উত্তর কোরিয়ার পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র ‘অনিবার্য পথে’
ঊর্ধ্বতন একজন মার্কিন কর্মকর্তা হুশিয়ার করে বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার লাগাম টেনে ধরা না হলে কমিউনিস্ট দেশটি আমেরিকার মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানতে সক্ষম পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র একদিন অনিবার্যভাবেই অর্জন করবে। মার্কিন সিনেটের শুনানিতে মঙ্গলবার এসব কথা বলেছেন তিনি। মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান লে. জেনারেল ভিনসেন্ট স্টুয়ার্ড বলেন, আমেরিকায় আঘাত হানতে সক্ষম পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র অর্জনের পথেই রয়েছে উত্তর কোরিয়া। অবশ্য দেশটি কবে এ ধরনের সক্ষমতা অর্জন করবে সে বিষয়ে কোনো পূর্বাভাস দেয়া অসম্ভব বলেও স্বীকার করেন তিনি। তিনি বলেন, পরমাণু সক্ষমতা অর্জনে উত্তর কোরিয়ার সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ এবং এ ধরনের সক্ষমতা অর্জনের পথে রয়েছে দেশটি। এদিকে মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক ড্যান কোটস বলেন, উত্তর কোরিয়া ক্রমবর্ধমানহারে আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠছে। ক্রমবর্ধমান পরমাণু এবং ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতার জন্য দেশটি এমন হুমকি হয়ে উঠছে বলে জানান তিনি। ২০১২ সালে পিয়ংইয়ং নিজেকে পরমাণু শক্তিধর হিসেবে ঘোষণা করেছে। জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে পরমাণু এবং ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা অব্যাহত রেখেছে উত্তর কোরিয়া। কিম জং উন উন্মাদ -ট্রাম্প : প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পরমাণু অস্ত্র নিয়ে মত্ত থাকা উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উনকে ‘উন্মাদ’ বলেছেন। ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতের্তের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপকালে ট্রাম্প উনকে উন্মাদ বলেন। ট্রাম্প ও দুতের্তের ফোনালাপ নিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যমে মঙ্গলবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়। খবর এএফপির। হোয়াইট হাউস জানায়, ট্রাম্প ও দুতের্তের মধ্যে ২৯ এপ্রিলের ফোনালাপ অনেক বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল।
এদিকে এ কথোপকথনের মাত্র কয়েক দিন পর ট্রাম্প প্রকাশ্যে বলেন, কিমের সঙ্গে সাক্ষাত করতে পারলে তিনি ‘গর্বিত’ হবেন। কিন্তু ওই টেলিফোন আলাপে ট্রাম্প কোরীয় উপদ্বীপে উত্তেজনা নাটকীয় মোড় নিতে পারে বলেও আভাস দেন। গত মাসে পেন্টাগণ দুটি পরমাণু ডুবোজাহাজ কোরীয় উপদ্বীপে পাঠিয়েছে উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, ‘পরমাণু অস্ত্র নিয়ে মত্ত থাকা এক পাগলের কর্মকাণ্ড আমরা মেনে নিতে পারি না। আমাদের কাছে তার চেয়ে প্রায় ২০ গুণ বেশি শক্তিশালী অস্ত্র থাকলেও আমরা তা ব্যবহার করতে চাই না। কোরীয় উপদ্বীপের সমস্যা সমাধানে চীনের সক্ষমতার কথা উল্লেখ করে ট্রাম্প শি জিনপিংয়ের ওপর চাপ দিতে দুতের্তের প্রতি আহ্বান জানান। ট্রাম্প বলেন, আমি আশা করি চীন এ সমস্যার সমাধান করতে পারবে। সত্যিকার অর্থে চীনই পারবে কারণ উত্তর কোরিয়া পরমাণু সংক্রান্ত অনেক সহায়তা বেইজিংয়ের কাছ থেকেই পেয়েছে। এদিকে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে আগেভাগে কোনো ধরনের হামলা না করার জন্য রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সতর্ক করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেট দল। দলটির অন্তত ৬৪ জন আইনপ্রণেতা মঙ্গলবার এক চিঠিতে যুদ্ধের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ট্রাম্পকে বলেছেন, ‘যেকোনো হামলার আগে বিষয়টিতে কংগ্রেস থেকে অনুমোদন নিতে হবে। উত্তর কোরিয়ার মতো পরমাণু শক্তিধর দেশের বিরুদ্ধে যেকোনো হামলা শুরুর আগে কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্তের প্রয়োজন রয়েছে।’ চিঠিতে ডেমোক্রেট সদস্যরা বলেছেন, ‘এমন গোলযোগপূর্ণ এলাকায় অসঙ্গতিপূর্ণ কিংবা আকস্মিক গ্রহণ করা কোনো নীতি কল্পনাতীত যুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি করবে।’ এর বিপরীতে ডেমোক্রেট দলের সদস্যরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসনকে এমন কিছু পরিকল্পনা উপস্থাপন করার অনুরোধ করেছেন, যার ভিত্তিতে পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে আলোচনা শুরু করা যায়। নিষেধাজ্ঞা জোরদার করবে জাতিসংঘ : উত্তর কোরিয়ার সর্বশেষ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার জবাবে দেশটির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতিসংঘ। সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ জানায়, এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে সব দেশের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হবে। উত্তর কোরিয়ার সর্বশেষ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পর সোমবার একটি জরুরি বৈঠক করে নিরাপত্তা পরিষদ। সর্বসম্মত এক বিবৃতিতে নিরাপত্তা পরিষদ এ পরীক্ষার তীব্র নিন্দা জানায়। একই সঙ্গে জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞা কমিটিকে গত বছর গৃহীত কঠোর পদক্ষেপকে দ্বিগুণ করার নির্দেশ দেয় পরিষদ। নিরাপত্তা পরিষদ জানায়, উত্তর কোরিয়া এ ধরনের অস্থিতিশীল আচরণের ইতি না টানলে জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞা আরোপের মতো কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে বাধ্য হবে।
No comments