পাকিস্তানের রাজনীতিতে অকস্মাৎ জনপ্রিয় কে এই তাহিরুল কাদরি
তাহিরুল কাদরি। পাকিস্তানের রাজনীতিতে
অকস্মাৎ জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এক মুখ। তার সমাবেশে নামছে লাখো মানুষের ঢল। তিনি
পাকিস্তানের গণতন্ত্রের সংস্কার দাবি করছেন। পাকিস্তানের রাজনীতি থেকে
‘ক্রিমিনাল’দের অপসারণ করতে চাইছেন।
ফলে তাকে ঘিরে রহস্যের
জাল বিস্তার করছে। এ বিষয়ে অনলাইন দ্য ইকোনমিস্ট একটি দীর্ঘ প্রতিবেদন
প্রকাশ করেছে। তাতে প্রশ্ন তোলা হয়েছে- তাহিরুল কাদরি কে এবং তিনি কি করেন?
তারচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো- তার পশ্চাতে কে আছেন? এ প্রশ্নগুলো
পাকিস্তানের রাজনীতিকে আন্দোলিত করছে। কিন্তু কোন উত্তর বেরিয়ে আসছে না।
তাহিরুল কাদরি একজন ধর্মীয় নেতা। এর আগে তিনি ছোট মাপের একজন রাজনীতিক
ছিলেন। ২০০৬ সাল থেকে বসবাস করছেন কানাডায়। সেখানে তিনি পেয়েছেন নাগরিকত্ব।
গত মাসে ফিরেছেন দেশে। ফিরেই তিনি রাজনীতির বাতাসকে গরম করে তুলেছেন।
দৃশ্যত, তিনি অঢেল অর্থের মালিক। তার অনুসারী বিপুল। লাহোরে তিনি গত ২৩শে
ডিসেম্বর একটি সমাবেশ করেছেন। পাঞ্জাবের প্রাদেশিক রাজধানী এই লাহোরে তার
সমাবেশে সমবেত হন হাজার হাজার মানুষ। তার দাবি এ সমাবেশে সমবেত হয়েছিল ২০
লাখ মানুষ। এখন তিনি রাজধানী ইসলামাবাদের দিকে যাত্রা করবেন। এ জন্য আজকের
দিনটিকে ধার্য করেছেন। তিনি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, পাকিস্তানকে তিনি
নির্বাচনী স্বৈরতন্ত্র থেকে মুক্ত করতে চান। মাঝেমধ্যেই তিনি মিশরের
ঐতিহাসিক ‘তাহরির স্কোয়ার’-এর প্রসঙ্গ তুলে ধরছেন। তবে তিনি সরকারের পতন
ঘটাতে চান না বলে দাবি করেছেন। কিন্তু মিশরের তাহরির স্কোয়ারের আন্দোলনের
মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছিল একজন একনায়ক হোসনি মুবারককে। কিন্তু
পাকিস্তানে এখন যে সরকার আছে তা গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত। তারা
গ্রীষ্মের আগেই নির্বাচন দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে তাহিরুল কাদরি বলছেন, ওই
নির্বাচনের আগেই নির্বাচনী ব্যবস্থায় সংস্কার আনতে হবে। প্রার্থীদের
যোগ্যতা যাচাই করতে হবে। যাচাই করতে হবে তারা নিয়মিত আয়কর দিয়েছেন কিনা।
সামপ্রতিক এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, সেদেশের শতকরা ৭০ ভাগ পার্লামেন্টারিয়ান
আয়কর দেন না। তাহিরুল কাদরির দাবি, প্রার্থীরা ঋণখেলাপি কিনা তাও যাচাই
করতে হবে। তিনি বলছেন, তিনি যে দাবি করছেন তার সব কিছুই সংবিধানে ও
নির্বাচনী আইনে বিদ্যমান আছে। কিন্তু বাস্তবে তার প্রয়োগ নেই। অভিযোগ উঠেছে
তিনি পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বানচাল করার চেষ্টা করছেন। তবে
তিনি তা অস্বীকার করেন। বলেন, আমি চাই সত্যিকার গণতন্ত্র ফিরে আসুক। যদি
পরিকল্পিত সময়ে নির্বাচন হয় তাহলে এটিই হবে পাকিস্তানে কোন গণতান্ত্রিক
সরকারের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরের ঘটনা। ফলে সেদেশের জন্য এটা
একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ সময়। কারণ, এ দেশটি অর্ধেক সময় শাসন করেছে সামরিক
শাসকরা। এ জন্যই তার হঠাৎ আবির্ভাব নিয়ে নানা রকম কথা শোনা যাচ্ছে।
পাকিস্তানে সব সময়ই বেসামরিক সরকারের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে। তা
করেছে তারা সরাসরি ক্ষমতা দখল করে না হয় বেসামরিক তাদের দোসরদের ক্ষমতা
দখলে উদ্বুদ্ধ করে। যারা বার বার এ পরিস্থিতি দেখেছেন তারা বিশ্বাস করেন
সেনাবাহিনীর সর্বশেষ অবতার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন তাহিরুল কাদরি। অবশ্য এ
বিষয়ে নিরেট প্রমাণ নেই। কিন্তু তার যে ভাবভঙ্গি তা অস্বাভাবিক। শুরুতে
বলতে হয়, তার সংগঠন তাদের আয়ের উৎস বা পরিমাণ জানাতে চায় না। রাজনীতিকে
বিশুদ্ধ করার যে দাবি তিনি তুলেছেন তাকে যৌক্তিক বলা যায়। তবে তিনি বলছেন,
নির্বাচন হতে হবে যথাসময়ে। এখানেই অনেকে তাকে সন্দেহ করছেন। কারণ, তিনি এমন
সব শর্ত সামনে নিয়ে আসছেন যা কখনও পূরণ হবে না। এতে রাজনীতিতে উত্তেজনা
বাড়বে। রাজনীতিবিদদের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে। ওদিকে পাকিস্তানে তত্ত্বাবধায়ক
সরকার গঠনের কথা বলা হচ্ছে। এ সরকার নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে। কিন্তু
সরকার ও বিরোধী দলের রাজনীতিকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, তারপরই ওই নির্বাচন
যাতে না হয় তার জন্য সেনাবাহিনীপন্থি তত্ত্বাবধায়ক সরকার অজুহাত দাঁড় করাতে
পারে। গত কয়েক সপ্তাহে পাকিস্তানের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে বাণিজ্যিক
বিরতির সময়ে প্রচার হচ্ছে তাহিরুল কাদরির বিজ্ঞাপন। সর্বত্রই চোখে পড়ছে তার
প্রচারণার বিলবোর্ড ও পোস্টার। লাহোরে যে সমাবেশ তিনি করেছেন তা অনেক
মূল্যবান। ইসলামাবাদে তিনি আজ যে সমাবেশ ঘটাবেন তাও হবে অনেক খরচের। তার
সংগঠন আজকের এ সমাবেশকে সফল করতে ৫০ হাজার বাস ভাড়া করেছে। তিনি সন্ত্রাস ও
আত্মঘাতী বোমা হামলার বিরোধী। সামরিক বাহিনীর সঙ্গে তার যোগসূত্র আছে।
তিনি তাদের মতো পশ্চিমাদের প্রতি মৌন সম্মতি প্রদর্শন করেন। যুক্তরাষ্ট্র,
বৃটেন ও পশ্চিমা অন্য শক্তিগুলো আফগানিস্তানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য
পাকিস্তানি সেনাদের সহায়তা প্রত্যাশা করে। কিন্তু তার সঙ্গে কোন যোগসূত্র
থাকার কথা অস্বীকার করেছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের
কর্মকর্তারা। কাদরিও এমন যোগসূত্রের কথা অস্বীকার করেছেন।
No comments