সিয়াচেনে পাকিস্তানের রণপ্রস্তুতি?

কাশ্মীরের বিতর্কিত সিয়াচেন হিমবাহে পাকিস্তান ফের রণপ্রস্তুতি শুরু করেছে বলে ভারত ও পাকিস্তানের গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু এ রণক্ষেত্রে বুধবার থেকে টহল দিচ্ছে পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান। পাক সংবাদমাধ্যম জানায়, সম্প্র্রতি সীমান্তের কাছে ফরওয়ার্ড এয়ার বেস পরিদর্শন করে গিয়েছে পাকিস্তানের বিমানবাহিনী প্রধান সোহেল আমান। স্কার্ডুতে পরিদর্শনে গিয়েছিলেন তিনি। এ সময় তিনি নিজেই একটি মিরেজ জঙ্গিবিমান পরিচালনা করেন। সীমান্তে যুদ্ধ মহড়াকে উৎসাহিত করতেই তিনি সেখানে যান বলে জানা গিয়েছে। আর এ যুদ্ধ প্রস্তুতিতেই সিয়াচেনের ওপর দিয়ে উড়ছে পাক জঙ্গিবিমান। ওই যুদ্ধমহড়া দেখতে বিমানবাহিনী প্রধানের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন পাক বিমানবাহিনীর একাধিক সদস্য। পাকিস্তানি গণমাধ্যমের বরাতে এনডিটিভি জানায়, ভারতের হুমকির জবাবে পাকিস্তানের প্রস্তুতি দেখতেই সোহেলের এ পরিদর্শন। পরে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ভারত কোনো আগ্রাস চালালে যে জবাব দেয়া হবে, তা ভারতের কয়েক প্রজন্ম মনে রাখবে। তিনি বলেন, শত্রুদের কথায় জাতি যেন ভয় না পায়। মঙ্গলবারই পাক সেনা ঘাঁটিতে হামলার দাবি করে ভারতীয় সেনাবাহিনী। তারপর বুধবারই পাকিস্তানজুড়ে জারি হয় বিশেষ তৎপরতা। দেশের সব সেনা ঘাঁটিতে বিশেষ অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। পাক বিমানবাহিনীর দাবি, বেশি ও কম উচ্চতা দিয়ে সিয়াচেনের ওপর ওড়ানো হচ্ছে পাক বিমান। ১৯৮৪ সাল থেকে সিয়াচেন নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত চলছে। এখানে বহু প্রাণহানিও ঘটেছে। ২০০৩ সালে বৈরী দুটি দেশের মধ্যে সিয়াচেন নিয়ে অস্ত্রবিরতি হয়। কয়েক মাস ধরেই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। কিছুদিন আগেই ভারতীয় বিমানবাহিনীর সব সদস্যকে ব্যক্তিগতভাবে চিঠি লিখে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে বলেছিলেন ভারতের বিমানবাহিনী প্রধান বিএস ধানোয়া। এরপর মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলনে মেজর জেনারেল অশোক নারুলা জানান, ভারতের মিসাইলে উড়িয়ে দেয়া হয়েছে একাধিক পাক আর্মি পোস্ট। নারুলা জানান, সীমান্তে পাক সেনার ওপর ‘শাস্তিমূলক আক্রমণ’ করেছে ভারত। নৌসেরা সেক্টরে ভারতীয় সেনার এ অপারেশনে একাধিক পাক আর্মি পোস্ট গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। মেজর জেনারেল বলেন, ‘আমরা চাই কাশ্মীরে শান্তি বজায় থাকুক।
পাকিস্তানি সেনা জঙ্গিদের সমর্থন করে চলেছে সমানে। আর এ জঙ্গিরা ভারতীয় সেনা ঘাঁটিতে হামলা করছে।’ ৯ ও ১০ মে এ হামলা হয়েছে বলে সেনা সূত্রের দাবি। ২৬ মে মোদি সরকারের তৃতীয় বর্ষপূর্তি। তার ঠিক আগে সেনার ভিডিও প্রকাশ্যে এনে দেশজুড়ে ফের জাতীয়তাবাদের ধুয়ো তুলে দিয়েছে মোদি সরকার। কংগ্রেসের মতো বিরোধী দলগুলোও এজন্য সেনা অভিযানকে সমর্থন দিয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেন, ‘সরকার সেনার এ অভিযানে পুরোপুরি জওয়ানদের সঙ্গে রয়েছে। জম্মু-কাশ্মীরে শান্তি বজায় রাখার জন্য এ ধরনের সেনা অভিযান দরকার।’ ভারতীয় সেনার এ দাবি অবশ্য সঙ্গে সঙ্গেই মিথ্যে বলে উড়িয়ে দিয়েছে পাক সেনা। পাক সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল আসিফ গফুর বলেন, ‘ভারতের পাকিস্তানি চৌকি গুঁড়িয়ে দেয়ার দাবি ও সাধারণ মানুষের ওপর পাকিস্তানের গুলি চালানোর অভিযোগ মিথ্যে।’ রাতে পাল্টা একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে পাক সেনা। তাদের দাবি, পাক সেনা নয়, ভিম্বের সেক্টরে স্থানীয় বাসিন্দাদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছিল ভারতীয় সেনা। এতে হতাহত হন কয়েক জন স্থানীয় বাসিন্দা। ফলে নৌসেরায় পাল্টা হামলা চালায় পাক বাহিনী। তাতে বেশ কয়েকজন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছেন। ক্ষতি হয়েছে ভারতের সামরিক পরিকাঠামোরও। তাদের ভিডিওতে সেই পাল্টা হামলারই ছবি দেখানো হয়েছে বলে দাবি পাক সেনার। উপযুক্ত জবাব দেব -পাক সেনাপ্রধান : পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া বলেছেন, যদিও তার দেশ প্রতিবেশী দেশগুলোর সীমান্তে টেকসই শান্তি চায়, তবে সীমান্তের চারটি ফ্রন্টে যেকোনো ধরনের শত্রুতামূলক তৎপরতার উপযুক্ত জবাব দেয়া হবে। রাওয়ালপিন্ডির সেনা সদর দফতরে ৭৫তম ‘অ্যানুয়াল ফরমেশন কমান্ডার্স কনফারেন্সে’ জেনারেল কামার বাজওয়া এসব কথা বলেন বলে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.