২৫শে মার্চ গণহত্যা দিবসের বৈশ্বিক স্বীকৃতি চায় ঢাকা
গণহত্যা
বিষয়ক জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত অ্যাদামা দিয়েং মনে করেন- যেকোনো
স্থানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়া বা তার আশঙ্কায় জরুরি ভিত্তিতে প্রতিরোধমূলক
ব্যবস্থা নেয়া উচিত। তা না হলে এর বীভৎস রূপ দেখতে হয় বিশ্বকে। ঘটনার
ব্যাপকতায় তখন আর কিছুই করার থাকে না! মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে যে গণহত্যা
চলছে বিশেষ করে ২০১৭ সালের আগস্টে ভয়াবহতা বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করেছে। তার
বিচার আন্তর্জাতিক আদালতে একদিন না একদিন হবেই- এমন মন্তব্য করে তিনি
বলেন, সেখানে এমন ঘটনা ঘটার আশঙ্কা ব্যক্ত করা হয়েছিল। অ্যালার্ম বেজে ছিল,
কিন্তু সেই সময়ে বিশ্ব সম্প্রদায় ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গণহত্যা থেকে প্রাণে বাঁচতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ব্যক্তিদের রাখাইনে ফেরাতে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়াতে হবে। ৫ দিনের সফরে ঢাকায় আসা জাতিসংঘ দূত রোববার দুপুরে রাজধানীর ইস্কাটনস্থ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিস) মিলনায়তনে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। ‘বাংলাদেশে গণহত্যা: ১৯৭১’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে বিস।
পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে আলোচ্য বিষয়ের ওপর বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য মফিদুল হক। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিস মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম আব্দুর রহমান এনডিসি পিএসসি। সমাপ্তি ভাষণ দেন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফায়েজ আহমদ।
সেমিনারে জাতিসংঘের বিশেষ দূত বলেন, রোহিঙ্গা নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছে, তা বাস্তবায়নে দেশটি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে মিয়ানমারে যথাযথ পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে নিরাপদে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে হবে। আর্মেনিয়া, বাংলাদেশ, রুয়ান্ডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণহত্যার কথা উল্লেখ করে অ্যাদামা দিয়েং বলেন, গণহত্যা আচমকা ঘটে না। এর জন্য দীর্ঘ পরিকল্পনা থাকে। এর পেছনে অনেক সময়ও নেয়া হয়। সে কারণে গণহত্যার মূল কারণ খুঁজে বের করে শুরুতেই এর প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। এক প্রশ্নের জবাবে জাতিসংঘ দূত বলেন, একাত্তরে পাকবাহিনী এখানে যে গণহত্যা চালিয়েছে সে বিষয়টি বাংলাদেশ জাতিসংঘের ফোরামে তুলে ধরতে পারে।
বাংলাদেশে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রাপ্তিতে তিনি কোনো ভূমিকা রাখতে পারেন কি-না? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার এখতিয়ারের মধ্যে নয়। গণহত্যা প্রতিরোধের লক্ষ্যেই তিনি কাজ করেন। সেমিনারে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক ২৫শে মার্চ গণহত্যা দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রদত্ত বাণীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে নৃশংস গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এই গণহত্যার সঙ্গে যারা জড়িত ছিল তাদের নিয়ে বিএনপি রাজনীতি করেছে। গণহত্যায় জড়িত দু’জন মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদকে বিএনপি মন্ত্রিসভায় স্থান দিয়েছে। তাদের গাড়িতে পতাকা তুলে দেয়া হয়েছে। এখনো গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের নিয়ে বিএনপি রাজনীতি করছে।
অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য মফিদুল হক বলেন, বাংলাদেশের ১৯৭১ সালের গণহত্যা বিশ্বজুড়ে আলোচিত। এই গণহত্যায় ৩০ লাখ লোক শহীদ হয়েছেন। গণহত্যার বিচারও বাংলাদেশ শুরু করেছে। এই গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য বাংলাদেশ কাজ করছে বলেও তিনি জানান। সেমিনারের উন্মুক্ত আলোচনায় প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার আমির-উল ইসলাম বলেন, ২৫শে মার্চের কালোরাত্রিতে বাংলাদেশে গণহত্যার সূচনা হয়েছে। এই দিনকে সামনে রেখে জাতিসংঘের গণহত্যা বিষয়ক দূতের ঢাকা সফর এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে একটি বড় অর্জন। সফরের জন্য তিনি জাতিসংঘ দূতের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন। সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, আমি পররাষ্ট্র সচিব বা সাবেক আমলা হিসাবে এখানে কথা বলছি না। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে গণহত্যার সাক্ষী হিসাবে এখানে কথা বলছি।
যুদ্ধকালীন গণহত্যার বিভিন্ন ঘটনার জলজ্যান্ত প্রমাণ ও পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, আমি আশা করি একদিন বাংলাদেশের গণহত্যা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাবে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারি তার বক্তৃতায় মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের বিচারের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, রাজনীতি নয়, আমরা দায়মুক্তির জন্য ওই বিচার চেয়েছি। আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছি। এ সময় ফাঁসি এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া জামায়াত নেতাদের নামগুলো উল্লেখ করে বলেন, তাদের বিচারে আমরা খুশি।
প্রধানমন্ত্রীকে জাতিসংঘ দূত যা বললেন- এদিকে বাসস জানিয়েছে, বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানের চালানো গণহত্যার বিষয়টি আন্তর্জাতিক ফোরামে তুলে ধরবে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল এবং প্রিভেনশন অব জেনোসাইড বিষয়ক বিশেষ উপদেষ্টা অ্যাদামা ডিয়েং রোববার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তেজগাঁওয়ের কার্যালয়ে তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে একথা বলেন। তিনি বলেন, যদিও কিছু কিছু দেশ এর বিরোধিতা করবে, তবু আমরা মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশে চালানো পাকিস্তানের গণহত্যার বিষয়টি আন্তর্জাতিক ফোরামে উত্থাপন করবো। বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
এ সময়ে প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ এদেশে যে গণহত্যা শুরু করে তা স্মরণ করে বলেন, ‘পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দোসররা প্রায় ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা এবং দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জত নষ্ট করে।’ এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধে সম্ভ্রমহারা এসব মা-বোনকে পুনর্বাসিত করেন। প্রেস সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী এবং জাতিসংঘ দূত রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়েও আলাপ করেন। মিস্টার দিয়েং এ সময় রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো মিয়ানমারের বর্বরতাকে গণহত্যা হিসেবে আখ্যায়িত করে এ বিষয়ে বাংলাদেশের প্রতি জাতিসংঘের দৃঢ় সহযোহিতার কথা পুনরুল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘গণহত্যা চালানো সেইসব নৃশংসতাকারীকে অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে’। জাতিসংঘ দূত এসময় বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে নিতে দেশটির ওপর চাপ জোরদারের জন্য আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান একা করতে পারবে না। তাই এই সমস্যার সমাধানে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়কে চাপ আরো বাড়াতে হবে। জাতিসংঘ চায় রোহিঙ্গারা তাদের নিজ রাজ্য রাখাইনে পুনর্বাসিত হোক এবং সেখানে শান্তিপূর্ণ ও বৃহত্তর সমাজ গড়ে উঠুক।’ ১০ লাখেরও অধিক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গারা সংখ্যায় কক্সবাজারের স্থানীয় জনগণকেও ছাড়িয়ে গেছে। যে কারণে স্থানীয় জনগণকে খুবই ভোগান্তির স্বীকার হতে হচ্ছে।’
রোহিঙ্গাদের কল্যাণে তাঁর সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার তাদের অস্থায়ী আশ্রয়ের জন্য ভাসানচর নামে একটি দ্বীপের উন্নয়ন ঘটাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা বিষয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ায় আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়কে ধন্যবাদ জানান। সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ ইস্যুতে তিনি বলেন, দেশে দু-একটি এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও সরকার শক্ত হাতে এসব মোকাবিলা করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার শিক্ষক, শিক্ষার্থী, জনপ্রতিনিধি, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন যাতে করে সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদের মত এই সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে ব্যাপক গণসচেতনতা গড়ে ওঠে। প্রেস সচিব জানান, অ্যাদামা ডিয়েং এ সময় বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় তিনজন নারী নেতৃত্বের নাম উল্লেখ করেন। এরা হচ্ছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মারকেল এবং নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা আরডেন।
প্রেস সচিব জানান, জাতিসংঘ দূত প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, আপনি নারীর ক্ষমতায়নের প্রতীক। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) এর মতই সফলভাবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে সক্ষম হবে। নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানে সফররত বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যায়। এ সময় তারা উভয়েই ঘটনার পর নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী গৃহীত পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান এবং সেইভ এন্ড সার্ভ ফাউন্ডেশনের প্রধান উপদেষ্টা সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী এমপি, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান এবং সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গণহত্যা থেকে প্রাণে বাঁচতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ব্যক্তিদের রাখাইনে ফেরাতে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়াতে হবে। ৫ দিনের সফরে ঢাকায় আসা জাতিসংঘ দূত রোববার দুপুরে রাজধানীর ইস্কাটনস্থ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিস) মিলনায়তনে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। ‘বাংলাদেশে গণহত্যা: ১৯৭১’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে বিস।
পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে আলোচ্য বিষয়ের ওপর বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য মফিদুল হক। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিস মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম আব্দুর রহমান এনডিসি পিএসসি। সমাপ্তি ভাষণ দেন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফায়েজ আহমদ।
সেমিনারে জাতিসংঘের বিশেষ দূত বলেন, রোহিঙ্গা নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছে, তা বাস্তবায়নে দেশটি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে মিয়ানমারে যথাযথ পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে নিরাপদে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে হবে। আর্মেনিয়া, বাংলাদেশ, রুয়ান্ডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণহত্যার কথা উল্লেখ করে অ্যাদামা দিয়েং বলেন, গণহত্যা আচমকা ঘটে না। এর জন্য দীর্ঘ পরিকল্পনা থাকে। এর পেছনে অনেক সময়ও নেয়া হয়। সে কারণে গণহত্যার মূল কারণ খুঁজে বের করে শুরুতেই এর প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। এক প্রশ্নের জবাবে জাতিসংঘ দূত বলেন, একাত্তরে পাকবাহিনী এখানে যে গণহত্যা চালিয়েছে সে বিষয়টি বাংলাদেশ জাতিসংঘের ফোরামে তুলে ধরতে পারে।
বাংলাদেশে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রাপ্তিতে তিনি কোনো ভূমিকা রাখতে পারেন কি-না? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার এখতিয়ারের মধ্যে নয়। গণহত্যা প্রতিরোধের লক্ষ্যেই তিনি কাজ করেন। সেমিনারে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক ২৫শে মার্চ গণহত্যা দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রদত্ত বাণীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে নৃশংস গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এই গণহত্যার সঙ্গে যারা জড়িত ছিল তাদের নিয়ে বিএনপি রাজনীতি করেছে। গণহত্যায় জড়িত দু’জন মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদকে বিএনপি মন্ত্রিসভায় স্থান দিয়েছে। তাদের গাড়িতে পতাকা তুলে দেয়া হয়েছে। এখনো গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের নিয়ে বিএনপি রাজনীতি করছে।
অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য মফিদুল হক বলেন, বাংলাদেশের ১৯৭১ সালের গণহত্যা বিশ্বজুড়ে আলোচিত। এই গণহত্যায় ৩০ লাখ লোক শহীদ হয়েছেন। গণহত্যার বিচারও বাংলাদেশ শুরু করেছে। এই গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য বাংলাদেশ কাজ করছে বলেও তিনি জানান। সেমিনারের উন্মুক্ত আলোচনায় প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার আমির-উল ইসলাম বলেন, ২৫শে মার্চের কালোরাত্রিতে বাংলাদেশে গণহত্যার সূচনা হয়েছে। এই দিনকে সামনে রেখে জাতিসংঘের গণহত্যা বিষয়ক দূতের ঢাকা সফর এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে একটি বড় অর্জন। সফরের জন্য তিনি জাতিসংঘ দূতের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন। সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, আমি পররাষ্ট্র সচিব বা সাবেক আমলা হিসাবে এখানে কথা বলছি না। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে গণহত্যার সাক্ষী হিসাবে এখানে কথা বলছি।
যুদ্ধকালীন গণহত্যার বিভিন্ন ঘটনার জলজ্যান্ত প্রমাণ ও পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, আমি আশা করি একদিন বাংলাদেশের গণহত্যা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাবে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারি তার বক্তৃতায় মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের বিচারের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, রাজনীতি নয়, আমরা দায়মুক্তির জন্য ওই বিচার চেয়েছি। আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছি। এ সময় ফাঁসি এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া জামায়াত নেতাদের নামগুলো উল্লেখ করে বলেন, তাদের বিচারে আমরা খুশি।
প্রধানমন্ত্রীকে জাতিসংঘ দূত যা বললেন- এদিকে বাসস জানিয়েছে, বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানের চালানো গণহত্যার বিষয়টি আন্তর্জাতিক ফোরামে তুলে ধরবে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল এবং প্রিভেনশন অব জেনোসাইড বিষয়ক বিশেষ উপদেষ্টা অ্যাদামা ডিয়েং রোববার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তেজগাঁওয়ের কার্যালয়ে তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে একথা বলেন। তিনি বলেন, যদিও কিছু কিছু দেশ এর বিরোধিতা করবে, তবু আমরা মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশে চালানো পাকিস্তানের গণহত্যার বিষয়টি আন্তর্জাতিক ফোরামে উত্থাপন করবো। বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
এ সময়ে প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ এদেশে যে গণহত্যা শুরু করে তা স্মরণ করে বলেন, ‘পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দোসররা প্রায় ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা এবং দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জত নষ্ট করে।’ এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধে সম্ভ্রমহারা এসব মা-বোনকে পুনর্বাসিত করেন। প্রেস সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী এবং জাতিসংঘ দূত রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়েও আলাপ করেন। মিস্টার দিয়েং এ সময় রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো মিয়ানমারের বর্বরতাকে গণহত্যা হিসেবে আখ্যায়িত করে এ বিষয়ে বাংলাদেশের প্রতি জাতিসংঘের দৃঢ় সহযোহিতার কথা পুনরুল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘গণহত্যা চালানো সেইসব নৃশংসতাকারীকে অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে’। জাতিসংঘ দূত এসময় বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে নিতে দেশটির ওপর চাপ জোরদারের জন্য আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান একা করতে পারবে না। তাই এই সমস্যার সমাধানে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়কে চাপ আরো বাড়াতে হবে। জাতিসংঘ চায় রোহিঙ্গারা তাদের নিজ রাজ্য রাখাইনে পুনর্বাসিত হোক এবং সেখানে শান্তিপূর্ণ ও বৃহত্তর সমাজ গড়ে উঠুক।’ ১০ লাখেরও অধিক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গারা সংখ্যায় কক্সবাজারের স্থানীয় জনগণকেও ছাড়িয়ে গেছে। যে কারণে স্থানীয় জনগণকে খুবই ভোগান্তির স্বীকার হতে হচ্ছে।’
রোহিঙ্গাদের কল্যাণে তাঁর সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার তাদের অস্থায়ী আশ্রয়ের জন্য ভাসানচর নামে একটি দ্বীপের উন্নয়ন ঘটাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা বিষয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ায় আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়কে ধন্যবাদ জানান। সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ ইস্যুতে তিনি বলেন, দেশে দু-একটি এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও সরকার শক্ত হাতে এসব মোকাবিলা করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার শিক্ষক, শিক্ষার্থী, জনপ্রতিনিধি, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন যাতে করে সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদের মত এই সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে ব্যাপক গণসচেতনতা গড়ে ওঠে। প্রেস সচিব জানান, অ্যাদামা ডিয়েং এ সময় বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় তিনজন নারী নেতৃত্বের নাম উল্লেখ করেন। এরা হচ্ছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মারকেল এবং নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা আরডেন।
প্রেস সচিব জানান, জাতিসংঘ দূত প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, আপনি নারীর ক্ষমতায়নের প্রতীক। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) এর মতই সফলভাবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে সক্ষম হবে। নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানে সফররত বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যায়। এ সময় তারা উভয়েই ঘটনার পর নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী গৃহীত পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান এবং সেইভ এন্ড সার্ভ ফাউন্ডেশনের প্রধান উপদেষ্টা সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী এমপি, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান এবং সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
No comments