দায়সারাভাবে চলছে জাতীয় যুব হকি by ইফতেখার রাজিব
প্রায় পাঁচ বছরের অপেক্ষা শেষ। শুরু হয়েছে বহুল প্রতীক্ষিত জাতীয় যুব হকি চ্যাম্পিয়নশিপের আসর। এই আসরকে ঘিরে এখন তাই মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামে সাজসাজ রব। ২২টি দলকে নিয়ে শুরু হয়েছিল আসর। গ্রুপ পর্ব শেষে এখন চলছে সুপার এইটের লড়াই। স্টেডিয়ামে ঢোকার আগেই বোঝা যায়, ভেতরে একটা বিশেষ কিছু হচ্ছে। উৎসবের একটা আবহ তৈরি করতে স্টেডিয়ামের বাইরের দিকটা সাজানো নানা রঙের রঙিন কাগজে। ময়লার গাদ পড়ে কালো হয়ে যাওয়া টার্ফও এখন ঝকঝকে-তকতকে। সকাল, দুপুর ও বিকেল_এমন রুটিনে প্রতিদিন খেলা হচ্ছে তিনটি করে।
হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু সাউথ ইস্ট ব্যাংক হকির এই আসরের বলতে গেলে সবই হচ্ছে খুব দায়সারাভাবে। সে কারণে অভিযোগেরও অন্ত নেই আসরে অংশ নিতে আসা খেলোয়াড়দের।চিরচেনা রং হারিয়ে কিছু দিন আগেও বিবর্ণ ছিল কোটি টাকা মূল্যের অ্যাস্ট্রোটার্ফ। সেটা আবার ঠিকঠাক করা হয়েছে। এই আসরের মাধ্যমে আবারও হকিকে জাগিয়ে তোলার একটা সুযোগ ছিল। কিন্তু কোনোমতে টুর্নামেন্ট শেষ করতে পারাই যেন এখন একমাত্র উদ্দেশ্য হকি কর্মকর্তাদের। অ্যাথলেটিঙ্ কিংবা জাতীয় হ্যান্ডবলের কোনো আসর হলেও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের হোস্টেলে রাখা হয় খেলোয়াড়দের। কিন্তু জাতীয় যুব হকিতে অংশ নিতে আসা খেলোয়াড়দের রাখা হয়েছে ড্রেসিংরুমে, গাদাগাদি করে। সেখানে নেই কোনো খাট কিংবা চৌকির ব্যবস্থা। মেঝেতে গাদাগাদি করেই ঘুমাতে হচ্ছে একসঙ্গে অনেক খেলোয়াড়কে। দিনাজপুরের হয়ে খেলতে আসা মনসুর আহমেদের কণ্ঠে তাই ক্ষোভের আগুন, 'এক রুমের মধ্যেই গাদাগাদি করে আমাদের ১৮ জনকে থাকতে হচ্ছে। টুর্নামেন্ট যখন শুরু হয় তখন তো আরো বেশি খেলোয়াড়কে একসঙ্গে থাকতে হয়েছিল। অথচ সবার জন্য মাত্র দুটো টয়লেট কাম বাথরুম। এর মধ্যে একটা আবার ব্যবহারের অনুপযুক্ত। প্রায় সময় পানিও থাকে না। সব কিছু মিলিয়ে আপনিই একটু অনুমান করুন আমরা কী অবস্থার মধ্যে আছি।' যেই ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড়দের রাখা হয়েছে সেটি আবার শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়নি কোনো কম্বল। ডেকোরেশনের একটি লম্বা চাদর গায়ে দিতে হচ্ছে একসঙ্গে ১৮ জনকে। দিনাজপুরের আরেক খেলোয়াড় হারুনুর রশিদ মনে করেন হকি খেলোয়াড় বলেই তাঁরা এত অবহেলিত, 'আজ যদি আমরা ফুটবল কিংবা ক্রিকেট খেলতাম তাহলে আমাদের এভাবে থাকতে হতো না। হকি খেলি বলেই আমাদের কোনো সম্মান নেই।' জাতীয় যুব হকির টুর্নামেন্ট কমিটির সেক্রেটারি হাসান উদ্দিন খান শিমুলের অবশ্য ভিন্নমত, 'এই টুর্নামেন্টের আগে আমরা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সঙ্গে আলোচনা করেছিলাম হোস্টেলের জন্য। কিন্তু তারা আমাদের হোস্টেল দিতে রাজি হয়নি। তাই একরকম বাধ্য হয়েই খেলোয়াড়দের ড্রেসিংরুমে রাখতে হচ্ছে।'
খেলোয়াড়দের শুধু যে থাকার সমস্যা তা তো নয়। প্রতিদিন সকাল, দুপুর ও বিকেল মিলিয়ে খেলা হচ্ছে তিনটি করে। অথচ টার্ফে পানি দেওয়া হচ্ছে শুধু সকালেই। তাতে প্রথম খেলার পরই টার্ফ শুকিয়ে যায়। সেই অবস্থায় খেলোয়াড়দের স্বাভাবিক খেলাটাও কঠিন হয়ে যায়, অন্যদিকে ইনজুরিতে পড়ার আশঙ্কাও বাড়ে। কিন্তু সেদিকে খেয়াল করার সময়ই নেই হকি কর্মকর্তাদের। সবাই ব্যস্ত যাঁর যাঁর কর্মস্থলে। এসব দেখে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় দলের এক খেলোয়াড় ভীষণ ক্ষুব্ধ, ক্ষোভটা তিনি প্রকাশ করলেন এভাবে, 'এখন তো কেউ হকি খেলতেই চায় না। যারা আসছে সুযোগ-সুবিধা না পেয়ে তারাও বাধ্য হচ্ছে অন্য খেলায় চলে যেতে। এই টুর্নামেন্টটা হতে পারত ভবিষ্যতের খেলোয়াড় বের করে আনার দারুণ এক সুযোগ। কিন্তু এমন শুকনো টার্ফে খেললে তো ভালো খেলা দেখিয়ে নজরে পড়া দূরের কথা, খেলোয়াড়রা উল্টো বড় ধরনের ইনজুরিতে পড়ে ক্যারিয়ারে আগেভাগে ইতি টানতে বাধ্য হতে পারে। ক্যারিয়ার ভালোভাবে শুরুর আগেই শেষ করার ঝুঁকি নিতে কে চাইবে বলুন?'
একটা সময় ফুটবল-ক্রিকেটের পরই দেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় খেলা ভাবা হতো হকিকে। কিন্তু সময়ের স্রোতে এখন উল্টো পথের যাত্রী বাংলাদেশের হকি। ক্রিকেট ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। খারাপ সময় কিছুটা পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে ফুটবলও। কিন্তু ক্রমে পিছিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের হকি। দেশে পর্যাপ্ত টার্ফ নেই। পৃষ্ঠপোষকতা নেই। টুর্নামেন্ট হয় না নিয়মিত। তাই তো খেলা ছেড়ে দোকানদারি কিংবা অন্য কোনো কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন খেলোয়াড়রা। কেউ কেউ হকি থেকে সরেও যাচ্ছেন। অবশ্য এর মধ্যেও হাতে গোনা কিছু 'ভাগ্যবান' যে নেই তা নয়। তাঁদের কেউ কেউ আবার নামমাত্র পারিশ্রমিকের বিনিময়ে খেলছেন বিদেশের লিগে। তবে ভবিষ্যৎ তারকা হিসেবে যাঁদের ভাবা হচ্ছে তাঁদের অনেকেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন খেলাটি থেকে। মেহেরুজ্জামান রিস্তার অবশ্য আগ্রহটা এখনো আছে, তবে তাঁর আশঙ্কা এমন অসময়ে টুর্নামেন্ট হলে ভবিষ্যতে তাতে অংশ নেওয়া হয়তো অসম্ভব হয়ে পড়বে, 'প্রায় পাঁচ বছর পরে জাতীয় যুব হকি শুরু হয়েছে। কিন্তু এমন সময় টুর্নামেন্টটা শুরু হয়েছে যখন অনেকেরই পরীক্ষা চলছে। মা-বাবা বলছেন হকি ছেড়ে দিয়ে পড়াশোনার প্রতি মনোযোগী হতে। ফেডারেশনের আমাদের ব্যাপারটি একটু বোঝা উচিত। এমন সময় আসর আয়োজন করা উচিত যখন কারো কোনো পরীক্ষা না থাকে।'
আরো অনেক কিছুই কিন্তু করা উচিত। যেমন উচিত যাঁদের মাঝে হকির ভবিষ্যৎ খোঁজা হচ্ছে তাঁদের জন্য একটা টুর্নামেন্ট চলার সময় অন্তত মোটামুটি ভালো খাবারের ব্যবস্থা। এবারের যুব হকিতে তেমন ব্যবস্থা আছে বলা যাবে না। খেলোয়াড়রা জানালেন, সকালে রুটি, ভাজি আর একটা ডিম বা কলা; দুপুর ও রাতে ভাত, সবজি মাছ বা মাংস_এই মেন্যু চলছে প্রতিদিন। থাকা-খাওয়ার পরে আসে খেলার কথা। সেখানেও খেলোয়াড়দের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক নয় কিছুই। খেলা পরিচালনার মান নিয়ে অভিযোগ শোনা গেছে অনেকের কাছ থেকেই। তাঁদের মতে, রেফারিদের অনেকেই পক্ষপাতদুষ্ট। আয়োজক কমিটির সবচেয়ে বেশি উদাসীনতা বোধহয় সময়মতো খেলা শুরু করার বিষয়ে। তাই সকাল ১১টার খেলা শুরু হতে দেখা যায় দুপুর ১টায়। তখন দুপুর আর বিকেলের খেলা সময়মতো শুরু করে নির্বিঘ্নে শেষ করার আর উপায় থাকে না। এ বিষয়ে অবশ্য খেলোয়াড়দের বক্তব্যের দরকার নেই। এ লেখা প্রকাশিত হওয়ার দিনে মাঠে গেলেও হয়তো যে কেউ এ অবস্থা দেখতে পাবেন!
খেলোয়াড়দের শুধু যে থাকার সমস্যা তা তো নয়। প্রতিদিন সকাল, দুপুর ও বিকেল মিলিয়ে খেলা হচ্ছে তিনটি করে। অথচ টার্ফে পানি দেওয়া হচ্ছে শুধু সকালেই। তাতে প্রথম খেলার পরই টার্ফ শুকিয়ে যায়। সেই অবস্থায় খেলোয়াড়দের স্বাভাবিক খেলাটাও কঠিন হয়ে যায়, অন্যদিকে ইনজুরিতে পড়ার আশঙ্কাও বাড়ে। কিন্তু সেদিকে খেয়াল করার সময়ই নেই হকি কর্মকর্তাদের। সবাই ব্যস্ত যাঁর যাঁর কর্মস্থলে। এসব দেখে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় দলের এক খেলোয়াড় ভীষণ ক্ষুব্ধ, ক্ষোভটা তিনি প্রকাশ করলেন এভাবে, 'এখন তো কেউ হকি খেলতেই চায় না। যারা আসছে সুযোগ-সুবিধা না পেয়ে তারাও বাধ্য হচ্ছে অন্য খেলায় চলে যেতে। এই টুর্নামেন্টটা হতে পারত ভবিষ্যতের খেলোয়াড় বের করে আনার দারুণ এক সুযোগ। কিন্তু এমন শুকনো টার্ফে খেললে তো ভালো খেলা দেখিয়ে নজরে পড়া দূরের কথা, খেলোয়াড়রা উল্টো বড় ধরনের ইনজুরিতে পড়ে ক্যারিয়ারে আগেভাগে ইতি টানতে বাধ্য হতে পারে। ক্যারিয়ার ভালোভাবে শুরুর আগেই শেষ করার ঝুঁকি নিতে কে চাইবে বলুন?'
একটা সময় ফুটবল-ক্রিকেটের পরই দেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় খেলা ভাবা হতো হকিকে। কিন্তু সময়ের স্রোতে এখন উল্টো পথের যাত্রী বাংলাদেশের হকি। ক্রিকেট ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। খারাপ সময় কিছুটা পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে ফুটবলও। কিন্তু ক্রমে পিছিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের হকি। দেশে পর্যাপ্ত টার্ফ নেই। পৃষ্ঠপোষকতা নেই। টুর্নামেন্ট হয় না নিয়মিত। তাই তো খেলা ছেড়ে দোকানদারি কিংবা অন্য কোনো কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন খেলোয়াড়রা। কেউ কেউ হকি থেকে সরেও যাচ্ছেন। অবশ্য এর মধ্যেও হাতে গোনা কিছু 'ভাগ্যবান' যে নেই তা নয়। তাঁদের কেউ কেউ আবার নামমাত্র পারিশ্রমিকের বিনিময়ে খেলছেন বিদেশের লিগে। তবে ভবিষ্যৎ তারকা হিসেবে যাঁদের ভাবা হচ্ছে তাঁদের অনেকেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন খেলাটি থেকে। মেহেরুজ্জামান রিস্তার অবশ্য আগ্রহটা এখনো আছে, তবে তাঁর আশঙ্কা এমন অসময়ে টুর্নামেন্ট হলে ভবিষ্যতে তাতে অংশ নেওয়া হয়তো অসম্ভব হয়ে পড়বে, 'প্রায় পাঁচ বছর পরে জাতীয় যুব হকি শুরু হয়েছে। কিন্তু এমন সময় টুর্নামেন্টটা শুরু হয়েছে যখন অনেকেরই পরীক্ষা চলছে। মা-বাবা বলছেন হকি ছেড়ে দিয়ে পড়াশোনার প্রতি মনোযোগী হতে। ফেডারেশনের আমাদের ব্যাপারটি একটু বোঝা উচিত। এমন সময় আসর আয়োজন করা উচিত যখন কারো কোনো পরীক্ষা না থাকে।'
আরো অনেক কিছুই কিন্তু করা উচিত। যেমন উচিত যাঁদের মাঝে হকির ভবিষ্যৎ খোঁজা হচ্ছে তাঁদের জন্য একটা টুর্নামেন্ট চলার সময় অন্তত মোটামুটি ভালো খাবারের ব্যবস্থা। এবারের যুব হকিতে তেমন ব্যবস্থা আছে বলা যাবে না। খেলোয়াড়রা জানালেন, সকালে রুটি, ভাজি আর একটা ডিম বা কলা; দুপুর ও রাতে ভাত, সবজি মাছ বা মাংস_এই মেন্যু চলছে প্রতিদিন। থাকা-খাওয়ার পরে আসে খেলার কথা। সেখানেও খেলোয়াড়দের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক নয় কিছুই। খেলা পরিচালনার মান নিয়ে অভিযোগ শোনা গেছে অনেকের কাছ থেকেই। তাঁদের মতে, রেফারিদের অনেকেই পক্ষপাতদুষ্ট। আয়োজক কমিটির সবচেয়ে বেশি উদাসীনতা বোধহয় সময়মতো খেলা শুরু করার বিষয়ে। তাই সকাল ১১টার খেলা শুরু হতে দেখা যায় দুপুর ১টায়। তখন দুপুর আর বিকেলের খেলা সময়মতো শুরু করে নির্বিঘ্নে শেষ করার আর উপায় থাকে না। এ বিষয়ে অবশ্য খেলোয়াড়দের বক্তব্যের দরকার নেই। এ লেখা প্রকাশিত হওয়ার দিনে মাঠে গেলেও হয়তো যে কেউ এ অবস্থা দেখতে পাবেন!
No comments