ঝালকাঠিতে ডায়রিয়ার প্রকোপ, স্যালাইন সঙ্কট

তীব্র তাপদাহে ঝালকাঠিতে ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত এক সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে ২০-২২ জন করে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছে। এছাড়া জেলার চার উপজেলায় ইনডোর এবং আউটডোরে ৫ শতাধিক রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। আক্রান্তদের বেশির ভাগই শিশু ও বয়স্ক নারী। সেই সঙ্গে আইভি (শিরায় দেয়ার) স্যালাইন ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে সঙ্কট এবং অন্যান্য সরকারি হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত না থাকায় বাড়তি ঝামেলায় পড়েছেন রোগীরা। স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ১ এপ্রিল থেকে ২৪ মে পর্যন্ত ২৭০ জন, ১০ মে থেকে তাপদাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। বুধবার (২৪ মে) বিকেল পর্যন্ত ৩৫ জন ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। নলছিটি, রাজাপুর ও কাঁঠালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে সাতদিনে ৩ শতাধিক ব্যক্তি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া আউটডোর এবং আরও দুইশ লোকের বেশি চিকিৎসা নিয়েছেন। রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, সদর হাসপাতালে আইভি স্যালাইন সঙ্কট থাকায় আমাদের সবকিছুই বাহির থেকে কিনতে হচ্ছে। আমরা এখান থেকে কোনো ওষুধ বিনামূল্যে পাচ্ছি না। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সগুলোতে পর্যাপ্ত আইভি স্যালাইন নেই। সঙ্কট আছে ডায়রিয়ার জন্য দরকারি অন্যান্য ওষুধপত্রেরও। এমনকি শিশুদের স্যালাইন দেয়ার ‘ক্যানোলা’ও বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ। বলা হচ্ছে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কেবল খাবার স্যালাইনই বিতরণ করছে।
ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি পূর্বচাঁদকাঠি গাজীবাড়ি এলাকার ৫ সন্তানের জননী খাদিজা বেগম বলেন, রোববার রাতে অসুস্থ হওয়ার পরে স্বামী আব্দুল মান্নান হাওলাদার হাসপাতালে নিয়ে আসে। হাসপাতালের ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধ, ডাক্তার আসেই না, ওষুধ পাই না ঠিকমতো। কৃষ্ণকাঠি এলাকার কবিরাজ বাড়ি রোড এলাকার অটোচালক সবুর হোসেন বলেন, মেয়ে নিয়ে রাতে আসছি। এখান থেকে কোন ওষুধ দেয় নাই। বাহির থেকে ৪০০ টাকার ওষুধ কিনে এনেছি। ডায়রিয়ার স্যালাইন যদি বাইরে থেকে কিনতে হয়, তাহলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দরকার কী? নলছিটি উপজেলার প্রতাপ এলাকার আলমগীর হোসেন বলেন, আমার মায়ের বুধবার রাত থেকে পাতলা পায়খানা শুরু হয়। বৃহস্পতিবার সকালে তাকে এখানে নিয়ে আসলে এখন পর্যন্ত কোনো চিকিৎসক দেখতে আসেনি। কিন্তু এখানে দায়িত্ব পালনকারী নার্সরা পর্যাপ্ত ওষুধ না থাকায় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে। তারপরেও তারা দায়িত্বে অবহেলা করছে না। শহরতলীর কৃষ্ণকাঠি এলাকার আয়শা তার ৮ মাস বয়সী কন্যা জিন্নাতকে নিয়ে আসেন হাসপাতালে। তারও অভিযোগ স্যালাইন সঙ্কট ও চিকিৎসক না আসা নিয়ে। এছাড়া ৩ দিন পূর্বে ৬ মাস বয়সী শিশু সাব্বির আহমেদকে নিয়ে আসে তার মা খাদিজা বেগম। তিনি জানালেন নোংরা পরিবেশ, চিকিৎসক না আসা, ওষুধ না পাওয়া, বিদুৎ না থাকাসহ নানা সঙ্কটের কথা।
কর্তব্যরত সেবিকা প্রণতি মৃধা বলেন, মে মাসের শুরু থেকেই ডায়রিয়ার রোগী আসছে। তবে কয়েকদিন ধরে এতোবেশি রোগী আসছে যা প্রতিদিন গড়ে ২০-২২ জন ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। আইভি স্যালাইন সঙ্কট থাকায় প্রত্যেক রোগী ভর্তি হওয়ার পরে একটি করে দেয়া হয়। এরপর বাড়তি লাগলে কিনতে হয়। খাবার স্যালাইন পর্যাপ্ত পরিমাণ আছে। চিকিৎসক সঙ্কট থাকায় গুরুতর রোগী হলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক এসে দেখে যান। ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. বদরুদ্দোজা মো. জোবায়ের বলেন, প্রচণ্ড গরমে ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের চাপ বেড়েছে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে, বিশুদ্ধ পানি পান এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খেলে ডায়রিয়া থেকে বাঁচা যায়। প্রাথমিকভাবে পাতলা পায়খানা শুরু হলে বিশুদ্ধ পানি, ডাবের পানি, তরল খাবার, ভাতের মাড়, স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। বেশি অসুস্থ হলে হাসপাতালে এসে ভর্তি হতে হবে। ঝালকাঠির সিভিল সার্জন ডা. শ্যামল কৃষ্ণ হালদার বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে তাপদাহের এই সময়ে ডায়রিয়ার রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি মাসে ২৪০ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। গত ১ সপ্তাহের মধ্যে রোগীর চাপ অনেক বেড়েছে। আইভি স্যালাইন সঙ্কটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তাছাড়া চিকিৎসক সঙ্কট বরাবরই রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.