শেয়ারবাজারে বড় পতন

আবারও বড় ধরনের দরপতন হলো শেয়ারবাজারে। গতকাল সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হওয়া ২৬৯টি কম্পানির শেয়ারের মধ্যে দাম কমেছে ২৪১টির। সূচক কমেছে ১২৭.৬৭ পয়েন্ট। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের মূল্যসূচক আগের দিনের তুলনায় কমেছে ৩৩০.৪৩ পয়েন্ট। তবে সূচক কমলেও লেনদেন বেড়েছে দুই স্টক এক্সচেঞ্জেই।


এদিকে লেনদেন শেষ হলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন বিনিয়োগকারীরা। বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে অনুষ্ঠিত এ বিক্ষোভ থেকে এসইসির চেয়ারম্যান, ডিএসইর সভাপতি, বাংলাদেশ
ব্যাংকের গভর্নরসহ বাজারসংশ্লিষ্টদের পদত্যাগের দাবি তোলা হয়। ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রশিদ চৌধুরী বলেন, 'বাজারকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংসের পাঁয়তারা চলছে। যে কারণে দিনের পর দিন শেয়ারবাজারের অবস্থা নাজুক থেকে আরো নাজুক হচ্ছে।'
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্রমাগত দরপতনে বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা আরো বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে তারল্য সংকট। ১৮ জুলাই মুদ্রানীতি ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নিয়েও নানা ধরনের গুজব রয়েছে বাজারে। সংকোচনশীল মুদ্রানীতি ঘোষিত হলে বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে- এমন আশঙ্কায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কেনা থেকে বিরত রয়েছে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে, সরকার নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের কথা বলছে। শেষ পর্যন্ত এ রকম সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে ব্যাংক থেকে টাকা নেওয়ার প্রয়োজন দেখা দেবে। এতে ব্যাংকের তারল্য সংকট দেখা দিতে পারে বলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ধারণা জন্মেছে। এরই প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারে।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক সভাপতি ফখর উদ্দিন আলী আহমেদ বলেছেন, সংকোচনশীল মুদ্রানীতি ঘোষিত হলে বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে- এমন আশঙ্কায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কেনা থেকে বিরত থেকে থাকতে পারে। এ ছাড়া সরকার নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে। এ খবরে বিনিয়োগকারীরা হয়তো ব্যাংকের তারল্য সংকটের আশঙ্কা করছেন।
ডিএসইতে নন-ব্যাংকিং ২২টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিটির শেয়ারের দাম কমেছে গতকাল। এ খাতে দরপতন ঘটেছে ৫.২১ শতাংশ। প্রকৌশল খাতের ২৩টি কম্পানির সব কয়টির দাম কমেছে। পতনের হার ৪.২১ শতাংশ। বস্ত্র খাতের ২৬টি কম্পানির মধ্যে একটি বাদে সব কয়টির শেয়ারের দাম কমেছে। দরপতনের হার ৪.১৭ শতাংশ। সাধারণ বীমা খাতের কম্পানিগুলোর দাম কমেছে ৩.৩৪ শতাংশ। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ১৪টি কম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে ৩.৩৪ শতাংশ। ওষুধ ও রসায়ন খাতের ২০টি কম্পানির দাম কমেছে ২.৩৫ শতাংশ। জীবন বীমা খাতের কম্পানিগুলোর দাম কমেছে ২.২৭ শতাংশ।
গতকাল ডিএসইর ২৬৯টি প্রতিষ্ঠানের চার কোটি এক লাখ ৮৪ হাজার ১৯০টি শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছে। লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১৬৪ কোটি ৫৮ লাখ ৩৭ হাজার ৭৭৮ টাকা, যা আগের দিনের তুলনায় ৪৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা বেশি। ডিএসইর সাধারণ মূল্যসূচক আগের দিনের তুলনায় ১২৭.৬৭ পয়েন্ট কমে ৪১৪৫ পয়েন্টে স্থির হয়েছে। লেনদেন হওয়া ২৬৯টি কম্পানির শেয়ারের মধ্যে বেড়েছে ২০টির দাম, কমেছে ২৪১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে আটটির দাম। ডিএসইর বাজার মূলধনের পরিমাণ ছিল দুই লাখ ৩৪ হাজার ৪৮৯ কোটি ১৩ লাখ ৪৮ হাজার ২৪২ টাকা।
লেনদেনের ভিত্তিতে ডিএসইর গতকালের প্রধান ১০টি কম্পানি হলো : গ্রামীণফোন, বিএসসিসিএল, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, লাফার্জ সুরমা, স্কয়ার ফার্মা, এনবিএল, লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স, ইউনিক হোটেল, তিতাস গ্যাস ও বেক্সিমকো লিমিটেড।
মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে থাকা প্রধান ১০টি প্রতিষ্ঠান হলো : এমবিএল প্রথম মিউচ্যুয়াল ফান্ড, এবিবি প্রথম মিউচ্যুয়াল ফান্ড, আইসিবি এএমসিএল প্রথম, রিলায়েন্স প্রথম ইনস্যুরেন্স, উসমানিয়া গ্লাস, তৃতীয় আইসিবি, এসিআই জিরো কুপন বন্ড ও প্রাইম ব্যাংক। অন্যদিকে দাম কমার শীর্ষে থাকা প্রধান ১০টি কম্পানি হলো : আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, নর্দার্ন জুট, সপ্তম আইসিবি, সোনারগাঁও টেক্সটাইল, আমরা টেকনোলজি, আইএসএন লিমিটেড, লিগ্যাসি ফুটওয়্যার, আরএন স্পিনিং, আরডি ফুড ও এশিয়া ইনস্যুরেন্স।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ১৭৯টি প্রতিষ্ঠানের ৭৪ লাখ ৭৪ হাজার ৩০৬টি শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছে। লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২৫ কোটি ৭২ লাখ এক হাজার ৭৩৭ টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে আট কোটি ৪০ লাখ ৩১ হাজার ৮৫৮ টাকা বেশি।
সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক আগের দিনের চেয়ে ৩৩০.৪৩ পয়েন্ট কমে ১২,৬৩২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। গতকাল লেনদেন হওয়া ১৭৯টি কম্পানির শেয়ারের মধ্যে দাম কমেছে ১৬৮টির, বেড়েছে আটটির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে তিনটির।

No comments

Powered by Blogger.