ফিয়োনা এলার্স-ইতালি কোনো পতিতালয় নয়
এখন থেকে ২২০ বছর আগে, জোয়ান ভোলফগ্যাঙ গ্যয়ঠে তাঁর জীবদ্দশায় ছিলেন। তিনি ছদ্মবেশে ইতালি সফরে এসেছিলেন। এখানে তিনি জাগতিক আনন্দ উপভোগ করেছেন। সাহিত্য ঐতিহাসিকরা বলেন, এখানে তিনি নীরবে মদ, নারী এবং প্রাণবন্ত সাহিত্য-আলোচনা উপভোগ করেছেন। হতে পারে এখানেই তিনি প্রথম নারী সংসর্গের স্বাদ
পেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি যদি তাঁর ১৮ নং ভায়া ডেল কোরসোর বাসা থেকে গত রবিবার দুপুরে মাত্র ১০০ মিটার দূরের পিয়াজা ডেল পোপোলো স্কয়ারে আসতে পারতেন, তাহলে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারতেন না। ইতালীয়দের মধ্যে যৌনাচার, মানুষের শক্তি ও নৈতিকতা নিয়ে বিতর্ক চলে আসছিল বহু দিন ধরে। কিন্তু এবার তাঁরা বাকশূন্য হয়ে গেছেন।
বসন্তের দুপুরের সূর্যালোকের নিচে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার নারী এক মিনিট নীরবতা পালন করল। তারপর কেউ একজন মঞ্চ থেকে ইতালীয় ভাষায় চিৎকার করে উঠল, 'জে নন ওরা, কোয়ানদো?' অর্থাৎ_'যদি এখন না হয়, তাহলে কখন?' এটাই ছিল ওই দুপুরের 'মোটো'। বিক্ষোভকারীরা আকাশে হাত ছুড়ে চিৎকার করতে থাকল, 'এখনই! বারলুসকোনি নেমে যাও! যথেষ্ট হয়েছে!' এরপর তারা প্যাটি স্মিথের গান, 'পাওয়ার টু দ্য পিপল' গাইতে থাকল। নৃত্যরত মানুষের হাতে ধরা শত শত ব্যানার।
কমপক্ষে ৩০ হাজার নারী এ বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেছে। গত কয়েক বছরের মধ্যে এটাই ছিল নারী বিক্ষোভকারীদের সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ। ইতালির ২৩০টি শহরে একই রকম প্রতিবাদ অনুষ্ঠিত হলো। মিলান, ফ্লোরেন্স, ভেনিস_সর্বত্র। সংগঠকদের দাবি, ১০ লাখ ইতালীয় সেদিন রাস্তায় নেমে এসেছে। ইতালির বাইরে টোকিও, ব্রাসেলস, লন্ডন ও প্যারিসে বিক্ষোভ দেখানো হয়। মানুষের ভাষা ছিল পরিষ্কার। একসময় যে নারীরা ইতালির প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বারলুসকোনির সমর্থক ছিল তারাই চিৎকারে ফেটে পড়েছে, 'ওরা বাস্তা!' অর্থাৎ যথেষ্ট হয়েছে।
ইতালির এসব নারী খেপে উঠেছে, কারণ বিষয়গুলোকে তারা হতাশাজনক, সেকেলে বলে মনে করছে। যেমন ১৯৫০-এর দশকের গণমাধ্যমে নারীর যে চিত্র ছিল, আজ রাজনীতিতে তা-ই দেখা যাচ্ছে। সে সময় নারীরা ছিল সৌন্দর্যের উপকরণ এবং নমনীয়। তাদের স্থান ছিল ঘরের অভ্যন্তরে। সাংসারিক দায়িত্ব ছিল তাদের। তাই এসব নারী তাদের মর্যাদা ফিরে চায় এবং বিশ্বাস করে যে বারলুসকোনি সীমা লঙ্ঘন করেছেন। তাদের বিক্ষোভের অন্যতম কারণ হলো, প্রধানমন্ত্রী বারলুসকোনি বুঙ্গা বুঙ্গা পার্টির আয়োজন করেছেন। রুবি নামের মরক্কোর এক অপ্রাপ্তবয়স্ক নারীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা উঠে এসেছে। তাই দেখে বেচারা ইতালির দিকে চেয়ে বহির্বিশ্ব মুখ টিপে হাসছে। অথচ তিনি দেশের কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারছেন না। ঋণের পরিমাণ বেড়ে চলেছে, বেকারত্বের সংখ্যা বাড়ছে, স্রোতের মতো অভিবাসীরা প্রবেশ করছে। তাই তারা চিৎকার করে বলছে, ইতালি কোনো পতিতালয় নয়; 'মোর ব্রেড, লেস গেমস!' দেখেশুনে মনে হচ্ছে, সত্যিই নারীরা তার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
বারলুসকোনির দলের এক সাবেক সদস্য বললেন, 'আমি কোনো পর্নো পার্টির সমালোচনা করতে আসিনি। আমি এসেছি এ ধরনের পার্টির মাধ্যমে শাসনব্যবস্থায় রাজনৈতিক মান কোথায় নেমেছে, তার সমালোচনা করতে। আমরা সমাজের মুখ্য অংশ হতে চাই, প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভিলায় যে মন্তব্য করেছেন, সে অনুযায়ী আমরা পুরুষের হাতের হাস্যকর পুতুল হতে চাই না।' সবচেয়ে বড় ট্রেড ইউনিয়নের নারীনেত্রীর মন্তব্য, 'আমরা চিরকালীন সোপ অপেরার এঙ্ট্রায় পরিণত হয়েছি।'
আফ্রিকার পতিতাদের দেখাশোনা করেন তুরিনের এমন এক নান মন্তব্য করলেন, আমরা যেন পণ্যে পরিণত হয়েছি। আমাদের ব্যবহার করবে এবং ছুড়ে ফেলে দেবে।'
বিক্ষোভকারীরা নারীমুক্তির বিষয়ে উন্নয়নশীল দেশের পরিসংখ্যান তুলে ধরে। ৯০ শতাংশ ইতালীয় নারীর রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি। কিন্তু তাদের অর্ধেকেরও চাকরি নেই। তাদের এক মুখপাত্র বললেন, 'পুরুষের চেয়ে আমরা কঠিন কাজ করি, কিন্তু আমাদের বেতন দেওয়া হয় কম। ইউরোপের যেকোনো দেশের চেয়ে আমাদের নারীদের রাজনীতিতে অবস্থান সবচেয়ে কম।
তারা কর্মস্থলে বৈষম্য ও গর্ভাবস্থায় চাকরি হারানোর অভিযোগ করে। এক প্রতিবাদকারী বলেন, 'অ্যানজেলা মেরকেল ক্ষমতা গ্রহণ করে প্রথমেই কিন্ডারগার্টেনের সংখ্যা বৃদ্ধি করায় হাত দেন। বারলুসকোনি সেখানে কী করেছেন! তিনি আমাদের কন্যাদের উপদেশ দিয়েছেন ধনী স্বামীর সঙ্গে বিয়ে বসতে। আমরা কোন ধরনের দেশে বসবাস করছি?'
জার্মানির ড্যের স্পিয়গেল পত্রিকা থেকে নিবন্ধের প্রথম অংশের ভাষান্তর : মহসীন হাবিব
বসন্তের দুপুরের সূর্যালোকের নিচে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার নারী এক মিনিট নীরবতা পালন করল। তারপর কেউ একজন মঞ্চ থেকে ইতালীয় ভাষায় চিৎকার করে উঠল, 'জে নন ওরা, কোয়ানদো?' অর্থাৎ_'যদি এখন না হয়, তাহলে কখন?' এটাই ছিল ওই দুপুরের 'মোটো'। বিক্ষোভকারীরা আকাশে হাত ছুড়ে চিৎকার করতে থাকল, 'এখনই! বারলুসকোনি নেমে যাও! যথেষ্ট হয়েছে!' এরপর তারা প্যাটি স্মিথের গান, 'পাওয়ার টু দ্য পিপল' গাইতে থাকল। নৃত্যরত মানুষের হাতে ধরা শত শত ব্যানার।
কমপক্ষে ৩০ হাজার নারী এ বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেছে। গত কয়েক বছরের মধ্যে এটাই ছিল নারী বিক্ষোভকারীদের সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ। ইতালির ২৩০টি শহরে একই রকম প্রতিবাদ অনুষ্ঠিত হলো। মিলান, ফ্লোরেন্স, ভেনিস_সর্বত্র। সংগঠকদের দাবি, ১০ লাখ ইতালীয় সেদিন রাস্তায় নেমে এসেছে। ইতালির বাইরে টোকিও, ব্রাসেলস, লন্ডন ও প্যারিসে বিক্ষোভ দেখানো হয়। মানুষের ভাষা ছিল পরিষ্কার। একসময় যে নারীরা ইতালির প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বারলুসকোনির সমর্থক ছিল তারাই চিৎকারে ফেটে পড়েছে, 'ওরা বাস্তা!' অর্থাৎ যথেষ্ট হয়েছে।
ইতালির এসব নারী খেপে উঠেছে, কারণ বিষয়গুলোকে তারা হতাশাজনক, সেকেলে বলে মনে করছে। যেমন ১৯৫০-এর দশকের গণমাধ্যমে নারীর যে চিত্র ছিল, আজ রাজনীতিতে তা-ই দেখা যাচ্ছে। সে সময় নারীরা ছিল সৌন্দর্যের উপকরণ এবং নমনীয়। তাদের স্থান ছিল ঘরের অভ্যন্তরে। সাংসারিক দায়িত্ব ছিল তাদের। তাই এসব নারী তাদের মর্যাদা ফিরে চায় এবং বিশ্বাস করে যে বারলুসকোনি সীমা লঙ্ঘন করেছেন। তাদের বিক্ষোভের অন্যতম কারণ হলো, প্রধানমন্ত্রী বারলুসকোনি বুঙ্গা বুঙ্গা পার্টির আয়োজন করেছেন। রুবি নামের মরক্কোর এক অপ্রাপ্তবয়স্ক নারীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা উঠে এসেছে। তাই দেখে বেচারা ইতালির দিকে চেয়ে বহির্বিশ্ব মুখ টিপে হাসছে। অথচ তিনি দেশের কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারছেন না। ঋণের পরিমাণ বেড়ে চলেছে, বেকারত্বের সংখ্যা বাড়ছে, স্রোতের মতো অভিবাসীরা প্রবেশ করছে। তাই তারা চিৎকার করে বলছে, ইতালি কোনো পতিতালয় নয়; 'মোর ব্রেড, লেস গেমস!' দেখেশুনে মনে হচ্ছে, সত্যিই নারীরা তার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
বারলুসকোনির দলের এক সাবেক সদস্য বললেন, 'আমি কোনো পর্নো পার্টির সমালোচনা করতে আসিনি। আমি এসেছি এ ধরনের পার্টির মাধ্যমে শাসনব্যবস্থায় রাজনৈতিক মান কোথায় নেমেছে, তার সমালোচনা করতে। আমরা সমাজের মুখ্য অংশ হতে চাই, প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভিলায় যে মন্তব্য করেছেন, সে অনুযায়ী আমরা পুরুষের হাতের হাস্যকর পুতুল হতে চাই না।' সবচেয়ে বড় ট্রেড ইউনিয়নের নারীনেত্রীর মন্তব্য, 'আমরা চিরকালীন সোপ অপেরার এঙ্ট্রায় পরিণত হয়েছি।'
আফ্রিকার পতিতাদের দেখাশোনা করেন তুরিনের এমন এক নান মন্তব্য করলেন, আমরা যেন পণ্যে পরিণত হয়েছি। আমাদের ব্যবহার করবে এবং ছুড়ে ফেলে দেবে।'
বিক্ষোভকারীরা নারীমুক্তির বিষয়ে উন্নয়নশীল দেশের পরিসংখ্যান তুলে ধরে। ৯০ শতাংশ ইতালীয় নারীর রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি। কিন্তু তাদের অর্ধেকেরও চাকরি নেই। তাদের এক মুখপাত্র বললেন, 'পুরুষের চেয়ে আমরা কঠিন কাজ করি, কিন্তু আমাদের বেতন দেওয়া হয় কম। ইউরোপের যেকোনো দেশের চেয়ে আমাদের নারীদের রাজনীতিতে অবস্থান সবচেয়ে কম।
তারা কর্মস্থলে বৈষম্য ও গর্ভাবস্থায় চাকরি হারানোর অভিযোগ করে। এক প্রতিবাদকারী বলেন, 'অ্যানজেলা মেরকেল ক্ষমতা গ্রহণ করে প্রথমেই কিন্ডারগার্টেনের সংখ্যা বৃদ্ধি করায় হাত দেন। বারলুসকোনি সেখানে কী করেছেন! তিনি আমাদের কন্যাদের উপদেশ দিয়েছেন ধনী স্বামীর সঙ্গে বিয়ে বসতে। আমরা কোন ধরনের দেশে বসবাস করছি?'
জার্মানির ড্যের স্পিয়গেল পত্রিকা থেকে নিবন্ধের প্রথম অংশের ভাষান্তর : মহসীন হাবিব
No comments