আত্মসমর্পণের পর কারাগারে শ্যামল কান্তি ভক্ত
নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের আলোচিত প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ঘুষ গ্রহণ মামলায় বুধবার বিকেলে সাড়ে ৪টায় নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অশোক কুমার দত্তের আদালতে শ্যামল কান্তি আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করলে আদালত সেটা নাকচ করে দেন। পরে তাকে কারাগারে নেয়া হয়। গত বছরের ১৩ মে স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের নির্দেশে শ্যামল কান্তি ভক্ত কান ধরে উঠবসের ঘটনা আলোচনায় উঠে আসে। কানধরে উঠবস করার ঘটনায় বর্তমানে জামিনে রয়েছেন সেলিম ওসমান। আদালত সূত্র জানায়, এমপিওভুক্ত করে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে স্কুলের ইংরেজি শিক্ষক মোর্শেদা বেগমের কাছ থেকে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ঘুষ নেয়ার মামলায় বুধবার দুপুর ১২টায় শুনানি শেষে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। জামিনের জন্য বিকাল পৌনে ৪টা হতে আইনজীবীদের সঙ্গে নিয়ে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির হন শ্যামল কান্তি। বিকেল সাড়ে ৪টায় শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আদালত জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক সোহেল আলম জানান, শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। বিকেলে তিনি একই আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এর আগে সকালে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত জানান, একটি প্রভাবশালী মহলকে খুশি করতে পুলিশ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা রিপোর্ট দিয়েছে। কারণ মামলায় যে তারিখ দেয়া হয়েছিল তখন স্কুলে ছুটি চলছিল। ছুটির দিনে আমি কেন স্কুলে যাব আর কেনই বা আমাকে ঘুষ দিবে? মূলত আমি একটি চক্রান্তের শিকার।
প্রভাবশালীরা খুবই তৎপর। তাদের কারণেই আমাকে ভুগতে হচ্ছে। মার খেলাম আবার এখন মিথ্যে মামলাও খেলাম।’ শ্যামল কান্তির আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান জানান, ‘শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে হেয় ও হয়রানি করার জন্যই এ মামলা করা হয়েছে। শ্যামল কান্তি শারীরিকভাবে অসুস্থ তাছাড়া তিনি একজন শিক্ষক। এসব দিক বিবেচনায় তিনি আদালতে জামিন প্রার্থনা করলেও আদালত সেটা না মঞ্জুর করেছেন। আগামী ১৩ জুলাই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। প্রসঙ্গত গত বছরের ১৩ মে শ্যামল কান্তি ভক্তকে কান ধরে উঠবসের ঘটনার দুই মাসের মাথায় ওই বছরের ১৪ জুলাই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, শিক্ষার্থীকে মারধর ও শিক্ষক মোর্শেদাকে এমপিওভুক্ত করে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ঘুষ নেয়ার অভিযোগে তিনটি মামলার আবেদন নারায়ণগঞ্জের আদালতে জমা পড়ে। এর মধ্যে তাৎক্ষণিক দুটি মামলা আদালত খারিজ করে দেয়। তবে এমপিওভুক্ত করে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত স্কুলের ইংরেজি শিক্ষক মোর্শেদা বেগমের কাছ থেকে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগের মামলাটি গ্রহণ করে আদালত। দীর্ঘ তদন্তের পর পুলিশ ৪ জনকে সাক্ষী দেখিয়ে গত (২০১৭ সালের) ১৭ এপ্রিল আদালতে অভিযোগপত্রটি দাখিল করে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০১৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর এমপিওভুক্ত করে দেয়ার জন্য শ্যামল কান্তি ভক্তকে ৩৫ হাজার টাকা ঘুষ দেন ইংরেজি শিক্ষক মোর্শেদা বেগম। এরপর আরো ১ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। পরে আরো ১ লাখ টাকা দেয়া হয়। কিন্তু সে শিক্ষক মোর্শেদা বেগমের এমপিওভুক্তের দরখাস্ত কোনো স্থানেই প্রেরণ করেনি। পরে এমপিওভুক্ত না হওয়ায় ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ফেরত চাইলে তিনি ২০১৬ সালের ১২ মে কোনো টাকা নেননি বলে জানান। এবিষয়ে মোর্শেদা বেগমের অভিযোগের ভিত্তিতে বন্দর সহকারী কমিশনার ভূমি তদন্তও করেছেন।
No comments