বড় বাজার লাতিন আমেরিকা by ফখরুল ইসলাম
• গত অর্থবছরে মারকোসারের সদস্যভুক্ত চার দেশে রপ্তানি হয় প্রায় ২১ কোটি ডলারের পণ্য।
• আমদানি হয়েছে ২৩১ কোটি ৮০ লাখ ডলারের পণ্য।
• রপ্তানির ৮৫ শতাংশই হয় ব্রাজিলে।
বাংলাদেশি পণ্যের সম্ভাব্য বড় রপ্তানি গন্তব্যস্থল হিসেবে অনুচ্চারিত এক মহাদেশের নাম লাতিন আমেরিকা। সংগত কারণেই এ তালিকায় মহাদেশটির নাম কারও মুখে আসে না। কারণ, লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি হয় সামান্যই। উল্লেখ করার মতো যে দেশে রপ্তানি কিছুটা হয়, তার নাম হচ্ছে ব্রাজিল। যদিও ব্রাজিলে রপ্তানির তুলনায় দেশটি থেকে বাংলাদেশের আমদানি আট গুণ বেশি।
অথচ লাতিন আমেরিকার প্রায় সব দেশই হতে পারে বাংলাদেশি পণ্য বিশেষ করে তৈরি পোশাকের বড় বাজার। বিশেষজ্ঞ ও রপ্তানিকারকেরা বলছেন, লাতিন আমেরিকাকে বড় বাজার বা রপ্তানি গন্তব্যস্থল করতে গেলে কয়েকটি পক্ষকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। পক্ষগুলো হচ্ছে রপ্তানিকারক; বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দেশগুলোতে থাকা বাংলাদেশি মিশন; লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর সরকার এবং ওই সব দেশের আমদানিকারকেরা।
একটি উদ্যোগ অবশ্য শুরু করেছেন ব্রাজিলে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. জুলফিকার রহমান। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এক চিঠি দিয়ে জানান যে মারকোসারের সঙ্গে বাংলাদেশের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। ব্রাজিলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মহাপরিচালকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তিনি এ ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব পেয়েছেন। মারকোসারের সঙ্গে এফটিএর আলোচনা শুরু করতে তিনি আগ্রহপত্র পাঠানোর অনুরোধ করেন।
মারকোসার হচ্ছে দক্ষিণ আমেরিকার এক বাণিজ্য জোট, যে জোটের গুরুত্বপূর্ণ চার সদস্য আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, উরুগুয়ে ও প্যারাগুয়ে। ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত এ জোটে বলিভিয়া, চিলি, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, গায়ানা, পেরু ও সুরিনাম হচ্ছে সহযোগী সদস্য।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অবশ্য ওই চিঠি পাওয়ার পর থেকে সজাগ হয়েছে এবং ট্যারিফ কমিশনকে দিয়ে একটি সমীক্ষাও করিয়েছে। দুই সপ্তাহ আগে ব্যবসায়ী নেতাসহ আন্তমন্ত্রণালয়ের একটি বৈঠকও করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বৈঠকে উপস্থিত প্রায় সবারই একই মত। আর সেটা হচ্ছে, রপ্তানি পণ্যে বহুমুখিতা যেমন দরকার, আবার রপ্তানি পণ্যের নতুন বাজারও খোঁজা দরকার। এই সময়ে সম্ভাব্য বড় বাজার হতে পারে দক্ষিণ আমেরিকা এবং আপাতত পছন্দের দেশ হতে পারে মারকোসারের গুরুত্বপূর্ণ চার সদস্য।
ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, মারকোসারের চার দেশের জনসংখ্যা ৩০ কোটি, গড় মাথাপিছু আয় ১০ হাজার ডলারের বেশি এবং মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) চার ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। এফটিএ করা গেলে উভয় পক্ষেরই বাণিজ্য বাড়বে, তবে বেশি লাভবান হবে বাংলাদেশ।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে। তবে এফটিএর ব্যাপারটিই তো দ্বিপক্ষীয়। আমরা যেমন সুবিধা নিতে চাইব, অপর পক্ষকেও সুবিধা দিতে হবে। সুতরাং দর-কষাকষি করার সময় খেয়াল রাখতে হবে, আমাদের প্রধান পণ্য যেন ওই পক্ষের নেতিবাচক তালিকায় না ঢুকে পড়ে।’
মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনকার এফটিএ আলোচনায় বাণিজ্যের সঙ্গে বিনিয়োগের বিষয়ও আসে। মারকোসারের সঙ্গে এফটিএ আলোচনার অগ্রগতি হলে আশা করি বিনিয়োগ আলোচনাও বাদ পড়বে না।’
মারকোসারের সঙ্গে এফটিএ করার ব্যাপারে অনুষ্ঠিত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈঠকের কার্যপত্রে বলা হয়েছে, মারকোসারের একটি বিশাল বাণিজ্য অঞ্চল এবং এই অঞ্চলে বাংলাদেশি পণ্যের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু সম্ভাবনা অনুযায়ী রপ্তানির পরিমাণ খুবই কম। কম হওয়ারও কারণ আছে। দেশগুলোতে বাংলাদেশি পণ্য ঢুকতে উচ্চ শুল্ক আরোপ করা আছে। উচ্চ শুল্কের কারণে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি এখন বন্ধ। পাট রপ্তানিও বন্ধের পথে। তবে এফটিএ করে শুল্ক কমানো গেলে বা শূন্য করা গেলে দেশগুলোতে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার অনেক বড় হবে।
ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদন বলছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ মারকোসারের সদস্য চার দেশে ২০ কোটি ৮০ মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে ব্রাজিলেই রপ্তানি হয় ৮৫ শতাংশ অর্থাৎ ১৭ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পণ্য। একই সময়ে দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ ২৩১ কোটি ৮০ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। বাংলাদেশ আমদানি করে চিনি, ভোজ্যতেল, ভুট্টা, গম ও পশুখাদ্য ইত্যাদি। রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে ওষুধ, তামাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য এবং তৈরি পোশাক। এফটিএ হলে উভয় পক্ষের বাণিজ্য বাড়বে ২০ গুণ।
জানা গেছে, বাংলাদেশে এ দেশগুলোর বিনিয়োগের তথ্য ট্যারিফ কমিশন বা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়—কেউই জোগাড় করতে পারেনি। তবে উচ্চ মাথাপিছু আয়ের দেশ হয়েও তাদের দেশে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে কোনো শুল্কমুক্ত বা কোটামুক্ত সুবিধা পাওয়া যায় না। দেশগুলোর সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক কোনো বাণিজ্য চুক্তিও নেই বাংলাদেশের। মারকোসারের দেশগুলো তৈরি পোশাক, জুতা, মাছ ইত্যাদি পণ্যে উচ্চ শুল্ক আরোপ করে।
নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘মারকোসারের সদস্যরা বিশেষ করে ব্রাজিল আমাদের পণ্য রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। সব খরচ মিলিয়ে ব্যয় ৬০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। মারকোসারের সঙ্গে এফটিএ হওয়া খুবই দরকার। কারণ, ব্রাজিল, উরুগুয়ে, প্যারাগুয়ে মিলিয়ে বাজারটা আসলেই অনেক বড়।
শুল্ক সুবিধা পাওয়ায় লাতিন আমেরিকার মধ্যে চিলিতে রপ্তানি বাড়ছে জানিয়ে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে পোশাকশিল্প মালিক টিপু মুনশি দায়িত্ব নেওয়ার পর আমরা এ আশা করতেই পারি যে দক্ষিণ আমেরিকাও হবে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশি পণ্যের অন্যতম বড় রপ্তানি গন্তব্যস্থল।’
মারকোসারের সদস্যদেশগুলোর মধ্যে যেসব দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস ও মিশন রয়েছে, সেসব দেশের রাষ্ট্রদূত ও কমার্শিয়াল কাউন্সিলররা দেশগুলোতে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে কী করেছেন এবং ভবিষ্যতে কী করবেন—এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাগিদ দেওয়া জরুরি বলে মনে করেন মোহাম্মদ হাতেম।
এ বিষয়ে অবশ্য বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে যোগাযোগ করলে বাণিজ্যসচিব মো. মফিজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মারকোসারের সঙ্গে এফটিএ করতে আমরা আগ্রহী। ঢাকায় ব্রাজিল দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে। একটি দলকে মারকোসারের সদস্যদেশগুলোতে পাঠানোর চিন্তা চলছে।’
• আমদানি হয়েছে ২৩১ কোটি ৮০ লাখ ডলারের পণ্য।
• রপ্তানির ৮৫ শতাংশই হয় ব্রাজিলে।
বাংলাদেশি পণ্যের সম্ভাব্য বড় রপ্তানি গন্তব্যস্থল হিসেবে অনুচ্চারিত এক মহাদেশের নাম লাতিন আমেরিকা। সংগত কারণেই এ তালিকায় মহাদেশটির নাম কারও মুখে আসে না। কারণ, লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি হয় সামান্যই। উল্লেখ করার মতো যে দেশে রপ্তানি কিছুটা হয়, তার নাম হচ্ছে ব্রাজিল। যদিও ব্রাজিলে রপ্তানির তুলনায় দেশটি থেকে বাংলাদেশের আমদানি আট গুণ বেশি।
অথচ লাতিন আমেরিকার প্রায় সব দেশই হতে পারে বাংলাদেশি পণ্য বিশেষ করে তৈরি পোশাকের বড় বাজার। বিশেষজ্ঞ ও রপ্তানিকারকেরা বলছেন, লাতিন আমেরিকাকে বড় বাজার বা রপ্তানি গন্তব্যস্থল করতে গেলে কয়েকটি পক্ষকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। পক্ষগুলো হচ্ছে রপ্তানিকারক; বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দেশগুলোতে থাকা বাংলাদেশি মিশন; লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর সরকার এবং ওই সব দেশের আমদানিকারকেরা।
একটি উদ্যোগ অবশ্য শুরু করেছেন ব্রাজিলে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. জুলফিকার রহমান। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এক চিঠি দিয়ে জানান যে মারকোসারের সঙ্গে বাংলাদেশের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। ব্রাজিলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মহাপরিচালকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তিনি এ ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব পেয়েছেন। মারকোসারের সঙ্গে এফটিএর আলোচনা শুরু করতে তিনি আগ্রহপত্র পাঠানোর অনুরোধ করেন।
মারকোসার হচ্ছে দক্ষিণ আমেরিকার এক বাণিজ্য জোট, যে জোটের গুরুত্বপূর্ণ চার সদস্য আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, উরুগুয়ে ও প্যারাগুয়ে। ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত এ জোটে বলিভিয়া, চিলি, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, গায়ানা, পেরু ও সুরিনাম হচ্ছে সহযোগী সদস্য।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অবশ্য ওই চিঠি পাওয়ার পর থেকে সজাগ হয়েছে এবং ট্যারিফ কমিশনকে দিয়ে একটি সমীক্ষাও করিয়েছে। দুই সপ্তাহ আগে ব্যবসায়ী নেতাসহ আন্তমন্ত্রণালয়ের একটি বৈঠকও করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বৈঠকে উপস্থিত প্রায় সবারই একই মত। আর সেটা হচ্ছে, রপ্তানি পণ্যে বহুমুখিতা যেমন দরকার, আবার রপ্তানি পণ্যের নতুন বাজারও খোঁজা দরকার। এই সময়ে সম্ভাব্য বড় বাজার হতে পারে দক্ষিণ আমেরিকা এবং আপাতত পছন্দের দেশ হতে পারে মারকোসারের গুরুত্বপূর্ণ চার সদস্য।
ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, মারকোসারের চার দেশের জনসংখ্যা ৩০ কোটি, গড় মাথাপিছু আয় ১০ হাজার ডলারের বেশি এবং মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) চার ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। এফটিএ করা গেলে উভয় পক্ষেরই বাণিজ্য বাড়বে, তবে বেশি লাভবান হবে বাংলাদেশ।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে। তবে এফটিএর ব্যাপারটিই তো দ্বিপক্ষীয়। আমরা যেমন সুবিধা নিতে চাইব, অপর পক্ষকেও সুবিধা দিতে হবে। সুতরাং দর-কষাকষি করার সময় খেয়াল রাখতে হবে, আমাদের প্রধান পণ্য যেন ওই পক্ষের নেতিবাচক তালিকায় না ঢুকে পড়ে।’
মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনকার এফটিএ আলোচনায় বাণিজ্যের সঙ্গে বিনিয়োগের বিষয়ও আসে। মারকোসারের সঙ্গে এফটিএ আলোচনার অগ্রগতি হলে আশা করি বিনিয়োগ আলোচনাও বাদ পড়বে না।’
মারকোসারের সঙ্গে এফটিএ করার ব্যাপারে অনুষ্ঠিত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈঠকের কার্যপত্রে বলা হয়েছে, মারকোসারের একটি বিশাল বাণিজ্য অঞ্চল এবং এই অঞ্চলে বাংলাদেশি পণ্যের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু সম্ভাবনা অনুযায়ী রপ্তানির পরিমাণ খুবই কম। কম হওয়ারও কারণ আছে। দেশগুলোতে বাংলাদেশি পণ্য ঢুকতে উচ্চ শুল্ক আরোপ করা আছে। উচ্চ শুল্কের কারণে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি এখন বন্ধ। পাট রপ্তানিও বন্ধের পথে। তবে এফটিএ করে শুল্ক কমানো গেলে বা শূন্য করা গেলে দেশগুলোতে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার অনেক বড় হবে।
ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদন বলছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ মারকোসারের সদস্য চার দেশে ২০ কোটি ৮০ মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে ব্রাজিলেই রপ্তানি হয় ৮৫ শতাংশ অর্থাৎ ১৭ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পণ্য। একই সময়ে দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ ২৩১ কোটি ৮০ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। বাংলাদেশ আমদানি করে চিনি, ভোজ্যতেল, ভুট্টা, গম ও পশুখাদ্য ইত্যাদি। রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে ওষুধ, তামাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য এবং তৈরি পোশাক। এফটিএ হলে উভয় পক্ষের বাণিজ্য বাড়বে ২০ গুণ।
জানা গেছে, বাংলাদেশে এ দেশগুলোর বিনিয়োগের তথ্য ট্যারিফ কমিশন বা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়—কেউই জোগাড় করতে পারেনি। তবে উচ্চ মাথাপিছু আয়ের দেশ হয়েও তাদের দেশে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে কোনো শুল্কমুক্ত বা কোটামুক্ত সুবিধা পাওয়া যায় না। দেশগুলোর সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক কোনো বাণিজ্য চুক্তিও নেই বাংলাদেশের। মারকোসারের দেশগুলো তৈরি পোশাক, জুতা, মাছ ইত্যাদি পণ্যে উচ্চ শুল্ক আরোপ করে।
নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘মারকোসারের সদস্যরা বিশেষ করে ব্রাজিল আমাদের পণ্য রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। সব খরচ মিলিয়ে ব্যয় ৬০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। মারকোসারের সঙ্গে এফটিএ হওয়া খুবই দরকার। কারণ, ব্রাজিল, উরুগুয়ে, প্যারাগুয়ে মিলিয়ে বাজারটা আসলেই অনেক বড়।
শুল্ক সুবিধা পাওয়ায় লাতিন আমেরিকার মধ্যে চিলিতে রপ্তানি বাড়ছে জানিয়ে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে পোশাকশিল্প মালিক টিপু মুনশি দায়িত্ব নেওয়ার পর আমরা এ আশা করতেই পারি যে দক্ষিণ আমেরিকাও হবে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশি পণ্যের অন্যতম বড় রপ্তানি গন্তব্যস্থল।’
মারকোসারের সদস্যদেশগুলোর মধ্যে যেসব দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস ও মিশন রয়েছে, সেসব দেশের রাষ্ট্রদূত ও কমার্শিয়াল কাউন্সিলররা দেশগুলোতে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে কী করেছেন এবং ভবিষ্যতে কী করবেন—এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাগিদ দেওয়া জরুরি বলে মনে করেন মোহাম্মদ হাতেম।
এ বিষয়ে অবশ্য বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে যোগাযোগ করলে বাণিজ্যসচিব মো. মফিজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মারকোসারের সঙ্গে এফটিএ করতে আমরা আগ্রহী। ঢাকায় ব্রাজিল দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে। একটি দলকে মারকোসারের সদস্যদেশগুলোতে পাঠানোর চিন্তা চলছে।’
No comments