সৌদি সরকারের নতুন নীতিমালা জারি বহু বাংলাদেশীকে ফিরে আসতে হবে
সৌদি আরব সরকার তাদের দেশে শ্রম শক্তি আমদানির ক্ষেত্রে নতুন নীতিমালা জারি করেছে। নতুন নীতিমালায় সৌদি আরবের স্থানীয় কর্মসংস্থানকারী প্রতিষ্ঠান প্রতি দু’জন বিদেশী শ্রমিককে ফেরত পাঠানোর বিনিময়ে সরকার থেকে একটি ভিসা নিতে পারবে। এই নীতির কারণে বাংলাদেশীসহ বহু বিদেশী শ্রমিককে দেশে ফিরে আসতে হবে।
তবে এক্ষেত্রে যাঁরা চাকরির মেয়াদকাল শেষ করার পরও সৌদি আছেন তাঁদের অসুবিধা বেশি হবে। যাঁদের চাকরির মেয়াদ তিন বছর পূর্ণ হয়নি তাঁদের দেশে ফেরত আসতে হবে না।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব ড. জাফর আহমেদ খান জনকণ্ঠকে বলেন, সৌদি আরবে অনেক আগে থেকেই ‘সৌদিকরণ নীতিমালা’ বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয়েছে। কারণ সেখানেও বেকারত্বের সংখ্যা বেড়ে গেছে। তাছাড়া একটি দেশ বাইরের দেশের শ্রমিক দিয়ে দীর্ঘদিন চলতে পারে না। ওই দেশের নাগরিক কাজে দক্ষ না হলে দেশ চালানো একটা সময় কষ্টসাধ্য হবে। সে জন্যই নতুন নীতিমালা হাতে নিয়েছে। একটি দেশের অভ্যন্তরে শ্রম নীতি কী হবে সেটা একান্ত তাদের বিষয়। এক্ষেত্রে অন্য কোন দেশের কিছু করার নেই। নতুন নীতিমালায় একটা অসুবিধা হবে, যাদের কন্ট্রাক ট্রার্ম শেষ হয়ে গেছে। তাদের হয়ত দেশে ফেরত আসতে হবে। অন্যদের বেলায় এর কোন প্রভাব পড়বে না। সৌদিতে শ্রম নীতির পরিবর্তনের বিষয়টি আমাদের অফিসিয়ালি জানানো হয়নি। যেহেতু আমরা বিষয়টি এখনও জানি না তাই এ বিষয়ে কিছু বলাও যাচ্ছে না।
এদিকে সৌদিতে ‘নিতাকাত’ নামের আইনে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশী শ্রমিকসহ বিদেশী অনেক শ্রমিক। এ আইনের সূত্রে অনেক কোম্পানি আছে যেখানে বাংলাদেশীরা ভাল অবস্থায় আছেন। তাঁদের সরিয়ে সৌদি নাগরিকদের চাকরি দেয়া হবে। বিশেষ করে সেলসম্যান, এ্যাকাউন্টিং ও ম্যানেজার পোস্টে বিদেশীরা কাজ করতে পারবে না। নিতাকাত পদ্ধতির আওতায় না পড়া ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত বিদেশী শ্রমিকদের তাদের স্পন্সরশিপ পরিবর্তনে সংশ্লিষ্ট কর্মদাতা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে। এই সৌদিকরণের ফলে সব কোম্পানিতে কমপক্ষে ৩০ ভাগ সৌদি নাগরিককে কাজ দিতে হবে।
বাংলানিউজ জানিয়েছে, সৌদি আরবের বেসরকারী খাতের নিয়োগ প্রক্রিয়া বর্তমানে সম্পূর্ণভাবে সরকারের হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের তত্ত্বাবধানে চলছে। এখন থেকে সৌদি আরবের কর্মভিসা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী তাদের ইচ্ছা মোতাবেক দেয়া হবে না বলে মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে সৌদি সংবাদ মাধ্যমগুলো খবর প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি শ্রমিকদের বেতন ‘দায়’ (সময়মতো অবশ্য পরিশোধযোগ্য) হিসেবে বিবেচনা করা হবে বলে জানানো হয় মন্ত্রণালয়ের তরফে। এ ছাড়া শ্রমিকদের বেতন প্রদানে দেরি না করতেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এ নীতিমালা ভঙ্গকারীদের শাস্তির মুখোমুখি করা হবে বলেও ঘোষণা দিয়েছে মন্ত্রণালয়। সৌদি নাগরিকদের বেতন বৃদ্ধি সরকার গৃহীত এ নীতির অন্যতম উদ্দেশ্য। বর্তমানে সৌদি আরবের শ্রম মন্ত্রণালয়, টেকনিক্যাল ভোকেশনাল ট্রেনিং কর্পোরেশন এবং হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট ফান্ড এই তিনটি প্রতিষ্ঠান একটি অভিন্ন পক্ষ হিসেবে কাজ করছে। সৌদি নাগরিকদের জন্য আরও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করাই এ উদ্যোগের উদ্দেশ্য বলে জানানো হয়েছে।
No comments