মর্যাদা ও গৌরবের পতাকাই উর্ধে তুলে ধরতে হবে by মোনায়েম সরকার
পদ্মা সেতু প্রকল্পে ঋণ চুক্তি বাতিল করে বাংলাদেশের মানুষের গৌরব ও মর্যাদাবোধে আঘাত হেনেছে বিশ্বব্যাংক। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের, বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের ৩ কোটি মানুষের দীর্ঘদিনের একটি স্বপ্ন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার দেশবাসীর এই স্বপ্ন পূরণের পথে যখন অগ্রসর হচ্ছিল তখনই একটি বড় ধাক্কা দিল বিশ্বব্যাংক।
দুর্নীতির অভিযোগ এনে পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ করা বিশ্বব্যাংকের একটি নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত। পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক এখনও কোনও টাকা ছাড় করেনি। তার আগেই দুর্নীতির অভিযোগ তুলে হইচই ফেলে দিয়েছে। বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের কোন সত্যতা না থাকলেও বাংলাদেশে একশ্রেণীর রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবী বিশ্বব্যাংকের অবস্থানের পক্ষে অসম্মানজনক ভূমিকা নিয়েছেন। অথচ গত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে সড়ক যোগাযোগ খাতে দুর্নীতির অভিযোগে কিছুদিনের জন্য অর্থায়ন স্থগিত রাখলেও সেটা নিয়ে প্রকাশ্যে কোন বাদানুবাদের খবর পাওয়া যায়নি। কিন্তু পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক এতটা উগ্র অবস্থানে চলে গেল কেন? এটা কি শুধুই বিরাট এই প্রকল্পকে দুর্নীতিমুক্ত রাখার জন্য, নাকি এর পেছনে কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে?
বিশ্বব্যাংক কোন নির্দোষ অর্থলগ্নীকারী প্রতিষ্ঠান নয়, এটা কি আমাদের অজানা? বিশ্বব্যাংকের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব অপরিসীম। বলা যায়, আমেরিকার অঙ্গুলি নির্দেশেই চলে বিশ্বব্যাংক। আর এটাও আমাদের জানা, আমেরিকা যার বন্ধু তার কোন শত্রুর প্রয়োজন হয় না। একইভাবে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে, তাদের পরামর্শ হুবহু অনুসরণ করে কোন দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি সাধিত হয়েছে; সে রকম দৃষ্টান্তও নেই। বরং তাদের পরামর্শ মেনে অনেক দেশের অর্থনীতির বারোটা বেজেছে। তা সত্ত্বেও অনেক দেশকেই বিশ্বব্যাংকের কাছে হাত পাততে হয়, ঋণ নিতে হয়। কারণ গরজ বড় বালাই। তবে ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক সব দেশের জন্য একই ধরনের নীতি অনুসরণ করে না। দেশভেদে তাদের ঋণ দানের শর্তও ভিন্ন হয়। যেমন চীনের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক কঠোর কোন শর্ত অনুসরণ করতে পারছে না। বিশ্বব্যাংকের গ্রাহক হিসেবে চীন দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। গত কয়েক দশকে বিশ্বব্যাংক থেকে ৩০ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি ঋণ নেয় চীন। ২০০৭ সালে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে বাড়াবাড়ি হলে বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ না নেয়ার হুমকি দেয় চীন। তারপর ঠিকই বিশ্বব্যাংকের উর্ধতন কর্মকর্তারা নীরব হয়ে যান এবং তাঁরা দুর্নীতির বিষয়ে বিশ্বব্যাপী একই মান অনুসরণ করবে না বলে জানান। অর্থাৎ যে সব দেশ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষমতাশালী এবং ব্যাংকের পরিচালনা পর্যদে প্রভাব রয়েছে তাদের ব্যাপারে নমনীয়তা দেখানই বিশ্বব্যাংকের নীতি। বড় দেশগুলোর ওপর বিশ্বব্যাংকের খবরদারি ক্রমেই কমছে। ওসব দেশের অর্থের চাহিদা কম থাকায় বিশ্বব্যাংক এখন গরিব দেশগুলোর উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়নের দিকে ঝুঁকছে। অনেক দেশের প্রকল্পেই দুর্নীতির ঘটনা ঘটছে। কিন্তু কোথাও বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বন্ধ করেনি। বাংলাদেশের পদ্মা সেতু প্রকল্পে কেন করল?
পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে এটা বলা যায়, বাংলাদেশের ওপর নাখোশ হওয়ার অন্যতম কারণÑ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে সরকার এখন ক্ষমতায় আছে তারা মুখ বুজে বিশ্বব্যাংকের সব প্রস্তাব মেনে নিচ্ছে না। এই সরকারের মাথা উঁচু নীতির কথা তাদের জানা আছে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে ‘দুর্নীতি’ নিয়ে বিশ্বব্যাংক সরব হয়ে উঠেছে তখনই যখন কয়েক দফা তদ্বির করেও তাদের পছন্দের একটি চীনা কোম্পানিকে কাজ দেয়ার জন্য মূল্যায়ন কমিটিকে রাজি করাতে সমর্থ হয়নি। মূল্যায়ন কমিটি এত নিখুঁত যাচাইবাছাই না করে বিশ্বব্যাংকের সুপারিশ মানলে কি দুর্নীতির অভিযোগ উঠত?
চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিআরসিসি) নামের একটি প্রতিষ্ঠান দরপত্রের শর্ত পূরণ না করায় বাছাই পর্বে বাদ পড়েছিল। তখন এই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে তদ্বির করে বিশ্বব্যাংক। পরে অধিকতর তদন্তেও দেখা যায়, চীনা কোম্পানির প্রয়োজীয় অভিজ্ঞতা নেই এবং তাদের জমা দেয়া কাগজপত্রও জাল বা ভুয়া! এমন একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে বিশ্বব্যাংক বার বার তদ্বির করেছিল কেন? এটা কি বড় ধরনের দুর্নীতি নয়? যদি বলা হয়, বিশ্বব্যাংকের চাপ উপেক্ষা করার ‘সাহস’ দেখানোর কারণেই পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি ইস্যু বিশ্বব্যাংকের কাছে এত বড় হয়ে উঠেছে, তাহলে অন্যায় হবে কি? আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকার ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশ আত্মমর্যাদা নিয়ে মাথা তুলে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। বাংলাদেশের এই মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টাটা যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার প্রভাবিত কোন সংস্থার পছন্দ হওয়ার কথা নয়, সেটা আমরা বুঝতে পারি। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মার্কিন সরকার পাকিস্তানের ঘাতক সামরিক বাহিনীর পক্ষে নির্লজ্জ অবস্থান নিয়েছিল। এমনকি, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ যখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে তখনও সপ্তম নৌবহর পাঠিয়ে আমাদের বিজয়ের বিরোধিতা করেছে আমেরিকা। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতির পুনর্গঠনের জন্য আমেরিকার কাছে নতজানু হয়ে সাহায্য নেয়ার বিরোধিতা করার পরিণতি আমরা জানি। দেশে কৃত্রিমভাবে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করে হাজার হাজার মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে এবং সবশেষে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করে বাংলাদেশের রাজনীতির গতিমুখটাই উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দেয়া হয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান মহাজোট সরকার যখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সামনে রেখে সেই ধারায় দেশকে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করছে, একাত্তরে যারা পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর দোসর হয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে সেই ঘাতক-দালালদের বিচার কাজ শুরু করেছে তখন দেশে এবং দেশের বাইরে শুরু হয়েছে নানা ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যাতে না হয়, সরকারের এই প্রচেষ্টা যাতে ব্যর্থ হয় তার জন্য বিপুল অর্থ নিয়ে মাঠে নেমেছে জামায়াত-শিবির চক্র। দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিও যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় জামায়াতের পাশে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করার জন্য, সরকারের বিরুদ্ধে দেশের মানুষকে বিরূপ করে তোলার জন্য পরিকল্পিতভাবে হঠকারী ও উস্কানিমূলক কাজ করছে জামায়াত-বিএনপি। দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তোলার জন্য নাশকতামূলক কর্মকা- চালানোর পরিকল্পনা যে তাদের আছে তারও প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। পদ্মা সেতু যথাসময়ে নির্মিত হলে সরকারের ভাবমূর্তি যে অত্যন্ত উজ্জ্বল হবে এবং তাতে পরবর্তী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পুনর্নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল হবে; এটা বিএনপি-জামায়াতের অজানা নয়। সে জন্য তারা পদ্মা সেতু যাতে না হয় সে চেষ্টা যে করবে, সেটাও কারও বুঝতে কষ্ট হওয়ার কথা নয়। দেশের স্বার্থবিরোধী এই রাজনৈতিক শক্তি সরকারের বিরুদ্ধে নানা উপায়ে বিদেশেও প্রচার চালাচ্ছে। তারা বিশ্বব্যাংকেরও শরণাপন্ন হয়নি, সেটা কি বলা যায়?
পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠেছে, তাতে কোন টাকা লেনদেন হয়নি বলে বিশ্বব্যাংকই জানিয়েছে। তারপরও ‘দুর্নীতি’র বিষয়টিকে এতটাই বড় করে তোলা হয়েছে যা থেকে মনে হতে পারে যে দুর্র্নীতির ধারেকাছে হাঁটে না বিশ্বব্যাংক। কিন্তু প্রকৃত সত্য এটাই, বিশ্বব্যাংক নিজেই একটি দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান। বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিন ‘ফোর্বস’-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংকের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্র্নীতি, ঋণদান বিবেচনার প্রশ্নে দুর্নীতি, প্রশাসনিক দুর্নীতি, প্রাতিষ্ঠানিক দর্শনে ও সংস্কৃতিতে দুর্নীতি, গণতান্ত্রিক সাম্যতার পরপন্থী হয়ে চাঁদা দানের শক্তিতে বলীয়ান একটি বৃহৎ দেশের আজ্ঞাবাহী থাকার ব্যবস্থাপনার দুর্নীতির চিত্র বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ‘ফোর্বস’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১১ সালে বিশ্বব্যাংকের তহবিলের পরিমাণ ছিল পাঁচ হাজার ৭ শ’ কোটি ডলার। যার ওপর সদস্যরাষ্ট্রের সরকারগুলোর কোন নজরদারি নেই। এভাবেই বিশ্বব্যাংক একটি জবাবদিহিতাহীন বা দায়বদ্ধতাহীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে।
এমন একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে আমরা কেন ঋণ নিতে চাই সে প্রশ্ন যাঁরা তোলেন তাঁরা কোন ভাবসাগরে হাবুডুবু খান তা আমরা জানি না। নিরূপায় হয়েই আমরা ঋণ চাই। কিন্তু ঋণ চাই বলেই মাথা বিকিয়ে দিতে হবে, তার কোন মানে নেই। দুর্নীতিগ্রস্ত একটি প্রতিষ্ঠান ‘দুর্নীতির’ অভিযোগ তুলে পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থ ঋণ না দেয়ার ঘোষণা দেয়ার পর বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে যে ক্ষোভ দেখা দেয়া উচিত ছিল, তা দেখা যায়নি। ঢাকার রাজপথে বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে, তাদের ধিক্কার জানিয়ে সেøাগান দিয়ে একটি মিছিলও বের হয়নি। যাঁরা কথায় কথায় ‘সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাক’ বলে সেøাগান তুলে সুখ পান, বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের নিন্দামন্দ করেন; সেসব মুখচেনা বুদ্ধিজীবী কিংবা বামপন্থী নেতাও কেমন নীরবতা পালন করছেন। আওয়ামী লীগ সরকারকে বড় বেকায়দায় ফেলা গেছেÑএটা মনে করেই কি তাঁরা মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন? তাঁরা কি বুঝতে পারছেন না যে, পদ্মা সেতুটা সরকারের যতটা না প্রয়োজন তার চেয়ে ঢের বেশি প্রয়োজন দেশের মানুষের ভালর জন্য, তাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য। সরকার আসবে, সরকার যাবে কিন্তু পদ্মা সেতু নির্মিত হলে তার সুফল মানুষ ভোগ করতেই থাকবে।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন ছাড়া কি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব নয়? আমরা মনে করি, তা সম্ভব। অর্থনীতিবিদ ও কারিগরি বিশেষজ্ঞরা নানা তত্ত্ব কথা শোনাতে পারেন। কিন্তু সেগুলো কেতাবী বুলি। বাস্তব কখনও কখনও এমন শক্তিধর হয়ে ওঠে যা কোন তত্ত্ব দিয়ে ব্যাখ্য করা যায় না। আমরা মনে করি, দেশের ১৬ কোটি মানুষ আত্মমর্যাদাবোধ নিয়ে রুখে দাঁড়ালে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে টাকা সংগ্রহ করেই পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যাবে। প্রবল ক্ষমতাধর আমেরিকা-চীনের বিরোধিতা মোকাবেলা করে যে জাতি মুক্তিযুদ্ধে বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারে, সে জাতির কাছে না পারার কিছু থাকতে পারে না। যেটা প্রয়োজন সেটা হলো একটি জাতীয় জাগরণ তৈরি করা। বার বার আমাদের দেশের মানুষের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে বলে তারা কিছুটা হতাশ কিন্তু তাই বলে তারা দেশের মাথায় অপবাদ-কলঙ্ক চাপিয়ে দিলে হাঁটু গেড়ে আত্মসমর্পণ করবে না। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারকে দৃঢ়তার পরিচয় দিতে হবে। পিছুটান, দোদুল্যমানতা পরিহার করতে হবে। মানুষকে অভয় দিতে হবে, সাহস দিতে হবে, শোনাতে হবে আশার বাণী। ‘যার যা আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা’ করার আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেভাবে বাঙালী জাতিকে স্বাধীনতার আকাক্সক্ষায় উজ্জীবিত করেছিলেন এখন একইভাবে পদ্মা সেতু নির্মাণে ‘যার যা কিছু আছে’ তা নিয়ে সবাইকে এগিয়ে আসার ডাক দিতে হবে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে। একই সঙ্গে অবশ্য আরও কিছু কাজ করতে হবে। দেশের মানুষের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়টিও বুঝতে হবে তাকে। বুঝতে হবে মানুষের মনোভাব, মূল্য দিতে হবে তাদের আবেগ বা সেন্টিমেন্টের। দেশের মানুষের মধ্যে যে সব মন্ত্রী-উপদেষ্টার দুর্নীতি-অকর্মণ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে তাদের অবিলম্বে বাদ দিতে হবে। মন্ত্রীদের কেউ দুর্নীতি করে নাÑ এই রেকর্ড বাজিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে জাগরণ ঘটানো যাবে না। একজন মানুষের সম্মান রক্ষার নামে গোটা জাতিকে অসম্মান করার ছেলেমানুষি জেদ বন্ধ করতে হবে। মানুষ পদ্মা সেতুর জন্য শেখ হাসিনার হাতে টাকা তুলে দেবেÑকিন্তু তার আগে সে নিশ্চিত হতে চাইবে যে, তার কষ্টের টাকাটা সততার সঙ্গে ব্যয় হবে, কোন চাটার দল তা চেটেপুটে খাবে না। বিশ্বব্যাংকের কাছে কান্নাকাটি নয়, জাতির মর্যাদা ও গৌরবের পতাকাটাকেই উর্ধে তুলে ধরতে হবে।
বিশ্বব্যাংক কোন নির্দোষ অর্থলগ্নীকারী প্রতিষ্ঠান নয়, এটা কি আমাদের অজানা? বিশ্বব্যাংকের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব অপরিসীম। বলা যায়, আমেরিকার অঙ্গুলি নির্দেশেই চলে বিশ্বব্যাংক। আর এটাও আমাদের জানা, আমেরিকা যার বন্ধু তার কোন শত্রুর প্রয়োজন হয় না। একইভাবে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে, তাদের পরামর্শ হুবহু অনুসরণ করে কোন দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি সাধিত হয়েছে; সে রকম দৃষ্টান্তও নেই। বরং তাদের পরামর্শ মেনে অনেক দেশের অর্থনীতির বারোটা বেজেছে। তা সত্ত্বেও অনেক দেশকেই বিশ্বব্যাংকের কাছে হাত পাততে হয়, ঋণ নিতে হয়। কারণ গরজ বড় বালাই। তবে ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক সব দেশের জন্য একই ধরনের নীতি অনুসরণ করে না। দেশভেদে তাদের ঋণ দানের শর্তও ভিন্ন হয়। যেমন চীনের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক কঠোর কোন শর্ত অনুসরণ করতে পারছে না। বিশ্বব্যাংকের গ্রাহক হিসেবে চীন দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। গত কয়েক দশকে বিশ্বব্যাংক থেকে ৩০ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি ঋণ নেয় চীন। ২০০৭ সালে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে বাড়াবাড়ি হলে বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ না নেয়ার হুমকি দেয় চীন। তারপর ঠিকই বিশ্বব্যাংকের উর্ধতন কর্মকর্তারা নীরব হয়ে যান এবং তাঁরা দুর্নীতির বিষয়ে বিশ্বব্যাপী একই মান অনুসরণ করবে না বলে জানান। অর্থাৎ যে সব দেশ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষমতাশালী এবং ব্যাংকের পরিচালনা পর্যদে প্রভাব রয়েছে তাদের ব্যাপারে নমনীয়তা দেখানই বিশ্বব্যাংকের নীতি। বড় দেশগুলোর ওপর বিশ্বব্যাংকের খবরদারি ক্রমেই কমছে। ওসব দেশের অর্থের চাহিদা কম থাকায় বিশ্বব্যাংক এখন গরিব দেশগুলোর উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়নের দিকে ঝুঁকছে। অনেক দেশের প্রকল্পেই দুর্নীতির ঘটনা ঘটছে। কিন্তু কোথাও বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বন্ধ করেনি। বাংলাদেশের পদ্মা সেতু প্রকল্পে কেন করল?
পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে এটা বলা যায়, বাংলাদেশের ওপর নাখোশ হওয়ার অন্যতম কারণÑ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে সরকার এখন ক্ষমতায় আছে তারা মুখ বুজে বিশ্বব্যাংকের সব প্রস্তাব মেনে নিচ্ছে না। এই সরকারের মাথা উঁচু নীতির কথা তাদের জানা আছে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে ‘দুর্নীতি’ নিয়ে বিশ্বব্যাংক সরব হয়ে উঠেছে তখনই যখন কয়েক দফা তদ্বির করেও তাদের পছন্দের একটি চীনা কোম্পানিকে কাজ দেয়ার জন্য মূল্যায়ন কমিটিকে রাজি করাতে সমর্থ হয়নি। মূল্যায়ন কমিটি এত নিখুঁত যাচাইবাছাই না করে বিশ্বব্যাংকের সুপারিশ মানলে কি দুর্নীতির অভিযোগ উঠত?
চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিআরসিসি) নামের একটি প্রতিষ্ঠান দরপত্রের শর্ত পূরণ না করায় বাছাই পর্বে বাদ পড়েছিল। তখন এই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে তদ্বির করে বিশ্বব্যাংক। পরে অধিকতর তদন্তেও দেখা যায়, চীনা কোম্পানির প্রয়োজীয় অভিজ্ঞতা নেই এবং তাদের জমা দেয়া কাগজপত্রও জাল বা ভুয়া! এমন একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে বিশ্বব্যাংক বার বার তদ্বির করেছিল কেন? এটা কি বড় ধরনের দুর্নীতি নয়? যদি বলা হয়, বিশ্বব্যাংকের চাপ উপেক্ষা করার ‘সাহস’ দেখানোর কারণেই পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি ইস্যু বিশ্বব্যাংকের কাছে এত বড় হয়ে উঠেছে, তাহলে অন্যায় হবে কি? আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকার ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশ আত্মমর্যাদা নিয়ে মাথা তুলে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। বাংলাদেশের এই মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টাটা যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার প্রভাবিত কোন সংস্থার পছন্দ হওয়ার কথা নয়, সেটা আমরা বুঝতে পারি। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মার্কিন সরকার পাকিস্তানের ঘাতক সামরিক বাহিনীর পক্ষে নির্লজ্জ অবস্থান নিয়েছিল। এমনকি, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ যখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে তখনও সপ্তম নৌবহর পাঠিয়ে আমাদের বিজয়ের বিরোধিতা করেছে আমেরিকা। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতির পুনর্গঠনের জন্য আমেরিকার কাছে নতজানু হয়ে সাহায্য নেয়ার বিরোধিতা করার পরিণতি আমরা জানি। দেশে কৃত্রিমভাবে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করে হাজার হাজার মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে এবং সবশেষে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করে বাংলাদেশের রাজনীতির গতিমুখটাই উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দেয়া হয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান মহাজোট সরকার যখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সামনে রেখে সেই ধারায় দেশকে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করছে, একাত্তরে যারা পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর দোসর হয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে সেই ঘাতক-দালালদের বিচার কাজ শুরু করেছে তখন দেশে এবং দেশের বাইরে শুরু হয়েছে নানা ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যাতে না হয়, সরকারের এই প্রচেষ্টা যাতে ব্যর্থ হয় তার জন্য বিপুল অর্থ নিয়ে মাঠে নেমেছে জামায়াত-শিবির চক্র। দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিও যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় জামায়াতের পাশে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করার জন্য, সরকারের বিরুদ্ধে দেশের মানুষকে বিরূপ করে তোলার জন্য পরিকল্পিতভাবে হঠকারী ও উস্কানিমূলক কাজ করছে জামায়াত-বিএনপি। দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তোলার জন্য নাশকতামূলক কর্মকা- চালানোর পরিকল্পনা যে তাদের আছে তারও প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। পদ্মা সেতু যথাসময়ে নির্মিত হলে সরকারের ভাবমূর্তি যে অত্যন্ত উজ্জ্বল হবে এবং তাতে পরবর্তী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পুনর্নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল হবে; এটা বিএনপি-জামায়াতের অজানা নয়। সে জন্য তারা পদ্মা সেতু যাতে না হয় সে চেষ্টা যে করবে, সেটাও কারও বুঝতে কষ্ট হওয়ার কথা নয়। দেশের স্বার্থবিরোধী এই রাজনৈতিক শক্তি সরকারের বিরুদ্ধে নানা উপায়ে বিদেশেও প্রচার চালাচ্ছে। তারা বিশ্বব্যাংকেরও শরণাপন্ন হয়নি, সেটা কি বলা যায়?
পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠেছে, তাতে কোন টাকা লেনদেন হয়নি বলে বিশ্বব্যাংকই জানিয়েছে। তারপরও ‘দুর্নীতি’র বিষয়টিকে এতটাই বড় করে তোলা হয়েছে যা থেকে মনে হতে পারে যে দুর্র্নীতির ধারেকাছে হাঁটে না বিশ্বব্যাংক। কিন্তু প্রকৃত সত্য এটাই, বিশ্বব্যাংক নিজেই একটি দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান। বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিন ‘ফোর্বস’-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংকের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্র্নীতি, ঋণদান বিবেচনার প্রশ্নে দুর্নীতি, প্রশাসনিক দুর্নীতি, প্রাতিষ্ঠানিক দর্শনে ও সংস্কৃতিতে দুর্নীতি, গণতান্ত্রিক সাম্যতার পরপন্থী হয়ে চাঁদা দানের শক্তিতে বলীয়ান একটি বৃহৎ দেশের আজ্ঞাবাহী থাকার ব্যবস্থাপনার দুর্নীতির চিত্র বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ‘ফোর্বস’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১১ সালে বিশ্বব্যাংকের তহবিলের পরিমাণ ছিল পাঁচ হাজার ৭ শ’ কোটি ডলার। যার ওপর সদস্যরাষ্ট্রের সরকারগুলোর কোন নজরদারি নেই। এভাবেই বিশ্বব্যাংক একটি জবাবদিহিতাহীন বা দায়বদ্ধতাহীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে।
এমন একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে আমরা কেন ঋণ নিতে চাই সে প্রশ্ন যাঁরা তোলেন তাঁরা কোন ভাবসাগরে হাবুডুবু খান তা আমরা জানি না। নিরূপায় হয়েই আমরা ঋণ চাই। কিন্তু ঋণ চাই বলেই মাথা বিকিয়ে দিতে হবে, তার কোন মানে নেই। দুর্নীতিগ্রস্ত একটি প্রতিষ্ঠান ‘দুর্নীতির’ অভিযোগ তুলে পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থ ঋণ না দেয়ার ঘোষণা দেয়ার পর বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে যে ক্ষোভ দেখা দেয়া উচিত ছিল, তা দেখা যায়নি। ঢাকার রাজপথে বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে, তাদের ধিক্কার জানিয়ে সেøাগান দিয়ে একটি মিছিলও বের হয়নি। যাঁরা কথায় কথায় ‘সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাক’ বলে সেøাগান তুলে সুখ পান, বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের নিন্দামন্দ করেন; সেসব মুখচেনা বুদ্ধিজীবী কিংবা বামপন্থী নেতাও কেমন নীরবতা পালন করছেন। আওয়ামী লীগ সরকারকে বড় বেকায়দায় ফেলা গেছেÑএটা মনে করেই কি তাঁরা মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন? তাঁরা কি বুঝতে পারছেন না যে, পদ্মা সেতুটা সরকারের যতটা না প্রয়োজন তার চেয়ে ঢের বেশি প্রয়োজন দেশের মানুষের ভালর জন্য, তাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য। সরকার আসবে, সরকার যাবে কিন্তু পদ্মা সেতু নির্মিত হলে তার সুফল মানুষ ভোগ করতেই থাকবে।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন ছাড়া কি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব নয়? আমরা মনে করি, তা সম্ভব। অর্থনীতিবিদ ও কারিগরি বিশেষজ্ঞরা নানা তত্ত্ব কথা শোনাতে পারেন। কিন্তু সেগুলো কেতাবী বুলি। বাস্তব কখনও কখনও এমন শক্তিধর হয়ে ওঠে যা কোন তত্ত্ব দিয়ে ব্যাখ্য করা যায় না। আমরা মনে করি, দেশের ১৬ কোটি মানুষ আত্মমর্যাদাবোধ নিয়ে রুখে দাঁড়ালে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে টাকা সংগ্রহ করেই পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যাবে। প্রবল ক্ষমতাধর আমেরিকা-চীনের বিরোধিতা মোকাবেলা করে যে জাতি মুক্তিযুদ্ধে বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারে, সে জাতির কাছে না পারার কিছু থাকতে পারে না। যেটা প্রয়োজন সেটা হলো একটি জাতীয় জাগরণ তৈরি করা। বার বার আমাদের দেশের মানুষের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে বলে তারা কিছুটা হতাশ কিন্তু তাই বলে তারা দেশের মাথায় অপবাদ-কলঙ্ক চাপিয়ে দিলে হাঁটু গেড়ে আত্মসমর্পণ করবে না। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারকে দৃঢ়তার পরিচয় দিতে হবে। পিছুটান, দোদুল্যমানতা পরিহার করতে হবে। মানুষকে অভয় দিতে হবে, সাহস দিতে হবে, শোনাতে হবে আশার বাণী। ‘যার যা আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা’ করার আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেভাবে বাঙালী জাতিকে স্বাধীনতার আকাক্সক্ষায় উজ্জীবিত করেছিলেন এখন একইভাবে পদ্মা সেতু নির্মাণে ‘যার যা কিছু আছে’ তা নিয়ে সবাইকে এগিয়ে আসার ডাক দিতে হবে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে। একই সঙ্গে অবশ্য আরও কিছু কাজ করতে হবে। দেশের মানুষের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়টিও বুঝতে হবে তাকে। বুঝতে হবে মানুষের মনোভাব, মূল্য দিতে হবে তাদের আবেগ বা সেন্টিমেন্টের। দেশের মানুষের মধ্যে যে সব মন্ত্রী-উপদেষ্টার দুর্নীতি-অকর্মণ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে তাদের অবিলম্বে বাদ দিতে হবে। মন্ত্রীদের কেউ দুর্নীতি করে নাÑ এই রেকর্ড বাজিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে জাগরণ ঘটানো যাবে না। একজন মানুষের সম্মান রক্ষার নামে গোটা জাতিকে অসম্মান করার ছেলেমানুষি জেদ বন্ধ করতে হবে। মানুষ পদ্মা সেতুর জন্য শেখ হাসিনার হাতে টাকা তুলে দেবেÑকিন্তু তার আগে সে নিশ্চিত হতে চাইবে যে, তার কষ্টের টাকাটা সততার সঙ্গে ব্যয় হবে, কোন চাটার দল তা চেটেপুটে খাবে না। বিশ্বব্যাংকের কাছে কান্নাকাটি নয়, জাতির মর্যাদা ও গৌরবের পতাকাটাকেই উর্ধে তুলে ধরতে হবে।
No comments