপন্থীদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় তারা একক কর্তৃত্ব খাটাতে পারছেন না। তারা এও দাবি করেন, সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কমিশনারের কার্যালয়কে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতাকর্মীরা সংগঠিত আছেন। এটা ভাঙতে না পারলে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এমনকি আগামী জাতীয় নির্বাচনে জেতা কঠিন হবে। তাই সিটি করপোরেশন ভেঙে দিয়ে বর্তমান ওয়ার্ড কমিশনারদের বে-ঘর করার পর তারা নির্বাচন দেয়ার পরামর্শ দেন। ওই বৈঠকেই প্রধানমন্ত্রী এবং এলজিআরডি মন্ত্রী ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দু’ভাগ করার সিদ্ধান্ত নেন। এর পরপরই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ সিটি করপোরেশনে প্রশাসক নিয়োগের সুপারিশ করে। এজন্য ঢাকা সংলগ্ন কয়েকটি পৌরসভার নির্বাচন না করতেও নির্বাচন কমিশনকে বলা হয়। ওই সময় সরকারের এ সিদ্ধান্তকে দুরভিসন্ধিমূলক উল্লেখ করে বিএনপি ঢাকা সিটি করপোরেশনকে ভাগ করার পরিকল্পনা বাদ রেখে অবিলম্বে নির্বাচন দেয়ার দাবি জানায়।
বিএনপির পক্ষ থেকে তাত্ক্ষণিক সংবাদ সম্মেলন করে দলের তত্কালীন মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন বলেন, সরকার জিততে পারবে না বলে ডিসিসি নির্বাচন না দিয়ে এখন করপোরেশনকে ভাগ করে প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে দুরভিসন্ধিমূলক অপচেষ্টায় লিপ্ত।
এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হলে সরকার কিছুটা পিছটান দেয়। গতকাল হঠাত্ মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে ডিসিসিকে দু’ভাগ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হলো।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, প্রায় দেড় কোটি জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত ডিসিসিকে ভাগ করার সরকারি এ উদ্যোগের প্রধান কারণ—বর্তমান মেয়র সাদেক হোসেন খোকা ও বিএনপির কমিশনারদের বিদায় দেয়া। তারপর দীর্ঘমেয়াদে দলীয় লোককে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করার পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে সরকার। উত্তর ও দক্ষিণে দু’ভাগ করা হলে কে কে প্রশাসক হবেন, সে ব্যাপারেও সরকার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে। সরকারি দলের দুই নেতাকে প্রশাসক পদে বসানোর বিষয়টি মোটামুটি চূড়ান্ত। সূত্র জানায়, ঢাকা সিটি করপোরেশন-উত্তরের প্রশাসক পদে ফজলে নূর তাপস এমপি এবং দক্ষিণে সাঈদ খোকনকে বসানোর সিদ্ধান্ত রয়েছে সরকারের। পরে এ দু’জনকে দিয়েই মেয়র নির্বাচন করানো হবে।
সূত্র জানায়, বর্তমান পরিষদের মেয়াদ ২০০৭ সালের ১৪ মে উত্তীর্ণ হলেও নাগরিক নানা সমস্যায় জর্জরিত ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ঝুঁকি নিতে সাহস পায়নি সরকার। কিন্তু সম্প্রতি সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপিদলীয় মেয়র সাদেক হোসেন খোকা নগরপিতা হিসেবে নেতৃত্ব দেয়ার পর সেটি আর সহ্য করতে পারছিল না সরকার। তাই মোক্ষম বিকল্প হিসেবে ডিসিসিকে ভাগ করে প্রশাসক বসানোর কৌশল নিয়েছে তারা।
ডিসিসি ভাগ করার যুক্তি হিসেবে বিপুল জনসংখ্যা, বিশাল আয়তন এবং সিটি করপোরেশনকে আরও কার্যকর সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার বিষয়টি সামনে নিয়ে আসা হলেও বাস্তবে এটি করা হচ্ছে সিটি করপোরেশনকে কব্জা করার টার্গেটে। কারণ বিভক্তির সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান মেয়র সাদেক হোসেন খোকাকে আপনাআপনিই বিদায় নিতে হবে। এরপর নতুন করে ভোটার তালিকা তৈরি ও সীমানা নির্ধারণসহ নানা জটিলতায় দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হলে সরকার নিয়োজিত দলীয় প্রশাসকরা নগরপিতা হিসেবে কর্তৃত্ব করে যাবেন।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভয়াবহ যানজট, বিদ্যুত্, পানি ও গ্যাস সঙ্কটসহ নানা নাগরিক দুর্ভোগে অতিষ্ঠ নগরবাসী সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ বলে গোয়েন্দা রিপোর্টে সরকার নিশ্চিত হয়েছে। এখনই ডিসিসি নির্বাচন হলে ফল প্রতিকূলে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল বলেও মনে করছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা। বর্তমান অবস্থায় নির্বাচন হলে জয়ী হওয়ার মতো প্রার্থী সঙ্কটও রয়েছে সরকারি দলে। আবার প্রার্থিতা নিয়ে সরকারি দলে জোর লড়াইও বিদ্যমান। ফলে তারা সহসা ডিসিসি নির্বাচনের ঝুঁকি নিতে যেমন চাইছেন না, তেমনি সাদেক হোসেন খোকা মেয়র পদে বহাল থাকুক তাও মানতে নারাজ।
মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে বলা হয়, ঢাকার মতো এত বড় একটি নগরীর নিয়ন্ত্রণ একটিমাত্র সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে সম্ভব নয় বলেই একে দুটি ভাগ করা হবে। বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের এ বিষয়ে ব্রিফ করেন।
এদিকে ডিসিসিকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ না নিয়ে হঠাত্ দু’ভাগ করার সরকারি সিদ্ধান্তকে দুরভিসন্ধিমূলক বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকা। তিনি এ প্রসঙ্গে আমার দেশকে বলেন, সরকারের এ ধরনের অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের ফলে নাগরিক সেবা নিশ্চিত তো হবেই না; বরং নানা সমস্যার সৃষ্টি হবে। তিনি বলেন, বিভক্তির মাধ্যমে নয়—সিটি করপোরেশন ও বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে ডিসিসিকে শক্তিশালী করা সম্ভব।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সাবেক কেবিনেট সেক্রেটারি ড. আকবর আলি খান ডিসিসিকে দু’ভাগ করার সমালোচনা করে বলেন, আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য কমিশন গঠন উচিত ছিল। তিনি বলেন, ডিসিসিকে উত্তর ও দক্ষিণে ভাগ করার ফলে অভিজাত এবং দরিদ্র সিটি করপোরেশন তৈরি হবে। কারণ উত্তর সিটি করপোরেশনে পড়বে সব অভিজাত এলাকা। আর দক্ষিণে তুলনামূলক গরিব এলাকা। উত্তর থেকে যে পরিমাণ কর আসবে, সেটি দক্ষিণ থেকে সম্ভব নয়। আবার ভাগ হয়ে যাওয়ার কারণে উত্তরের করের টাকা দক্ষিণে ব্যয় করাও যাবে না।
ডিসিসিকে দু’ভাগ করলে প্রশাসনিক ব্যয় প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে যাবে উল্লেখ করে ড. খান বলেন, এখন নগর ভবন একটি, তখন দুটি করতে হবে। উপরের সব পদও বেড়ে যাবে। গাড়ি-বাড়ি সব বাড়াতে হবে। ডিসিসি ভাগ হলে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হবে—এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ডিসিসি ভৌগোলিকভাবে বিভক্ত নয়। ডিসিসির মধ্য দিয়ে কোনো নদী বয়ে গেলে ভাগের বিষয়টি যুক্তিযুক্ত হতো। এখন যদি ডিসিসি ভাগ হয়, তবে অনেক রাস্তাঘাট ভাগ হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে রাস্তাঘাটের সীমানা অংশের উন্নয়ন ব্যাহত হবে।
ডিসিসির কাজের গতি বাড়ানোর জন্য একে দুই ভাগ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে সরকারি ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কাজের গতি বাড়ানোর জন্য ডিসিসি বিভক্ত করার কোনো দরকার নেই। তিনি বলেন, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নির্বাচিত মেয়ররা শক্তিশালী সিটি করপোরেশনের প্রস্তাব দিয়েছেন। কিন্তু কোনো উদ্যোগই নেয়া হয়নি। সিটি করপোরেশন, ওয়াসা, বিদ্যুত্ বিভাগ—তিন কর্তৃপক্ষ আলাদাভাবে কাজ করায় সমন্বয় নেই। এভাবে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষে ভাগ থাকলে মিউনিসিপ্যালিটিকে শক্তিশালী করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, এখনও সময় আছে সরকারের উচিত হবে সংসদে প্রস্তাব যাওয়ার আগে এ ব্যাপারে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেয়া।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৪ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এক বৈঠকে ঢাকার সরকারদলীয় সংসদ সদস্যরা বর্তমান সিটি মেয়র সাদেক হোসেন খোকা ও ওয়ার্ড কমিশনারদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আনেন। তারা জানান, পুরো সিটি করপোরেশন বিএনপিপন্থীদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় তারা একক কর্তৃত্ব খাটাতে পারছেন না। তারা এও দাবি করেন, সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কমিশনারের কার্যালয়কে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতাকর্মীরা সংগঠিত আছেন। এটা ভাঙতে না পারলে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এমনকি আগামী জাতীয় নির্বাচনে জেতা কঠিন হবে। তাই সিটি করপোরেশন ভেঙে দিয়ে বর্তমান ওয়ার্ড কমিশনারদের বে-ঘর করার পর তারা নির্বাচন দেয়ার পরামর্শ দেন। ওই বৈঠকেই প্রধানমন্ত্রী এবং এলজিআরডি মন্ত্রী ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দু’ভাগ করার সিদ্ধান্ত নেন। এর পরপরই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ সিটি করপোরেশনে প্রশাসক নিয়োগের সুপারিশ করে। এজন্য ঢাকা সংলগ্ন কয়েকটি পৌরসভার নির্বাচন না করতেও নির্বাচন কমিশনকে বলা হয়। ওই সময় সরকারের এ সিদ্ধান্তকে দুরভিসন্ধিমূলক উল্লেখ করে বিএনপি ঢাকা সিটি করপোরেশনকে ভাগ করার পরিকল্পনা বাদ রেখে অবিলম্বে নির্বাচন দেয়ার দাবি জানায়।
বিএনপির পক্ষ থেকে তাত্ক্ষণিক সংবাদ সম্মেলন করে দলের তত্কালীন মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন বলেন, সরকার জিততে পারবে না বলে ডিসিসি নির্বাচন না দিয়ে এখন করপোরেশনকে ভাগ করে প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে দুরভিসন্ধিমূলক অপচেষ্টায় লিপ্ত।
এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হলে সরকার কিছুটা পিছটান দেয়। গতকাল হঠাত্ মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে ডিসিসিকে দু’ভাগ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হলো।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, প্রায় দেড় কোটি জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত ডিসিসিকে ভাগ করার সরকারি এ উদ্যোগের প্রধান কারণ—বর্তমান মেয়র সাদেক হোসেন খোকা ও বিএনপির কমিশনারদের বিদায় দেয়া। তারপর দীর্ঘমেয়াদে দলীয় লোককে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করার পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে সরকার। উত্তর ও দক্ষিণে দু’ভাগ করা হলে কে কে প্রশাসক হবেন, সে ব্যাপারেও সরকার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে। সরকারি দলের দুই নেতাকে প্রশাসক পদে বসানোর বিষয়টি মোটামুটি চূড়ান্ত। সূত্র জানায়, ঢাকা সিটি করপোরেশন-উত্তরের প্রশাসক পদে ফজলে নূর তাপস এমপি এবং দক্ষিণে সাঈদ খোকনকে বসানোর সিদ্ধান্ত রয়েছে সরকারের। পরে এ দু’জনকে দিয়েই মেয়র নির্বাচন করানো হবে।
সূত্র জানায়, বর্তমান পরিষদের মেয়াদ ২০০৭ সালের ১৪ মে উত্তীর্ণ হলেও নাগরিক নানা সমস্যায় জর্জরিত ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ঝুঁকি নিতে সাহস পায়নি সরকার। কিন্তু সম্প্রতি সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপিদলীয় মেয়র সাদেক হোসেন খোকা নগরপিতা হিসেবে নেতৃত্ব দেয়ার পর সেটি আর সহ্য করতে পারছিল না সরকার। তাই মোক্ষম বিকল্প হিসেবে ডিসিসিকে ভাগ করে প্রশাসক বসানোর কৌশল নিয়েছে তারা।
ডিসিসি ভাগ করার যুক্তি হিসেবে বিপুল জনসংখ্যা, বিশাল আয়তন এবং সিটি করপোরেশনকে আরও কার্যকর সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার বিষয়টি সামনে নিয়ে আসা হলেও বাস্তবে এটি করা হচ্ছে সিটি করপোরেশনকে কব্জা করার টার্গেটে। কারণ বিভক্তির সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান মেয়র সাদেক হোসেন খোকাকে আপনাআপনিই বিদায় নিতে হবে। এরপর নতুন করে ভোটার তালিকা তৈরি ও সীমানা নির্ধারণসহ নানা জটিলতায় দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হলে সরকার নিয়োজিত দলীয় প্রশাসকরা নগরপিতা হিসেবে কর্তৃত্ব করে যাবেন।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভয়াবহ যানজট, বিদ্যুত্, পানি ও গ্যাস সঙ্কটসহ নানা নাগরিক দুর্ভোগে অতিষ্ঠ নগরবাসী সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ বলে গোয়েন্দা রিপোর্টে সরকার নিশ্চিত হয়েছে। এখনই ডিসিসি নির্বাচন হলে ফল প্রতিকূলে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল বলেও মনে করছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা। বর্তমান অবস্থায় নির্বাচন হলে জয়ী হওয়ার মতো প্রার্থী সঙ্কটও রয়েছে সরকারি দলে। আবার প্রার্থিতা নিয়ে সরকারি দলে জোর লড়াইও বিদ্যমান। ফলে তারা সহসা ডিসিসি নির্বাচনের ঝুঁকি নিতে যেমন চাইছেন না, তেমনি সাদেক হোসেন খোকা মেয়র পদে বহাল থাকুক তাও মানতে নারাজ।
No comments