বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র প্রকাশনা অনুষ্ঠান-শেখ হাসিনা ও রেহানা কাঁদলেন, কাঁদলেন দর্শকেরাও

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আবেগাপ্লুত হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। দুই বোন একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছেন। এ দৃশ্য দেখে কাঁদলেন দর্শকদের অনেকেই।
গতকাল সোমবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে গ্রন্থটির প্রকাশনা অনুষ্ঠানে ছিল আগেবঘন পরিবেশ।


বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা সাধারণত কোনো অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন না। গতকাল পিতার আত্মজীবনী গ্রন্থ প্রকাশনা অনুষ্ঠানে রেহানা মন্তব্য করেন, ‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীর মতো তাঁদের দুই বোনের জীবনটাও অসমাপ্ত।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘স্মৃতি বড় মধুর, স্মৃতি বড় বেদনাময়। ধর্মে আছে কারও বাবা-মা, ভাইবোন মারা গেলে কবর দেওয়ার আগে মুখ দেখানো হয়, দোয়া-দরুদ পড়া হয়। আমরা দুই বোন সে সুযোগও পাইনি। তাই যত দিন বেঁচে থাকব, আমাদের জীবনটা অসমাপ্তই থেকে যাবে।’
ছোট বোনকে আবেগাপ্লুত হতে দেখে মঞ্চে নিজ আসনে বসে থাকতে পারেননি বড় বোন শেখ হাসিনা। উঠে এসে জড়িয়ে ধরেন শেখ রেহানাকে। একপর্যায়ে দুই বোন কান্নায় ভেঙে পড়েন।
শেখ রেহানা বলেন, ‘পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর থেকে অশ্রু-বেদনা ছাড়া আমাদের আর কিছুই ছিল না। দেশেও ফিরতে পারছিলাম না। অনেক সময় আমরা দুই বোন নিজেদের জড়িয়ে কেঁদেছি। একে অন্যকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।’ তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সারা জীবনই দেশ ও মানুষের জন্য কষ্ট করে গেছেন। তাঁর আত্মজীবনী পেয়ে আমি আর আপা পাতা ছুঁয়ে ছুঁয়ে আব্বার ঘ্রাণ নিতে চেষ্টা করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘পিতার নিজ হাতে লেখা পাণ্ডুলিপি যখন প্রকাশকের হাতে তুলে দিই, তখন মনে হয়েছে নিজেদের সবচেয়ে বড় সম্পদ তুলে দিলাম। পাণ্ডুলিপিতে যখন হাত বুলিয়েছি, তখন যেন বাবারই পরশ পেয়েছি। একজন মানুষ একটি দেশ ও জাতির জন্য যে কতটা আত্মত্যাগ করতে পারেন, এই বইটি পড়লেই তা সবাই বুঝতে পারবে।’
প্রধানমন্ত্রী আবেগজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার মা বঙ্গবন্ধুকে ডায়েরি লেখার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু আজ তা গ্রন্থ আকারে প্রকাশিত হলেও মা দেখে যেতে পারলেন না।’
সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় অধ্যাপক মুস্তাফা নূরউল ইসলাম, সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, সাংসদ বেবী মওদুদ, গ্রন্থটির ইংরেজি অনুবাদক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ফখরুল আলম এবং বইটির প্রকাশক মহিউদ্দিন আহমদ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। গ্রন্থটির উল্লেখযোগ্য অংশ পাঠ করেন রামেন্দু মজুমদার। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক নূহ-উল-আলম লেনিন ও সহ-প্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিল। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে বঙ্গবন্ধুর প্রিয় গান পরিবেশন ও কবিতা আবৃত্তি করা হয়।
অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ছাড়াও বঙ্গবন্ধু পরিবারের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বইটির প্রকাশক মহিউদ্দিন আহমদ বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে প্রকাশিত একাধিক কপি শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেন।

No comments

Powered by Blogger.