বঙ্গবন্ধুর পলাতক ৬ খুনীকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সচেষ্ট সরকার-যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করার তৎপরতার খবর by শংকর কুমার দে

বিদেশে পলাতক বঙ্গবন্ধুর খুনীরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে তৎপরতা শুরু করেছে। এমন খবরে নড়েচড়ে বসেছে সরকার। এজন্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আগেই বঙ্গবন্ধুর পলাতক ৬ খুনীকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকার সচেষ্ট।


খুনীদের ছবি আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলসহ পৃথিবীর প্রতিটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন বিভাগে পাঠানোর প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে কঠোর সরকারী নির্দেশ জারি করা হয়েছে। পলাতক খুনীদের অবস্থান সম্পর্কে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে জোরালো তাগাদা দেয়া হয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে।
একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনীদের বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। পলাতক খুনীরা বিদেশ নানাভাবে তৎপরতা চালাচ্ছে। এমনকি বিদেশে বসেই পলাতক খুনীরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। সরকারের সময় যত ফুরিয়ে যাচ্ছে খুনীদের তৎপরতাও তত বাড়ছে। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে এমন খবর জানানো হয়েছে। এমন খবরে রীতিমতো নড়েচড়ে বসেছে সরকার। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কঠোর নির্দেশ জারি করা হয়।
সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক জরুরী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হয়েছে। বৈঠকে সব গোয়েন্দাসংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। পলাতক খুনীদের অবস্থান অতিসত্বর সরকারকে জানাতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়। খুনীদের ছবি আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল ছাড়াও বিশ্বের প্রতিটি বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন বিভাগে রাখার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। হত্যাকা-ের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে সৃষ্টি হয় এক কালো অধ্যায়ের। ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি রাত ১২টা ২৫ মিনিট থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী বঙ্গবন্ধুর খুনী লে. কর্নেল (অব) মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি), লে. কর্নেল (অব) একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ (ল্যান্সার), মেজর (অব) বজলুল হুদা, লে. কর্নেল (বরখাস্ত) সৈয়দ ফারুক রহমান ও লে. কর্নেল (অব) সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খানের ফাঁসি কার্যকর হয়।
গোয়েন্দা তথ্যমতে, পলাতক ৬ খুনীরা হচ্ছে লে. কর্নেল (অব) এম রাশেদ চৌধুরী, লে. কর্নেল (অব) এসএইচএমবি নূর চৌধুরী, রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন, লে. কর্নেল (অব) খন্দকার আবদুর রশীদ, মেজর (অব) শরিফুল হক ডালিম ও ক্যাপ্টেন (অব) আবদুল মাজেদ। খুনীদের মধ্যে লে. কর্নেল (অব) এসএইচএমবি নূর চৌধুরী কানাডায়, রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন ও ক্যাপ্টেন (অব) আবদুল মাজেদ ভারতে আত্মগোপন করে রয়েছে। ভারতের কোথায় তারা আত্মগোপন করে আছে সে সম্পর্কে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে সাহায্য চাওয়া হয়েছে। লে. কর্নেল (অব) এম রাশেদ চৌধুরী অবস্থান করছে আমেরিকায়। আমেরিকা থেকে তাকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কূটনৈতিক প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে।
লে. কর্নেল খন্দকার আবদুর রশীদের মেয়ে মেহনাজ রশীদ ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর তার পিতা পাকিস্তানে রয়েছে বলে জানিয়েছে। লে. কর্নেল (অব.) শরিফুল হক ডালিম কোন্ দেশে অবস্থান করছে তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি।
বিদেশে পলাতক খুনীরা ইতোমধ্যেই আমেরিকা, কানাডা, জার্মানি, থাইল্যান্ড, লিবিয়া, ভারত, পাকিস্তান, ব্রিটেন, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, ইতালি, লেবানন, পোল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, চীন, হংকং ও কেনিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাতায়াত করেছে। তবে বেশী সময় অবস্থান করছে না। ঘন ঘন দেশ বদল করছে। এসব দেশে অবস্থান করে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর চোখকে ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করছে।
খুনীরা যাতে দেশ ত্যাগের সময় ধরা পড়ে এজন্য আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। ইন্টারপোল ইতোমধ্যেই পলাতক খুনীদের রেডওয়ারেন্ট জারি করেছে, যা আজও বহাল আছে। ইন্টারপোলের পাশাপাশি বিশ্বের প্রতিটি আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন বিভাগে বঙ্গবন্ধুর পলাতক ৬ খুনীর ছবি রাখার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এমন নির্দেশের পর নতুন করে জোরালোভাবে কাজ করে যাচ্ছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এমনকি কোন্ গোয়েন্দা সংস্থা কোন্ কোন্ খুনীর বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করবে তা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কাজ শুরু করেছে।

No comments

Powered by Blogger.