ফিল্মি কায়দায় ৩ জঙ্গি ছিনতাই by মতিউল আলম, খালিদ মাসুদ, ও সাইফুল ইসলাম সানি
ফিল্মি স্টাইলে পুলিশের প্রিজন ভ্যান থেকে
সাজাপ্রাপ্ত ৩ জেএমবি সদস্যকে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। ছিনতাইয়ের সাত ঘণ্টার
মাথায় টাঙ্গাইল থেকে জঙ্গি সদস্য রাকিবকে গ্রেপ্তার করা হলেও বাকি দু’জনের
খোঁজ মেলেনি।
এদিকে এ ঘটনার পর সীমান্ত ও দেশের সব
কারাগারে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। দায়িত্বে অবহেলার কারণে এক পুলিশ
কর্মকর্তাকে ক্লোজ ও অন্যজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এদিকে রাতে
গাজীপুর থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ে সহযোগিতার অভিযোগে আটক জাকারিয়ার স্ত্রী
স্বপ্নাকে আটক করেছে পুলিশ।
গতকাল সকাল সোয়া ১০টায় আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে ময়মনসিংহের ত্রিশালে। ছিনতাইকৃত আসামিরা হলো মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সালাউদ্দিন সালেহীন, রাকিব হাসান এবং যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বোমা মিজান। ঘটনার সময় দুর্বৃত্তদের এলোপাতাড়ি গুলি ও বোমার আঘাতে আতিকুর রহমান (৩২) নামে পুলিশের এক কনস্টেবল নিহত ও দুই পুলিশ সদস্য আহত হন। গুলিবিদ্ধ এসআই হাবিবুর রহমান (৫০) ও সোহেল রানাকে (৩০) ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহত আতিকের বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার পণ ঘাগড়া গ্রামে। এ ঘটনার পর পালানোর সময় টাঙ্গাইলের সখিপুর থেকে জাকারিয়া নামের এক জেএমবি’র সদস্যকে অস্ত্র ও ব্যবহৃত গাড়িসহ আটক করে পুলিশ। অপরদিকে দণ্ডপ্রাপ্ত ৩ আসামিকে ছিনতাই করে নিয়ে যওয়ার ৭ ঘণ্টা পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হাফেজ রাকিব হাসানকে টাঙ্গাইলের সখিপুর উপজেলার তক্তারচালা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় পলাতক আসামিদের ধরিয়ে দিতে পুলিশের পক্ষ থেকে দুই লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। আসামিদের কাশিমপুর কারাগার থেকে ময়মনসিংহ কোর্টে নেয়া হচ্ছিল। আসামিদের মধ্যে সালাউদ্দিন সালেহীনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ৪০টিরও বেশি মামলা রয়েছে। এর তিনটি মামলায় তার মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। সালাউদ্দিন সালেহীনের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানায়। অপর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রাকিব হাসানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ৩০টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ১টিতে মৃত্যুদণ্ড ও ১টিতে যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয়। তার বাড়ি জামালপুরে। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি বোমা মিজানের বিরুদ্ধে ১৯টি মামলা রয়েছে। এর একটিতে যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয়। তার বাড়িও জামালপুরের মেলান্দহে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আমীরাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শাহজাহান জানান, সকাল সোয়া দশটার দিকে আমি বাড়ি থেকে বের হয়ে ত্রিশালের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলাম। এ সময় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকায় বিকট শব্দ শুনতে পাই। তখন তাকিয়ে দেখি একটি পুলিশের গাড়িকে সামনে ও পিছন দিয়ে ঘিরে ফেলেছে একটি সাদা ও একটি কালো মাইক্রোবাস। মাইক্রোবাস দু’টি থেকে ১০-১৫জন কালো মুখোশধারী লোক বোমা ফাটিয়ে ও পিস্তল দিয়ে গুলি করে। একপর্যায়ে ৩ আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। আসামিদের নিয়ে গাড়ি দু’টি দ্রুত উত্তর দিক দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ তালুকদার জানান, কাশিমপুর কারাগার থেকে পুলিশের একটি প্রিজন ভ্যান আসামি নিয়ে ময়মনসিংহ কোর্টে যাচ্ছিল। পথে ত্রিশাল উপজেলার সাইনবোর্ড এলাকায় মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কার দিয়ে প্রিজন ভ্যানকে ব্যারিকেড দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি ও বোমা হামলা চালিয়ে দণ্ডপ্রাপ্ত ৩ আসামিকে ছিনতাই করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। এ সময় পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এ সময় তিন পুলিশ গুলিবিদ্ধ হয়। ঘটনাস্থলে বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে আতিক নামে এক পুলিশ কনস্টেবল মারা যায়। গুলিবিদ্ধ এসআই হাবিব ও সোহেল রানাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হতাহত পুলিশ সদস্যরা সবাই কাশিমপুর কারাগারের কনস্টেবল ও উপ-পরিদর্শক (এসআই)। এদিকে ৩ পুলিশকে গুলি করে ৩ আসামি ছিনতাই হলেও অক্ষত রয়েছেন প্রিজনভ্যান চালক সবুজ মিয়া। সবুজ মিয়া জানান, আমার গাড়িটির সামনে একটি ট্রাক আটকে দেয়। ঠিক সে সময় একটি সাদা মাইক্রোবাস সামনে এসে গুলি শুরু করলে আমি গাড়িতে নুয়ে যাই এবং তারা গুলি করে ও বোমা ফাটিয়ে আসামিদের নিয়ে যায়। চোখের পলকে তারা এ ঘটনা ঘটিয়ে চলে যায়। পুলিশের কোর্ট ইন্সপেক্টর শহীদ শুকরানা জানান, দণ্ডপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থানায় ২০০৬ সালের ২৬শে মার্চ একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করা হয়। এই মামলায় ময়মনসিংহ বিশেষ জজ আদালতে হাজিরা দিতে কাশিমপুর কারাগার থেকে ময়মনসিংহ কোর্টে নেয়া হচ্ছিল। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশ ভ্যানের ভেতরে পড়ে আছে আহত পুলিশ সদস্যদের ভাঙা রাইফেল। ভ্যানের পিছনের সিঁড়িতে জমাট বাঁধা রক্ত। গাড়ির সামনের কাচে গুলির চিহ্ন।
যেভাবে ছিনতাই: ভ্যানচালক সবুজ জানান, সকালে কাশিমপুর কারাগার থেকে উল্লিখিত আসামিদের নিয়ে সুবেদার হাবিবুর রহমান ও চালকসহ মোট ৪জন পুলিশ সদস্য ময়মনসিংহ আদালতের উদ্দেশ্যে প্রিজন ভ্যানে (নং-ঢাকা মেট্রো-উ-১১-১৬২৮) রওনা হন। পরে ত্রিশালের সাইনবোর্ড এলাকায় পৌঁছালে সামনে ও পিছন দিক থেকে ২টি মাইক্রোবাসে করে ৭-৮ জন দুর্বৃত্ত এসে অতর্কিতে গুলি ও বোমা হামলা চালাতে থাকে। তারা প্রথমেই চালক ও তার পাশের সিটে বসা সুবেদারকে গুলি ও বোমা নিক্ষেপ করে। এতে চালক লুটিয়ে সিটের পাশে পড়ে যান এবং সুবেদার গুরুতর আহত হন। একই সময় দুর্বৃত্তরা প্রিজন ভ্যানের পিছনের দরজার তালা ভেঙে গুলি ও বোমা হামলা চালায়। কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই দুর্বৃত্তদের গুলি ও বোমার আঘাতে কনস্টেবল আতিকুল লুটিয়ে পড়েন। দুর্বৃত্তরা পুলিশের দু’টি রাইফেল ভেঙে ফেলে। প্রত্যক্ষদর্শী লেগুনা চালক তাইজুল ইসলাম জানান, গুলি ও বোমার শব্দ শুনে বাড়ি থেকে বের হয়ে এক পুলিশ সদস্যের লাশ পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। ঘটনার পর পরই এলাকার বিপুল সংখ্যক উৎসুক জনতা ঘটনাস্থলে জড়ো হন। তাদের অনেকে বলেন, শব্দ শুনে তারা কিছু বোঝার আগেই খুবই স্বল্প সময়ের মধ্যে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে ডিআইজি নুরুজ্জামান, ময়মনসিংহের এসপি মঈনুল হক, ত্রিশাল থানার ওসি ফিরোজ তালুকদার সহ পুলিশ, র্যাব, ডিবি, সিআইডিসহ সংশ্লিষ্টরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।
যেভাবে গ্রেপ্তার রাকিব: পুলিশের প্রিজন ভ্যান থেকে ছিনিয়ে নেয়ার পর টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলায় গ্রেপ্তার হয়েছে জেমএমবির জঙ্গি রাকিব হাসান। দুপুর আড়াইটার দিকে তাকে গ্রেপ্তার করে সখীপুর থানা পুলিশ। সখীপুরের তক্তারচালা গ্রাম থেকে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে পালিয়ে যাওয়ার সময় গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। সদ্য শেভ করা মুখ ও হাতে-পায়ে ডাণ্ডাবেড়ির দাগ দেখে তাকে সন্দেহ করে পুলিশ। তক্তারচালা নামে ওই গ্রামটি সখীপুর ও মির্জাপুর থানার মাঝামাঝি জায়গায়। মির্জাপুর থানা পুলিশ জানায়, সকালে ময়মনসিংহের ত্রিশালে পুলিশের প্রিজন ভ্যান থেকে জঙ্গি মামলার তিন আসামি ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনার খবর পাওয়ার পর থেকেই পুলিশ আশপাশের বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালায়। সখীপুর ও মির্জাপুরের মাঝামাঝি হওয়ায় তক্তারচালা গ্রামে পুলিশ চেকপোস্ট বসায়। ওই এলাকা দিয়ে যাওয়া সব গাড়িতে তল্লাশি চালাতে থাকে পুলিশ। বেলা ২টার দিকে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে যাচ্ছিল রাকিব হাসান। তার সঙ্গে ছিল রাসেল নামে আরও এক যুবক। তল্লাশি চালানোর সময় এসআই শ্যামল দত্তের সন্দেহ হয় রাকিবকে দেখে। কারণ তার মুখ ছিল সদ্য শেভ করা। প্রিজনভ্যান থেকে পালানোর পরই দাড়ি কামিয়েছিল রাকিব। কিন্তু সময় কম থাকায় সম্ভবত দাড়ি কাটতে গিয়ে তার গাল কয়েক জায়গায় কেটে যায়। এ ছাড়া তার থুতনির নিচে অল্প কিছু দাড়ি ছিল। এই দাড়ি দেখে সন্দেহ হওয়ায় রাকিব হাসানকে আরও ভাল করে তল্লাশি করে পুলিশ। এ সময় রাকিব হাসানের হাতে ও পায়ে ডাণ্ডাবেড়ির দাগ দেখতে পান পুলিশ সদস্যরা। রাকিবের পায়ে নতুন স্যান্ডেলও ছিল। সেখান থেকে আটক করে সখীপুর থানায় নিয়ে যাওয়ার পরে রাকিব হাসান তার পরিচয় গোপন করার চেষ্টা করেন। জানায়, তার নাম রাসেল। পুলিশকে সে বারবার বলতে থাকে সে রাকিব হাসান নয়। তবে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে নিশ্চিত হয় সে-ই রাকিব। এর আগে জেএমবির তিন আসামি সালাউদ্দিন সালেহীন, বোমা মিজান ও রাকিব হাসানকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় সখীপুর প্রশিকা এলাকা থেকে তাদের সহযোগী জাকারিয়া (২৫)-কে গাড়িসহ আটক করে সখীপুর থানা পুলিশ। জাকারিয়া চাঁপাই নবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর থানার জিনারপুর গ্রামের আজহারুল ইসলামের ছেলে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সকাল ১১টার দিকে কালো রঙের ভক্সি মাইক্রোবাসটি (ঢাকা মেট্রো-চ ১১-৬০৪৮) সাগরদীঘি-সখীপুর সড়কে ফিল্মি স্টাইলে ভাঙচুর করে পালানোর চেষ্টা করে। এ সময় সখীপুর থানার সামনে পৌঁছলে পুলিশ ও জনতা গাড়িটির গতিরোধ করতে ব্যর্থ হয়। পরে পুলিশ ও জনতা গাড়িটির পিছু নেয়। অবস্থার বেগতিক দেখে ঢাকা-সখীপুর সড়কের প্রশিকা এলাকায় গাড়িটি রেখে আসামিরা পালিয়ে যায়। এ সময় স্থানীয় জনতা গাড়ির চালক জাকারিয়া (২৫)-কে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। পুলিশ এসময় গাড়ি থেকে দুই রাউন্ড গুলি, একটি পিস্তল, ৪টি মোবাইল ফোন সেট ও রড কাটারসহ বেশ কয়েকটি তাজা বোমা উদ্ধার করে।
দু’লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা
বাংলাদেশ পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান ঘটনাস্থল ত্রিশালের সাইনবোর্ড এলাকা পরিদর্শন করেন। পরে ডিআইজি হতাহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের জানান, আসামিদের গ্রেপ্তার করতে র্যাব-পুলিশসহ কয়েকটি টিম মাঠে তৎপর রয়েছে। ইতিমধ্যে এ ঘটনায় ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুখকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেএমবির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের নিয়মতান্ত্রিকভাবে পাঠানো হয়েছে কিনা- এ বিষয়টি এবং গাজীপুর ও ময়মনসিংহ জেলা পুলিশকে আগে থেকেই কেন অবহিত করা হয়নি- এ ব্যাপারটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় পুলিশের গাফিলতি রয়েছে কিনা- এ বিষয়টিও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ডিআইজি আরও জানান, নিহত পুলিশ সদস্যকে আইজিপির পক্ষ থেকে এক লাখ টাকা এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে আরও পাঁচ লাখ টাকা অনুদান দেয়া হবে। সে সঙ্গে পলাতক আসামিদের ধরিয়ে দিতে পুলিশের পক্ষ থেকে দু’লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।
সারা দেশে সতর্কতা: ময়মনসিংহের ত্রিশালে পুলিশ হত্যা করে তিন জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় সারা দেশের কারাগারগুলোতে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বিশেষ করে রাজশাহীর কেন্দ্রীয় কারাগারে দণ্ডপ্রাপ্ত শতাধিক জঙ্গি সদস্য থাকায় ওই কারাগারে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের কারাধ্যক্ষ ইসমাইল হোসেন জানান, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে জেএমবির সাজাপ্রাপ্ত শতাধিক নেতাকর্মী রয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কারা অভ্যন্তরে ও আশপাশে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। অতিরিক্ত নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মৃত্যুদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি সদস্যরা রয়েছে। ত্রিশালের এ ঘটনার পর বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। বিশেষ করে জঙ্গিদের সেলে অতিরিক্ত রক্ষী মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে ৩ জেএমবি সদস্য ছিনতাইয়ের ঘটনায় গাজীপুরের জেলা পুলিশ রিজার্ভ ইন্সপেক্টর সাইদুল করিমকে ক্লোজ এবং সুবেদার আবদুুল কাদিরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি: ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রকাশ্যে প্রিজন ভ্যানে গুলি চালিয়ে ও বোমা মেরে জেএমবির ৩ আসামি ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাজিম উদ্দিন চৌধুরীকে প্রধান করে ৪ সদস্যের এ কমিটি করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন ঢাকা রেঞ্জর ডিআইজি এস এম মাহফুজুল হক, ডিআইজি (প্রিজন) টিপু সুলতান ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে উপসচিব (জেল-১) সালমা বেগম। এদিকে ছিনিয়ে নেয়া জঙ্গিদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করে পুলিশ প্রশাসন। ধরিয়ে দিতে পারলে মিলবে জনপ্রতি এক লাখ টাকা।
ছিনতাই হওয়া জঙ্গিরা যত মামলার আসামি
ইকবাল আহমদ সরকার, গাজীপুর থেকে জানান, ফিল্মি কায়দায় পুলিশ মেরে ছিনতাই করা জেএমবি’র তিন সদস্যের মধ্যে গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে ছিলেন রাকিব হাসান ওরফে হাফেজ মাহমুদ ওরফে রাসেল, কারাগারের পার্ট-১-এ সালাউদ্দিন ওরফে সালেহিন সজীব ওরফে তৌহিদ ও কারাগারের পার্ট-২-এ মিজান ওরফে বোমা মিজান ওরফে জাহিদুল হাসান সুমন। জেএমবি’র শূরা সদস্য সালাউদ্দিন ওরফে সালেহীন ওরফে তৌহিদের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানায়। তার পিতার নাম রফিকুল ইসলাম। তিনি ১৩টি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। এর মধ্যে ৩টিতে মৃত্যুদণ্ড হয়েছে তার। বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে তার নামে থাকা ২৪টি মামলা। সালেহীন ওরফে সালাউদ্দিন ওরফে তৌহিদকে ২০০৬ সালের ২৫শে এপ্রিল চট্টগ্রামের সিডিএ এলাকার একটি বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। জেএমবি’র বোমা বিশেষজ্ঞ জাহিদ হোসেন সুমন ওরফে বোমা মিজান ৫টি মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত। এর মধ্যে ১টিতে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত। বর্তমানে তার ২১টি মামলা বিচারাধীন। তার বাড়ি জামালপুর সদরের শেখের ভিটা গ্রামে। বোমা মিজানকে ২০০৯ সালের মে মাসে রাজধানীর মিরপুর পীরেরবাগ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। জেএমবি’র শূরা সদস্য হাফেজ রাকিব হাসান ওরফে মাহমুদ চারটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। এর মধ্যে ১টিতে মৃত্যুদণ্ড, ১টিতে ১৪ বছর ও ১টিতে ৭ বছর কারাদণ্ড হয়েছে। বর্তমানে তার নামে থাকা ২৯টি মামলা বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। রফিক হাসানের পিতার নাম আব্দুস সোবাহান। তার বাড়ি জামালপুর জেলার মেলান্দহ থানার বশিংবাড়ি গ্রামে। ২০০৬ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে।
বোমা মিজানের স্ত্রীরও ৩৭ বছর জেল
২০১২ সালের ৩রা জুন জেএমবির বোমা বিশেষজ্ঞ ও সুইসাইড স্কোয়াডের কমান্ডার জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজান ও তার স্ত্রী হালিমা বেগমের ৩৭ বছর করে কারাদণ্ডের আদেশ দেয় আদালত। একটি অস্ত্র মামলায় ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. আখতারুজ্জামান ওই দিন ১৯ (এ) ধারায় যাবজ্জীবন (৩০ বছর) ও ১৯ (এফ) ধারায় ৭ বছর কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন। রায়ে অবৈধভাবে নিজেদের হেফাজতে অস্ত্র রাখার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় প্রত্যেকের যাবজ্জীবন এবং গুলি রাখার জন্য ৭ বছর করে কারদণ্ড দেয়া হয়।
এদিকে অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ হত্যাচেষ্টা মামলায় আসামি ছিলেন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য রাকিব আল হাসান।
No comments