যশোরে গুদামে ঢোকেনি এক ছটাক চাল ও ধান
সরকারিভাবে ধান-চাল কেনার মওসুম হলেও যশোরে এক মুঠো ধানও কিনতে পারেনি খাদ্য বিভাগ। তাদের দাবি, এখনো তারা কোন নির্দেশনা পাননি। আর চালের জন্য কোন মিল-মালিকের সাথে চুক্তি করতে পারেনি। গুদামে ঢোকেনি এক ছটাক চাল ও ধান। ফলে সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী চলতি মাসের ২ মে থেকে ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযানের কথা ছিল। যশোরে কবে নাগাদ তা শুরু হবে তাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আগামী ৩১ মে’র মধ্যে মিল-মালিকদের সঙ্গে চুক্তি করতে না পারলে সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার যে দর দিয়েছে তাতে এ মৌসুমে চাল দেওয়া সম্ভব হবে কিনা তাতে সন্দেহ রয়েছে। বর্তমানে বাজারে মোটা চালের দামই ৩৮ টাকা থেকে ৪০ টাকা। আর সরকার দর নির্ধারণ করেছে ৩৪ টাকা। চার থেকে ছয় টাকা লোকসানে চাল দেওয়ার জন্য কোনো মিলার খুঁজে পাওয়া যাবে না। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী গত ২ মে থেকে চাল সংগ্রহ করা কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত মিল-মালিকদের সাথে চুক্তি করা হয়নি। চিঠি দিয়ে চুক্তির বিষয়ে মিল-মালিকদের জানানো হলেও তাদের কোন অগ্রাহ নেই। খাদ্য মন্ত্রী চলতি বোরো মৌসুমে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ৭ লাখ মেট্রিক টন ধান এবং ৮ লাখ মেট্রিক টন চাল সিন্ধান্ত ন্য়ে। আট লাখ মেট্রিক টন চালের মধ্যে ১ লাখ মেট্রিক টন আতপ ও বাকি সব সিন্ধ । চালের দাম ধরা হয় ৩৩ এবং ৩৪ টাকা। এছাড়া ধান প্রতি কেজি ২৪ টাকা দরে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে কেনা ও সিন্ধান্ত হয়। যশোর জেলা খাদ্য অফিসের সূত্রে জানা গেছে, এ জেলায় ধান কোন জন্য কোন চিঠি আসেনি। জেলায় চলতি মৌসুমে ১৩ হাজার ২৯৯ দশ হাজার মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে যশোর সদর উপজেলায় এক হাজার ৭২৫ মেট্রিক টন। ঝিকরগাছায় ৬৭০ মেট্রিক টন।
চৌগাছায় এ হাজার ২৯৭ মেট্রিক টন। বাঘারপাড়ায় এক হাজার ৫০৩ মেট্রিক টন। অভয়নগর তিন হাজার ৭২৫ মেট্রিক টন। মনিরামপুর এক হাজার ৮২ মেট্রিক টন। কেশবপুর উপজেলায় ৪৭৭ মেট্রিক টন। শার্শায় দুই হজিরি ৮২০ মেট্রিক টন চাল কেনার টার্গেট রয়েছে। এ লক্ষে ৩১ মে মধ্যে মিলার বা ব্যবসায়ীদের সাথে চুক্তি সম্পন্ করার কথা থাকলেও ২৫ মে পর্যন্ত সরকার নির্ধারিত দামে জেলার কোন মিলার চাল সরবরাহ করতে সম্মত হননি। অথচ গত বছর চাল সরবরাহের জন্য যশোর জেলার ৩৬৩ জন মিলার চুক্তিবদ্ধ হয়ে ছিল। চাতাল মালিক অতিয়ার রহমান, লাল্টু মিয়া বলেন, জেলার যেসব উপজেলায় মোটা ধান উৎপাদন হয় অনেক জায়গায় তা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। তার ওপর সরকার দর বেঁধে দিয়েছে ৩৪ টাকা। আবার বর্তমান মোটা চাল বাজারে ৩৮ থেকে ৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। কোনো মিল-মালিক চার টাকা থেকে ছয় টাকা কেজি লস করে চাল দেবে কেন বলে তিনি প্রশ্ন রাখেন। এছাড়াও একাধিক মিল-মালিক বলেন, ধানের বাজার চড়া এ অবস্থায় চাল উৎপাদনেই খরচ পড়ছে বেশি। সেখানে মিল-মালিকরা লোকসান গুনে চাল দেবে না। বিষয়টি সমিতির মাধ্যমে খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসারকে বলা হয়েছে। জেলা খাদ্য অফিসের প্রধান সহকারি মাহফুজুর রহমান বলেন, যশোর ধান কোনার জন্য কোন চিঠি আসেনি। শুধু চাল কেনা হবে এবার। তবে এখন পর্যন্ত মিল-মালিকদের সাথে চুক্তি করা হয়নি। আগামী ৩১ মে’র মধ্যে মিল-মালিকদের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ করতে হবে। তা না হলে প্রথম ধাপে চাল সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হবে। চিঠি দিয়ে চুক্তির বিষয়ে মিল-মালিকদের জানানো হয়েছে। অভিযান ব্যর্থ হলে করণীয় বিষয়ে তিনি বলেন, চুক্তি না করার আগে কিছুই বলা যাচ্ছে না।
No comments