শীতকালে বাজেট প্রণীত হোক by ইমরুল কায়েস
পৃথিবীর নানা দেশে উন্নয়ন পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের বিশেষ কিছু রীতি আছে। আগে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার কথা খুব শোনা যেত। এখন পরিকল্পনা পাঁচ বছরে থেমে নেই_ বহু বছরে গড়িয়েছে। আমাদের প্রতিবেশী এশিয়ার কিছু দেশ নাকি ৩০ বছর পরের বাস্তবতা মাথায় নিয়ে পরিকল্পনা করে।
পাশ্চাত্যে পরিকল্পনার দূরদৃষ্টি ৫০ থেকে ১০০ বছর পর্যন্ত গড়ানোর নজির আছে। আমাদের দেশেও পরিকল্পনা বলে কিছু বস্তু আছে। কিন্তু বাস্তবে পরিস্থিতি 'দিন আনো দিন খাও'। জোড়াতালি দিয়েই কাজ চলে সাধারণত। শুধু রাষ্ট্রীয় বা সরকারি উদ্যোগের ক্ষেত্রেই নয়, ব্যক্তিগত উদ্যোগের ক্ষেত্রেও আমরা দিন আনো দিন খাও রীতিতেই বেশি বিশ্বাসী। একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করে, সে লক্ষ্য পূরণের জন্য উপযুক্ত পরিকল্পনার পর বাস্তবায়নের একটা পন্থা অবলম্বন এবং সে পথে লক্ষ্য অর্জন পর্যন্ত অটুট কর্মোদ্যোগের দেখা মেলা ভার এদেশে। তাই তো, এদেশে শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ পরীক্ষার আগে পড়ায় মন দেয়। লেখকরা ফেব্রুয়ারির আগে লিখতে বসেন। হয়তো কর্মঘণ্টা শেষের ঠিক আগে অফিসের কাজটুকুও হয়। কোথাও যাওয়ার কথা থাকলে শেষ মুহূর্তে আমরা রওনা দিই। যানজট পার হয়ে নির্ধারিত বৈঠক পেতে তাই দেরি হয়ে যায়। ব্যক্তিগত পর্যায়ের এমন ঢিলেমি থেকে আমাদের সরকারি উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলোর হাল আলাদা নয়। বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা বা এডিপি বলে একটি বস্তু আমাদের এখানে আছে। কথা থাকে, বছরভর এ পরিকল্পনা অনুসারে কাজ হবে; কিন্তু কাজ হয় না প্রত্যাশিত প্ল্যান অনুসারে। ফলে বাজেটের আগে বছরের উন্নয়ন বরাদ্দ যখন ফেরত যাওয়ার উপক্রম হয়, তখনই উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলোর দেখা মেলে। সহসা শহরের রাস্তাঘাটে গর্ত তৈরি হতে শুরু করে। বলা হয়, গর্ত করে তা ভরাট করার মধ্য দিয়ে বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনার একটা হিল্লে হয়। এই হিল্লে করতে গিয়ে শহরে-গ্রামে নাগরিক দুর্ভোগের অন্ত থাকে না। উন্নয়ন কী হয় তা দেখার বিষয় নয়, দেখার বিষয় উন্নয়ন পরিকল্পনার বরাদ্দ। বিজ্ঞজনেরা বলেন, এডিপির বরাদ্দ বছরভর খরচ করলেই তো চলে; কিন্তু কে শোনে কার কথা? নিয়ম করে বাজেটের আগেই এডিপির দিকে কর্তাদের চোখ পড়ে। এর বিকল্প নেই। কিন্তু বাজেট তো হয় সাধারণত বর্ষা মৌসুমে। বর্ষা মৌসুমে তাই খোঁড়াখুঁড়ির মচ্ছব লেগে যায়। কাদা-জল, জলাবদ্ধতা মিলিয়ে একটা অস্থির পরিস্থিতি তৈরি হয় এ কারণে। অর্থবছরের শেষে এই বাজেট-দুর্বিপাক থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় কী? বছরভর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন? এডিপি ফিরিয়ে নেওয়া? অনেকেই মানবেন না, অনেকেই মানতে চাইবেন না। ফলে বাকি রইল একটাই উপায়। বাজেট ব্যাপারটাকে শীতকালে নিয়ে যাওয়া। শুষ্ক মৌসুমে রাস্তাঘাট খোঁড়াখুঁড়ি হলে দুর্ঘট বাধবে। চলাচলে সমস্যা হবে। কিন্তু বর্ষাকালের মতো সে সমস্যা মানুষকে ভোগাতে পারবে না। তাই বাজেট অধিবেশন শীতকালে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবা যেতে পারে। শুধু খোঁড়াখুঁড়ির সমস্যা নয়, বাজেটের আগে-পরে মূল্যবৃদ্ধির যে প্রকোপ থাকে, সেটা সামাল দিতে শীতের ঠাণ্ডা আবহাওয়া বেশ কাজে দেবে বলেই মনে হয়।
No comments