আর নয় নিস্পৃহতা by আফরিন তানজিলা
সম্প্রতি ধর্ষণ বা গণধর্ষণের খবর দেখতে দেখতে আমরা কেমন যেন অসাড় হয়ে গেছি। একবার কোনো এক নির্যাতিত মেয়ের কাছে গেলে আমরা দেখতে পেতাম, তাদের অতীতের ভয়াবহতায় তারা আমাদের চেয়েও নিঃসাড় হয়ে গেছে। আশপাশের কিছুই আর স্পর্শ করে না ওদের।
কেউ কেউ চুপচাপ বসে থাকে, কেউ মৃগী রোগীর মতো কাঁপে, কেউ বা নিঃশব্দে কেঁদে যায় দিনের পর দিন। ওদের আপনজনরাও তর্জনী জড়ো করেন ঠোঁটের কাছে_ চুপ! যা হয়েছে, হয়েছে। সমাজে চলতে হবে না? এসব জনে জনে বলে বেড়াবে না! কাণ্ড তো ঘটিয়েছ, এখন তা প্রচার করে বেড়াতে হবে না। মেয়েরা গুটিপোকার কুণ্ডলীতে নিজেদের গুটিয়ে নেয়। নিজেদের চরম অচ্ছুৎ মনে হতে থাকে তাদের কাছে। এই চকচকে নষ্ট সমাজে নিজেকে ঝকঝকে না রাখতে পারার দায়ভারে বেঁকে যায় ওদের এককালীন শক্ত মেরুদণ্ড।
কেন এই অন্ধ সামাজিক ট্যাবু-বলয়ের মধ্যে মেয়েরা নিজেদের এভাবে বলি দেবে? কেন ওদেরই শুধু মান বাঁচিয়ে চলতে হবে? কেন অন্যের নোংরামির ভার নিজের কাঁধে নিতে হবে? কেনই-বা অপসান্ত্বনা পেতে হবে? ওরা কি ওই কুকুরগুলো থেকে অনেক কোয়ালিফায়েড বা দেবীতুল্য নয়? ওদের বেপরোয়া ছোঁয়ার অধিকার কেন থাকবে রাস্তার নেড়িদের? আমাদের সমাজে তো ট্যাবু ভালো অর্থেও ব্যবহার হচ্ছে। আমরা শিক্ষকের সম্মানে উঠে দাঁড়াই, বড়দের সামনে হাসি-ঠাট্টা বা জোরে কথা বলি না, আমরা বাবা-চাচাদের দেখলে সিগারেট লুকিয়ে ফেলি, বাবা-মায়ের সঙ্গে অন্য কারও তুলনাও করতে পারি না। অথচ আমরা মেয়েদের বলি, ভাগ্যিস অল্পের জন্য বাঁচলি! এরপর থেকে এমন কিছু করিস না যাতে মানুষ তোর দিকে তাকায়। কী দরকার এত উৎসবে যাওয়ার? নিজেকে সামলে চলতে শেখ। মেয়েদের সীমা অতিক্রম করার কী আছে? কেউ রেপড হলে মেয়েটার ভেতর থেকেই খুঁত বের করি। আমরা সমাজের জঘন্য চরিত্রগুলোর জন্য একটা মেয়েকেই দূষিত করে দেই। মেয়েটার অপমান দ্বিগুণ-তিনগুণ করে দিয়ে সন্তুষ্টির হাসি দেই। সীমার পর সীমা বেঁধে মেয়েটার জীবনের গণ্ডি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর করে দিই। খুব অপরিণত বয়সেই একটা ধারণা গেঁথে দেই_ তুই একটা মেয়ে! যেন এটা ভয়াবহ কোনো অপরাধ।
আমি নিজে দেখেছি যে নানা ধরনের ফান্ড রেইজিং, দান বা প্রতিবাদী কর্মসূচিতে হাজারো মানুষকে একজোট হতে। সাফল্যও এসেছে সেসব কাজে। দেশের ঘটে যাওয়া প্রতিটি ইস্যু নিয়ে কেন আমরা এমন একজোট হই না? কেন প্রতিটা বিষয় অসহ্য পর্যায়ে যাওয়া পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করি? কেন আমরা দিনের খবরের কাগজ থেকে ইস্যু সরে যাওয়া মাত্র কাগজটা গুছিয়ে নিজের কাজে ফিরে যাই? আমরা অপরাধীদের লালন-পালন করে নিজের ঘরে বিপদ টেনে আনছি। বর্তমান থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে আমরা কি ভয়ানক একটা ভবিষ্যতের জন্ম দিচ্ছি না? আমাদের পরের প্রজন্মের মেয়েদের ছেড়ে দিচ্ছি নারীমাংসলোভী একদল হায়েনার কাছে। সেই হায়েনাদের থাবা দিন দিন আমাদেরই প্রশ্রয়ে আরও দৃঢ়, আরও শক্ত হচ্ছে। এখন সময় এসেছে নিজেদের প্রশ্ন করার। আমরা কখন রুখে দাঁড়াব এই পশুদের বিরুদ্ধে? সম্পূর্ণ সিদ্ধান্ত আমাদের। আমরাই পারব সমাজ থেকে পশু নিধন করতে। সে ক্ষেত্রে আমাদের একজোট হওয়া প্রয়োজন। প্রয়োজন খুব শক্ত একটা প্রতিরোধ গড়ে তোলার। প্রয়োজন আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটা নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার। কোটি কোটি মানুষ একসঙ্গে হলে অসাধ্য সাধন করা সম্ভব। আমরা সবাই মিলে কিছু পশুকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারব না?
afrin.tanjila@gmail.com
কেন এই অন্ধ সামাজিক ট্যাবু-বলয়ের মধ্যে মেয়েরা নিজেদের এভাবে বলি দেবে? কেন ওদেরই শুধু মান বাঁচিয়ে চলতে হবে? কেন অন্যের নোংরামির ভার নিজের কাঁধে নিতে হবে? কেনই-বা অপসান্ত্বনা পেতে হবে? ওরা কি ওই কুকুরগুলো থেকে অনেক কোয়ালিফায়েড বা দেবীতুল্য নয়? ওদের বেপরোয়া ছোঁয়ার অধিকার কেন থাকবে রাস্তার নেড়িদের? আমাদের সমাজে তো ট্যাবু ভালো অর্থেও ব্যবহার হচ্ছে। আমরা শিক্ষকের সম্মানে উঠে দাঁড়াই, বড়দের সামনে হাসি-ঠাট্টা বা জোরে কথা বলি না, আমরা বাবা-চাচাদের দেখলে সিগারেট লুকিয়ে ফেলি, বাবা-মায়ের সঙ্গে অন্য কারও তুলনাও করতে পারি না। অথচ আমরা মেয়েদের বলি, ভাগ্যিস অল্পের জন্য বাঁচলি! এরপর থেকে এমন কিছু করিস না যাতে মানুষ তোর দিকে তাকায়। কী দরকার এত উৎসবে যাওয়ার? নিজেকে সামলে চলতে শেখ। মেয়েদের সীমা অতিক্রম করার কী আছে? কেউ রেপড হলে মেয়েটার ভেতর থেকেই খুঁত বের করি। আমরা সমাজের জঘন্য চরিত্রগুলোর জন্য একটা মেয়েকেই দূষিত করে দেই। মেয়েটার অপমান দ্বিগুণ-তিনগুণ করে দিয়ে সন্তুষ্টির হাসি দেই। সীমার পর সীমা বেঁধে মেয়েটার জীবনের গণ্ডি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর করে দিই। খুব অপরিণত বয়সেই একটা ধারণা গেঁথে দেই_ তুই একটা মেয়ে! যেন এটা ভয়াবহ কোনো অপরাধ।
আমি নিজে দেখেছি যে নানা ধরনের ফান্ড রেইজিং, দান বা প্রতিবাদী কর্মসূচিতে হাজারো মানুষকে একজোট হতে। সাফল্যও এসেছে সেসব কাজে। দেশের ঘটে যাওয়া প্রতিটি ইস্যু নিয়ে কেন আমরা এমন একজোট হই না? কেন প্রতিটা বিষয় অসহ্য পর্যায়ে যাওয়া পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করি? কেন আমরা দিনের খবরের কাগজ থেকে ইস্যু সরে যাওয়া মাত্র কাগজটা গুছিয়ে নিজের কাজে ফিরে যাই? আমরা অপরাধীদের লালন-পালন করে নিজের ঘরে বিপদ টেনে আনছি। বর্তমান থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে আমরা কি ভয়ানক একটা ভবিষ্যতের জন্ম দিচ্ছি না? আমাদের পরের প্রজন্মের মেয়েদের ছেড়ে দিচ্ছি নারীমাংসলোভী একদল হায়েনার কাছে। সেই হায়েনাদের থাবা দিন দিন আমাদেরই প্রশ্রয়ে আরও দৃঢ়, আরও শক্ত হচ্ছে। এখন সময় এসেছে নিজেদের প্রশ্ন করার। আমরা কখন রুখে দাঁড়াব এই পশুদের বিরুদ্ধে? সম্পূর্ণ সিদ্ধান্ত আমাদের। আমরাই পারব সমাজ থেকে পশু নিধন করতে। সে ক্ষেত্রে আমাদের একজোট হওয়া প্রয়োজন। প্রয়োজন খুব শক্ত একটা প্রতিরোধ গড়ে তোলার। প্রয়োজন আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটা নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার। কোটি কোটি মানুষ একসঙ্গে হলে অসাধ্য সাধন করা সম্ভব। আমরা সবাই মিলে কিছু পশুকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারব না?
afrin.tanjila@gmail.com
No comments