দেশ বিক্রির কথা তাঁর মুখে মানায় না আশরাফ- মুক্তিযুদ্ধে যাঁর কোন াবদান নেই, যুদ্ধাপরাধীরা যাঁর সঙ্গী
ভারত সফরকালে কোন গোপন চুক্তির তথ্য জানা থাকলে তা জনসমৰে প্রকাশ করম্নন। বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার অভিযোগের পাল্টা জবাবে তাঁর প্রতি এই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
দলটির অভিযোগ, দেশে বিশেষ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ভারত বিরোধিতা, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের রায় কার্যকরে বাধা সৃষ্টি ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধের তিন টার্গেট পূরণে বিরোধীদলীয় নেত্রী উস্কানিমূলক নির্জলা মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি দেশকে পুরনো সংঘাতের রাজনীতির ফাঁদে ফেলতে চাইছেন।ভারত সফর নিয়ে বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার অভিযোগ খ-নের জন্য সোমবার বিকেলে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলন থেকে এ অভিযোগ করা হয়। বলা হয়, বঙ্গবন্ধু বা আওয়ামী লীগ নয়, ভারতকে বাংলাদেশের নৌপথ, সড়কপথ ও রেলপথ ব্যবহারের সুযোগ দেয়ার অঙ্গীকার করে ১৯৮০ সালে চুক্তি করেন জিয়াউর রহমান। খালেদা জিয়ার সরকারও ২০০৬ সালে অনুরূপ চুক্তি করে। অথচ সাংবাদিক সম্মেলনে খালেদা জিয়া তা বেমালুম চেপে গেছেন।
মিথ্যাচার, সংঘাত, অশানত্মি ও অগণতান্ত্রিক পথ পরিহার করার জন্য বিরোধীদলীয় নেত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, যাঁর (খালেদা জিয়া) স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিন্দুমাত্র অবদান নেই, যিনি যুদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবির-রাজাকার-আলবদরদের নিয়ে জোট করেন, তাঁর মুখে দেশ বিক্রির অভিযোগ ও 'স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের' কথা মানায় না।
এই অশুভ শক্তির ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সতর্ক থাকার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, বেগম জিয়া স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার, আলবদর, হুজি, উলফা এবং শানত্মি, গণতন্ত্র ও উন্নয়ন বিরোধী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ এই অশুভ শক্তির ঐক্যে ভীত নয়।
ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য ও সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, মাহবুবুল-উল-আলম হানিফ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, নুহ-উল-আলম লেনিন, গৃহায়ন প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান, আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, হাবিবুর রহমান সিরাজ, ডা. ঊদিউজ্জামান ডাবস্নু, মৃণাল কানত্মি দাস, অসীম কুমার উকিল, এ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, খালেদা জিয়া সাংবাদিক সম্মেলনের নামে তথ্য সন্ত্রাসের আশ্রয় নিয়েছেন, জনমনে ঘৃণা ও বিদ্বেষ সৃষ্টির জন্য উস্কানিমূলক নির্জলা মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়েছেন। খালেদা জিয়া ও বিএনপি তাদের স্বভাবসুলভ সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, অন্ধ ভারত বিরোধিতা এবং পাকিসত্মানের মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। মৌলিক বিষয় হতে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে ঘোরানোর জন্য চালাকির আশ্রয় নিয়েছেন, অপেৰাকৃত গৌণ বিষয়ে গল্প ফেঁদে বিভ্রানত্মির সৃষ্টির অপচেষ্টা করেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে খালেদা জিয়ার বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগের পৰ থেকে বলা হয়, বঙ্গবন্ধু সরকারই প্রথম শুষ্ক মৌসুমে ৪৪ হাজার কিউসেক পানি আদায় করে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি করেন। জেনারেল জিয়া আরও ৮ হাজার কিউসেক কমে চুক্তি করেন। সাংবাদিক সম্মেলনে খালেদা জিয়া এই সত্য বেমালুম চেয়ে গেছেন। বঙ্গবন্ধু বা আওয়ামী লীগ নয়, ভারতকে বাংলাদেশের নৌপথ, সড়কপথ ও রেলপথ ব্যবহারের সুযোগ দেয়ার অঙ্গীকার করে ১৯৮০ সালে চুক্তি করেন জিয়াউর রহমান। খালেদা জিয়ার সরকারও ২০০৬ সালে অনুরূপ চুক্তি করে।
সৈয়দ আশরাফ বলেন, বিএনপি প্রায় ১৬ বছর দেশ শাসন করেছে। তারাই বাংলাদেশকে ভারতের বাজারে পরিণত করেছে একতরফা আমদানি বাড়িয়ে। অথচ বিএনপিই ভারতবিরোধী জিগির তোলে বেশি। বিদেশি প্রভুদের খুশি করা এবং ভারত বিরোধিতার নামে ভোটের রাজনীতিই তাদের কূটকৌশল। সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মের নামে রাজনীতি এবং ভারতীয় জুজুর ভয় দেখিয়ে মানুষ বিভ্রানত্ম করার পাকিসত্মানী আদর্শের তারা ধারক-বাহক। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ বিএনপির চালাকি-বজ্জাতি ও মোনাফেকি ধরে ফেলেছে। তাই ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটকে প্রত্যাখ্যান করেছে। জনগণ আর বিএনপির পুরনো ভারত বিরোধী এবং সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না।
বিরোধীদলীয় নেত্রীর 'দেশ বিক্রি'র অভিযোগের জবাবে বলা হয়, দেশ কী ছেলের হাতে মোয়া? শাড়ি নাকি গয়না, যে ইচ্ছে করলেই তা বিক্রি করা যায়? এটা বেগম জিয়া ও বিএনপি-জামায়াতের একটি মেনিয়া। কথায় কথায় তারা স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিসর্জন এবং নতজানুর ভাঙ্গা রেকর্ড বাজান। গঙ্গার পানি চুক্তি ও পার্বত্য শানত্মিচুক্তির সময়েও খালেদা জিয়া এই ধুয়া তুলেছিলেন। ফেনী পর্যনত্ম ভারত হয়ে যাবে বলেছিলেন। সেই ফেনী থেকেই তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এখন তিনি কোন্্ দেশের সংসদ সদস্য?
সৈয়দ আশরাফ বলেন, কোন বিষয়ে সরকারের সঙ্গে দ্বিমত থাকতেই পারে। কিন্তু দ্বিমত হলেই 'দেশ বিক্রি বা স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিসর্জনের মতো' অভিযোগ তোলা কী কোন দায়িত্বশীল রাজনীতিবিদদের মুখে শোভা পায়? তিনি বলেন, বিরোধীদলীয় নেত্রী অভিযোগ করেছেন যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের সঙ্গে 'গোপন নিরাপত্তা চুক্তি' করেছেন। যদি 'গোপনই' হয়ে থাকে তাহলে তিনি জানলেন কী করে? মিথ্যাচার ও কুৎসা রটানোর কী কোনই সীমা থাকবে না? তিনি বিরোধীদলীয় নেত্রীর উদ্দেশ্যে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, এ ধরনের কোন চুক্তির বিষয়ে জানা থাকলে তা জনসমৰে প্রকাশ করম্নন।
তিনি দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, শেখ হাসিনার সরকার ভারতের সঙ্গে তো নয়ই, পৃথিবীর কোন রাষ্ট্রের সঙ্গে কোনরকম গোপন চুক্তি বা সমঝোতা করেনি এবং করবেও না। দেশের স্বার্থে যেসব চুক্তি, সমঝোতা ও প্রটোকল স্বাৰরিত হয়েছে তা প্রকাশ্যেই করা হয়েছে। দুই প্রধানমন্ত্রীর যুক্ত ঘোষণায় সেসব বিষয়ে স্পষ্ট উলেস্নখ করেছে। আর এটাই স্বীকৃত আনত্মর্জাতিক রীতি। নিরাপত্তা চুক্তি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভারতে বঙ্গবন্ধুর খুনীসহ বাংলাদেশের অনেক শীর্ষ সন্ত্রাসী, খুনী, জঙ্গীরা পালিয়ে আছে। তেমনি বাংলাদেশেরও বিভিন্ন কারাগারে ভারতের সন্ত্রাসী, বিচ্ছিন্নতাবাদীরা আটক রয়েছে। এই চুক্তির ফলে এসব খুনী, অপরাধী, সন্ত্রাসী, স্মাগলারদের স্ব স্ব দেশ ফিরিয়ে এনে আইনের মুখোমুখি দাঁড় করাতে পারবে।
ট্রানজিট প্রসঙ্গে খালেদা জিয়ার অভিযোগের জবাবে সৈয়দ আশরাফ বলেন, জিয়া ও খালেদা জিয়া সরকারই ১৯৮০ ও ২০০৬ সালে দু'দেশের বাণিজ্যের জন্য তাদের নৌ, সড়ক ও রেলপথ ব্যবহারের লৰ্যে ভারতের সঙ্গে চুক্তি করেছেন। জিয়ার আমলে ১৯৮০ সালের ৪ অক্টোবর তৎকালীন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকীর স্বাৰরিত এই চুক্তির বিষয়টি খালেদা জিয়া না জানতে পারেন। কিন্তু তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বের আমলে তাঁর অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের (১ এপ্রিল, ২০০৬) স্বাৰরিত চুক্তির কথাও কী জানতেন না? বিরোধীদলীয় নেত্রী চাইলে তাঁকে চুক্তির কপি পাঠিয়ে সাহায্য করতে পারি।
দু'দেশ যৌথভাবে ২০১১ সালে কবিগুরম্ন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মের দেড় শ' বছর উদ্্যাপনের সিদ্ধানত্মটি নিয়ে খালেদা জিয়া অত্যনত্ম কুৎসিতভাবে সাম্প্রদায়িকতা উস্কে তোলার চেষ্টা করেছেন অভিযোগ করে সৈয়দ আশরাফ বলেন, জাতীয় কবি নজরম্নল ইসলামের প্রতি দরদ দেখাতে গিয়ে খালেদা জিয়া নজরম্নলের বিখ্যাত উক্তি ''... হিন্দু না ওরা মুসলিম জিজ্ঞাসে কোন জন" ভুলে গিয়ে জাতীয় কবিকেই অপমানিত করেছেন। তিনি বলেন, "আমরা যৌথভাবে প্রতিবছর জন্মজয়নত্মী পালন করব না। প্রতিবছর কারও ১৫০তম জন্মবার্ষিকী আসে না। রবীন্দ্রনাথের মতো কাজী নজরম্নলের ১২৫তম এবং ১৫০তম জন্মজয়নত্মী ও বাংলা ভাষাভাষীড সকল দেশের মানুষ বিশেষত বাংলাদেশ ও ভারত যৌথভাবে যাতে উদ্্যাপন করে ভবিষ্যতে সেই সিদ্ধানত্ম নেয়া হবে।"
টিপাইমুখ বাঁধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা নিয়ে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর বিরম্নদ্ধে বিষোদগার ও মিথ্যাচার করেছেন। তিনি পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, ৰমতায় পাঁচ বছর থাকাকালে নিয়মিত যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক করতে তারা ব্যর্থ হলেন কেন? তিসত্মাসহ ৫৪টি নদীর ১টিরও পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে পারলেন না কেন? গঙ্গা চুক্তি জাতীয় স্বার্থবিরোধী হলে বাতিল করলেন না কেন?
সৈয়দ আশরাফ বলেন, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তিনি দু'বার ভারত সফরে গিয়ে টিপাইমুখ নিয়ে কোন কথা বলেননি। ১০ বছর ৰমতায় থেকে ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বিরাজমান কোন সমস্যারই সমাধান করতে পারেননি। তিনি বলেন, বিরোধী দলের মতো বিবৃতির ভাষায় সরকার চলে না। সরকারকে সমস্যা সমাধানে সম্ভাব্য সকল উপায়ে বাসত্মব পদৰেপ নিতে হয়। খালেদা জিয়া ভারতের সঙ্গে অমীমাংসিত সমস্যাগুলোর সমাধান চান না। সমস্যাগুলোকে জিইয়ে রেখে তিনি জনগণকে ভারতবিরোধী করে নিজেদের অসৎ রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে চান।
সৈয়দ আশরাফ বলেন, চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরকে প্রতিবেশী দেশসহ আনত্মর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া আমাদের নির্বাচনী অঙ্গীকার। নির্বাচনে জনগণ তিন-চতুর্থাংশ আসনে আমাদের বিজয়ী করে ম্যান্ডেট দিয়েছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার এখন জনগণের সম্পদ। এই অঙ্গীকার পূরণে যা করার প্রয়োজন জীবন দিয়ে হলেও আমরা তা করব। জাতীয় স্বার্থে আমরা যে কোন পদৰেপ নেব। তিনি বলেন, ক্রমবর্ধমান গণবিচ্ছিন্ন বিএনপি কী প্রত্যাখ্যান করলো আর আন্দোলনের হুমকি দিল তাতে দেশবাসীর কিছু আসে যায় না। বরং খালেদা জিয়া ও বিএনপির উচিত পুরনো ভারতবিরোধী, সাম্প্রদায়িক এবং দেশবাসীকে বিভক্ত করার অচল রাজনীতির ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসা।
তিনি বলেন শানত্মি, উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন ও গণতন্ত্রের স্বার্থেই দৰিণ এশিয়ার সব দেশের দ্বি-পাৰিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতার কোন বিকল্প নেই। অথচ ভারতীয় জুজুর ভয় দেখিয়ে, সন্দেহ-অবিশ্বাস জিইয়ে রেখে বিএনপি বিদেশী প্রভুদের খুশি রাখতে বাংলাদেশকে চিরকালের জন্য দরিদ্র রাখতে চায়, বাংলাদেশকে পাকিসত্মানের মতো জঙ্গীবাদের আশ্রয়স্থলে পরিণত করে অশানত্মি সৃষ্টি করতে চায়। বাংলাদেশের মানুষ আর এটা হতে দেবে না।
No comments