ইউরিয়ার দাম কমানোর চিন্তা করছে সরকার

ধানের উৎপাদন খরচ কমাতে ইউরিয়া সারের দাম কমানোর চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার। গতকাল সোমবার খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে খাদ্যমন্ত্রী মো. আবদুর রাজ্জাক এ তথ্য জানান।
মন্ত্রী বলেন, ধানের উৎপাদন ব্যয় কমাতে ইউরিয়া সারের দাম কমানোর জন্য সংসদীয় কমিটির প্রস্তাবকে যৌক্তিক বলে মনে করছে মন্ত্রণালয়।এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও বৈঠক করতে হবে। সারের দাম কমিয়ে উৎপাদন খরচ নিয়ন্ত্রণ করা হলেও ধানের দাম কমানো হবে না বলে জানান খাদ্যমন্ত্রী।


জাতীয় সংসদ ভবনে বৈঠকের পর সংসদীয় কমিটি জানিয়েছে, সরকার বোরো ধানের বিক্রিমূল্য মণপ্রতি ৬৫০ টাকা নির্ধারণ করলেও অনেক ক্ষেত্রে মহাজনদের কারণে কৃষকরা ন্যায্য দাম পায় না। কোনো কোনো স্থানে কৃষককে প্রতি মণ বোরো ধান ৪০০ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে করে অনেক ক্ষেত্রে কৃষকদের প্রতি বিঘায় ৫০০ টাকা করে ক্ষতি গুনতে হয়েছে। এ অবস্থায় মন্ত্রণালয় উভয় সংকটে পড়েছে। একদিকে ধানের দাম কমিয়ে দিলে কৃষকরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হবে, অন্যদিকে ধানের দাম বাড়ালে সাধারণ ক্রেতাদের উচ্চমূল্যে চাল কিনতে হবে।
এ পরিস্থিতিতে ধানের উৎপাদন ব্যয় কমাতে ইউরিয়া সারের দাম কমানোর জন্য সংসদীয় কমিটির প্রস্তাব করেছে।
বৈঠক সূত্র জানায়, কমিটির সদস্য মোজাহার আলী প্রধান ধান বিক্রির ক্ষেত্রে কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন। তিনি জানান, তাঁর নির্বাচনী এলাকা জয়পুরহাটে কৃষকরা কম টাকায় ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। মন্ত্রী বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা এখন উভয় সংকটে আছি। ধানের দাম বাড়লেও সমস্যা, কমলেও সমস্যা। আমরা চাই কৃষকও ন্যায্যমূল্য পাক। আর চাল যেন জনগণেরও ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে। এখন দুই দিক সামলাতে হলে সারসহ খাদ্যশস্য উৎপাদনে ব্যবহৃত কৃষি উপকরণের দাম কমানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া বিকল্প পন্থা নেই।'
মন্ত্রী জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কারণে সরকার ইউরিয়া সারের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছে। ২০ টাকা কেজির ইউরিয়া সরকার ৩০-৩৫ টাকা করে কিনছে। তবে লিবিয়ায় যুদ্ধাবস্থার অবসান হলে দাম অনেকটা কমে আসবে।
আবদুর রাজ্জাক আরো বলেন, কৃষিশ্রমিকের মজুরি অনেক বেড়ে গেছে। উৎপাদন খরচ বাড়ার পেছনে এটাও অন্যতম একটি কারণ। একসময় পেটে-ভাতে কৃষিশ্রমিকের মূল্য দেওয়া হতো। এখন দৈনিক ৩০০ টাকার নিচে কোনো শ্রমিকদের মজুরি নেই। এ টাকা দিয়ে এখন সাত-আট কেজি চাল পাওয়া যায়। বিএনপির আমলেও কৃষিশ্রমিকরা যে পরিমাণ মজুরি পেত, তা দিয়ে চার কেজির বেশি চাল পাওয়া যেত না।
বৈঠকে জানানো হয়েছে, এবার রেকর্ড ১৫ লাখ টন খাদ্য মজুদ রয়েছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এবার মজুদ দ্বিগুণেরও বেশি।
এ বিষয়ে সংসদীয় কমিটির সভাপতি ছায়েদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, খাদ্য মজুদের পরিমাণ সন্তোষজনক। পাইপলাইনে আরো চার লাখ টন গম আসছে।
কমিটির সভাপতি আরো জানান, খাদ্যগুদামেরও সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে ১৪০টি গুদামের মধ্যে ১২২টি গুদামের নির্মাণকাজ শেষ করা হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ হবে। ফলে খাদ্য সংরক্ষণেও কোনো সমস্যা থাকবে না।

No comments

Powered by Blogger.