ম্যানহোল পরিচ্ছন্নতা কর্মী-জীবনের বিনিময়ে জীবনযাপন
ব্যস্ত সড়কে ম্যানহোলের আবর্জনা অপসারণ কতটা ঝুঁকিপূর্ণ, তা সোমবারের সমকালে ছাপা আলোকচিত্রটিতেই স্পষ্ট। সংবাদমাধ্যমে এই দৃশ্য হয়তো কালেভদ্রে দেখা যায়; অথচ এই শ্রমিকরা নগরজীবন নির্বিঘ্ন রাখতে প্রতিদিনই রাজধানীর কোথাও না কোথাও এভাবে কাজ করে চলেছেন।
বিপদ কেবল পথের ওপর থেকে নয় যে চালকের অসাবধানতায় তারা গাড়িচাপা পড়তে পারেন। খোদ ম্যানহোলের ভেতরও থাকে বিষাক্ত গ্যাস। ফলে সামান্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জীবন বাজি রেখে ভূগর্ভে প্রবেশ করতে হয়। কেউ কেউ আর ফিরে আসেন না। নোংরা ও বদ্ধকুঠুরিতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আমাদের মনে আছে, এপ্রিলের মাঝামাঝিতে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় একটি বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্কের বিষাক্ত গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে চার শ্রমিকের করুণ মৃত্যু হয়েছিল। তারও আগে চলতি বছরের ১৯ মার্চ নওগাঁর সাপাহার উপজেলায় দু'জনে মৃত্যু হয়েছিল একইভাবে। ২০১০ সালের জুলাইতে বগুড়ার কাহালুতে দু'জন, ২০০৮ সালের জুনে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় তিনজন এবং ২০০৭ সালের অক্টোবরে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় দু'জনের মৃত্যুর খবর সংবাদমাধ্যমে এসেছিল। এ ধরনের আরও অঘটন দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর মিছিলেই হয়তো হারিয়ে যায়। সামষ্টিক স্বাস্থ্য রক্ষায় খেটে খাওয়া মানুষের মূল্যবান প্রাণহানি কি চলতেই থাকবে? মূলত প্রান্তিক ও অসংগঠিত শ্রমিক এর শিকার হয় বলেই কি এসব জীবনহানি আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় তরঙ্গ তোলে না? তাদের মূল্যবান প্রাণ ও শ্রম আমাদের কাছে কতটা অবহেলিত তার একটি প্রমাণ হচ্ছে বছরে কতজন শ্রমিক এভাবে মৃত্যুবরণ করে, তার কোনো পরিসংখ্যান না থাকা। প্রশ্ন হচ্ছে, এসব প্রাণহানির দায় কি আমরা এড়াতে পারি? অথচ সামান্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলেই শ্রমিকদের প্রাণহানি রোধ করা সম্ভব। গোটা বিশ্বেই এমন কাজের জন্য রয়েছে বৈজ্ঞানিক উপায় ও উপযুক্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা। সেগুলো কি আমরাও মেনে চলতে পারি না? বিদ্যমান আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় এটা আশা করা উচিত হবে না যে, শ্রমিকরা নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। বরং তারা যাদের জীবনযাত্রা সচল রাখতে নিজের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেয়, তাদেরই দায়িত্ব উদ্যোগী হওয়া।
No comments