বাংলাদেশ থেকেই এক দিন বিশ্বমানের সাঁতারু উঠে আসবে : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, বাংলাদেশের সাঁতারুরা সঠিক প্রশিক্ষণ এবং অনুশীলনের মাধ্যমে এক দিন বিশ্বমানের প্রতিযোগী হিসেবে গড়ে উঠবে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সদর দফতরের সুইমিংপুল কমপ্লেক্সে বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবং বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘সেরা সাঁতারুর খোঁজে বাংলাদেশ’ শীর্ষক ‘সুইমার ট্যালেন্ট হান্ট’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী ‘সুইমার ট্যালেন্ট হান্ট’ অনুষ্ঠানের চূড়ান্ত রাউন্ডের প্রতিযোগিতা উপভোগ করেন এবং বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন। নদীমাতৃক বাংলাদেশে সাঁতার একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় খেলা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশনের আন্তরিক প্রচেষ্টায় সাঁতার প্রতিযোগিতাও দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। তারই নিদর্শন আজকের এ প্রতিযোগিতায় ক্ষুদে সাঁতারুদের মেধার প্রতিফলন। তার সরকার দেশের ক্রীড়া উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে আমাদের ক্ষুদে সাঁতারুদের, যে নৈপুণ্য দেখলাম তাতে আমি অত্যন্ত আশাবাদী। এখান থেকেই একদিন আমাদের বিশ্বমানের প্রতিযোগী উঠে আসবে।’ তিনি বলেন, এক সময় বাংলাদেশেরই মানুষ ব্রজেন দাস ইংলিশ চ্যানেল পার হয়েছিলেন। কাজেই আমরা যে পারি সেটা আসলে আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি এইটুকু চাই বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের জনগণ বিশ্বসভায় একটা মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হউক। তাই সর্বক্ষেত্রেই আমাদের ছেলে-মেয়েদের যে মেধা আছে সেই মেধা বিকাশের সুযোগ করে দিতে হবে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন বয়সভিত্তিক শ্রেষ্ঠ আটজন ক্রীড়াবিদের প্রত্যেককে খেলাধূলায় আরো উন্নতি সাধনের জন্য পাঁচ লাখ টাকা করে চেক প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে প্রথমবারের মত আয়োজিত ‘সেরা সাঁতারুর খোঁজে বাংলাদেশ’ শীর্ষক সুইমার ট্যালেন্ট হান্ট-এ নতুন প্রজন্মের দক্ষ সাঁতারুদের সমাবেশ ঘটেছে। তিনি বলেন, আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের সাঁতারুরা অংশগ্রহণ করে পদক নিয়ে আসছেন এবং দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে চলেছেন। সম্প্রতি ভারতে অনুষ্ঠিত ১২তম এস এ গেমস-এ মাহফুজা খাতুন সাঁতারে মহিলাদের ১০০ মিটার ও ৫০ মিটার ব্রেস্ট স্ট্রোকে ২টি স্বর্ণ পদক জিতেছেন। এছাড়াও এই গেমস-এ আরও মোট ১৭টি পদক অর্জন করে আমাদের খেলোয়াড়রা বিদেশের মাটিতে দেশের সুনাম বৃদ্ধি করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত বছর অক্টোবর মাসে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত সাউথ এশিয়ান অ্যাকুয়াটিক্স চ্যাম্পিয়নশীপ প্রতিযোগিতায় আমাদের সাঁতারুরা ২টি স্বর্ণ, ২টি রৌপ্যসহ ৯টি পদক পাওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। খেলাধূলার প্রসারে তার সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশের সব উপজেলায় স্টেডিয়াম স্থাপনসহ জেলা পর্যায়ে স্টেডিয়াম উন্নয়ন ও সংস্কার করছি।
এছাড়া বিভাগীয় শহরগুলোতে সুইমিংপুল নির্মাণসহ বিশেষায়িত ও আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম ও ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রতিটি উপজেলায় তাঁর সরকার মিনি স্টেডিয়াম করে দিচ্ছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই যে আমরা তৃণমূল পর্যায় থেকে প্রতিযোগিতাগুলোর আয়োজন করছি তাতে আমাদের খেলাধূলায় উৎকর্ষতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এই উৎকর্ষতা বৃদ্ধির জন্য ছোটবেলা থেকেই প্রশিক্ষণ প্রদান জরুরি। একইসাথে তার সরকার দেশজ খেলাধূলাকে গুরুত্ব দিয়ে সেগুলো চর্চার ও ব্যবস্থা করছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, খেলাধূলার মধ্যদিয়ে আমি মনে করি একদিকে যেমন আমাদের ছেলে-মেয়েরা শারিরীকভাবে সুগঠিত হবে এবং অন্যদিকে মনের দিক থেকে উদার হবে, মানসিক শক্তি পাবে। তাদের ভেতরে আত্মবিশ্বাস জেগে উঠবে। এ সময় লেখাপড়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, লেখাপড়া শিখতে হবে, লেখাপড়ার সাথে সাথে খেলাধূলাকেও আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে থাকি। কাজেই এই খেলাধূলার মধ্য দিয়েই আমাদের শিশুদের মেধা বিকশিত হওয়ার সুযোগ পাবে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর মধ্যে লুক্কায়িত মেধাকে খুঁজে বের করতে তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের প্রতিবন্ধীদের বিভিন্ন সাফল্য তুলে ধরেন। বক্তৃতার শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। তিনি বলেন, নজরুল তরুণ সমাজকে অনাচার, অবিচার এবং কূপম-কতার অন্ধকার ভেদ করে সামনে এগিয়ে যেতে এবং অজেয়কে জয় করতে পথ দেখিয়েছেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী গতরাতে নিউজিল্যান্ডকে ৫ উইকেটে পরাজিত করে বাংলাদেশের ওয়ানডে র্যাংকিং এ ৬ নম্বরে উঠে আসায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় ও সংশ্লিষ্টদের অভিনন্দন জানিয়ে বাংলাদেশ একদিন ক্রিকেটে বিশ্বকাপও জয় করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
No comments