মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত * বিশ্বব্যাংককে এখন আর অনুরোধ করবে না বাংলাদেশ-ফেব্রুয়ারিতে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু!

নিজস্ব অর্থায়নে আগামী ফেব্রুয়ারিতে পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার আগে আনুষঙ্গিক প্রস্তুতিমূলক কাজ দ্রুত শেষ করারও নির্দেশ দেন তিনি। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন।


বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ খবর জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
গতকালের বৈঠকে পদ্মা সেতু নিয়ে আলোচ্যসূচি না থাকলেও এ বিষয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ শুরু করার সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, সরকার বিশ্বব্যাংককে এ প্রকল্পে অর্থায়ন বা ঋণচুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ এই মুহূর্তে আর জানাবে না। কারণ, এতে সরকারের কোনো ত্রুটি বা দোষ নেই। এ দেশের মানুষ মনে করে, বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্ত অন্যায্য ও অনৈতিক ছিল। তারা নিজেরা ভুল বুঝতে পেরে টাকা দিতে আগ্রহ দেখালে সরকার তা বিবেচনা করবে। তিনি বলেন, অর্থনীতির ওপর যাতে নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে, তা লক্ষ রেখে অর্থ সংগ্রহের কাজ করা হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব অর্থায়নে দ্রুত পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে বৈদেশিক উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহের প্রচেষ্টাও অব্যাহত থাকবে। অর্থায়নের ব্যাপারে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাইকা ও ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) সঙ্গে আলোচনা করা হবে। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর প্রাথমিক নির্মাণকাজ শুরু করতে ২৭৫ মিলিয়ন (২৭ কোটি ৫০ লাখ) ডলারের প্রয়োজন। বর্তমানে রিজার্ভ রয়েছে এক হাজার ৩০০ কোটি ডলারের মতো। সেখান থেকে ১০০ কোটি ডলার সরকার ইচ্ছা করলে নিতে পারে। এ ছাড়া নিজস্ব অন্যান্য অর্থায়নের উৎস, যেমন—সরকারের নিজস্ব তহবিল, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প থেকে অর্থ সংগ্রহ, বন্ড ইস্যু, দেশের বিভিন্ন বেসরকারি উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ, প্রবাসীদের রেমিট্যান্স থেকে অর্থ নিয়ে নির্মাণকাজ শুরু করতে হবে।
এর আগে গত রোববার সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন। এ জন্য তিনি বেশ কিছু পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘পদ্মা সেতুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দাতা সংস্থা এডিবি, জাইকা ও আইডিবির সঙ্গেও আলোচনা অব্যাহত রাখবে সরকার। সরকার মনে করে, পদ্মা সেতুর বিষয়ে আমাদের ভূমিকা সঠিক ছিল। বিশ্বব্যাংকের কারণে এ সেতু নির্মাণে আমাদের অনেক বিলম্ব হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আর কোনো বিলম্ব গ্রহণযোগ্য নয়।’ পদ্মা সেতু নির্মাণে বিলম্বের কারণে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের বিষয়টিও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। তবে শুধু আর্থিক ক্ষতি নয়, দেশের ভাবমূর্তির বিষয়টিও রয়েছে। পদ্মা সেতু ইস্যুতে বহির্বিশ্বে দেশের ইমেজ কতটা ক্ষুণ্ন হয়েছে, তা সরকার পর্যালোচনা করে দেখবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, দেশে-বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি তেমন ক্ষুণ্ন হয়নি। জনগণ কিন্তু বিশ্বব্যাংকের একতরফা সিদ্ধান্তের বিপক্ষে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে মোশাররাফ হোসাইন বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে দেশের অর্থনীতি যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে দিকে লক্ষ রেখেই পদক্ষেপ নেবে সরকার। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, প্রতিটি সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পেই সরকারের অর্থায়নের একটি অংশ থাকে। এটা পদ্মা সেতু প্রকল্পেও রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তাদের আওতাধীন অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো চিহ্নিত করবে। সেসব প্রকল্পের অর্থ পদ্মা সেতুতে স্থানান্তরের চিন্তাভাবনা করছে সরকার। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে পদ্মা সেতু নির্মাণের চূড়ান্ত কৌশল নির্ধারণ করবে অর্থ বিভাগ ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (ইআরডি)। আর পদ্মা সেতু নির্মাণের তারিখ ঘোষণা করবে সেতু বিভাগ।

No comments

Powered by Blogger.