জামায়াত-শিবির রাজাকার তো বটেই, ধর্ষক এবং চোরও by মুহম্মদ শফিকুর রহমান
বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের মানববন্ধন কর্মসূচী চলছে রাজধানী ঢাকাজুড়ে। তৎপরতা বেশি দেখা গেছে পুরান ঢাকায়। বিশেষ করে জনসন রোডে। তবে ১৮ দলের বলা হলেও মূলত এটি ছিল জামায়াত-শিবিরের কর্মসূচী।
তাদের দেখা গেছে বেশি এবং হাতে ছিল বিচারাধীন যুদ্ধাপরাধী গোলাম-নিজামী, সাকা-সাঈদী, আলিম-জালিমদের ছবিসংবলিত পোস্টার-ব্যানার-ফ্যাস্টুন এবং সেøাগান ছিল সবই জামায়াত-শিবির নেতাদের মুক্তি, যুদ্ধাপরাধী বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক ‘যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল’ ভেঙ্গে দেয়ার এবং গোলাম আযম গংয়ের বিচারের কাঠগড়া থেকে ছিনিয়ে নেয়ার? এই মানববন্ধন যতই বলা হোক কেয়ারটেকার সরকারের দাবিতে, মূলত এর আড়ালে রয়েছে একই ষড়যন্ত্রÑরাজাকার-আলবদরদের ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়া থেকে বের করা বা বিচার কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য চাপ সৃষ্টি করা।‘রাজাকার’ গালিটাতেও তাদের খুব আপত্তি আজ ৪১ বছর পর। সেøাগানও ছিল ধৃষ্টতাপূর্ণ, কোন কোন ক্ষেত্রে বেআদবিও। এই যেমন উধরষু ঝঃধৎ পত্রিকার ১৬ জানুয়ারি সংখ্যার প্রথম পাতায় এভাবে তুলে ধরা হয়েছে যে;
“অষঃযড়ঁময ঃযব ১৮ ঢ়ধৎঃু ধষষরধহপব ভড়ৎসবফ যঁসধহ ধিষষং ুবংঃবৎফধু ফবসধহফরহম ৎবংঃড়ৎধঃরড়হ ড়ভ ঃযব পধৎবঃধশবৎ মড়াবৎহসবহঃ ংুংঃবস, ঔধসধধঃ-ব-ওংষধসর ঁংবফ রঃ ঃড় ারমড়ৎড়ঁংষু ঢ়ৎড়ঃবংঃ ঃযব ড়হমড়রহম ঃৎরধষ ধঃ ঃযব রহঃবৎহধঃরড়হধষ ঃৎরনঁহধষং. ঞধশরহম ঢ়ধৎঃ রহ ঃযব ঢ়ৎড়মৎবসসব, ষবধফবৎং ধহফ ধপঃরারংঃং ড়ভ লধসধধঃ ধহফ রঃং ংঃঁফবহঃ রিহম ওংষধসরব পযধঃৎধ ংযরনরৎ পযধঁঃবফ ংষড়মধহং ধমধরহংঃ ঃযড়ংব যিড় ঃবৎস লধসধধঃ-ংযরনরৎ জধুধশধৎ’- “ঐরঃ ঃযবস রিঃয ংযড়বং রহ জযুঃযস, যিড় ঃবৎস ঔধসধধঃ-ংযরনরৎ জধুধশধৎ.”
অর্থাৎ কেয়ারটেকার সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে ১৮ দলীয় জোটের মানববন্ধন বলা হলেও জামায়াত-শিবির একে ব্যবহার করেছে চলমান যুদ্ধাপরাধ বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে এবং স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে।
এই অপশক্তি ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের মাঝে পাকি হানাদার মিলিটারি জান্তার সহযোগী হয়ে কেবল যে গণহত্যা, গুপ্তহত্যা, নারী ধর্ষণ ও হত্যা, অগ্নিসংযোগ করেছে তা-ই নয়, মানুষের বাড়ি বাড়ি চুরিও করেছে, ডাকাতিও করেছে। অর্থাৎ চোর-ছ্যাঁচড়ও।
মঙ্গলবার মানববন্ধন চলাকালে জনসন রোড অতিক্রম করছিলাম গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্য সদরঘাট লঞ্চ ধরব বলে। জনসন রোডে এক জাগায় আমাকে মানববন্ধন অতিক্রম করতে হলো। আমার গায়ে ছিল মুজিব কোট। হঠাৎ মনে হলো কোটের ডান পকেটটি খুব হালকা লাগছে। এক মিনিট আগেও ভারি ছিল মোবাইল ফোন সেটের কারণে। হাত দিয়ে দেখলাম মোবাইলটি উধাও। মানববন্ধনটি অতিক্রম করার সময় এ কর্মটি ঘটানো হয়েছে, এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।
সদরঘাটে চাঁদপুরের লঞ্চে ওঠে ভাবছিলাম যাদের বাংলাদেশে থাকার কথা ছিল না, থাকলেও হয় কারাগারে নয়ত চোরের মতো। রাজাকার-আলবদর বাপের পাপ যাদের বইবার কথা তারা এখন মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকন্যার নাম নিয়ে আপত্তিকর সেøাগান দেয়ার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে। মনে পড়ে লেখক-গবেষক-অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন তাঁর এক লেখায় বলেছেন, মিলিটারি জিয়াউর রহমান যত ক্ষতি বাংলাদেশের করেছে তা আর কেউ করেনি। অর্থাৎ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কাল রাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর এ মিলিটারি জিয়াই প্রতিবিপ্লবী শক্তির প্রতিনিধি-নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন এবং বাংলাদেশকে আবার পাকি-ধ্যান-ধারণায় নিয়ে যাওয়ার জন্য যা-যা করার সবই করেন। স্ত্রী খালেদা জিয়াও তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলেছেন। তবে এটা ঠিক, রাজাকার-আলবদর জামায়াত-শিবির জিয়াকে ব্যবহার করতে পারেনি, জিয়ার অপর উত্তরসূরি মিলিটারি এরশাদকেও পারেনি, কিন্তু খালেদা জিয়াকে সব দিক দিয়ে ব্যবহার করে চলেছে। আজ ১৮ দলীয় জোটের যে-কোন কর্মসূচীতে তাদেরই নেতৃত্ব দিচ্ছেন ম্যাডাম খালেদা জিয়া।
ইদানীং আবার ১-১১ কুশীলবরা খুব তৎপর দেখা যাচ্ছে। বিগত ১-১১-এর সরকার চলে যাওয়ার পর গত ৪ বছর কোন খবর ছিল না এমন কিছু লোকও মধ্যরাতের টিভি গলাবাজিতে নেমে পড়েছেন। এদের একজন হলেন ব্রিফলেস ব্রিফকেস ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন। এই ভদ্রলোক মুখে আইনের শাসনের কথা বলেন। কিন্তু বিশ্বাস করেন না, গণতন্ত্রের কথা বলেন, কিন্তু বিশ্বাস করেন না। সাংবিধানিক শাসনের কথা বলেন, কিন্তু বিশ্বাস করেন না। তবে হ্যাঁ, তিনি মূলত বক্তৃতা-ব্যারিস্টার। বছরের পর বছর তার তৃতীয় শ্রেণীর বাংলায় লেখা বক্তৃতার রিপোর্ট দৈনিক ইত্তেফাকের ফ্রন্ট পেজে ছেপে ছেপে দেশের সর্বাধিক প্রচারিত ও ক্রাডিবিলিটির দিক দিয়েও সর্বশীর্ষে অবস্থানকারী ‘দৈনিক ইত্তেফাক’ পত্রিকাটিকে শেষ করে দিয়েছে। অথচ এই ইত্তেফাকের চাকরিই এক সময় সিভিল সার্ভিসের চেয়েও লোভনীয় আকর্ষণীয় ছিল। তবে হ্যাঁ, সাম্প্রতিককালে এই জগদ্দল পাথরটি ইত্তেফাকের ওপর থেকে সরে গেছে। এখন পড়েছে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর হাতে। আমরা যারা এক সময় ইত্তেফাকে কাজ (সাংবাদিকতা) করেছি, আমাদের বিশ্বাস আছে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বে ইত্তেফাক আবার ঘুরে দাঁড়াবে। আবার হৃত-ক্রাডিবিলিটি পুনরুদ্ধার করবে। যে কথা বলছিলাম, এই ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনরা ১-১১-এর দিনগুলোতে কি আস্ফালন করছিল এখনও মনে করলে ঘৃণা হয়। স্যুটেড-বুটেড হলেই মানুষ ভদ্র হয় না। তারা তো কেবল বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে এবং খালেদা জিয়াকে এক পাল্লায় ফেলে একইভাবে দুর্নীতিবাজ বলে চিরতরে রাজনীতি থেকে উৎখাত করতে চেয়েছিলেন। তাদের টার্গেট ছিল মূলত শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়া। খালেদা জিয়াকে যোগ করেন কৌশল হিসেবে। কারণ খালেদা জিয়া তো তাদেরই লোক, যদিও বড় কষ্ট বুকে নিয়ে ক্যান্টনমেন্ট থেকে বেরিয়ে যেতে হয়েছে। আমাদের সাংবাদিকতার অন্যতম প্রাণপুরুষ এবিএম মূসা, আমাদের মূসা ভাইকেও দেখছি বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে যেন আদাজল খেয়ে নেমেছেন। মূসা ভাইর মতো ব্যক্তিত্ব সরকারের ভুল-ক্রটির সমালোচনা করবেন এটাই স্বাভাবিক এবং দেশের প্রবীণতম সাংবাদিক হিসেবে এটা মূসা ভাইয়ের দায়িত্বও বটে। কিন্তু মূসা ভাই যখন বলেন, ‘সরকারের যাকেই দেখবেন, বলবেন তুই চোর’ তখন বড় বেমানান মনে হয়। মূসা ভাই যখন বর্তমান সরকারের নজিরবিহীন সাফল্যের মাঝে যেসব ব্যর্থতা আছে সেগুলোর জন্য সরকারপ্রধান হিসেবে শেখ হাসিনাকে দায়ী করেন, করতে পারেন। কিন্তু যখন বলেন, আসন্ন নির্বাচনে বা এখন নির্বাচন হলে বিএনপি জিতবে এবং ক্ষমতায় যাবে, তখন মনে হয় শ্রদ্ধেয় মূসা ভাই আর বঙ্গবন্ধুর সেই প্রিয় আপদ-বিপদ-মুসিবত এই তিনের অন্যতম নেই (বঙ্গবন্ধু, ফয়েজ আহমেদ, আবদুল গাফ্্ফার চৌধুরী ও এবিএম মূসাকে আপদ-বিপদ-মুসিবত বলে ডাকতেন রসিকতা করে) মনে হয় মাইন্ড সেটই পরিবর্তন হয়ে গেছে। মধ্যরাতের গলাজীবীদের মধ্যে আরও কিছু নাম, যারা আবার সুশীল, তাদের নাম না বললেই নয়। যেমন একজন একটি প্রাইভেট ও আরেকজন একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার আসিফ ও পিয়াজ। তারাও কথায় কথায় আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে পরাজিত করছেন, শেখ হাসিনাকে বিরোধী নেতার আসনে পাঠিয়ে আলেদা ম্যাডামকে (?) সিংহাসনে বসাচ্ছেন। তাদের উদ্দেশে আমার ছোট্ট কিছু পরামর্শÑএকটু অপেক্ষা করুন, দেখবেন শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা এখনই খালেদা জিয়ার অনেক ওপরে আছে, আগামী জুনের পর আরও অনেক ওপরে বলে যাবে। এয়ারপোর্ট থেকে হাত-পা ছড়ানো ফ্লাইওভার পেরিয়ে হাতিরঝিলের হিমেল হাওয়া খেতে খেতে যখন সুশীল বাবুরা প্রেসক্লাবের গোলটেবিলে কথা কপচাতে আসবেন বা সুলতানা কামাল সেতু বা কাঁচপুর সেতু থেকে নেমেই শনির আখড়া থেকে আরেক ফ্লাইওভারে উঠে যাত্রাবাড়ী ও সায়দাবাদের অসহনীয় যানজট নিচে ফেলে উড়তে উড়তে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং সেখান থেকে (পরিকল্পনাধীন) বুড়িগঙ্গার ওপর মুক্তিযোদ্ধা সেতু হয়ে কেরানীগঞ্জ চলে যাবে, তখন জনগণও দেখবে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হলেও কেবল এসব উন্নয়ন হয় (খালেদা জিয়ার উন্নয়ন হলো তার ও তার দলের গোয়েবলস নেতাদের মুখে মুখেÑখালেদা জিয়া বক্তৃতা দিতে ওঠলেই বলেন আওয়ামী লীগ কোন উন্নয়ন করেনি, সব উন্নয়ন হয়েছে বিএনপি সরকারের হাতে, কিন্তু কি কি উন্নয়ন হয়েছে নির্দিষ্ট করে বলতে পারেন না। হলে তো পারবেন)। শেখ হাসিনার বিগত সরকারের সময় যেমন বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু হয়েছিল। আজ পদ্মা সেতু নিয়ে চলছে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। কিন্তু যত ষড়যন্ত্রই হোক, পদ্মা সেতু শেখ হাসিনার স্বপ্নের সেতু এবং বাপের বেটি এর সুরাহা করেই ছাড়বেন ইনশাল্লাহ। খালেদা জিয়া জানেন শেখ হাসিনার সময় পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয়ে গেলে তিনি যদি ক্ষমতার আসেনও (এমনটাই ভাবেন, যদিও গাছে কাঁঠাল গোঁপে তেল) করার মতো বড় কাজ যে আর পাবেন না (অর্থাৎ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন)। এমটিতেই শেখ হাসিনা এরই মধ্যে তাঁর বিগত নির্বাচনের ওয়াদা অনুযায়ী সব কাজই প্রায় শেষ করে ফেলেছেন। এই যেমন :
ক. ঘরে ঘরে চাকরি। এক স্বাক্ষারেই ১ লাখ ৪ হাজার চাকরি, খ. ডিজিটাল বাংলাদেশ, গ. খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, ঘ. খাদ্য নিরাপত্তা সৃষ্টি, ঙ. দেশ থেকে বিশেষ করে রংপুর এলাকা থেকে মঙ্গা দূর, চ. প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ড্রপ-আউট সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনা, ছ. বছরের পয়লা দিনই বিনামূল্যের ২৭ কোটি পাঠ্যবই বিতরণ, জ. প্রাথমিক (ক্লাস ফাইভ) ও নিম্ন মাধ্যমিক (ক্লাস এইট) পর্যায়ে পাবলিক পরীক্ষার আয়োজন, ঝ. বিদ্যুত উৎপাদন ও সরবরাহ সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা, ঞ. কিছু কিছু ক্ষেত্রে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেলেও মানুষের আয় বৃদ্ধির তুলনায় তাও সহনীয় পর্যায়ে রয়েছ (একজন কৃষি শ্রমিকও দিনে ন্যূনতম ৩৫০ টাকা রোজগার করে, অর্থাৎ ১০-১২ কেজি ভাল চাল পাচ্ছেন), ট. সমুদ্র বিজয়ের কথা সবার জানা, ঠ. আমাদের ২১ ফেব্রুয়ারি আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ড. খালেদা জিয়ার ছত্রছায়ায় রাজাকার-আলবদররা যত আস্ফালনই করুন, শেখ হাসিনা কিন্তু দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারায় পরিচালনা করে চলেছেন। অনেক ক্ষেত্রে শক্ত ভিতের ওপরও দাঁড় করিয়েছেন, ঢ. বিশেষ করে একাত্তরের খুনী, পাকি-গণহত্যার সহযোগী জামায়াত-শিবিরের রাজাকার-আলবদরদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। গোলাম আযম-নিজামী-মুজাহিদ-সাকা-সাঈদী-মীর কাশেম আলী, আলীম-মোল্লা-কামাল-বাচ্চু রাজাকার গংয়ের বিচার প্রায় শেষ পর্যায়ে। রায় ঘোষণার অপেক্ষায় গোটা জাতি, বিশেষ করে তরুণ সমাজ। কেউ কেউ আসে সুশীল বাবু এবং বাইরের কেউ কেউ এই বিচারে স্বচ্ছতা খোঁজেন। অথচ বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধী বিচারে গঠিত ট্রাইব্যুনাল নুরেমবার্গ বা টোকিও ট্রায়াল থেকেও স্বচ্ছÑএকটা উদাহরণই যথেষ্ট যে, নুরেমবার্গ বা টোকিও ট্রায়ালে আপীলের সুযোগ ছিল না। আমাদের আছে, তারপরও তারা স্বচ্ছতা খোঁজেন। কেউ কেউ আবার, যখন বিচার ত্বরান্বিত করার দাবি ওঠে তখন বলেন, এতে বিচারে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে? তারা ভুলে যান, বিগত নির্বাচনে শেখ হাসিনা তার নির্বাচনী ইশতেহারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার প্রতিশ্রুতি দেন এবং আমরা ভোটাররা বিশেষ করে তরুণ সমাজ এ প্রশ্নে ব্যাপক ভোট দিয়ে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী হিসেবে ক্ষমতায় বসান এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার ম্যান্ডেট দেন। এমনি অনেক উদাহরণ তুলে ধরা যায়, যা একটি নিবন্ধে সম্ভব নয়। মূলত এভাবেই শেখ হাসিনা তার নির্বাচনী ওয়াদাÑঈযধহমব বা পরিবর্তন করে বিশ্বের অন্যতম সফল-সার্থক রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
পক্ষান্তরে খালেদা জিয়া তো নিজেকেই পাল্টাতে পারেননি, জাতীয় রাজনীতির শীর্ষে অবস্থান করেও তিনি যেভাবে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ির জন্য জনসমক্ষে কেঁদেছেন। এরপর আর কি তার নেতৃত্ব থাকে? এখানেই শেখ হাসিনার তুলনায় তিনি অনেক দূরে পড়ে রয়েছেন। তবে হ্যাঁ, শেখ হাসিনা আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারতেন, যদি রাজনীতি থেকে প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্র সংগঠন, এ ক্ষেত্রে শীর্ষে বসানো মানুষগুলো যদি পেছনে না টানতেন কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যালেন্সররা যদি তাঁদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারতেন। তারপরও বলব, জুনের পর আমাদেরও অপেক্ষার পালা শেষ হবে।
ঢাকা, ১৭ জানু. ২০১৩
লেখক : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক।
No comments